নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মো: মাসুম বিল্লাহ রুবেল

বাচার জন্য ইসলাম, মরার জন্য ও ইসলাম

মাসুম রুবেল

অধ্যয়নরত, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

মাসুম রুবেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

মাসুম বিল্লাহ রুবেল

১৫ ই এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৩:৪৬

আলোর ঝলকনি

কায়েস মাহমুদ



চারপাশ কেমন থকথকে অন্ধকার!

এতো অন্ধকার যে কাছের মানুষটিকেও দেখা যায় না।

কী সেই ভয়ঙ্কর অন্ধকার!

অন্ধকার ভেদ করে সহসা জেগে উঠলো এক আলোর ঝলকানি। যে আলোতে আলোকিত চতুর্দিক। সেই এক সোনালি সূর্য বটে! যে সূর্যের সোনালি আভায় চারপাশ আলোকিত হয়ে উঠেছে।

কোন্ সূর্য? সে কেবল ইসলামের সূর্য। ইসলাম ও ঈমানের দ্যুতি। সেই দ্যুতিতে মক্কার অলিগলি ঝলমল করছে। কেমন ফকফকা রাস্তাঘাট। পাখিরা উড়ছে কোমল ডানা মেলে। আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে থোক থোকা নীলাভ মেঘ।

রাসূলের (সা) ডাকে একে একে চলে আসছেন বিবেকবানেরা সত্যের ছায়াতলে। কারণ, তারা তখন জেনে গেছেনÑযত শান্তি, যত আরাম, যত নির্ভরতা আর যত আছে সুখÑসে কেবল এই ইসলামের মধ্যেই। প্রশান্তির ছায়াতলে। ইসলামের তখন প্রথম যুগ। একেবারেই প্রাথমিক অবস্থা। তাতে কি! রাসূলের (সা) দাওয়াত পাওয়ার সাথে সাথেই সেটা গ্রহণ করলেন আবু হুজাইফা। তিনি ছিলেন যেমন বিচক্ষণ, তেমনি বুদ্ধিমান। সুতরাং এমন একটি সুন্দর সুযোগ গ্রহণ করতে তিনি এতটুকুও দেরি করলেন না।

কোনো দ্বিধা নয়। নয় কোনো শঙ্কা। তিনি সোজা রাসূলের (সা) কাছে গিয়ে নিজেকে সমর্পণ করলেন। সমর্পণ করলেন আল্লাহর কাছে। ইসলামের কাছে।

আবু হুজাইফার এমন সুদৃঢ় এবং সঠিক সিদ্ধান্তে খুব খুশি হলেন রাসূল (সা)।

পরম সৌভাগ্যবান আবু হুজাইফা। কারণ, প্রথম দিকেই যারা ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন, তিনি ছিলেন তাদের ভেতর অন্যতম। হুজাইফা যতটা ছিলেন সৌভাগ্যবান, তার চেয়েও বেশি হতভাগ্য ছিল তার পিতা উতবা। কারণ সে ইসলাম গ্রহণ করেনি। বরং মুসলমানদের ওপর চালিয়েছে অকথ্য নির্যাতন। কী ভয়ঙ্কর ছিল তার সেই বিরোধিতার আগুন!

ছেলে ইসলাম গ্রহণ করেছেন জেনে উতবা আরও বেশি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলো। পুত্র ও ইসলামের সামনে সে দাঁড় করাতে চেষ্টা করলো বাধার পর্বত। কত নিষ্ঠুরতা, কত নির্যাতন, কত বাধা-বিপত্তি তবুও সফল আগুনের পর্বত টপকে সামনে এগিয়ে চলেছে সত্যের কাফেলা। যারা আল্লাহর কাছে নিজেদেরকে সমর্পণ করেছেন, তাদের আর কিসের ভয়? কিসের পরওয়া!

আবু হুজাইফাও সাহসের সাথে এগিয়ে চলেছেন। ক্রমাগত সামনে। তার বুকে আছে মহান প্রভুর দেয়া শক্তি। আছে সাহস আর রাসূলের (সা) অকৃত্রিম ভালোবাসা।

প্রথম দিকে ইসলাম গ্রহণ করার কারণে, অন্য মুমিনদের মত তিনিও হাসিমুখে বরণ করেছেন নির্মম নির্যাতন। তবুও মুশরিকদের শত নির্যাতন, অত্যাচার আর উৎপীড়নই তাকে ফেরাতে পারেনি সত্যের পথ থেকে। বরং বাধা যত কঠিন হয়েছে, বিরোধিতা যত তীব্র হয়েছে, ততই তিনি দুঃসাহসের সাথে এগিয়ে গেছেন সামনের দিকে। দুর্বার গতিতে। একবার নয়, দু-দুইবার হিজরত করেছেন আবু হুজাইফা। আর দয়ার নবীজী (সা) যখন যা-ই নির্দেশ করেছেন, তখন তা-ই পালন করেছেন দ্বিধাহীনচিত্তে। আনন্দের সাথে।

