নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দরিদ্র দেশের জনসংখ্যা কে জনশক্তি তে পরিণত করতে হলে কর্মমুখী শিক্ষার বিকল্প নেই।

সৈয়দ কুতুব

নিজের অজ্ঞতা নিজের কাছে যতই ধরা পড়ছে প্রচলিত বিশ্বাসের প্রতি ততই অবিশ্বাস জন্মাছে!

সৈয়দ কুতুব › বিস্তারিত পোস্টঃ

একজন নারী শিক্ষিকা কীভাবে কন্যা শিশুর সবচেয়ে অসহায় মুহূর্তের ভিডিও ধারণ করতে পারেন?

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৩


বাংলাদেশে মাঝে মাঝে এমন সব মানুষ রূপী শয়তানের সন্ধান মেলে যাদের দেখে আসল শয়তানেরও নিজের উপর হতাশ হওয়ার কথা। এমন সব প্রজাতির মানুষ বাংলাদেশে বসবাস করেন যাদের মস্তিষ্ক খুলে দেখার প্রয়োজনীয়তা আছে বলে মনে করি। কাজে কর্মে ভাবনা চিন্তায় ক্রমশ আমরা কি অপরাধী হয়ে যাচ্ছি? পবিত্র সম্পর্কগুলো কেমন জানি অবিশ্বাসের সম্পর্ক হয়ে গেছে।

একসময় বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ ভাবতো নারীদের মন দয়ালু, তারা কম অপরাধপ্রবণ এবং নিজস্ব জাতির প্রতি তাদের মনে দরদ রয়েছে। কিন্তু সময়ের সাথে মানুষের ধারণা পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। কারণ খাদিজা আক্তারের মতো ব্যক্তিরা প্রমাণ করে দিচ্ছে যে অপরাধ, নিষ্ঠুরতা এবং বিকৃতি লিঙ্গ চেনে না। একজন নারী হওয়া মানেই যে তিনি স্বয়ংক্রিয়ভাবে দয়ালু বা সুরক্ষাকারী হবেন, তা নয়। মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, empathy বা সহানুভূতি জেনেটিক নয়, এটি একটি choice। আর খাদিজা আক্তার তার choice পরিষ্কার করে দিয়েছেন।

বাংলাদেশের গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর গ্রামের সহজ সরল কন্যা রুপা আক্তার। তার বাবা একজন প্রবাসী হওয়ার ফলে আর দশটা শিশুর মতো তার বেড়ে উঠা স্বাভাবিক হবে না। তার মধ্যে নিরাপত্তার অভাবজনিত ইস্যু সবসময় কাজ করবে। গ্রামে একটা মেয়ে ১৩-১৪ বছর হয়ে গেলেই মানুষের চোখে মেয়ে শিশুটি বিয়ের জন্য লায়েক হয়ে ওঠে। নানা জায়গা থেকে প্রস্তাব আসে, মেয়েটির স্বাভাবিক চলাফেরায় কিছুটা রক্ষণশীলতা আরোপ করা হয়। গ্রামে বহু বেকার ছেলে রয়েছে যারা পড়াশোনাও করে না আবার কোনো কাজকর্মও করে না। এরা মেয়েদের ইভটিজিং করে। এই কারণে অনেক পরিবারে স্কুলের তুলনায় মাদ্রাসাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। মেয়ে কোরআন হাদিসের পাশাপাশি বাংলা ইংরেজি লিখতে পড়তে পারলেই বাবার মতো প্রবাসী কেউ মেয়েটিকে বিয়ে করে নিবে। একটা সাধারণ গ্রাম্য পরিবারের মেয়ের জীবনে এর চেয়ে ভালো আর কি হতে পারে?

মাদ্রাসা শিক্ষা মূলত ছেলেমেয়ে যাতে বে-লাইনে চলে না যায়, নামাজ কালাম ও ধর্মীয় আদব কায়দা শেখার প্রধান মাধ্যম হিসাবে বিবেচিত। রুপার পরিবারও এমনটা ভেবেই মেয়েকে মুকসুদপুরের বামনডাঙ্গার এক হাফেজিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি করে দেয়। রুপা পঞ্চম জামাতের শিক্ষার্থী ছিলো। পর্দানশীল রুপার বাবার দেশে অনুপস্থিতির কথা অবশ্যই মাদ্রাসা সুপার মাহমুদুল হাসান শিকদার জানতেন। তা না হলে শত শত শিক্ষার্থীর মধ্যে কেন রুপাই তার লালসার শিকার হলো? কারণটা খুবই সোজা। পুরুষ আত্মীয় স্বজন হয়তো রুপাদের আশেপাশে না থাকার কারণে রুপার পরিবারের মধ্যে ভরসা এবং নিরাপত্তার ঘাটতি ছিলো। রুপার মা নিশ্চয়ই কোনো এক সহজ সরল বঙ্গ ললনা হবেন। এসব কিছুই হোস্টেল সুপারের দৃষ্টিগোচর হয়েছিল। রুপার বয়সী কিশোরীদের জীবনে এখন সবে যৌবনের আলোকছটা দেখা দিয়েছে। এই বয়সীরা এমনিতেই থাকে vulnerable অবস্থায়। এমন সময় কারো মিষ্টি কথায় কিংবা অতিরিক্ত সদয় আচরণের পিছনে মূল উদ্দেশ্য বোঝা যায় না। রুপাও বুঝতে পারেনি।

