নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সীমার মাঝে অসীম তুমি....

মসীহ্

মসীহ্ › বিস্তারিত পোস্টঃ

নির্বাক স্বপ্নেরা

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:২৬

শরতের অনেকটা সময় পার হয়েছে, হেমন্তের কেমন একটা আভাস পাচ্ছি। গরমের খুব একটা উৎকটতা এসময় দেখা যায় না। মোটামুটি গা সওয়া হয়ে যায়। সকালের দিকে পাখি গুলোর কিচিরমিচির ভালেই থাকে, দুপুরের দিকে কমতে থাকে। কিন্তু এই ভর দুপুরেও কিছু শালিকের কিচিরমিচির শুনতে পাচ্ছি।
দিনগুলো যেন কেমন একটা আনন্দময় আলস্যের ভিতর দিয়ে এগুচ্ছে। কোথাও একটা বসে থাকলে সহসা উঠতে ইচ্ছে হয় না।কেমন একটা অস্ফুট ঝিম মারা অনুভূতি গ্রাস করে। গাছের ছায়ায় নদীর পাড় অন্যতম পছন্দের জায়গা আমার। তোমারও তো, তাই না? তাই নিতান্ত অনিচ্ছা সত্ত্বেও কিছুটা বনবাদারে ঘেরা নদীর পাড়ে গাছের ছায়ায় এসে বসলাম। আহা ফুরফুরে বাতাসে মনটা আনচান করে উঠল। কেমন যেন একটা শিরশিরে অনুভূতি। তোমারও কি হয়? ওহ দুঃখিত। হঠাৎই খুশিতে ভরে উঠলো মনটা। কেমন একটা চেতনাকে অবশ করা অনুভূতি। খুব করে হাসতেও ইচ্ছে করছে না। আবার কাঁদতেও না। মাঝে মাঝে মনে হয় জীবনটা যদি এরকমই থাকত! না বাড়ত না এগিয়ে যেতাম, ঘুমাতাম না, খেতাম না, চলতাম না, বলতাম না; শুধুমাত্র এই শিরশিরে অনুভূতিটা থাকত। খুব একটা মন্দ হত না বৈকি।
হঠাৎ একটা কাকের কর্কশ চিৎকারে চিন্তার আকাশে ছেদ পড়লো। নিজের অজান্তেই মাটির দিকে তাকালাম। একসারি পিঁপড়া হেটে যাচ্ছে। যাচ্ছে তো যাচ্ছেই, কোন এদিক সেদিক নেই। শুধুমাত্র একটা সারি তে। কোথা থেকে আসছে দেখার একটু চেষ্টা করলাম, নাহ্ উৎপত্তি বা নিঃস্পত্তি কোনটাই চোখে পড়লো না। রোদের আঁচটা এখানে নেই। শুধু ফুরফুরে বাতাস। অদূরে চোখে পড়লো দুটো বেজি। আমার দিকে একটু তাকিয়েই দৌড়। আচ্ছা ওরা কি আসলে আমাকেই দেখেছে না অন্যকিছু, এই যেমন সাপখোপ দেখে দৌড় দিলো? ওদের চোখের দূরদৃষ্টি কত? ওরাও কি দুনিয়াটাকে সাদাকালোই দেখে? ওদের চোখে রডস্ আর কোনস্ নাই বলেই হয়ত ওরা সাদা কালো দেখে। ওদের চোখে যদি এগুলো ট্রান্সপ্লান্ট করা যায় তাহলে কি ওরা সবই কালারফুল দেখবে? ওহ্ একটানা অনেকখানি চিন্তা করে ফেলেছি। কেমন একটা ভয়মিশ্রিত ক্লান্তি লাগছে। আমার এ অনুভূতিটা অনেক পুরোনো। আগে কেমনজানি সহ্য করতে পারতাম না। দমবন্ধ হয়ে আসতো। এখন ভালোই লাগে। অন্যরকম একটা আবেশ লাগে। মস্তিষ্কের মেকানো রিসেপ্টর গুলো আমাদের অনুভূতিশীল করে। মনে হয় সারা দিনই এই অনুভূতিটাতে একটু বুঁদ হয়ে থাকি? অনুভূতির নেশায় পড়লাম নাকি আবার? হতে পারে।
মাথাটা একটু খানি হয়ত ঝিমঝিম করছে। হঠাৎই সেই বুনোফুলের গন্ধগুলো ধীরে ধীরে বাতাসে ভেসে আসতে লাগলো। প্রথমে অল্প। পরে আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে। কেমন একটা অবয়ব যেন আমার সামনে। কিছুটা ভরকে যেতে যেতে সামলে নিতে থাকি। হয়ত দেখার ভুল। হবে হয়ত এমনই। এসময় এখানে তুমি ছাড়া কারোরই তো আসার কথা নয়। হয়তো তুমিই এসেছ। আধো আবেশে বুজে আছি চোখ। ব্রেইনের সেল গুলো কাজ করছে খুব দ্রুত। অ্যাড্রিনাল থেকে হরমোন ক্ষরণ হচ্ছে বেশ। চিন্তা গুলা খুব ঠিক ঠাক কাজ করছে...
