নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দরিদ্র দেশের জনসংখ্যা কে জনশক্তি তে পরিণত করতে হলে কর্মমুখী শিক্ষার বিকল্প নেই।

সৈয়দ কুতুব

নিজের অজ্ঞতা নিজের কাছে যতই ধরা পড়ছে প্রচলিত বিশ্বাসের প্রতি ততই অবিশ্বাস জন্মাছে!

সৈয়দ কুতুব › বিস্তারিত পোস্টঃ

এত ভালো সুযোগ, এত বড় সৌভাগ্য : জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয় ঢাকায়, এবার দেশ উন্নত হবেই ।

০৮ ই জুলাই, ২০২৫ রাত ১২:০৯


বাংলাদেশের জনগণ বরাবরের মতোই ভাগ্যবান। উন্নয়নের মহাসড়ক পেরিয়ে এবার মানবাধিকারের অলিম্পিকে প্রবেশ করতে যাচ্ছে দেশ। ঢাকায় জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের কান্ট্রি অফিস খোলার যে তোড়জোড় চলছে, সেটি নিয়ে কারও মনে প্রশ্ন ওঠা একেবারেই অপ্রয়োজনীয়। এই যে কেউ কেউ বলছেন "কেন এত তাড়াহুড়া ?", কিংবা "এটা কি অন্তর্বর্তী সরকারের এখতিয়ারে পড়ে ?", তাঁরা আসলে বোঝেন না, এইসব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত সবসময়ই একা একা, নীরবতার সাথে, অনেক ‘দূরদর্শিতা’ নিয়ে নিতে হয়।

পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকরা যখন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনকে জিজ্ঞেস করেন, “এটা কি বাংলাদেশের জন্য ভালো হবে?”—তিনি স্বভাবতই কৌশলী উত্তর দেন: “আমি বিচার করতে চাই না।” আহা! এই তো নেতৃত্বের পরিণত প্রকাশ ! আমরা তো জানিই, এখন আর কোনো বিষয়ের বিচার-বিবেচনা দরকার হয় না। ‘নীতিগত অনুমোদন’ একবার দিলে বাকি সব ‘স্বচ্ছতা’ আপনা থেকেই আসবে ঠিক যেমন আসে ঘূর্ণিঝড়ের পর ত্রাণের প্যাকেট।

আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জানিয়েছেন, অন্তর্বর্তী সরকার খসড়া প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে। বাহ্ ! চমৎকার ! অথচ জাতিসংঘ পক্ষ বলছে, তারা কিছুই জানে না। তারা না বুঝে বুঝে কাজ করে, আমরাই বরং আগে বুঝে যাই তারা কী চায়। এমন দূরদর্শিতা কি দক্ষিণ এশিয়ার আর কোনো দেশে আছে? জাতিসংঘ যদি নিজেই না জানে, তাতে কি আসে যায় আমরা জানি, তাই যথেষ্ট!

সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ অক্টোবরে বলেছিলেন, “এটা আমাদের মানবাধিকার শক্তিশালী করবে।” অর্থাৎ, বাহ্যিক কার্যালয় স্থাপন করলেই মানবাধিকারের ভিত মজবুত হয়ে যায়। অর্থাৎ বাড়ির ছাদে টাওয়ার বসালেই ইন্টারনেট দ্রুত হয় ভিতরের যন্ত্রপাতি কেমন, সেটা মুখ্য নয়। এখন কেউ যদি বলে, “সমন্বয় নেই”, “পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এক কথা বলছেন, আইন উপদেষ্টা আরেক” তাহলে বুঝতে হবে, এগুলো "বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য"। যারা বলছেন, সরকার সংহতভাবে এ সিদ্ধান্ত নেয়নি তাদেরও বোঝা উচিত, গণতন্ত্র মানে ভিন্নমত। একটি সরকারে নানা মত থাকা মানেই সেটি আরও গণতান্ত্রিক !

অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, যে এখনও খসড়া চূড়ান্ত হয়নি। চারবার খসড়া আদান-প্রদান হয়েছে, পরিবর্তনের প্রস্তাবও এসেছে। অথচ গত অক্টোবরেই বলা হয়েছে ‘সম্মতি দেওয়া হয়েছে’। সুতরাং আমরা কি বলবো সম্মতি আগে, সমঝোতা পরে? এটাই তো কৌশলের পরিচয়। বাস্তবায়ন আগে, বিস্তারিত পরে! জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নিজস্ব সদস্যরাও প্রশ্ন করেছেন “আমরা কি সেই দেশের মতো, যেখানে এ ধরনের কার্যালয় প্রয়োজন?” হ্যাঁ, অবশ্যই! আমরা কলম্বিয়া, মেক্সিকো, ইয়েমেন, সুদান, লেবানন সবাইকে ছাড়িয়ে যেতে চাই। উন্নয়নের মানে তো শুধু পিচঢালা রাস্তা না মানবাধিকার লঙ্ঘনও ‘আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি’ পেলে, সেটাও এক রকম উন্নয়ন নয় কি?

কিছু দুর্ভাগা বিশ্লেষক আশঙ্কা করছেন—এই কার্যালয়ের লক্ষ্য হয়তো মিয়ানমার হবে। দক্ষিণ কোরিয়া যেভাবে উত্তর কোরিয়াকে নজরদারি করছে, ইউক্রেন যেভাবে রাশিয়াকে; বাংলাদেশও কি সেই ভূমিকায় যাবে? বাংলাদেশ কি মিয়ানমারকে নজরদারির ‘প্ল্যাটফর্ম’ হতে চায়? উত্তরটা, আপাতত, কারও মুখে নেই। শুধু অদ্ভুত এক নিরবতা।

আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় ছিল, তারা বাংলাদেশকে সিঙ্গাপুর-মালয়েশিয়া বানানোর গল্প শুনাত। এখন অন্তর্বর্তী সরকার এটাই বলছে আমরা ইউরোপের পথে! কিন্তু জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় যেখানে আছে, সে সব দেশের নাম শুনলে ইউরোপ তো দূরে থাক, আফ্রিকার প্রান্তেও আশ্রয় নেওয়ার ইচ্ছা হারিয়ে যায়। উন্নয়নের পথে জাতিসংঘের এই কার্যালয় কি তাহলে ‘মর্যাদার মোড়কপরা জেলখানা’?

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সব সদস্য একযোগে পদত্যাগ করেছেন। গত নভেম্বর থেকে কমিশন অচল। অথচ সেই অচল কমিশনের শূন্যতা পূরণ না করে জাতিসংঘের কার্যালয় স্থাপনের পেছনে এত উৎসাহ কেন? প্রশ্ন উঠতেই পারে অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাকে অকার্যকর রেখে, বহিরাগত দৃষ্টিকে আমন্ত্রণ জানানোর গভীর অর্থ কী ? যদি এই কার্যালয় স্থাপন সত্যিই দেশের জন্য ইতিবাচক হয়, তাহলে গণশুনানি করুন। জনগণের সম্মতি নিন। অন্তর্বর্তী সরকারের যেহেতু পূর্ণ রাজনৈতিক দায় নেই, তাহলে তাদের সব সিদ্ধান্ত কেন নীরবে হবে?স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও জাতীয় মর্যাদার প্রশ্নে এই প্রক্রিয়া যেভাবে চলছে, তা আত্মবিশ্বাস নয়—বরং আত্মসমর্পণের মতো।


পান্তা না পেলে বিরিয়ানি খেতে চাইলে সেটা স্বপ্ন হতে পারে। কিন্তু ঘরের ছিদ্র না মেরামত করে চৌদ্দতলা বাড়ির পরিকল্পনা করলে, সেটাকে বলে উন্মাদনা। জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় কি আমাদের জাতীয় আত্মমর্যাদার রক্ষাকবচ হবে, নাকি একদিন ‘তত্ত্বাবধানে’ যাওয়ার প্রথম ধাপ? সময়ই বলে দেবে।


মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই জুলাই, ২০২৫ রাত ১২:৩২

ওমর খাইয়াম বলেছেন:



মনে হচ্ছে, দেশের কিছু ডাকাত ইহার পেছনে আছে; ওরা এসব মানবাধিকার কম্মীদের অনেক উঁচু বেতন দেয়।

বার্মায় আন্তর্জাতিক কেহ যাবে না, বার্মাকে নিয়ে আমেরিকাও মাথা ঘামাতে চাহে না; ওটা চীনের অংগদ রাজ্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.