![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সে: আরে কি খবর....?
(প্রথমত ঠিকমত দেখতে পারছি না, কেউ একজন হবে হয়তো, কারণ চশমাটা নিয়ে বেরোইনি,আর এসেছি একজনের কবর জিয়ারত করতে, ঘোরে পরে হাল্কা ঘুম ঘুম পাচ্ছিল; ঠিক পর মুহূর্তেই এরম ডাক, তাই অবাক হতে হতে থমকে গিয়ে......)
আমি: এই তো আছি.... আপনি?
সে: আমার খোঁজ আর ক'জন রাখে বলেন...... এই তো কেটে যাচ্ছে.....
আমি:অ....
সে: তো কবরস্থানে কি করছেন?
আমি: এই একজনের কবর যিয়ারত করতে এসেছিলাম.....
সে: কিন্তু তার মৃত্যুবার্ষিকী তো ছিল কালকে, আজকে কেন?
আমি: আপনি জানলেন কিভাবে?
সে: আরে এখানে আমি থাকি না.... এখানে থাকলে অনেক কিছুই জানা সম্ভব...
আমি: ওহ... আমি তো ভুলেই গেছিলাম যে আপনি এখানেই থাকেন.... কিন্তু আপনাকে কেন জানি দেখা যাচ্ছে না.....কিন্তু আপনার শরীরের গন্ধ টা কেনজানি পরিচিতি লাগছে.....
সে: চশমা নিয়ে আসেননি, তার উপরে অন্ধকার রাত....
আমি: সে রকমই হবে হয়তো.....
সে: এতদিন পরেও তাকে মনে রেখেছেন?
আমি: ভুলবার মত হলে ভুলতে পারতাম....
সে: তাই নাকি?
আমি: হুম..... তাকে যে আমি কতটা ভালবাসতাম তা কেবল আমিই জানি.....
সে: সেও জানতো....
আমি: কখ্খনো না..... জানার চেষ্টা ও করেনি....
সে: কিভাবে বুঝলেন?
আমি: যদি মনে রাখত তাহলে আমার এত্তগুলা ফোনকল সে এড়িয়ে যেতে পারতনা, এমনকি তাকে নিয়ে লেখা এস.এম.এস., কবিতা কিছুর উত্তরই সে এড়িয়ে যেত না....
সে: ভালবাসা কি সবসময় মুখে মুখে প্রকাশ করলেই হয় না কি??? আপনি নিজে কখনো তাকে বলেছেন আপনি তাকে ভালবাসেন.....
আমি: মুখে না বললে কিভাবে বুঝব বলেন??? আর..... মুখে কখনও বলা হয় নি যদিও....
সে: তবে....
আমি: না মানে.......তাহলে তো দেখছি ভুলটা আসলে আমারই ছিল....
সে: অবশ্যই ছিল..... কেননা আপনি তাকে অনেক কষ্ট দিয়েছেন শেষ সময়ে, তার সাথে ভালকরে কথাও বলেননি, তার অসুস্থতার সময় একবার ও কি দেখতে গিয়েছেন?
(হঠাৎ আমার মনে পড়ল ভার্সিটির প্রথমদিককার কথা গুলো....... অবণি কে আমার প্রথম থেকেই কেনজানি ভাল লাগত। যদিও বন্ধুত্ব হয় ২য় বর্ষে ওঠার পরে। তার পর ধীরে ধীরে সম্পর্ক এগুতে থাকে। অবণি আর আমি দুজনেই দুজনের জন্য একটা টান অনুভব করি। কথা শুরু করি, দুজনেই কিন্তু একটা জায়গায় এসে আটকে যাই.......আমিও ওকে বলতে পারি না আর অবণিও আমাকে বলতে পারত না।বিষয়গুলো আমি বুঝতে পারতাম, কিন্তু কেনজানি অতটা গায়ে মাখাতাম না..... আমার চিন্তা ছিল আরে চলছে চলুক না..... যে কারণে আমি অতটা কেয়ারিং ছিলাম না,যতটা অবণি ছিল। আমার দৈনন্দিন কাজ গুলাতে শৃঙ্খলা আনতে অবণি অনেক সাহায্য করেছে আমাকে। কিন্তু অন্য কোন মেয়ের সাথে কেনজানি আমাকে কথা বলতে দেখলে রেগে যেত সে। যাই হোক ঝগড়া খুনসুটিতে দিনগুলি ভালই কাটছিল। কিন্তু এর মধ্যে হঠাৎ এক দুর্ঘটনা ঘটল। আমাদের ভার্সিটিরই বিজ্ঞান অনুষদে পড়া একটু ডেয়ারিং টাইপের মেয়ে টয়া, আমার সাথে জাস্ট মোটামুটি পরিচিতি ছিল, একদিন বাস না পাওয়াতে আমার সাথে রিক্সা শেয়ারিং করে শহরে গেছিল। তো পরদিন ঘটনাটা বিশেষ চাউর হল ক্যাম্পাসে যে কারণে আমার সাথে কোন মেয়েকে কেউ কখনও কথাই যেখানে খুবএকটা বলতে দেখেনি সেখানে রিক্সায় করে ঘোরা কিছুটা গুরুতরই