| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সৈয়দ কুতুব
নিজের অজ্ঞতা নিজের কাছে যতই ধরা পড়ছে প্রচলিত বিশ্বাসের প্রতি ততই অবিশ্বাস জন্মাছে!

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হেলাল মিয়া জন্ম থেকেই চোখে দেখতে পান না । উনার পরিবারের তেরো সদস্যের মধ্যে নয়জনের কন্ডিশন একই। প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে আর দশজন মানুষ যেসব কাজ করতে পারেন হেলাল মিয়া এবং তার পরিবারের সদস্যরা সেই কাজ করতে পারে না। আজ থেকে ৫০ বছর পূর্বে কোনো এক বাউলের নিকট থেকে গান-বাজনার বিদ্যা শিখেন হেলাল মিয়া। সেটাই হয়ে উঠে তার জীবিকার একমাত্র উপায়। তবে বাউল আবুল সরকারের বিরুদ্ধে যখন তৌহিদি জনতা মাঠে নামে তখন তাদের নেক নজর অন্ধ গায়ক হেলাল মিয়ার দিকেও পড়ে।
স্থানীয় কতিপয় মাদরাসার ছাত্র(হেফাজতে ইসলাম) তাদের প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে অন্ধ গায়ক হেলাল মিয়ার নিকট এসে গান-বাজনা বন্ধ করতে বলে। তারা গান-বাজনার যন্ত্রপাতি ভেঙে ফেলার হুমকি দেয়। এতে করে বিপদে পড়ে যায় হেলাল মিয়ার পরিবার। প্রায় ৫ দিন তাদের উপার্জন বন্ধ থাকার পর স্থানীয় বিএনপির এক নেতার সাহায্যে মাদরাসা ও হেফাজত নেতাদের সাথে আলোচনা করে হেলাল মিয়ার গান-বাজনার উপর অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়। আজ থেকে আবার হেলাল মিয়া তার পরিবার সহকারে গান-বাজনা করে উপার্জন করতে শুরু করেছেন। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায় হেলাল মিয়া আর কতদিন গান-বাজনা করবেন?
দেশ স্বাধীন হয়েছে ৫৪ বছর হতে চললো আর হেলাল মিয়া গান-বাজনা করছেন প্রায় ৫০ বছর ধরে। এর মাঝে কত সরকার প্রত্যক্ষ করলো জনগণ কিন্তু হেলাল মিয়ার কোনো পরিবর্তন নেই। গান-বাজনা করলে পেটে ভাত জুটে না হলে জুটে না। বিভিন্ন সরকার কত সামাজিক সুরক্ষার নামে নতুন নতুন প্রকল্প খুলে কিন্তু এই অন্ধ গায়কের জীবনের পরিবর্তন ঘটেনি। বিগত শেখ হাসিনার আমলে দুস্থ ও প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেয়া হলেও সেগুলো আলোর মুখ দেখেনি। অনেকে ভাতা পেয়েছে তবে সেটা চাহিদার তুলনায় একেবারে অপ্রতুল।
হেলাল সাহেবকে মাদরাসার ছাত্ররা গান-বাজনা বন্ধ করে ভিক্ষা করতে বলেছে। আইডিয়াটা মন্দ নয়। হেলাল মিয়া এবং তার অন্ধ পরিবার ঢাকায় এসে বস্তিতে রুম ভাড়া নিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি শুরু করতে পারে। ঢাকায় আমরা প্রায়শই দেখি কতিপয় অন্ধ হুজুর একসাথে হাটছেন আর গান করছেন। অভিনব উপায়ে সুললিত কন্ঠস্বরে মানুষের কাছে ভিক্ষা চাচ্ছেন। । দৈনিক ৫০০/৬০০ টাকা অনায়েসে আয় করা সম্ভব। আবার পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন স্পটে ভাগ হয়ে ভিক্ষা করলে ডেইলি ১৫০০ থেকে ২০০০ ইনকাম সম্ভব। যখন ঢাকার মিরপুরে আমাদের টিনশেড বাড়ি ছিলো তখন বাসায় একজন ভিক্ষুককে রুম ভাড়া দিয়েছিলাম। ভিক্ষুকের বউ খুব সুন্দরী তবে বিনা খাটুনিতে পয়সা ইনকামের লোভে মাঝ বয়সী পঙ্গু লোকের সাথে ঘর বেধেছে। বাসায় সুন্দর কাপড় পড়তো তবে ভিক্ষা করার সময় মহিলা ছেঁড়া শাড়ি পড়ে জামাইকে ছোট ঠেলাগাড়ীর মধ্যে ঠেলে ঠেলে সারাদিন ভিক্ষা করতো। এই পরিবারকে ভাড়া দিয়ে আমি অবশ্য পরিবারের নিকট প্রচুর গালমন্দ খেয়েছিলাম।
ভিক্ষুক পরিবারটিকে আমি গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছিলাম। প্রতিদিন তাদের ৮০০/৯০০ টাকা আয় হতো। সকাল- দুপুর-সন্ধ্যা-রাত চারবেলা খেতে পারতো তারা। পরোটা, বট, মোঘলাই পরোটা সবসময় চলতো তাদের বাসায়। বাসার অন্যান্য ভাড়াটিয়া ছিলো গার্মেন্টস শ্রমিক কিংবা ড্রাইভার। তারা ভিক্ষুক পরিবারের লাইফ স্টাইল দেখে বিস্মিত হতো। ভিক্ষুক লোকটির কাছ থেকে মানুষ চড়া সুদে ধার দেনা করতো। মানে পুরোদস্তুর আয়েশী জীবন যাপন করেছে তারা। পরে অবশ্য ভিক্ষুকের ২০ হাজার টাকা নিয়ে তার বউ বয়ফ্রেন্ড সহকারে নিরুদ্দেশ হয়ে যায় ; ভিক্ষুক রুম ছেড়ে দেয়।
ঢাকায় গিয়ে হেলাল সাহেবের পরিবার একই কাজ করতে পারেন। তিনি ৫০ বছর গান করে কিছুই করতে পারেন নি। বাংলাদেশ সরকার তার পরিবারকে কোন সাহায্য করবে না। তাই নিজের জীবন যেমন দারিদ্র্যতায় কেটেছে নেক্সট জেনারেশন যাতে একটু ভালো জীবন পায়, ভালোভাবে খেতে পারে সেই ব্যবস্থা করা উচিত। মাদরাসার ছাত্ররা বুদ্ধিটা খারাপ দেয় নি। ইসলামে গান-বাজনা করে উপার্জন করার চাইতে ভিক্ষাবৃত্তির মাধ্যমে উপার্জন করা উত্তম।

©somewhere in net ltd.
১|
০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:২৫
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: হেলাল মিয়ার গান শুনতে চাইলে : https://www.facebook.com/share/v/1GqjoRZeMM/