নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দরিদ্র দেশের জনসংখ্যা কে জনশক্তি তে পরিণত করতে হলে কর্মমুখী শিক্ষার বিকল্প নেই।

সৈয়দ কুতুব

নিজের অজ্ঞতা নিজের কাছে যতই ধরা পড়ছে প্রচলিত বিশ্বাসের প্রতি ততই অবিশ্বাস জন্মাছে!

সৈয়দ কুতুব › বিস্তারিত পোস্টঃ

কেহ কেহ নিরুপায় হয়ে আওয়ামী লীগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারে ।

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:১৩


সকালের মৃদু আলোয় মিরপুর বারো নম্বরের পথে পা রাখলাম। শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত এই এলাকায় পুরনো বন্ধুবান্ধব আর পরিচিতদের সাথে দেখা-সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে এসেছিলাম। ফেরার পথে হঠাৎ করেই দেখা হয়ে গেল আশিক ভাইয়ের সাথে। এলাকার একজন সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান তিনি। তার বাবা ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং পরবর্তীকালে সোনালী ব্যাংকের একটি উচ্চ পদে চাকরি করেছেন। নিউমার্কেটে তাদের তিনটি দোকান রয়েছে। চার ভাইবোনের মধ্যে দুই বোনের বিয়ে-শাদি হয়ে গেছে, ছোট ভাই এখন আলাদা ফ্ল্যাটে থাকেন।

আশিক ভাইয়ের সাথে আমার পরিচয় হয়েছিল তার ছেলে সাদমানের সুবাদে। সাদমান আমার বোনের কোচিং সেন্টারে পড়ত। অত্যন্ত ভদ্র ও নামাজি ছেলে, কোনো বাজে অভ্যাস ছিল না তার। যদিও পড়াশোনায় তেমন ভালো ছিল না, তবুও বাবা-মায়ের চাপে সাইন্স নিয়ে পড়তে বাধ্য হয়েছিল। সেই সুবাদে আমি তাকে গণিত পড়াতে তাদের বাড়ি যেতাম, যার ফলে পুরো পরিবারটিকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছি। আশিক ভাইকে দেখে প্রথমেই চমকে উঠলাম। এক সময়ের সুঠামদেহী এই মানুষটির শরীরে এখন স্পষ্ট অধঃপতনের ছাপ। গত বছর মে মাসে যখন শেষবার দেখেছিলাম, তখন তো এমন ছিল না। উৎকণ্ঠিত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম তার শারীরিক অবস্থার কথা। তিনি যা বললেন, তা শুনে মনে হল যেন একটি গোটা সমাজ-রাজনৈতিক বাস্তবতার জীবন্ত দলিল শুনছি।

জুলাই অভ্যুত্থানের পর থেকে আশিক ভাইয়ের জীবনে নেমে এসেছে এক দুর্বিষহ অন্ধকার। নিউমার্কেটের দোকান থেকে চাঁদা দেওয়ার জন্য চাপ আসছে নিয়মিত। আওয়ামী লীগ আমলে বাধ্য হয়ে নিউমার্কেট সমিতির একটি পদে যুক্ত হয়েছিলেন তিনি। কারণ সমিতিতে না থাকলে তৎকালীন ক্ষমতাসীনদের রোষানলে পড়ার ভয় ছিল। ৫ই আগস্টের পর নতুন রাজনৈতিক শক্তির উদ্ভব হয়েছে, যারা এখন সমিতি ও এলাকা দখল করে নিয়েছে। পূর্বে যারা সমিতিতে ছিল, তাদের 'আওয়ামী দোসর' বলে ক্রমাগত চাপ দেওয়া হচ্ছে।

কিন্তু সমস্যা শুধু এখানেই শেষ নয়। আশিক ভাইয়ের বাবা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মিরপুর রূপনগর এলাকায় জমি পেয়েছিলেন। ২০১৮ সালের আগে থেকেই এই জমি নিয়ে কৃষক লীগের এক নেত্রীর সাথে বিরোধ চলছিল। সেই মহিলা নেত্রী দাবি করতেন আশিক ভাইদের জমির কিছু অংশ তার। ২০১৮ সালে লীগ পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর কৃষক লীগের সেই নেত্রী মাস্তান নিয়ে জমি দখলের চেষ্টা করেন। আশিক ভাই ভাইবোনদের কাছে সাহায্যের আবেদন করলেও কেউ এগিয়ে আসেননি। একা হাতে বাবার জমি রক্ষার চেষ্টা করতে গিয়ে তিনি পড়েন চরম বিপদে। থানায় অভিযোগ করার পর পুলিশ পরামর্শ দেয় তৎকালীন এমপি ইলিয়াস মোল্লার সাথে যোগাযোগ করতে। কৃষক লীগের সেই নেত্রী ছিলেন অত্যন্ত উগ্র প্রকৃতির এবং মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত, যার রয়েছে এক দল কিশোর গ্যাং।

