নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সীমার মাঝে অসীম তুমি....

মসীহ্

মসীহ্ › বিস্তারিত পোস্টঃ

পিতামাতা : স্বার্থপরতা : সন্তান

১২ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১২:০০


পৃথিবীতে মানুষ খুব কমই অন্যের জন্য ভাবে। কথাটা একটু এলোমেলো মনে হলেও বিষয়টা কিন্তু একেবারেই ছেড়ে দেবার মত না। আর এই কথাটার উৎপত্তি সেই সুপ্রাচীন প্রবাদ থেকেই, "মানুষ মাত্রেই স্বার্থপর"। অনেকের মনে হতেই পারে যে আমি খুব বড়ো ভুল কথা বললাম। কিন্তু কথাটা মোটেও ভুল নয় আর তা খুব বেশিই সত্যি। আপনি হয়তো বলতে পারেন যে সবাই স্বার্থপর হলেও মা বাবা স্বার্থপর না। ওহে মহামূর্খ আপনি এখনও মূর্খের স্বর্গে অরণ্য রোদন করছেন। এই মা বাবা যে কতটা স্বার্থপর হতে পারে তা আপনাদের হয় তো ধারণাতেও আসতে পারে না। একটু ছোট একটা উদাহরণ দেই। আচ্ছা আপনি যখন প্লে কিংবা নার্সারিতে ভর্তি হয়েছেন তখন আপনার বয়স কত ছিলো? খুব সম্ভব বড়োজোর ৩/৪/৪.৫। সেই প্লে তে পড়ার সময় আপনি তো আর সব পরীক্ষাতে ফার্স্ট হতে পারেন নাই। হওয়া সম্ভবও না। কারণ সেই সময় একে তো আপনার লেখাপড়া করার বয়স নয়ই বরং খেলার মাধ্যমে শেখার সময়। সেই সময়টাতে তারা তো আপনাকে সে সুযোগ দেনই নি বরং আপনার উপর চাপিয়ে দিয়েছে পরীক্ষা নামক একটা বিষয় যেটার তাৎপর্য বোঝার কোন জ্ঞানই আপনার তখন ছিলো না। তারা এই কাজটা করেছে একমাত্র নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য। আপনার কোন স্বার্থই সেখানে ছিলো না, এমনকি ন্যূনতম কোন কিছুই না। কারণ তখন তারই হয়তো কোন কলিগের সন্তান স্কুলে ভর্তি হয়েছে, সেখানে আপনি বাড়িতে আছেন সেটা কেমন খারাপ দেখায়। এই "কেমন দেখায়", শব্দ দ্বয়ের জন্যই তারা আপনার উপর চাপিয়েছেন নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির স্কুলে ভর্তি। যেখানে আপনি নিজে বোঝেনও না যে স্কুলে গেলে কি হয় আর না গেলেই বা কি হয়। এই ছোট্ট উদাহরণটির মাধ্যমেই খুব সহজেই পরিষ্কার হয় যে তারা কত বড়ো স্বার্থপর।
আবার স্কুলে ভর্তি হবার পর সব শিক্ষার্থীই প্রথম হবে না, এমনকি এটা হওয়া সম্ভবও না। একজন শিশু তার নিজের মস্তিষ্কের বিকাশ লাভ করে তার পূর্বসূরি কিন্তু তার পিতামাতা। পিতামাতা যদি গবেট মার্কা হয় তাহলে তার প্রভাব সন্তানের উপরও পড়বে যদি না মিউটেশন ঘটে এবং যদি আপনি জেনেটিক্স সম্পর্কে জেনে থাকেন। যেখানে আপনি নিজেই একজন অ্যাভারেজ পার্সোনালিটির অধিকারী সেখানে কিভাবে আপনি আপনার সন্তানের কাছ থেকে সুপিরিয়র পার্সোনালিটি আশা করেন। তাদের এ আশা অনেকটা, "খাইবা বাল-ছাল আর হাগবা সন্দেশ" টাইপের। এ প্রসঙ্গে একটা গল্প মনে পড়ে গেল। এক হাতি তার বাচ্চাকে একটা উড়ন্ত শিশু ঈগলকে দেখিয়ে বলছে, "দেখ মিস্টার ঈগলের বাচ্চাটি ইতিমধ্যেই কিন্তু ওড়ার কৌশল অনেকখানি রপ্ত করে নিয়েছে। তুমি কিন্তু এর কাছেও যেতে পারছ না। আমি নিজে না