![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিজের অজ্ঞতা নিজের কাছে যতই ধরা পড়ছে প্রচলিত বিশ্বাসের প্রতি ততই অবিশ্বাস জন্মাছে!
যুক্তরাষ্ট্রের মদতে ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইলের আগ্রাসন দিন দিন বেড়েই চলেছে। মাত্র ৭২ ঘণ্টা মধ্যে তারা ছয়টি দেশে হামলা চালিয়েছে - ফিলিস্তিন, লেবানন, সিরিয়া, তিউনিসিয়া, কাতার এবং ইয়েমেন। এর মধ্যে সবচেয়ে আঘাতমূলক হল কাতারে হামলা, যা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নতুন এক বিপজ্জনক অধ্যায়ের সূচনা করেছে। মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক আইন অমান্য করে কাতারের রাজধানী দোহায় হামলা চালায় ইসরাইল। তাদের দাবি সেখানে হামাস নেতৃবৃন্দের বৈঠককে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে। ওই হামলায় কমপক্ষে ছয়জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে হামাসের রাজনৈতিক শাখার উচ্চপদস্থ নেতা খালিদ আল হাইয়ার পরিবারের সদস্য অন্তর্ভুক্ত।
কাতার এমন একটি দেশ ছিল যা নিজেকে ইসরাইলি আগ্রাসন থেকে নিরাপদ মনে করতে পারত। এটি যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র এবং মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সামরিক ঘাঁটির আয়োজক। গত মে মাসে কাতার মার্কিন অর্থনীতিতে শত শত বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের অঙ্গীকার করেছিল। শান্তি-সাধক রাষ্ট্র হিসেবে খ্যাতি গড়ে তুলেছে, বিভিন্ন সংঘাতে মধ্যস্থতার ভূমিকা পালন করেছে। এমনকি গত মাসেই গাজা যুদ্ধবিরতি আলোচনার অংশ হিসেবে ইসরায়েলি গুপ্তচর সংস্থা মোসাদের পরিচালক দোহায় কাতারি সরকারের অতিথি ছিলেন।
ইসরায়েল রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সম্পর্ক শাসনকারী নিয়মকানুনে আবদ্ধ নয়। এটি আন্তর্জাতিক আইনকে অগ্রাহ্য করে এবং একপ্রকার ঈশ্বরপ্রদত্ত অধিকার দাবি করে - যে তারা সম্প্রসারণ করবে, আর তাদের পথে যাকেই পাওয়া যাবে তাকেই সরিয়ে দেবে। এটি শুধু আইনভঙ্গকারী এক দস্যুরাষ্ট্র নয়, বরং এমন এক রাষ্ট্র, যা প্রকাশ্যে সব রীতি-নীতি ও কনভেনশন প্রত্যাখ্যান করে। বহু দশক ধরে এর নেতারা "গ্রেটার ইসরায়েল"-এর স্বপ্ন দেখছেন, যা ইরাকের ইউফ্রেটিস নদী থেকে মিশরের নীল নদ পর্যন্ত বিস্তৃত। এটি কোনো গোপন ষড়যন্ত্র নয়। গত আগস্টে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু টেলিভিশনে আবারও এই প্রকল্পের প্রতি তার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
গত দুই বছর ধরে ইসরায়েল গাজাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। ৬৪,০০০ এরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। সাংবাদিক এবং ত্রাণকর্মীদের হত্যার সংখ্যাও রেকর্ড ছাড়িয়েছে। সোমবার থেকে গাজায় ইসরাইলের হামলায় অন্তত ১৫০ জন নিহত এবং পাঁচ শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। এমনকি ইসরায়েলি মানবাধিকার সংস্থাগুলোও এখন স্বীকার করতে শুরু করেছে - গাজায় যা ঘটছে তা আসলেই গণহত্যা।
গাজায় ইসরায়েল ব্যবহার করছে তথাকথিত "দাহিয়া ডকট্রিন" - যেখানে বেসামরিক জনগণ ও এলাকা লক্ষ্য করে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হয়। এখানে বেসামরিক হতাহতের ঘটনা এড়ানো হয় না, বরং উদ্দেশ্যমূলকভাবে তৈরি করা হয়। ইসরায়েলি গণমাধ্যমের মতে, তাদের সেনারা ১০০:১ অনুপাতে কাজ করেছে - একজন কমান্ডারকে মারতে হলে তারা ১০০ বেসামরিক মানুষ হত্যা করার অনুমতি দিয়েছে নিজেদেরকে।