অসীম সাহসী ছিলেন আবু হুজাইফা। সাহসের সাথে যুক্ত ছিল তার বুদ্ধি ও মেধা। একজন কুশলী যোদ্ধা হিসেবেও তার খ্যাতি ছিল গগনচুম্বী। ইসলামের জন্য, একমাত্র ইসলামের বিজয়ের জন্যই যে কোনো ধরনের ঝুঁকি নিতে সদা প্রস্তুত ছিলেন আবু হুজাইফা। আর শহীদের তামান্নায় তিনি সকল সময় উদগ্রীব হয়ে থাকতেন। কেবলই ভাবতেন, আহ! কখন আসবে সেই সুবর্ণ সুযোগ! কখন পৌঁছুতে পারবো শহীদি রক্ত মেখে আল্লাহর দরবারে! কখন? আবু হুজাইফা চাতকের মত অপেক্ষায় থাকতেন। কখন আসবে জিহাদের ডাক! যখনই আসুক, তখনই প্রস্তুত তিনি। রাসূলের (সা) সময়ে সংঘটিত প্রতিটি যুদ্ধেই অংশগ্রহণ করেছেন দুঃসাহসী আবু হুজাইফা। আর প্রতিটি যুদ্ধেই রেখেছেন তার সাহস ও রণকৌশলের স্বাক্ষর।

এল বদর যুদ্ধ! এক কঠিন ও ভয়াবহ যুদ্ধ।

আবু হুজাইফার জন্য এই যুদ্ধটি ছিল আর একটু ভিন্ন মাত্রার। কারণ, মুসলিম বাহিনীর সাথে যুক্ত হয়ে তিনি লড়ে যাচ্ছেন অসীম সাহসে। ক্রমাগত। আর তার প্রতিপক্ষে লড়ছে তারই পিতা-উতবা।

সত্যের পক্ষে পুত্র। আর মিথ্যার পক্ষে পিতা।Ñ দু’জনই যুদ্ধের ময়দানে। ভিন্ন শিবিরে। ভিন্ন দলে। দু’জনই মুখোমুখি। পুত্র এবং পিতা। ইতিহাসের কী বিস্ময়কর এক অধ্যায়! কী আশ্চর্য এক দৃষ্টান্ত!

এখানেই তো প্রমাণ হয়ে যায় সত্য আর মিথ্যার মধ্যে কী বিশাল এক ব্যবধান।

এখানে পিতা-পুত্রের সম্পর্ক বড় কথা নয়। বড় কথা নয় কে আপন, কে পর। বরং প্রকৃত সত্য হল কে আছেন আল্লাহর পক্ষে, আর কে অবস্থান নিয়েছে মিথ্যার ঘাঁটিতে। সত্য এবং ন্যায় পিতা-পুত্রের মত সম্পর্ককেও তুচ্ছ করে দেয়। এমনকি বিস্মৃতত্ত।

বদর যুদ্ধে তিনি চিৎকার করে তার পিতা উতবাকে আহবান জানালেন, এস! এস মিথ্যা অহঙ্কারী এক কাপুরুষ! যদি শক্তি ও সাহস থাকে তো এস আমার সাথে মল্লযুদ্ধে লড়তে!

এ হল সত্যের পক্ষের এক সৈনিক পুত্রের আহবান তার বিভ্রান্ত পিতার প্রতি। এমন দৃষ্টান্ত নজিরবিহীন যেমন, তেমনি বিস্ময়করও বটে। আর ইতিহাসের পাতায় তো স্থান করে নিয়েছে সোনালি হরফে।

বদর! এই বদর যুদ্ধে শত চেষ্টা ও সাহসের সাথে লড়েও শেষ পর্যন্ত পরাজিত হলো কুরাইশরা। সেই সাথে নিহত হলো আবু হুজাইফার পিতা-উতবাও।

মুসলিম বাহিনীর হাতে নিহত সকল কুরাইশ নেতা ও যোদ্ধার লাশ বদরের একটি কূপে নিক্ষেপ করে মাটি চাপা দেয়া হলো। সেই কূপে নিক্ষিপ্ত হল উতবাও। রাসূল (সা) এগিয়ে এলেন সেই লাশভর্তি কূপের কাছে। তারপর একেকজনের নাম ধরে বললেন, “হে উতবা, হে শাইবা, হে উমাইয়া ইবন খালফ, হে আবু জেহেল! তোমরা কি আল্লাহর অঙ্গীকার সত্য পেয়েছ? আমি তো আমার অঙ্গীকার সত্য পেয়েছি।”