ঘোরটা একটু কাটতেই তোমার আলতো স্পর্শ পেলাম চুলে। হালকা করে বিলি কেটে দিচ্ছ। আবেশে বুজে আসছে চোখ। সময়টা হয়তো স্থির অথবা আলোর চেয়েও গতিশীল। না আলোর চেয়ে গতিশীল হলে তো তোমাকে ২ টা দেখার কথা। তাহলে কি? সময় তো স্থিরও না। ধুরো কি সব আবোল তাবোল বলছি। এই সময়ে তুমিই সর্বোচ্চ সত্যি। তোমার শরীরের গন্ধ পাচ্ছি। আটকে যাচ্ছে নিশ্বাস। আমি কি আদৌ কোন নিশ্বাস নিচ্ছি? তোমার চোখের তারা গুলো গাঢ় কালো হয়ে আছে। চুলগুলো এলিয়ে আছে পিঠময়। চিবুকজোড়া ঈষৎ লাল হয়ে আছে। তোমার এই রুপে আমি বরাবরই কথা বলতে ভুলে যাই। কি বলব, কেন বলব, কিভাবে বলব? ভাবতে ভাবতে সময় কেটে যায়। শীতশীত একটা অনুভূতি, চোখের কোটরে থাকা মনি দুটো গরম বোধ হয়। হয়তো হাওয়ায় ভেসে আছি। চারদিকটা ঈষৎ অন্ধকারে ছেয়ে আছে। হয়তোবা জোনাকি জ্বলছে, দিনের বেলা জোনাকি! পাগল টাগল হয়ে গেলাম না তো আবার? তোমার আবেশে পাগল হতেও বেশ লাগে। হলামই বা। তোমার গোলাপি ওষ্ঠ আমাকে টানে এক তীব্র মাদকতায়। একটা নেশা নেশা লাগে। হয়তো ডুবে যাবো। হঠাৎ করেই তোমার শরীরের গন্ধটা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। হৃৎপিন্ড রক্ত পাম্প করা বন্ধ করে দেয়নি তো আবার? নিজেকে হালকা লাগছে খুব। মনে হচ্ছে যেন ভেসে বেড়াচ্ছি। এই ভাসছি, এই ডুবছি, আবার ভাসছি আবার ডুবছি.....
চিলের কর্কশ চিৎকারে ঝিমটা ছেড়ে গেল। ওহ এতোক্ষণ তাহলে স্বপ্ন দেখছিলাম। আসলেই কি স্বপ্ন দেখছিলাম না এখন স্বপ্নে এসে পড়লাম। কি জানি? কোনটা সত্য? এখনকার সময় না কিছুক্ষণ আগে তোমার আবেশ? একরাশ প্রশ্ন। একগুচ্ছ জিজ্ঞাসা। মাঝে মাঝে আমি স্বপ্ন দেখি স্বপ্নের ভিতরে, তার ভিতরে আবার স্বপ্ন। তখন খুব একটা ধাঁধাঁয় পড়ি। কোন ঘুমটা ছেড়ে উঠব? কখন উঠব? আর এই inner loop গুলা সৃষ্টি হয় তোমাকে ঘিরেই। তোমার সুবাস, তোমার চাউনি, তোমার চোখ প্রত্যেকটা বিষয়ই একেকটা loop. আর আমি loop এ হাবুডুবু খাই। কেন হাবুডুবু খাই? জানি না। কিন্তু ভালো লাগে। যদি অনন্তকাল এভাবে চলত.. তোমাকে আমার করে পেয়েছিলাম খুব একটা কম সময়ে। তুমি আসলে একরাশ উদ্দাম নিয়ে আসতে। আমি ভেসে যেতাম; তোমাকেও ভাসাতাম। প্রতিবারই নতুন করে খুঁজে পেতাম তোমায় প্রতিটি চুম্বনে। সময় স্থির করা সে চুম্বন, চেতনাকে অসার করা সে চুম্বন। তোমাকে ছুঁয়ে দেখাতে গিয়ে আমার বার বার কেঁপে ওঠা হাত তোমার কম্পমান ওষ্ঠ, আজও যেন আমার সামনে জীবন্ত হয়ে ধরা দেয়। খুব জীবন্ত। তোমার অনন্তলোকের পথে পাড়ি জমানোটা আমার আজও খুব একটা বিশ্বাস হয় না। জানো? এখনও ভাবি যদি কেউ এসে বলত কি রে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কি বিড়বিড় করছিস? আবীরমাখা মেঘগুলো যে কেটে যাচ্ছে এখনই সূর্যের আলোয় আলোকিত হবে চারিপাশ, যাবি না তুই? কিন্তু কেন জানি ঘুমটা আর স্বপ্নটা ঠিক হয়ে ওঠে না। আরও তুমিও ঠিক কেমন একটা loop এ পড়ে যাও। আর আমি হাতরাতে থাকি অতীতের চোখ ঝাপসা করা কিছু স্মৃতিকথা। হাতরে হাতরে আবারো ঘুমিয়ে পড়ি আবারও স্বপ্নে দেখি সেই তোমাকে। সহসা আবার সবকিছু অন্ধকার হয়ে আসতে চায়, দমবন্ধ হয়ে আসতে চায় কোন উৎকট মাদকতায়, ঘুমগুলো হানা দিতে থাকে। পিঠের চামড়ায় নখর বসানো মাতাল করা ঘুম.....

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.