সোমবার লেবাননের বেক্কা এবং হেরমেল জেলায় বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। এতে সেখানে অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছেন। একই দিন সিরিয়ায় লাতাকিয়া শহরের একটি বিমান ঘাঁটি এবং সামরিক ব্যারাকে হামলা চালানো হয়। স্থানীয়রা জানান তারা বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পান। সোমবার রাতে তিউনিসিয়ার গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার প্রধান জাহাজ বন্দরে নোঙ্গর করার সময় ড্রোন হামলার শিকার হয়। ২৩ মিটার লম্বা ওই জাহাজটিতে পর্তুগালের পতাকা ছিল এবং ছয়জন কর্মকর্তা অবস্থান করছিলেন। বুধবার ইয়েমেনের রাজধানী সানার বিমানবন্দরে হামলা চালিয়েছে ইসরাইল, যেটি এক মাসের মধ্যে তেল আবিবের দ্বিতীয় হামলা।
পশ্চিম তীরেও একই ধারা স্পষ্ট। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েল নজিরবিহীন হারে ভূমি দখল ও হত্যা চালিয়েছে। শুধু এই বছরেই ১,০০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং ১,১০০ এরও বেশি স্থাপনা ধ্বংস করা হয়েছে। তারা আনুষ্ঠানিকভাবে সংযুক্তির দিকে অগ্রসর হচ্ছে - ট্রাম্প প্রশাসনের পূর্ণ আশীর্বাদে । কাতার এই হামলাকে "কাপুরুষোচিত অপরাধমূলক আগ্রাসন" এবং "১০০ শতাংশ বিশ্বাসঘাতকতা" হিসেবে অভিহিত করেছে। তারা বলেছে এটি তাদের সার্বভৌমত্বের নগ্ন লঙ্ঘন। জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস ও পোপ বিপজ্জনক উত্তেজনার বিষয়ে সতর্ক করেছেন। সিরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ওই হামলাকে আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে বর্ণনা করেছে।
মঙ্গলবারের এই হামলা অনেক প্রশ্ন তুলেছে। প্রথমত, যদি মার্কিন সামরিক ঘাঁটি এমন হামলা ঠেকাতে না পারে, তবে এর উদ্দেশ্য কী? দ্বিতীয়ত, রিপোর্ট অনুযায়ী, ট্রাম্প প্রশাসন নিজেই এই হামলাকে "আশীর্বাদ" দিয়েছে। নিশ্চিতভাবেই যুক্তরাষ্ট্রকে ভরসা করা যায় না - ডেমোক্র্যাট বা রিপাবলিকান কোনোটাই। বাইডেন প্রশাসন গাজায় ১৫ মাস ধরে চলা গণহত্যার সময় ইসরায়েলকে পূর্ণ সামরিক ও কূটনৈতিক সহায়তা দিয়েছে, যুদ্ধ বন্ধে কোনো চাপ প্রয়োগ করেনি। অন্যদিকে ট্রাম্পের টিমে এমন সব জিওনিস্ট আছে, যারা অনেক ইসরায়েলির চেয়েও বেশি "গ্রেটার ইসরায়েল"-এর প্রতি অঙ্গীকারবদধ ।
এখন আরব দেশগুলোর সামনে কঠিন প্রশ্ন। কোনো যৌথ প্রতিক্রিয়া কি তারা দেবে? নাকি আগের মতো নিষ্ক্রিয় থাকবে? ইসরায়েলকে প্রতিহত না করলে প্রতিটি আরব রাজধানীকে জানতে হবে - তারা পরবর্তী লক্ষ্যবস্তু। কিছু রাষ্ট্র হয়তো গোপনে বা প্রকাশ্যে এই হামলাকে স্বাগতও জানাতে পারে, ভেবে যে এতে তারা নিরাপদ হয়ে যাবে। উদাহরণস্বরূপ, সংযুক্ত আরব আমিরাতকে প্রায়ই বলা হয় "ইসরায়েলের উপশহর" - কিন্তু তাদের এই নিরাপত্তাবোধ মারাত্মক ভুল ধারণা হতে পারে।
মঙ্গলবারের হামলা দেখিয়ে দিয়েছে - কোনো জোট, কূটনীতি বা আমেরিকান সুরক্ষা ইসরায়েলের সহিংসতা থেকে কোনো আরব দেশকে রক্ষা করতে পারে না। এখন প্রশ্ন হলো - আরব দেশগুলো কি অবশেষে ওয়াশিংটনের বাইরে তাকাবে? হয়তো রাশিয়া, চীন কিংবা অন্যত্র। আরব দেশগুলোর হয়তো এখনই সময় এসেছে নিজেদের স্বাধীন নিরাপত্তা জোট গঠনের কথা ভাবার। অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে ইসরায়েলের উপর চাপ সৃষ্টি করার। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভর করে থেকে আর কিছু হবে না।
