নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মানুষআজিজ

মানুষআজিজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

অপরিচিত

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ভোর ৬:২৮

অপরিচিত । মানুষ আজিজ


আমার ছোট কাকা বিয়ে হয়েছিল কুড়ি বছর আগে, তখন খুবই ছোট্ট ছিলুম । লালটুকটুকে কাকীমা ছিল আমাদের , কাকে তাকে খুবই আদর করতো । বড়দের আদর তো তখন বুঝতাম না , বড়রা বুঝতো শুধু দেখতাম কাকা-কাকীমাকে নিয়ে সময়-অসময় ঘরের দরজাবন্ধ করে রেখেছে । আমাদের ক্রিকেটের ব্যাট কাকার ঘরে রাখতুম , কাকার দরজায় ডাকা-ডাকি করলেও সে দরজা খুলতো না খবুই বিরক্ত হয়েছিলাম প্রথম দিগে । মা একদিন এ দেখে , কানডলে বললো: ওদের ডিস্টাব করিস ক্যান? আমি চোখ বড় বড় করে ভাবছিলুম এ কেমন কথা ? কাকাকে তো এভাবেই দরজা থাপড়িয়ে ডেকে তুলি !!
এক দুপুরে কাকীমা আমাকে ভাত মেখে খাওয়াচ্ছিলো , উপস্থিত সবার মধ্যই বলে ফেললাম, কাকীমা দিনের বেলা তোমরা দরজা দিয়ে এত কি করো গো ? সারাদিন রাত ঘুমাও তোমরা ? নুতন কাকী লজ্বায় মুখ ডাকলো , এরপর থেকে দিনদুপুরে তাদের দরজায় খিল দেয়া কমে গিয়েছিল । বছর পর কাকীমার মেয়ে সন্তান হলো , ছোট্ট হাত,পা,নুক,মাথা,চুল,আঙুল নিয়ে ও জন্মালো , আমি সারাদিন তখন ঐ ছোট্ট মানুষটির পাশেই বসে থাকতুম , ছোট্ট শরীর কিন্তু অদ্ভূত ঘ্রাণ ছিল ওর শরীরে, ছোটরা বুঝি এক মায়াকরা ঘ্রাণ নিয়ে জন্মায় । ওর ক্ষুদাপেলে কাকীমার শাড়ীর ভেতর দিয়ে ওকে স্তন দিত , বা কখনো মুক্ত হয়েই পুড়ে দিত । আমি তখন ভাবতুম আমার ছোট্টবোনটি কি মজা করেই না খাচ্ছে, খুব মিষ্টিবুঝি মায়ের স্তনের দুধে । একদিন কাকীমাকে বললুম, তোমার মেয়েকে তো রোজ দুধ খাওয়াও , আমাকে একটু দাওনা ? কাকীমা খুব মিষ্টিবুঝি দুধে ? কাকীমা হেসেই খুন , পর কাকীমা দিল খেতে , কেমন জানি তেতুছিল ! মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বলছিলাম এ ও খায় কি করে ? কাকীমা বললো , ও তো খুব ছোট্ট তাই পাড়ে , আমি বলছিলাম আমিওতো ছোট্ট ? কাকীমা, হ্যাঁ ওর থেকে তুই বড় তাই না ? তাই হবে হয়তো ।

বছর দু'য়েক পর ছোট্ট কাকারা স্থির করলো , তার শশুরের বাড়ির পাশে জেলাশহরের চলে যাবে ,সব জমি জমা বিক্রি করে । বাবা কাকাকে কত বুঝালো সে শুনলো না, আমি কাকীমাকে কত কেদেঁ বললাম সেও শুনলো না , অবশেষে চলে গেল তারা । বছর তিনেক পর একবার গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে কাকাদের বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলাম, অনেকদিন পর দেখা হয়ে ভালো লাগবে ভেবেছিলাম । কিন্ত সবাই কেমন জানি বদলে গেল, রুক্ষ হয়ে গেল, কাকীমার চেহারায় মিষ্টি চেহারার পরিবর্তে কঠিন-নিষ্টুর এক ছাপ যেন , তার ছোট্ট মেয়ে অনিলাও দেখি আমার পাশে আসে না । যদিও কাকা আমার সাথে দু' একটি কথা বলে অন্যরা তাও না । ওমন পরিবেশে বেশিদিন আর থাকতে পারিনি , তাদের বাসা থেকে বের হয়ে যেন মুক্ত হলাম । মানুষ কেন বদলে যায়, নিষ্টুর হয় ,রুক্ষ ব্যবহার করে ? মানুষ কেন সাধারণ থাকে না ? এরপর অনেকদিন কেটে গেল, ওরা কেউ কোনদিন আমাদের বাসায় আসেনি আর । বাবা-মা অনেক রিকুয়েষ্ট করেছিল অনিলাকে আনার জন্য, বাব-দাদার ভিটে কখনো ও তো আসেনি । গত বছর অনিলার বিয়ের দাওয়াত পেলাম , এবং গেলাম সেই ছোট্ট হাত,পা,আঙুলে হাত বুলানো অনিলা কত বড় হয়েছে, মুখে দিপ্তী হাসি, শরীরে যৌনের ছুয়া । কাকা আমাকে ডেকে নিয়ে ওর সাথে পরিচয় করিয়ে দিল, ও মানুষ তোমার দাদা হয় । বুঝলাম আমাদের নিয়ে কোনদিন আগে গল্প বুঝি শুনেনি ও, তাই অনুপ্রেরনাও কম শুধু সাধারণ সৌজন্যবোধ দিয়েই কিছুক্ষন কথা,বার্তা । কাকীমা মধ্যবয়স্কা শরীরটা মফস্বলের ছায়াতেই সুন্দর করে টিকিয়ে রেখেছে যেন , বয়সের ছাপ বুঝা যায় না । আমাকে দেখে বললো, ও বাবা কে এসেছে গো ? কিছুক্ষন আন্তরিকতা দেখিয়ে নিভে গেল যেন । পর কত কত মানুষ এলো , কাউকেউ তো চিনি না । শুধু অপরিচিত মানুষের ভেতর বসে রইলেম । আমিও যেন , অপরিচিত কারো বাসায় নিমন্ত্রন গ্রহন করে এলাম । ধীরে ধীরে অনুষ্টান শেষের পথে মানুষ কমে এলো , আমিও চলে এলাম । কিন্তু এমন হতে পারতো , মানুষ তোমার বোনের বিয়ে এখনি চলে যাবে মানে ? অনিলা বলতো, তুমি যদি চলে যাও তোমার সাথে আমার কাটাকুটি । বাসে জানালার পাশে বসে বসে এই নিয়ে ভাবছিলাম, আমরা সম্ভবত সবাই অপরিচিত ।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৭:৩৪

রাজীব নুর বলেছেন: শুভ সকাল।
ভালো থাকুন।

২| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৯:৪৩

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: আমরা সম্ভবত সবাই অপরিচিত।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.