নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দরিদ্র দেশের জনসংখ্যা কে জনশক্তি তে পরিণত করতে হলে কর্মমুখী শিক্ষার বিকল্প নেই।

সৈয়দ কুতুব

নিজের অজ্ঞতা নিজের কাছে যতই ধরা পড়ছে প্রচলিত বিশ্বাসের প্রতি ততই অবিশ্বাস জন্মাছে!

সৈয়দ কুতুব › বিস্তারিত পোস্টঃ

রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে ধর্ম অবমাননার ব্যবহার ক্রমশ বাড়ছে !

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:২৯


ঢাকায় এসে প্রথম যে স্কুলে ভর্তি হয়েছিলাম, সেটা ছিল মিরপুরের একটা নামকরা প্রতিষ্ঠান। লটারির যুগ তখনো আসেনি, এডমিশন টেস্ট দিয়ে ঢুকতে হতো। ছোট্ট বয়সে বুঝিনি যে স্কুলের টিচাররা কোন মতাদর্শের মানুষ। কিন্তু ছোট মামা যখন ঢাকায় আসতেন, তখন শুনতাম জামায়াতে ইসলামী সংসদে গেছে, মন্ত্রী হয়েছে। রাজাকারের দল নাকি দেশ চায়নি তারা এখন পতাকা গাড়িতে লাগিয়ে সংসদে যাচ্ছে। আবার বড় মামি এসে মাকে বলতেন জামায়াতের এমপিরা ভালো মন্ত্রণালয় পায়নি। এসব শুনতাম খুব আগ্রহ নিয়ে, কারণ ছোট মামাকে প্রশ্ন করার একটা সুযোগ পেতাম। এভাবেই জামায়াত সম্পর্কে জানাশোনা বাড়তে লাগলো।

স্কুলের কতিপয় স্যার যে খাঁটি জামায়াতি সেটা বুঝতে দুই বছর লেগেছিল। মেজো চাচা ইসলামিক ফাউন্ডেশনে চাকরি করতেন, উনিও জামায়াতি ছিলেন। চাচাতো ভাইরা জামায়াত-শিবিরের প্রোগ্রামে নিয়ে যেত। খানাপিনার লোভ সামলাতে পারতাম না বলে যেতাম। এমন একটা অনুষ্ঠানে গিয়ে পুরো তাজ্জব বনে গেলাম। দেখি আমার স্কুলের চারজন স্যার সেখানে উপস্থিত। রাকিবুল স্যারকে দেখে তো মাথাই নষ্ট হয়ে গেল।

রাকিবুল স্যার আমাদের ধর্ম ক্লাস নিতেন। আমরা আরবি শিক্ষার সহায়ক বইও পড়তাম। আমি বেশ সুন্দর আরবি লিখতে পারতাম। ধর্ম পরীক্ষায় খাতার মধ্যে আরবিতে আয়াত আর তরজমা লিখে স্যারদের পাগল করে ফেলতাম। একদিন রাকিবুল স্যার তার টেবিলে একটা আরবি বই দেখতে পেলেন। আসলে বন্ধুরা দুষ্টুমি করে আমার বই লুকিয়ে রাখতে গিয়ে স্যারের টেবিলে রেখে এসেছিল। স্যার যখন বইয়ের গায়ে লেখা রোল পড়ছিলেন, আমি দাঁড়িয়ে বললাম বইটা আমার। যেই বই নিতে এগিয়ে গেলাম, স্যার আমার দিকে বইটা ছুড়ে মারলেন। একজন ধর্ম শিক্ষক আরবি বই ছুড়ে মারলেন! ক্লাসের বাকি সময় ভাবছিলাম কীভাবে একজন ধর্ম স্যার এমন ধৃষ্টতা দেখালেন। সাধারণত কাউকে বই ছুড়ে মারা খুবই বাজে কাজ। বিদ্যা ছোড়াছুড়ি ভালো কথা নয়। আর সেটা যদি ধর্মীয় আরবি বই হয়, তাহলে তো কোনো কথাই নেই।