গত ২৬ নভেম্বর নরপশু মাহমুদুল হাসান পঞ্চাশ বছর বয়সে আমাদের ছোট্ট রুপাকে ধর্ষণ করে। বলে রাখা ভালো, এই মাহমুদুল হাসান স্থানীয় এক মসজিদে ইমামতিও করেন। এমন অপরাধপ্রবণ মন নিয়ে মানুষ ইমামতির মতো পেশায় জড়িত হন যা ভাবতেও ঘেন্না হয়। যদি তার সত্যিই বিয়ে করার ইচ্ছা থাকতো, বিশেষ করে কিশোরী মেয়ে বিয়ে করতে মন চাইতো, তবে তিনি একাধিকবার সেই কাজ করতে পারতেন। কিন্তু তিনি একটা কিশোরী মেয়েকে আত্মিকভাবে ধ্বংস করে দিলেন। এই ধরনের ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে, তবে এই ঘটনার সবচেয়ে মর্মান্তিক দিক অন্য জায়গায়।

হোস্টেল সুপারকে এই ঘৃণ্য কাজে সহায়তা করেছেন একই মাদ্রাসার ত্রিশ বছর বয়সী শিক্ষিকা খাদিজা আক্তার। খবরের এই অংশ পড়ে আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম। এই খাদিজা আক্তার হোস্টেল সুপার ধর্ষণের সময় ভিডিও ধারণ করে রেখেছেন রুপাকে ব্ল্যাকমেইল করার জন্য। একজন কিশোরী মেয়ের অসহায়ত্বের ভিডিও কীভাবে তিনি নারী হয়ে ধারণ করলেন? মেয়েটির আর্তনাদে তো শিক্ষিকার হৃদয় ছিঁড়ে যাওয়ার কথা।

খাদিজা আক্তার এই কাজ করেছেন কেন ? তার motivation কী ছিল? এই ধরনের ক্ষেত্রে তিনটি প্রধান কারণ থাকতে পারে। প্রথমত, আর্থিক লাভ। সম্ভবত মাহমুদুল তাকে টাকা বা অন্য কোনো সুবিধা দিতেন। এটি তার কাছে একটি business model ছিল যেখানে রুপা একটি product এবং মাহমুদুল একজন client। দ্বিতীয়ত, মাহমুদুলের সাথে তার সম্ভবত একটি romantic বা sexual relationship ছিল। তাকে খুশি রাখার জন্য, সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য তিনি এই নিচু পর্যায়ে নেমেছেন। তৃতীয়ত, power এবং control-এর নেশা। যখন একজন মানুষ অন্যদের জীবন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, বিশেষ করে দুর্বল শিশুদের, তখন কিছু বিকৃত মানুষ সেখান থেকে psychological pleasure পায়। ভিডিও থাকার কারণে খাদিজা একই সাথে রুপা এবং মাহমুদুল দুজনকেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিলেন। এই ক্ষমতা তার কাছে ছিল একধরনের নেশা।

নারী শিক্ষিকা হিসেবে খাদিজা আক্তার বিশেষভাবে বিপজ্জনক কারণ সমাজ নারীদের automatically nurturing এবং protective মনে করে। মেয়ে শিশুরা নারী শিক্ষিকাকে বেশি বিশ্বাস করে এবং বাবামায়েরাও ভাবেন যে মহিলা শিক্ষিকা থাকলে তাদের মেয়ে নিরাপদ। খাদিজা এই সামাজিক বিশ্বাসের সবচেয়ে জঘন্য অপব্যবহার করেছেন। তিনি জানতেন একটি মেয়ে শিশু কীসে সবচেয়ে বেশি ভয় পায়, তাই তিনি সেই জায়গায় আঘাত করেছেন। ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি, বাবা মায়ের কাছে জানিয়ে দেওয়ার ভয়, সামাজিক লজ্জার আতঙ্ক, এই সব দিয়ে রুপাকে মানসিকভাবে বন্দী করে রেখেছিলেন খাদিজা।