গ্রামের বাড়ি এমপি কামাল আহমেদ মজুমদারের পাশে হওয়ায় আশিক ভাই তার মাধ্যমে ইলিয়াস মোল্লার সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে সক্ষম হন। অবশ্য এর জন্য পার্টি ফান্ডে অর্থ প্রদান করতে হয়েছিল তাকে। ইলিয়াস মোল্লা তাকে দায়িত্ব দেন স্থানীয় আবাসিক এলাকার নির্বাচনে তার সমর্থিত প্রার্থী নাসিরের জন্য কাজ করতে। অনিচ্ছাসত্ত্বেও আশিক ভাই এই কাজে যুক্ত হতে বাধ্য হন। অবশেষে ইলিয়াস মোল্লার তত্ত্বাবধানে কৃষক লীগের নেত্রীর সাথে একটি মীমাংসায় পৌঁছান তিনি। এভাবেই একজন সাধারণ মানুষ হয়ে পড়েন রাজনৈতিক প্রচার-প্রচারণার কাজে জড়িত।

আশিক ভাইয়ের বাবার এক বন্ধু, যিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার, তাকে ইলিয়াস মোল্লার এসব কাজ করতে নিষেধ করেছিলেন। কারণ ইলিয়াস মোল্লা মুক্তিযোদ্ধাদের তেমন সম্মান করতেন না। সেই মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ইলিয়াস মোল্লার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুললে চরম অপমানের শিকার হন। ভদ্রলোক ইলিয়াস মোল্লাকে একেবারেই সহ্য করতে পারতেন না। আশিক ভাইয়ের পরিবারের গায়ে লেগে যায় একটি রাজনৈতিক 'ট্যাগ', যা নিয়ে তার স্ত্রী খুশি ছিলেন না।

জুলাই অভ্যুত্থানের পর এই 'ট্যাগিং' আশিক ভাইয়ের জন্য হয়ে উঠেছে জীবন-মৃত্যুর প্রশ্ন। কেউ বা কারা তার নামে জুলাইয়ের হত্যাকাণ্ডের মামলা ঢুকিয়ে দিয়েছে। কিছুদিন তাকে আত্মগোপনে থাকতে হয়েছে, পরিবার এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে হয়েছে।এদিকে নিউমার্কেটে নতুন গ্রুপিং, সমিতির নতুন কর্তাব্যক্তিরা আশিক ভাইয়ের পিছনে লেগে রয়েছেন চাঁদার জন্য। তার অবস্থা দেখে বুঝতে পারলাম তিনি কতটা পেরেশানিতে আছেন।

আশিক ভাইয়ের সাথে কথা বলতে বলতে মনে হচ্ছিল, ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের তৃতীয়বারের মতো টানা ক্ষমতায় আসা কতটা ভুল ছিল। প্রতিটি আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী যেন দেশকে তাদের বাপের তালুকদারি মনে করেছিল। একই এমপিকে বারবার মনোনয়ন দেওয়ার কারণে অনেক সাধারণ মানুষ বাধ্য হয়েছিল লীগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে। আশিক ভাইয়ের ঘটনা শুনতে শুনতে বুঝলাম, কীভাবে অসৎ রাজনীতিবিদরা সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে ফেলে। একটি সাধারন পরিবারের এই দুর্দশা দেখে মনে হল, আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে কত গভীর ক্ষত রয়েছে।

বি :দ্র : ব্লগে যে ছবিটি ব্যবহার করা হয়েছে সেটা নিউএইজ পত্রিকা থেকে নেয়া। উক্ত ছবিতে যাদের দেখা যাচ্ছে তাদের সাথে আশিক ভাইয়ের ঘটনার কোন মিল নেই।

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২৭

জেনারেশন একাত্তর বলেছেন:



আশিক ভাইয়ের বাবা কি যুদ্ধের সময় ঢাকার বাসিব্দা ছিলেন?