পারলেও আশা করি তুমি আমাকে নিরাশ করবে না।" শিশু হাতিটি আর কি বুঝবে। তাই সে নিজের মত বুঝে বলল, " আমি আমার চেষ্টাতে কোন ত্রুটি করবো না।" এই হলো আমাদের একেকজন পিতামাতার অবস্থা। নিজেরা একেকটা গাব গাছ কিন্তু ফলাইতে চান কলা। গাব গাছ থেকে তো গাবই পাওয়া সম্ভব তাই কি? গাব গাছ থেকে কলা তখনই পাওয়া সম্ভব যখন গাব গাছ কে জেনেটিক্যালি মোডিফাই করা হবে। এর অর্থটা কি দাঁড়ায় আশাকরি বুঝতে পেরেছেন।
আমাদের পিতামাতাদের আরেকটা সমস্যা হলো এদের চাহিদার কোন শেষ নেই। একটা হয়ে গেলে নতুন চাহিদার খেদ এদের পেয়ে বসে। যেমন কোন এক ছেলে এস.এস.সি তে অনেক কষ্টে এ+ পেয়েছে। ছেলেটার মেধা খুব একটা সাধারণ মানের। এই এ+ পাওয়াটাই যখন তার জন্য গলায় এসে ঠেকে তখন তার পিতামাতার নতুন খেদ চাপে, এস.এস.সি. তে যাই হয়েছে এইচ.এস.সি তে কিন্তু গোল্ডেন এ+ চাইই চাই। যে ছেলে টেস্ট পরীক্ষায় কোনমতে পাশ করার পর যখন অনেক কষ্টে ফাইনালে এ+ পায় তখন তার জন্য এইচ.এস.সি তে গোল্ডেনের বোঝা চাপিয়ে দেয়া একেবারে জগদ্দল পাথরের সমান। এটা যেমন ছেলেটার জন্য কষ্টকর আবার আরেকদিকে এতে মা-বাবারও স্বার্থপরতা ফুটে ওঠে। তারা অপর কলিগের কাছে কিভাবে মুখ দেখাবেন, কিভাবে সমাজে চলবেন এসব থার্ডক্লাশ চিন্তাভাবনা তারা সব সময়ই ভাবেন। একবারও বুঝতে চেষ্টা করেন না যে তার সন্তানের যোগ্যতা কতটুকু আর এই যোগ্যতা দিয়ে এইচ.এস.সি তে গোল্ডেন এ+ পাওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু।
এদের আরো কিছু স্বার্থপরতার নমুনা দেখাই। আপনি জবে ঢুকলেন। মোটামুটি একটা সুস্থির অবস্থার মধ্যে আছেন।এরি মধ্যে এদের মাথায় চাপলো আপনাকে বিয়ে করানোর ভূত। সোসাইটির এর ওর বিয়ে হচ্ছে বা করছে সেখানে তুমি বিয়ে না করলে ব্যাপারটা কেমন দেখায়? একটু খেয়াল করুন "ব্যাপারটা কেমন দেখায়"; এখানে আপনার কিন্তু কোন স্বার্থ নেই পুরোটাই তাদের। সোসাইটিতে তাদের মান থাকে না এই ভয়ে আপনাকে বিয়ে করাচ্ছে বা বসাচ্ছে। আবার বিয়ের ক্ষেত্রেও তাদের অতিরিক্ত নাক গলানো বিষয়টা অনেক ক্ষেত্রেই সহ্য সীমার বাইরে চলে যায়। বিয়ে করবেন আপনি কিন্তু পছন্দ আবার তাদের। এসবের মানে কি? আপনি বিয়ে করবেন কিন্তু আপনার পছন্দের কোন দামই নেই। অনুষ্ঠান খরচাপাতি সব আপনার কিন্তু সব ক্ষেত্রে খবরদারি ঐ তাদের। একে তো নিজেদের স্ট্যাটাস বজায় রাখতে সন্তান কে এরা অপরিচিত একজনের সাথে বিয়ে করাচ্ছেন তার উপর আবার তার উপর খবরদারি করছেন। এ যেন পরের ধনে পোদ্দারি করার মত। এতে সন্তানের মঙ্গলের নিকুচি হয় মাগার তাদের স্বার্থসিদ্ধি ষোল আনাই হয়।