জামায়াতের অনুষ্ঠানে রাকিবুল স্যারকে দেখার পর সবাইকে ঘটনাটা বললাম। কেউ বিশেষ উত্তেজিত হলো না। কিন্তু আমার মনে খচখচানি গেল না। জামায়াতের লোকজন বই ছুড়ে মারে ; তারা খারাপ, এই ধারণা আরও বদ্ধমূল হলো। পরে অবশ্য একটা ব্যাখ্যা পেয়েছিলাম যে আরবি কেবলই একটা ভাষা। আরবি লেখা দেখলে এত সম্মানের কিছু নেই যদি না সেটা ঐশী গ্রন্থ না হয়। কিন্তু আমাদের বইতে তো ধর্মীয় বাণীও ছিল। যাই হোক, আসল কথায় ফিরে আসি।

জামায়াতের সুপার অ্যাডভোকেট শিশির মনির আজ ধর্ম অবমাননার অভিযোগে মামলা খেয়েছেন। শিশির মনির সনাতন ধর্মের অনুষ্ঠানে গিয়ে বলেছিলেন মুসলমানের রোজা আর হিন্দুদের পূজা নাকি একই রকম। এর বিরুদ্ধে তখন শত শত হুজুর ওয়াজ করে শিশির মনিরের শা@য়া-মা@য়া ছিঁড়ে ফেললেও কোনো হুজুর ধর্ম অবমাননার মামলা করেননি। বরং তারা ভিউ ব্যবসায়ী হিসেবে ডলার কামিয়েছেন। উনাদের ডলার কামানো দেখে মনে মনে স্বস্তি পাই যে এসব সেলেব হুজুরদের কারণে বাংলাদেশ হয়তো কোনোদিন আফগানিস্তান হবে না। আমাদের সেলেব হুজুরদের গাড়ি-বাড়ি, দামি আইফোনের প্রতি আকর্ষণ আছে। আফগান মুজাহিদদের এসব চাহিদা কম। এতদিন পর শিশির মনির মামলা খেলেন কেন ?

ধর্ম অবমাননাকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার পেছনে জামায়াতের অবদান অপরিসীম। সাঈদী হুজুরকে চাঁদে দেখা গেছে থেকে শুরু করে জান্নাতের টিকিট বিক্রি, সবকিছুতে জামায়াতের জুড়ি মেলা ভার। এসব মামলা-মামলা খেলায় তারা বেশ দক্ষ। এই যে বাউল আবুল সরকারের আল্লাহর শানে বেয়াদবি নিয়ে এত কাণ্ড ঘটে গেছে, তার পেছনে একটা রাজনৈতিক কারণও আছে। আবুল সরকার বাউল কমিউনিটিকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে ভোট দিতে বলেছেন। বাউলদের সাথে ধর্মীয় গোষ্ঠীর সংঘাত বহু পুরনো। বাউল কমিউনিটি মূলত আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক। এবার লীগের অনুপস্থিতিতে তারা বিএনপিকে ভোট দেওয়ার চিন্তা করছে। এতেই যত জ্বালা ধরে গেছে একটি দলের। বাউলরা যদি পথে-প্রান্তরে গান করে মানুষকে ভুজুংভাজুং বোঝায়, তাহলে মহাবিপদ। এদের পাছায় লাথি মেরে পানিতে ফেলে দেওয়া নাকি একমাত্র সমাধান। কিন্তু জামায়াতের সুপার অ্যাডভোকেট শিশির মনিরের বিরুদ্ধে কে আবার মামলা ঠুকে দিলো?

এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত না কে এই কাজটি করেছে, তবে বিএনপির করার সম্ভাবনা বেশি। বিএনপি কেন এমন কাজ করতে পারে? কারণ ঢিল মারলে পাটকেল খেতেই হবে। গত নভেম্বরে বিএনপির চৌদ্দ আসনের ভবিষ্যৎ এমপি সানজিদা তুলি আপার বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ আনা হয়েছে। আর এই কাজটি বিএনপির আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশীর সাথে যোগসাজশে এনসিপির শ্রমিক উইংয়ের এক নেতা করেছেন। এদের পেছনে বড় হাওয়া দিয়েছে জামায়াতি অ্যাক্টিভিস্টরা। এমনকি জামায়াতের পুরুষতন্ত্রে দীক্ষিত নারীরাও তুলি আপুকে ধুয়ে দিয়েছেন। জামায়াতের এত উত্তেজিত হওয়ার কারণ কী? যতই ধর্মকে টেনে সামনে আনার চেষ্টা করুক, জামায়াতের পেছনে মূলত রাজনৈতিক কারণটাই মুখ্য।

ঢাকা-১৪ আসনে প্রার্থী হয়েছেন মীর কাসেম আলির গুম হওয়া ছেলে ব্যারিস্টার আরমান। শেখ হাসিনার আমলে নির্যাতিত হয়েছেন এমন ইমেজ কাজে লাগিয়ে জিততে চান আরমান। কিন্তু প্রধান বাধা সানজিদা তুলি আপু। তিনি হচ্ছেন মায়ের ডাক নামক একটি সংগঠনের প্রধান ব্যক্তিত্ব। যারা গুম হয়েছে তাদের জন্য লড়াইয়ে অগ্রপথিক ছিলেন তিনি। জামায়াতের পথের কাঁটা হচ্ছে তুলি আপা। তাই তুলি আপার বক্তব্য নিয়ে জামায়াত বেশ হাঙ্গামা করেছে। যদি তুলি আপুকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে দেওয়া যায়, তাহলে লাভ কার? তুলি আপা তার বক্তব্যের পরদিনই আরও বিশদ ব্যাখ্যা দিয়ে ভুল বোঝাবুঝির জন্য ক্ষমা চেয়েও রেহাই পাননি। তাকে মামলা খেতে হয়েছে। তুলনা করলে তুলি আপুর বক্তব্যের চেয়ে হাজার গুণ খারাপ মন্তব্য করেছেন শিশির মনির। কিন্তু কেউ সাথে সাথে মামলা করেনি। যদি বিএনপি সত্যিই এই মামলা করে থাকে, তাহলে তারা খুবই ভালো কাজ করেছে। জামায়াত-শিবিরের যদি এবার কিছুটা বোধোদয় হয়!

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:২২

জেন একাত্তর বলেছেন:


দেশটা ভরে গেছে হায়েনায়।

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০২

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: হায়েনারা বেশি সুযোগ পেয়েছে আপনার পিও দল খারাপ হয়ে যাওয়ায় । আরো করেন আওয়ামি লি সাপোরট ।

২| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:১৮

রাজীব নুর বলেছেন: আপনি মূলত ধার্মিক মানুষ।
এখনও আধুনিক হতে পারেন নি। পারবেনও না। ধার্মিক হওয়া দোষের কিছু না। সমস্যা হলো ধার্মিকদের কর্মকান্ড হাস্যকর। এরা ব্যস্ত রাস্তা আটকে নামাজ পড়ে। বেসিনের উপর পা তুলে ওজু করে। এরা মাদ্রাসায় বলাৎকার করে। তাদের খারাও কাজের অভাব নেই।

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৯

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: লাইনে আসুন , ইসলাম কে ভালোবাসুন ।

৩| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৩৭

নতুন বলেছেন: ধর্ম বরাবারই রাজনিতিকদের কাছে একটা চমতকার কার্ড। এর ব্যবহার অতীতে সব সময়ই করেছে নেতা গোস্ঠি।

ধর্ম কর্ম সবই মিথ্যা রাজনিতি আর ক্ষমতাই সত্য ;)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.