![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
।।তের ।।
১৮৫৬ সালের মধ্যেই ভারতের অধিকাংশ অঞ্চল ইংরেজদের দ্বারা ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হস্তগত হয়। ১৮৫৭ সালে হয় সিপাহী বিদ্রোহ।১৮৫৭ সালে আরও একটি ঘটনা ঘটে।দিল্লীর শেষ মোগল সম্রাট বাহাদুর শাহ থেকে আনুষ্ঠানিক ক্ষমতা থেকে চলে আসে ইংরেজদের হাতে।এর পরের বছরই অর্থাৎ ১৮৫৮ সালে ভারতে কোম্পানি-শাসনের অবসান ঘটে। শুরু হয় রানির অধীনে ব্রিটেনের প্রত্যক্ষ শাসন।১৮৭৬ সালে দক্ষিণ এশিয়ায় বৃটিশ অধিকৃত সমগ্র অঞ্চলটিকেই সরকারীভাবে ভারতীয় সাম্রাজ্য নামে অভিহিত করা হয়। অখন্ড বৃটিশ ভারত চিন্তাটি আস্তে ধীরে ইংরেজদের মাথা থেকে ভারতীয় রাজনীতিবিদদেরও চিন্তা কর্মে স্থান করে নেয়।সেই চিন্তার খেসারত দিতে হয় কেবল বাংলাকে এবং এককভাবে।
১৮৮৫ সালে থিওজোফিক্যাল সোসাইটির কিছু "অকাল্ট" সদস্য ব্রিটিশ ভারতে রাজনৈতিক দল কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা করে। এঁরা হলেন অ্যালান অক্টোভিয়ান হিউম, দাদাভাই নওরোজি, দিনশ এদুলজি ওয়াচা, উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, মনমোহন ঘোষ, মহাদেব গোবিন্দ রানাডে ও উইলিয়াম ওয়েডারবার্ন প্রমুখ। উল্লেখ্য বিশ্বের বৃহত্তম ও অন্যতম প্রাচীন রাজনৈতিক সংগঠন এই ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবার স্বার্থ রক্ষার জন্য ব্রিটিশ ভারতে কংগ্রেস গঠিত হয়।কংগ্রেস গঠন ভারতে ইংরেজদের উদার নীতির ফসল।গোটা ভারতে তখন ৪০ কোটি লোকের মধ্যে মাত্র ১০ কোটি মুসলমানের বসবাস। ভারতীয় উপমহাদেশে প্রায় ৬০০ বছরের মুসলিম শাসনের পরিসমাপ্তি ইংরেজদের হাতে। ভারতবর্ষে ৬০০ বছরের মুসলিম শাসনে মুসলমানদের আলাদা আবাসভূমির প্রশ্ন আসেনি কখনও বা বিদায় লগ্নে কোন মুসলিম শাসক সে ব্যবস্থাও করে রেখে যাননি।অথচ ৬০০ বছরের মুসলিম শাসনের বিপরীতে ইংরেজদের মাত্র ২০০ বছরের শাসনান্তে সেই ভারতবর্ষ থেকে বিশ্ব পেয়েছে আলাদা দুটি মুসলিম রাষ্ট্র।এ ব্যর্থতা কেবল ইংরেজদের একার নয় ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের তখনকার মাত্রাতিরিক্ত হিন্দুপ্রীতি এবং সাম্প্র্রদায়িক মনোভাবও কোন অংশে কম নয়।
দিল্লীর শেষ মোগল সম্রাট বাহাদুর শাহ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে ইংরেজরা ইংরেজ রাজত্বকে আস্তে আস্তে দিল্লিমুখি করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে।তার রাজনৈতিক মেরুকরণ ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা।জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবার স্বার্থে এর সূচনা রুপ পরিগ্রহ হলেও অচিরেই এটি কেবলমাত্র একটি ধর্মের সেবাকেন্দ্রে পরিণত হয়।কংগ্রেসের অস্থিমজ্জা হিন্দুদের দ্বারা আবর্তিত হয়ে পড়ে।ইংরেজরা সত্যটা ১৯০৬ সালে এসে হাড়ে হাড়ে টের পায় বঙ্গভঙ্গ করতে গিয়ে।ইংরেজ যাত্রা তখন দিল্লিমুখী।দিল্লিতে বসে যাতে উত্তর-পূর্ব ভারত নিয়ে চিন্তামুক্ত থাকা যায় সে ভাবনা থেকে ইংরেজরা বাংলাকে দু’ভাগ করতে গিয়ে একদিকে যেমন বাংলার হিন্দুদের রোষানলে পড়ে অন্য দিকে তেমনি পড়ে হিন্দুপ্রধান কংগ্রেসের তোপের মুখে।বঙ্গভঙ্গ এবং সিমলা ডেপুটেশনের প্রতি কংগ্রেস ও হিন্দুদের মাত্রাতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া ও সাম্প্র্রদায়িক মনোভাব ভারতবর্ষে মুসলমানদের জন্য আলাদা রাজনৈতিক দল গঠনের প্রেক্ষাপট তৈরি করে।১৯০৬ সালেই গঠিত হয় মুসলিম লীগ।মুসলিম লীগ গঠন ভারতবর্ষে ইংরেজদের হিন্দু মুসলিম বিভাজন-রাজনীতির ষোলকলা পূর্ণ করে।১৯০৯,১৯১৯ ও ১৯২৯ সালে আসতে থাকে একের পর এক সব চমৎকৃত নীতি।এরই ফাঁকে ১৯১১ সালের ১২ ডিসেম্বর বৃটিশ ভারতের রাজধানী কলকাতা থেকে দিল্লিতে স্থানান্তরিত হয়।