বলা যায়। আমিও যদি বিষটা পরদিনই শুনেছিলাম তবুও আমিও তেমন একটা গা করিনি, মনে মনে একটু আনন্দই পাচ্ছিলাম। সেদিন থেকেই তাকে দেখেছি আমাকে কিছুটা এড়িয়ে চলতে। আমার আবার একটা বাজে অভ্যাস আছে, কেউ আমাকে একটু এড়িয়ে চললেই তার উপরে দুম করে রেগে যাই, এমনকি কোন খোঁজ নেবারও প্রয়োজনবোধ করি না যে সমস্যাটা কার। যাই হোক আমি তাকে খুব বাজে ভাবে এভোয়েড করা শুরু করলাম, এমনকি মাঝে মধ্যে হাল্কা স্লেজিংও করতাম..... যাই হোক এসবের মাঝে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছিলাম যে তার প্রতি আমার ভালবাসা দিনকে দিন বাড়ছে, যদিও এর মধ্যে অবণি আমার সাথে কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টাও করেছে কিন্তু আমিই খুব বাজে ভাবে এড়িয়ে গিয়েছি। এর মধ্যে পড়াশুনা শেষ হল আমি জবে ঢুকলাম ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। যদিও এর মধ্যে তার খোঁজ নিয়েছি নিয়মিতই, এও জেনেছি যে সে এখনও কোন রিলেশন করেনি। কিন্তু আমিই যোগাযোগ করিনি আমার ইগোর কারণে। এমন একদিন শুনলাম সে অসুস্থ। বন্ধুদের সবাই অবণি কে দেখতে গেল, শুধু আমিই গেলাম না, ঐ যে ঐ ইগো নিয়ে বসে রইলাম। আমাদের এই ব্যাপারটা শুধুমাত্র জানত বন্ধুমহলের রিসাদ, কারণ ও আমার সাথে একটু বেশিই ক্লোজ ছিল আর অবণির প্রায় সব কথাই ওর সাথে শেয়ার করতাম। ও হসপিটাল থেকে এসে আমাকে জানাল যে সবাই আসার পর ওকে অবনি ছোট্ট করে জিঞ্জাসা করেছিল যে সবাই এসেছে কিনা.......... তার পর আর তেমন কথা হয়নি........ দুদিন পর সব কিছু এমনিতেই থেমে গিয়েছিল......)
আমি:না তা তো যাই নি....(বলতে গিয়ে গলাটা অস্বাভাবিক রকম ধরে এলো আমার..... একটা তীব্র ব্যাথা অনুভব করলাম বুকে......)আসলে ভুলটা আমারই ছিল, কেন যে আমি তার সাথে দেখা করলাম না..... অন্ততপক্ষে শেষ দেখাটাও কেন করলাম না.......
(মাথাটা কেমনজানি ঘুরে এলো আমার, সবকিছু ওলোট-পালট মনে হতে লাগল।পাশে বসা আগন্তুক যে যদিও দেখতে পাচ্ছিলাম না, কিন্তু তার শরীরের গন্ধ কেমন যেন অনেক পরিচিত লাগছিল.....যেন কত কালের চেনা.....)
আপনি তো এখানেই থাকেন.... প্লিজ ওকে একটু বলে দেবেন যে আমার আচরণের জন্য আমি খুব দুঃখিত.....জীবনে অনেককিছু পেলেও আজ কেন জানি মনে হলো সব কিছু অর্থহীন..... প্লিজ.....
সে: কেন আপনি বলতে সমস্যা কোথায়??
আমি: (বলতে যদিও খুব কষ্ট হচ্ছিল, কান্নায় বাকরুদ্ধ হয়ে আসছিল.........) সে মুখ কি আর আছে??????
সে: আপনি তো তাকে বলে দিলেনই......
আমি: (কিছুটা চমকে উঠে) কিভাবে?
(হঠাৎ বিস্তীর্ণ আকাশটা একরাশ চিৎকার করে উঠল, আর অনেকগুলো বিদ্যুৎচমক..... আমার হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসছিল..... কারণ আমার সামনে ঠায় বসেছিল সাদা শাড়ী পড়া অবণি...........)
পুণশ্চ: গোরস্থানে একটানা গোঙানির শব্দ শুনে গোরস্থানের দেখাশোনা কারী আলি মিয়া একটা লন্ঠন নিয়ে ছুটে এসে দেখলো মোর্শেদ সাহেব জ্বরের ঘোরে একটা কবরের পাশে পড়ে গোঙরাচ্ছেন। তাই তাকে তাড়াতাড়ি অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল..... শেষ রাতের দিকে জ্ঞান ফিরল মোর্শেদ সাহবের। সহসা তিনি টের পেলেন গন্ধ টা আবার আসছে............
©somewhere in net ltd.