এখনও প্রশ্ন অনেক, উত্তর কম। কিন্তু একটি সত্য পরিষ্কার: ইসরায়েলকে থামানো না হলে, এটি কখনো থামবে না। কাতারের ঘটনা প্রমাণ করেছে যে কোনো আরব দেশই নিরাপদ নয় যতক্ষণ পর্যন্ত এই আগ্রাসী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়া হচ্ছে। আরব বিশ্ব ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এখনই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় - তারা কি এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে, নাকি নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে আরও বড় বিপর্যয়ের জন্য অপেক্ষা করবে? ইতিহাস তাদের এই সিদ্ধান্তের বিচার করবে।
Courtesy: Middle East Eye/Israel’s Attack on Qatar Should Be Wake-up Call for Arab World
১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩০
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: বড়োই হতাশার কথা শুনাইলেন।
২| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩
জেনারেশন একাত্তর বলেছেন:
হামাস, হেজবুল্লাহ, শিয়া মিলিশিয়া, ব্রাদারহুড, শিবির, জামাতকে সাপোর্ট করলে, আমেরিকা সেটা মানবে না।
১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৭
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: কমপেয়ার করলে নেতানিয়াহু বেশি খারাপ না মুসুলনি ও হিটলারকে বেশি খারাপ মনে হয় আপনার ? ইসরায়েল কি আরব দেশের খোদা হয়ে গেলো ?
৩| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:০৮
সাইফুলসাইফসাই বলেছেন: পৃথিবীর সকল মানুষ জানছে ইসরাইল গণহত্যাকরী নিশ্চয় ওরা ধ্বংস হবে
১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:১৯
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: এদেরকে যে কি বলা উচিত তাই বুঝে আসে না । এরা মানুষের পয়দা না ।
৪| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:৪১
জেনারেশন একাত্তর বলেছেন:
খোদা আরবদের পক্ষে আছে বলে মনে হয়।
১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:৪৯
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: কে যে কার সাথে আছে বোঝা মুশকিল।
৫| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৩
কলিমুদ্দি দফাদার বলেছেন: ইসরাইল মধ্য প্রাচ্যের আওয়ামী লীগ।
১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৮
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: আমার মতে আপনি কে বেশি খারাপ এই শিরোনামে লেখা দিতে পারেন সামুতে । শেখ হাসিনা , মোদি নাকি নেতানিয়াহু । ।
©somewhere in net ltd.
১|
১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৪
স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: একপেশে নুয়ে পড়া জাতিসংঘ যেখানে ভূমিকা রাখতে পারছেনা
সেখানে সাম্রাজ্যবিস্তারকারী আমেরিকা - ঈসরাঈল বাহিনী
দেশ দখল করবেই ।
......................................................................................
আমরা জানি আমেরিকাও ভেনেজুয়েলা, পানামা বা কানাডা
দখলের স্বপ্ন দেখে ।