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৩৪

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: এরা নোয়াখালির লোক । এরশাদ পিরিয়ডে এই জায়গা পেয়েছে । সমিতি মারফতে । সব জমিতে মুকতিযোদধাদের জমি লেখা । :( । আরো ডিপে যায় নি কখনো। কিভাবে চাকুরি পেলেন সোনালিতে বা দোকান হলো নিউ মারকেটে ।

২| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৪০

জেনারেশন একাত্তর বলেছেন:



এরশাদের আমলে হলে, ওর বাবা বিএনপি'র লোক ছিলো শুরুতে; অবশ্যই ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা; কোন মুক্তিযোদ্ধা ৩টি দোকান পাবার কথা নয়।

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৪৯

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: চাকুরি করেছে সোনালিতে । নিউ মারকেটে দোকান খরিদ করে থাকতে পারে । তবে এদের পরিবার কে ভুয়া মনে হয়নি । বিএনপির হলে এখন খুব আরামে থাকতো। :-B

রুপনগরের জমি মুকতিযোদধা হিসাবে পেয়েছেন।

৩| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২৩

মাথা পাগলা বলেছেন: আপনি একটু খোঁজ নিয়ে দেখেন, হাসিনা পলায়নের পর কতো সহিংসতা ঘটনা ঘটেছে, মানুষ মরেছে, জেল খেটেছে। যারা জেল খাটছে প্রতি মাসে জীবনের বিনিময়ে টাকা দিতে হচ্ছে। ২~৩ টা জেলায় বা গ্রামে এই সহিংসতায় মৃতের সংখ্যা বের করলে পুরো বাংলাদেশে কতজন মারা গেছে, মোটামোটি একটা হিসাব পাবেন। আর এই নিউজগুলো পত্রিকায় ছাপানো হয় না। এগুলো নিয়ে কেউ কথা বলে না। লীগের বাটপারগুলাও বলেনা, শুধু বলবে রাজাকার নিয়ে কথা। বাংলাদেশের রাজনীতি মানেই এরকম, শুধুমাত্র তৃনমূল পর্যায়ের কর্মীরাই সব সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর কাউয়া কাদেরদের টাকার বিনিময়ে লাল কার্পেটে দেশ ছাড়ার সুযোগ দেয়া হয়।

আতঙ্ক খুবই খারাপ জিনিস। দেশের পরিস্থিতি যেন দ্রুত শান্ত হয় - এই কামনা করি।

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৪৩

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: আওয়ামি আমলে কম নিরযাতন করা হয় নি। বাংলাদেশের পলিটিক্স খারাপ।

৪| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৪৮

মাথা পাগলা বলেছেন: @লেখক

বাংলাদেশের রাজনীতি অনেক খারাপ - যে দলই হোক, ক্ষমতার বদল হলে বাংলাদেশে এগুলিই হয়।

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:১৬

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: মাসুদেরা ভালো হবে না ।

৫| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৫৭

কলিমুদ্দি দফাদার বলেছেন: খুবই দুঃখজনক! বিএনপির একটি গ্রুপ নামে-বেনামে মামলার ভয় দেখিয়ে ব্যক্তি ও ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদাবাজি করে যাচ্ছে; এর সাথে জড়িত প্রশাসন ও। ১৬ বছরের ভুখা তার উপর সামনে নির্বাচন; তাঁদের অর্থ দরকার প্রচুর অর্থ!

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:১৮

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: গুগল করে দেখেন । বিএনপি থেকে বহিসকার হয়ে একজন জামাতে যোগ দিয়েছে। তাকে চাদাবাজির কারণে বিএনপি বহিসকার করেছে । সে জামাতে যোগ দিয়ে বলেছে বিএনপি ইসলামিক দল না । গুপতো বাহিনি দেশের পলিটিক্স শেষ করে দিয়েছে। আজকের খবর । :(

৬| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:০৯

কলিমুদ্দি দফাদার বলেছেন: বিএনপি থেকে বহিসকার হয়ে একজন জামাতে যোগ দিয়েছে। তাকে চাদাবাজির কারণে বিএনপি বহিসকার করেছে । সে জামাতে যোগ দিয়ে বলেছে বিএনপি ইসলামিক দল না । গুপতো বাহিনি দেশের পলিটিক্স শেষ করে দিয়েছে। আজকের খবর ।

আমি বরাবরই সকল রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠন এবং অনন্যা অনেক অংগ-সংগঠন গুলোর রাজনীতি নিষিদ্ধের পক্ষে। ছাত্রদল, যুবদল, মংসদল, কৃষকদল ইত্যাদী স্থানীয়ভাবে চাঁদাবাজি, জমিদখল, টেন্ডারবাজি, ঘাটের ইজারা,‌ ডিস-নেট, মাদক ব্যবসায়ের মাধ্যমে আয় করে। এই অংগ-সংগঠন গুলো একটি ভাইটাল ফোর্স হিসেবে তারা কাজ করে। তাঁদের এই কর্মী বাহিনীর হিসাব ধরলে ইন্ডিয়ান রেলের জনবল বা ইউ কে NHS কর্মী থেকে বেশি। রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনতে সংগঠনের বিলুপ্ত করা প্রয়োজন।

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:২১

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: গুপতো পলিটিক্স কালচার আরো খারাপ করে দিয়েছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.