পিতার করুণ মৃত্যুতে এতটুকুও আফসোস করেননি হুজাইফা। বরং তিনি রাসূলকে (সা) বললেন, “পিতার নিহত হবার জন্য আমার কোনো দুঃখ নেই। তবে ধারণা ছিল, তিনি একজন বুদ্ধিমান, বিচক্ষণ ও সিদ্ধান্তদানকারী ব্যক্তি। তাই আমার আশা ছিল, তিনি ঈমান আনার সৌভাগ্য অর্জন করবেন। কিন্তু রাসূল (সা) যখন তার ‘কুফর’ অবস্থায় মৃত্যুবরণের নিশ্চয়তা দান করলেন, তখন অপর দুরাশার জন্য আফসোস হল।”

সত্যের সৈনিক হুজাইফার এমন উচ্চারণে খুশি হলেন রাসূল (সা)। এবং প্রাণ খুলে দোয়া করলেন হুজাইফার জন্য।

রাসূলের (সা) সময়ে সংঘটিত প্রতিটি যুদ্ধে অংশ নিলেও শহীদের স্বপ্ন পূরণ হয়নি আবু হুজাইফার। এ জন্য কী এক মর্ম বেদনায় কাতর তিনি!

রাসূল (সা) ইন্তেকাল করলেন। এ সময়ে হুজাইফার মধ্যে স্বপ্ন পূরণ না হবার জন্য এক ধরনের কষ্ট ক্রমশই দানা বেঁধে উঠলো। ভাবলেন, তাহলে কী আর আমার ইচ্ছা ও স্বপ্ন আদৌ পূরণ হবে না! অবশেষে তার সামনে উপস্থিত হলো সেই শুভ সময়টি। রাসূলের (সা) ইন্তেকালের পর, প্রথম খলিফা হযরত আবু বকরের খিলাফত কাল তখন। এই সময়ে আরব উপদ্বীপে কিছু ভ- নবীর উৎপাত ঘটলো। তারা নবীর দাবিদার! কী হাস্যকর ব্যাপার! তার চেয়েও বড় কথা, বিষয়টি রীতিমত অমার্জনীয় এবং অসহনীয়। ইয়ামামার মুসাইলামা কাজ্জাবও ছিল এই পাপিষ্ঠদের দলে। সেও নিজেকে নবী বলে দাবি করছে! আর অপেক্ষা কিংবা সহ্য করা যায় না। ভণ্ড নবীর দাবিদারদের উচিত শিক্ষা দেবার এইতো শ্রেষ্ঠ সময়।

বিলম্ব নয়। হযরত আবু বকর (রা) দ্রুত সিদ্ধান্ত নিলেন তাদের দমনের জন্য। মুসাইলামা কাজ্জাবকে সমুচিত জবাব দেবার জন্য হযরত আবু বকর (রা) একটি সুসজ্জিত মুসলিম বাহিনী পাঠালেন ইয়ামামায়। এই বাহিনীতে ছিলেন দুঃসাহসী আবু হুজাইফাও।

শুরু হলো মুসাইলামা কাজ্জাবের বাহিনীর সাথে যুদ্ধ। তুমুল যুদ্ধ! আবু হুজাইফাও লড়ে যাচ্ছেন সাহস ও বীরত্বের সাথে। মিথ্যার বিরুদ্ধে।

তার অমিত তেজ ও সাহসের ফুলকি ছড়িয়ে পড়ছে ইয়ামামার রণক্ষেত্রে।

যুদ্ধ করতে করতেই এক সময় মুসাইলামা কাজ্জাবের বাহিনীর হাতে শহীদ হলেন আবু হুজাইফা! শহীদ হলেন তিনি! আর সেই সাথে পূরণ হল তার আজীবন লালিত একটি স্বপ্ন, দুর্বার ইচ্ছা।

দুঃসাহসী আবু হুজাইফা! আবু হুজাইফা এখনো সত্য পথের টগবগে তরুণদের কাছে সাহস ও শহীদি স্বপ্নের এক প্রেরণার উৎস হিসেবেই বেঁচে আছেন, জেগে আছেন। বোধ করি জেগে থাকবেন অনাদিকাল শহীদি স্বপ্নের এই সোনালি সাগর। যে বিশ্বাসী সাগরের তলদেশ অনেক অনেক গভীরে।



সংগ্রহ: মাসুম বিল্লাহ

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.