বিয়ে তো হলো। তারপর? হুম, তারপরও আছে। কি আছে? অপেক্ষা করুন বলছি। ধরুন আপনি আপনার স্ত্রী কে বা স্বামীকে অনেক ভালোবাসেন। এতেও সমস্যা। ছেলেদের এসব ক্ষেত্রে অনেক বাজে কিছু অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়। বেশিরভাগ সমস্যা গুলোর সৃষ্টিকারী হচ্ছে আমাদের মায়েরা। ছেলে বউ কে একটু বেশি সময় দিলেই তারা ফোড়ন কাটতে থাকে, "এমনই হয়", "বউ পাইয়া বাপ-মারে ভুইলা গ্যাছে","সারাদিন বউয়ের আঁচল ধরে থাকে","বউই যেন সব আমরা কেউ না"..... এরকম আরো নানা রকম বাজে কথা শুনতে হয় ছেলেটাকে। তাদের ধারণা বিয়ের পর তাদের ভাগটা হয়তো কমে যাবে। স্বার্থে টান পড়বে। আরে এটা তো স্বাভাবিকই।যখন একজন ছেলের বিয়ে হয় তখন স্বাভাবিক ভাবেই তার দায়ীত্ব বেড়ে যায়। নতুন একজন মানুষের সাথে মানিয়ে নিতেই বেশখানিকটা সময় লেগে যায়। তার সাথে নতুন একটা পরিবারের সাথে পরিচয় সেক্ষেত্রে সামাজিকতার একটা বিষয় থেকেই যায়। আবার ছেলেটা যদি শ্বশুরকুলের সাথে একটু উঠা বসা করে তাহলে তো কথাই নেই। এক্কেবারে ডাহা মিথ্যা অপপ্রচার চালানো হয় ছেলেটার নামে যে টাকা পয়সা সবই তো ঐ শ্বশুরবাড়িতেই খরচ করে, আমরা আর কি পাই। অনেক পরিবারের বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য অনেকাংশেই দায়ী আমাদের এই সব গুণধর স্বার্থলোভী পিতা মাতা। এবার আসি মেয়েদের বেলায়। মেয়েরা যদি শ্বশুরবাড়ির সবার সাথে মানিয়ে চলে মোটামুটি সুখে সংসার যাপন করতে থাকে তখনই আবার তাদের মায়া কান্না শুরু হয়।"হায় হয়, আমার মাইয়ার কি হইলো, কুনু খোঁজ নেয় না, আমাগেরে ভুইলাই গ্যাছে, শ্বশুরবাড়িই সব, আমরা আর কে?"...... এরম এহেন হরেক রকম মিথ্যাচার অবাঞ্ছিত স্বার্থপর কথা প্রচার করা হয় মেয়েটির নামে। আবার এটাও হয় ছেলের কাছে মেয়ের আর মেয়ের কাছে ছেলের বদনাম তো আছেই। আরেহ্ এতোই যখন সমস্যা, আপনাদের স্বার্থে টান পড়বে যখন জানতেনই তখন কেনই বা তাদের বিবাহ করাইছিলেন? "বিয়া না করাইলে তো মাইনসে খারাপ কইবো…" বুঝলেন তো এবার? নিজেদের কে মানুষের চোখে ভালো সাজানোর জন্য ছেলে মেয়েদের বিয়ে করান আবার সেই ছেলে মেয়ের কাছে স্বার্থের কমতি হলে তাদের মুণ্ডুপাতও করেন। সত্যিই পুরোই সেলুকাস।
এই সন্তানগুলো মরে গিয়েও খুব একটা শান্তি পায় না। যদি পিতামাতা জীবিত থাকা কালীন সময়ে সন্তান মারা যায় সেই সন্তানের সম্পদের একটা অংশ তারা পেয়ে থাকেন। সন্তান মৃত্যুর সাত দিন হতে না হতেই শুরু হয় সন্তানের সম্পদের বাটোয়ারার হিসাব, কে কত পেল, কিভাবে ছেলের বউকে ঠকিয়ে নিজেদের কাছে অধিক সম্পদ হস্তগত করা যায়। আর সন্তান যদি অবিবাহিত হয় তাহলে তো কথাই নেই। পুরোটাই মায়ের ভোগে। আহা কি মহত্ত্ব। কি মহান দায়িত্ব নিয়ে তারা আমাদের লালন পালন করেন। আহা, সবি যে আমাদের চিন্তার বাহিরে। কতই কষ্ট করেন তারা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য সন্তান কে পুতুল নাচের পুতুল বানিয়ে। উদারতা, দয়ামায়া, ভালোবাসা আর যেন ধরে না। ভালো থাকুক পৃথিবীর সকল স্বার্থপর পিতামাতা।

বিঃদ্রঃ উপর্যুক্ত লেখাটি কিছু বাস্তব ঘটনার নিরিখে লেখা। কারো সাথে পুরোপুরি মিলে গেলে তা নিতান্তই কাকতালীয়।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.