খাদিজা আক্তার শুধু ভিডিও ধারণ করেই থেমে থাকেননি। তিনি সেই ভিডিও দিয়ে রুপাকে ব্ল্যাকমেইল করতে থাকেন এবং মাদ্রাসার ছাত্রদের মাধ্যমে বারবার রুপাকে ডেকে পাঠাতেন মাহমুদুলের কাছে। রুপার বড় বোন সাদিয়া আক্তার জানান, রুপা যেতে অস্বীকার করলে খাদিজা ফোন করে প্রচণ্ড চাপ দিতেন। এই যে একটি শিশুকে মানসিকভাবে নির্যাতন করা, তাকে বারবার একজন ধর্ষকের কাছে পাঠানো, এটি মূলত human trafficking বা যৌন দাসত্বের সমান অপরাধ।

রুপা যখন পরিবারকে ঘটনাটি জানায়, তারা সামাজিক লজ্জার ভয়ে বিষয়টি চাপা রাখতে চেষ্টা করেন। এই silence বা নীরবতাই predator-দের আরও সাহসী করে তোলে। কিন্তু শিক্ষক ও তার সহযোগী শিক্ষিকা মারফত বিয়ের প্রস্তাব দিতে এসে রুপাকে আবার ডেকে পাঠানো হয়। এই অসম্মান এবং ব্ল্যাকমেইলের যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে চতুর্থ ডিসেম্বর রুপা গলায় ফাঁস দিয়ে চিরকালের জন্য জীবনের মায়া ত্যাগ করে।

রুপার আত্মহত্যা একটি tragedy যা এড়ানো যেত। তার মৃত্যু নয়, বরং খাদিজা ও মাহমুদুলের গ্রেপ্তার এবং কঠোর শাস্তিই ছিল সঠিক সমাধান। রুপা যদি জানতো যে এই অপরাধে তার কোনো দোষ নেই, যে তার জন্য support system আছে,, সে victim কখনো criminal নয়, তাহলে হয়তো সে বেঁচে থাকতো এবং justice পেতো। কিন্তু সে ছোট্ট মেয়েটি হয়তো বুঝতে পেরেছিল যে নামকাওয়াস্তে বিচার সালিশ হবে যেটা তার অপমান আরো বাড়াবে, কিংবা তাকে এক নরপশুকে বিবাহ করে তার অপরাধকে ঢেকে দিতে হবে।

গ্রামের মানুষ ভালো কাজ করেছে গণধোলাই দিয়ে হোস্টেল সুপারকে হাসপাতালে পাঠিয়ে দিয়েছে, যদিও আমরা জানি যে proper legal trial এবং maximum punishment-ই সঠিক পথ। পুলিশ দুজনকেই গ্রেপ্তার করেছে এবং মামলা দায়ের করা হয়েছে ধর্ষণ ও আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে। কিন্তু শাস্তি হতে হবে exemplary, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এমন ভাবতেও সাহস না পায়।

এই ঘটনা আমাদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দেয়। প্রথমত, trust সবসময় safety-এর guarantee নয়। religious institution হোক, female teacher হোক, কিছুই automatic নিরাপত্তা নিশ্চিত করে না। predator-দের কোনো নির্দিষ্ট চেহারা নেই। তারা শিক্ষক, ইমাম, শিক্ষিকা, যেকোনো রূপে আসতে পারে। দ্বিতীয়ত, সামাজিক লজ্জার ভয়ে নীরব থাকা মানে predator-দের সুরক্ষা দেওয়া। বাবা-মায়েদের বুঝতে হবে যে সমাজে কী বলবে এটি তাদের সন্তানের safety-এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নয়। immediate police report করাই একমাত্র সঠিক পদক্ষেপ। তৃতীয়ত, marriage কখনো rape-এর solution নয়। এই backward mentality পরিবর্তন করতে হবে।


ছাত্রীর ‘ধর্ষণ’ করে শিক্ষক, ‘ভিডিও ধারণ’ করে শিক্ষিকা- আরটিভি ।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৫৬

জেন একাত্তর বলেছেন:



মোল্লা ইত্যাদির মাথায় বর্তমান বিশ্ব ও সংস্কৃতির কোন প্রভাব নেই; এগুলো আধা-মানব।

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:০০

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: তাই বলে ভিডিও ধারণ করবেন ফিমেইল টিচার ? মেয়েটা সেদিনই মারা গিয়েছে ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.