নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পরের বাড়ির পিঠা খাইতে বড়ই মিঠা ।

কিরকুট

আমি মানুষ, আমি বাঙালি। আমার মানবিকতা, আমার সংস্কৃতির উপর আঘাত হানতে চাওয়া, ক্ষতিগ্রস্ত করতে চাওয়া প্রাণী মাত্রই আমার কাছে পিশাচ। আমার দেশের উপর আঘাত হানতে চাওয়া প্রাণীদের পালনকারী, প্রশ্রয়দানকারী মাত্রই আমার কাছে পিশাচ, রাক্ষস। হোক সে যে কোনো সাম্প্রদায়িক কিংবা ঢেঁড়স চাষ পরামর্শক।

কিরকুট › বিস্তারিত পোস্টঃ

আন্দালুস

২৬ শে মে, ২০২৫ রাত ১০:৫৭



আন্দালুসের পতনের ইতিহাস মুসলিম সভ্যতার এক গৌরবময় অধ্যায়ের অন্তিম দৃশ্য। এটি শুধু একটি ভূখণ্ড হারানোর গল্প নয়—এটি জ্ঞান, শিল্প, সহাবস্থান এবং এক অবিস্মরণীয় সাংস্কৃতিক উন্মেষের অবসানও।

আন্দালুসের ইতিহাস: সংক্ষিপ্ত বিবরণ

১. উত্থান (৭১১ খ্রিঃ)

৭১১ খ্রিষ্টাব্দে উমাইয়া খিলাফতের সেনাপতি তারিক ইবনে জিয়াদ ও মূসা ইবনে নুসাইর এর নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনী স্পেনের দিকে অভিযান চালায়।

তাঁরা ভিসিগথ খ্রিষ্টান রাজা রড্রিককে পরাজিত করে। স্পেনের বড় অংশ মুসলিম নিয়ন্ত্রণে আসে এবং নাম দেওয়া হয় আল-আন্দালুস।

২. উমাইয়া খিলাফত ও আন্দালুসে স্বর্ণযুগ (৭৫৬–১০৩১ খ্রিঃ)

৭৫০ খ্রিঃ আব্বাসীয়রা উমাইয়া খিলাফত ধ্বংস করে। কিন্তু উমাইয়া বংশের একজন বংশধর আবদুর রহমান আদ-দাখিল আন্দালুসে এসে স্বাধীনভাবে শাসন শুরু করেন।

পরবর্তীতে গড়ে ওঠে কর্ডোবার খিলাফত (৯২৯ খ্রিঃ) যা বিজ্ঞান, চিকিৎসা, দর্শন, শিল্প ও স্থাপত্যে স্বর্ণযুগ নিয়ে আসে।

কর্ডোবা, গ্রানাডা, সেভিল, ও টলেডো ছিল জ্ঞানের অন্যতম কেন্দ্র। এখানে মুসলমান, খ্রিস্টান ও ইহুদিরা একত্রে বাস করত।

৩. বিভাজন ও দুর্বলতা (১০৩১–১২৩৮ খ্রিঃ)

১০৩১ খ্রিঃ কর্ডোবা খিলাফতের পতনের পর আন্দালুস ছোট ছোট রাজ্যে (তাইফা) ভাগ হয়ে পড়ে।

খ্রিস্টান রাজ্যগুলো (ক্যাস্টাইল, লিওন, অ্যারাগন ইত্যাদি) "Reconquista" নামে মুসলিম ভূমি পুনর্দখলের যুদ্ধ শুরু করে।

মুসলিমদের একতা ভেঙে যাওয়ায় এবং অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে মুসলিম শক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে।

৪. মুরাবিত ও মুওয়াহহিদদের আগমন (১১-১২ শতক)

উত্তর আফ্রিকার মুরাবিত ও পরে মুওয়াহহিদ আমিররা আন্দালুসে এসে কিছুটা সময়ের জন্য মুসলিম ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করে।

কিন্তু আবারো বিভাজন, দুর্নীতি ও নেতৃবৃন্দের অহংকার তাদের পতনের কারণ হয়।

৫. গ্রানাডা: শেষ মুসলিম রাজ্য (১২৩৮–১৪৯২ খ্রিঃ)

বনি আহমার (Nasrid) বংশ গ্রানাডা সুলতানাত প্রতিষ্ঠা করে। এটি ছিল মুসলিমদের শেষ আশ্রয়স্থল।

এই সময় আলহামরা প্রাসাদ নির্মিত হয়—আজও মুসলিম শিল্প ও সৌন্দর্যের এক অনন্য নিদর্শন।

৬. পতন (১৪৯২ খ্রিঃ)

খ্রিস্টান রাজা ফার্দিনান্দ এবং রানি ইসাবেল্লা মিলিতভাবে আন্দালুস পুনর্দখলের অভিযান শুরু করেন।