আজকের বাংলা ভাষী জনগোষ্ঠী আকাশ থেকে উড়ে আসা কোন জাতি নয়।বাংলাদেশ,পশ্চিম বঙ্গ, ত্রিপুরা, আসাম,উড়িষ্যা ও বিহারে বসবাসকারী বাঙ্গালী আরব বা ইউরোপীয় বণিকদের রেখে যাওয়া কোন উচ্ছিষ্টও নয়।আবার ভিনদেশ থেকে এসে অন্য জাতির ভূমি জবরদখলকারী জবরদস্তি কোন জাতিও নয়।বাঙ্গালীরা আপন মায়ের কোলে আপন প্রকৃতিতে বেড়ে উঠা সহজ সরল একটি জাতিগোষ্ঠী।বাংলা ভাষা যুগে যুগে,কালে কালে অন্য ভাষাভাষিকে মোহিত করেছে।বাংলার সম্পদের দুর্বার আকর্ষণ ভিন জাতি বণিক, ব্যবসায়ী, রাজ্যদুরাচারীকে টেনে এনেছে বার বার।কিন্তু বাঙ্গালীরা কখনও লোলুপ দৃষ্টি নিয়ে অন্যের সম্পদ ছুঁয়ে দেখার অসৎ সাহসটুকু পর্যন্ত দেখায়নি।বাংলাকে বিধাতা যা দিয়েছে একটি জাতির টাকশাল হিসাবে তাই যথেষ্ট। বাংলার সম্পদ চুষে লন্ডন,দিল্লি,ইসলামাবাদ ফুলে ফেঁপে বড়লোক হয়েছে।আর অভুক্ত থেকেছে বাঙ্গালী। রাজ্যসুখের অন্ধ ভক্তি আর খেটে খাওয়ার অদম্য বাসনা বাঙ্গালী চরিত্রের ফসল।ঘরকুনো মেয়েকে কেবল আদর মিশ্রিত শাসন দাও সে তোমার বাধ্য বধূ হয়ে থাকবে জীবনভর।বাঙ্গালী ললনারা পতীভক্ত নারী একথা বিশ্বময়।কিন্তু বিশ্বাসটা ভেঙ্গে গেলে কেবল আপনকে কষ্ট দেয়, নিজেকে জ্বেলে পুঁড়ে নিঃশেষ করে দেয়।ঠকলে ঠকার সংগা খোঁজে,আগে নয়।বাঙ্গালী নিজেকে কেবল ঘরকুনো নারী চরিত্রে আষ্টেপিষ্টে বেঁধে রাখতে বদ্ধপরিকর।
ইংরেজরা নবাবদের যে বাংলা দিয়ে ভারত শাসন শুরু করে সে বাংলা ছিল আজকের বাংলাদেশ,পশ্চিম বঙ্গ,বিহার,ত্রিপুরা।আরও ছিল উড়িষ্যা ও ঝাড়খন্ডের কিছু অংশ। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সময়ে বৃটিশ ভারত বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি,বোম্বাই প্রেসিডেন্সি ও মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি নামে তিন খন্ডে বিভক্ত ছিল।এর মধ্যে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি ছিল সর্ববৃহৎ।রানির অধীনে ব্রিটেনের প্রত্যক্ষ শাসন শুরুর পর ১৮৭৮ সালে আসামকে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি থেকে পৃথক করা হয়। ইংরেজরা বৃটিশ ভারতে ১৮৯২ সালের ভারতীয় কাউন্সিল আইন বলে প্রথম প্রাদেশিক আইনসভা প্রতিষ্ঠিা করে এবং সরকার ব্যবস্থায় ভারতীয়দের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে।আগেই বলেছি ১৯৮৫ সালে ভারতীয়রা কংগ্রেস গঠন করে রাজনীতি করারও সুযোগ পায়।১৯০৯ ও ১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইন দুটি সরকার ব্যবস্থায় ভারতীয়দের অংশগ্রহণের সুযোগ আরও প্রসারিত করে। ভারতের সংবিধানে ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের প্রভাব অপরিসীম।ভারতীয় সংবিধানের বহু বিষয় সরাসরি এই আইন থেকে গৃহীত হয়। সরকারের যুক্তরাষ্ট্রীয় গঠন, প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন, যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিষদ ও রাজ্যসভা নিয়ে দ্বিকক্ষীয় আইনসভা, কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারগুলির মধ্যে আইনবিভাগীয় ক্ষমতাবণ্টনের মতো বিষয়গুলি উক্ত আইনের এমন কতকগুলি বিষয় যা বর্তমান সংবিধানেও গৃহীত হয়েছে। ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন ভারতের প্রদেশগুলিকে স্বায়ত্তশাসন প্রদান করে সমস্ত ভারতীয় প্রাদেশিক রাজ্যগুলিকে ভারতীয় ফেডারেশনের আওতায় নিয়ে আসে।সিন্ধ বোম্বে এবং উড়িষ্যা বিহার থেকে আলাদা করা হল। বার্মাকে ভারত থেকে আলাদা করা হল।(উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে)।বিশাল বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি একে একে আসাম,ত্রিপুরা,মেঘালয় উড়িষ্যা,বিহার হারিয়ে অখন্ড ভারতের শ্রীবৃদ্ধির মানসে নিজেকে কেবল আজকের পশ্চিমবঙ্গ ও পূর্ববঙ্গের সীমানায় আবদ্ধ করে ফেলে। (চলবে)
©somewhere in net ltd.