তালেবানি শাসনের বেহাল দশা: খাদ্য সংকটে পড়তে যাচ্ছে প্রায় অর্ধ কোটি মানুষ !

২৯ শে জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ৮:৫৪

ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বব্যাপী সহায়তা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন। এতে বিশ্বের দারিদ্র দেশ গুলো বিপাকে পড়েছে। তবে সবচাইতে বেশি সংকটে পড়তে যাচ্ছে আফগানিস্তান। বিদেশি সহায়তা বন্ধ হলে দেশটির ৮০ লাখ মানুষ তীব্র খাদ্য সংকটে পড়বে। বিদেশি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী আফগানিস্তানের প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন তীব্র খাদ্য সংকটে ভুগছে। এমন সময়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সহায়তা বন্ধের ঘোষণা এলো যখন মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে জাতিসংঘ আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন তালেবান সরকারের শীর্ষ নেতাদের উপর। তালেবান নেতারা এই ধরণের কাজকে আমেরিকা ও পশ্চিমা ষড়যন্ত্র হিসাবে অভিযোগ করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে তালেবানরা ভারতের সাথে তাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক বাড়ানোর চেষ্টা করছে কারণ পার্শ্ববর্তী পাকিস্তানের সাথে সংঘর্ঘে জড়িয়ে পড়েছে তারা। অর্থাৎ দেশের ভিতরে এবং বাইরে চাপে রয়েছে তালেবান সরকার।

বিভিন্ন দাতা সংস্থা বরাবর অভিযোগ করে আসছে এনজিওর মাধ্যমে পাঠানো সহায়তা তালেবানরা সারাবিশ্বে চরমপন্থা ছড়িয়ে দিতে ও নিজেদের ভোগ বিলাসে অপব্যবহার করছে। আফগান শিশু ও নারীদের জন্য পাঠানো অনুদান ব্যয় হচ্ছে সরকারি কর্মচারীদের বেতন ভাতায়। যাদের সাহায্য পাওয়ার কথা তারা বঞ্চিত হচ্ছে এবং চরম মানবেতর জীবন যাপন করছে। আফগানিস্তানে নারীদের এনজিওতে কাজের উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ফলে বিদেশি দাতাদের পাঠানো সহায়তা তালেবান সরকার কোন খাতে ব্যয় করছে তার প্রকৃত তথ্য জানা সম্ভব হচ্ছে না।

আফগানিস্তানের নারী ও শিশুরা চরম মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বিশ্বের অনেক দেশ ও সংস্থা আফগানিস্তানের সাথে সম্পর্ক না রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আফগানিস্তানে নারী ক্রিকেট বন্ধ করে দেয়ায় ইংল্যান্ড ও সাউথ আফ্রিকা ক্রিকেট বোর্ড আফগানিস্তানের সাথে খেলা বয়কটের হুমকি দিয়েছে। অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট বোর্ড আফগানিস্তানের নারীদের ক্রিকেটে এগিয়ে আসার জন্য জন্য সকল রকম সুযোগ সুবিধা প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে। পশ্চিমা বিশ্ব তালেবানদের এখন সভ্যতার জন্য চরম হুমকি মনে করছে না। তাই কঠোর পদক্ষেপ নিতে তারা আগ্রহী নয়।

তালেবান সরকার ২০২১ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর মহিলাদের ঘরের বাইরে কাজের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। মেয়েদের ষষ্ঠ শ্রেণীর পর পড়ালেখা নিষেধ করা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে আফগান মেয়েদের বিশেষ মেডিকেল কোর্স গ্রহণের উপরও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তালেবান সরকার। বিভিন্ন চরমপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠী মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে যাদের হামলায় অনেক তালেবান যোদ্ধা ও সাধারণ মানুষ মারা যাচ্ছে। এতে তালেবানদের উপর মানুষের আস্থা ক্রমেই সংকটের মুখে পড়ছে। কর্মসংস্থানের অভাব, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঝড়, বন্যা ও কৃষি আবাদি জমি কমে যাওয়া, পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় খরা সহ প্রাকৃতিক দূর্যোগ যেন মড়ার উপর খাড়ার ঘাঁ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বাড়াতে সক্ষম না হওয়ায়, এনুয়াল বাজেট বাইরের দেশের সহায়তার উপর নির্ভরশীল হওয়াতে প্রবৃদ্ধি একেবারে শূণ্যের কোঠায় গিয়ে ঠেকেছে। অনেক পরিবার তীব্র খাদ্য সংকটে তাদের কন্যা সন্তানদের বিক্রি করে দিচ্ছেন। কেউ আবার কিডনি বিক্রি করে পরিবারের খরচ যোগাচ্ছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য হিসাব অনুযায়ী আফগানিস্তানে পঞ্চম জন্মবার্ষিকী পালন করার পূর্বে মারা যাওয়া শিশুর সংখ্যা প্রায় ৭০ ভাগ। প্রতি দশজনে সাতজন জন শিশু অপুষ্টি তে ভুগছে।

আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো সঠিক ভাবে তাদের টিকা কার্যক্রম আফগানিস্তানে পরিচালনা করতে পারছে না। টিকার অভাবে পোলিও, হাম সহ অনেক জটিল রোগে ভুগছে শিশুরা। তালেবান সরকার ভিতর ও বহির্মুখী চাপে তাদের কট্টোর অবস্থান থেকে সরে আসে কিনা এখন তাই দেখবার বিষয়।

সোর্স : The diplomat. com

৬ টি +১/-০