১৪৯২ সালে সুলতান বোআবদিল (Boabdil) বিনা যুদ্ধে গ্রানাডা রাজ্য খ্রিস্টানদের হাতে তুলে দেন, শর্তসাপেক্ষে।

কিন্তু পরবর্তীতে মুসলিমদের সেই শর্ত মানা হয়নি—বহু মুসলিমকে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণে বাধ্য করা হয় অথবা দেশত্যাগ করতে হয়।

৭. ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও প্রভাব

আন্দালুস ছিল ইউরোপের মধ্যযুগীয় অন্ধকার যুগে একটি আলোকবর্তিকা।

মুসলিমদের বিজ্ঞানের বই ইউরোপে অনূদিত হয় এবং রেনেসাঁর ভিত্তি গড়ে দেয়।

স্পেনে মুসলিম স্থাপত্য, ভাষা ও সংস্কৃতির প্রভাব আজও দৃশ্যমান।

আন্দালুসের পতন ছিল মুসলিম সভ্যতার ইতিহাসের এক গভীর দুঃখজনক অধ্যায়, যা কেবল একটি ভূখণ্ডের হারানো নয়, বরং এক সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক বিশ্বজনীনতার অন্তিম পরিণতি। ৭১১ সালে যাত্রা শুরু করে, আন্দালুস এক সময় ছিল বৈচিত্র্যপূর্ণ ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সহাবস্থানের উদাহরণ—মুসলিম, খ্রিস্টান, এবং ইহুদিদের সমন্বয়ে এক সমৃদ্ধ সমাজ গড়ে উঠেছিল। এই সহাবস্থানের মধ্য দিয়েই বৈজ্ঞানিক, সাহিত্যিক ও দার্শনিক অগ্রগতি অর্জিত হয়েছিল, যা ইউরোপের রেনেসাঁকে প্রভাবিত করেছিল।

তবে, অন্তঃকোন্দল, শাসনব্যবস্থার দুর্বলতা, এবং ইউরোপীয় খ্রিস্টান শক্তির উত্থানে আন্দালুসের পতন অনিবার্য হয়ে ওঠে। ১৪৯২ সালে গ্রানাডার পতন, মুসলিমদের শেষ দুর্গের হারানো, শুধু একটি রাজ্য নয়, বরং একটি বৈশ্বিক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হারানোর ঘটনা ছিল। এর পর, মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর ধর্মীয় নিপীড়ন এবং সংস্কৃতির বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়।

আন্দালুসের পতন আমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পাঠ—যেখানে একদিকে দেখা যায় ধর্মীয় সহিষ্ণুতা, জ্ঞান অর্জন ও সভ্যতার অগ্রগতি, অন্যদিকে রাজনৈতিক বিভাজন, অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও আত্মতুষ্টির ফলে এক সময়ে দুর্বল হয়ে পড়ে শক্তিশালী এক সম্রাজ্য। এটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, ইতিহাসের পরিবর্তনশীল ধারায় শক্তির উৎকর্ষ ও পতন কেবল বাহ্যিক শত্রুর বিরুদ্ধে নয়, নিজের ভেতরের অসংগতির বিরুদ্ধে এক চিরকালীন সংগ্রাম।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে মে, ২০২৫ রাত ১১:৪৭

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: পড়লাম।

২| ২৬ শে মে, ২০২৫ রাত ১১:৫৩

কামাল১৮ বলেছেন: মুসলমানরা সামন্তবাদ আর পুজিবাদের পার্থক্যই বোঝেনা।সাম্রাজ্য হলো সামন্তবাদের রাজনৈতিক কাঠামো আর রাষ্ট্র হলো পুঁজিবাদি সমাজের রাজনৈতিক কাঠানো।মাম্রাজ্যবাদে ফিরে যেতে হলে সমাজের অর্থনৈতিক কাঠামোর পরিবর্তন লাগবে।যেটা এক অসম্ভব কাজ।

৩| ২৭ শে মে, ২০২৫ রাত ৩:০৮

মাইন উদ্দিস মইন বলেছেন: সাম্রাজ্য হলো সামন্তবাদের রাজনৈতিক কাঠামো আর রাষ্ট্র হলো পুঁজিবাদি সমাজের রাজনৈতিক কাঠামো ।
vibration monitoring service in toronto

৪| ২৭ শে মে, ২০২৫ সকাল ৯:২৯

রাজীব নুর বলেছেন: জানলাম।

৫| ৩১ শে মে, ২০২৫ সকাল ৯:৩৮

শায়মা বলেছেন: সবাই এত কিছু জানলো আর জানালো কোনো উত্তর দিলে না জে কিরকুটভাইয়ুজান!!!

১০ ই জুন, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৪

কিরকুট বলেছেন: আমি একটা ঐতিহাসিক ঘটনার বর্ননা দিলাম আর এরা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জ্ঞ্যান ঝারতেছে । কি জবাব দেব ?

আমি রাষ্ট্রবিজ্ঞানী না ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.