নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভাবছি....\n\nআরেকদিন লিখব

প্রীতি পারমিতা

প্রীতি পারমিতা › বিস্তারিত পোস্টঃ

মিষ্টি আপু

০১ লা আগস্ট, ২০১৫ রাত ৯:১১

একদিন ক্লাশ শেষে বাসায় ফিরেছিলাম। হঠাৎ অপরিচিত নাম্বার থেকে একটা কল আসল ।কলটা রিসিভ করতেই ও পাশ থেকে একটা বাচ্চা ছেলে কণ্ঠ জানতে চাইলো, “আপু তুমি কেমন আছো? তুমি না খুব lucky, কেন জানো?আমি যে তোমার ছোট ভাই।”আমি খুব অবাক হলাম। চিনতে না পেরে, কে জানতে চাওয়ার আগেই আবারও প্রশ্ন, “আপু, এই আপু তুমি এখন কোথায়?”আমি বললাম, “রাস্তায়”তুমি যে রাস্তায় তা রাস্তার সবাই জানে । কিন্তু কোন রাস্তায় সেটা বল। অপাশ থেকে আবারও প্রশ্ন।

খুব বিরক্ত হয়ে জানতে চাইলাম, “ কে তুমি? কেন কল করেছ? কাকে চাও?' সাথে সাথে উত্তর, “ তোমাকে চাই। এই আপু, তুমি আমার সাথে এমন করে কথা বলছো কেন? আমি না তোমার ছোট ভাই? আপু জানো আম্মু আজ আমকে এই সিম কার্ডটা কিনে দিয়েছে। আব্বুকে বলেছি আমার জন্য নতুন মোবাইল আনতে। মোবাইল না দিলে আমি পড়বোই না। জানো , আমি এখন ক্লাশ নাইনে পড়ি।” হঠাৎ লাইনটা কেটে গেল। স্বস্তি পেলাম।একটু পর আবার সেই নাম্বার থেকে কল। রিসিভ করতেই, “আপু, আম্মু বকা দিল। তাই তোমার সাথে কথা বলার জন্য চুপিচুপি ছাদে চলে এলাম। জানো আব্বুকে বলছি ২ টা চকলেট আনতে। একটা তোমাকে দিব।''



আর এই বক বক শুনতে ভালো লাগছিল না । তাই একরাশ বিরক্তি নিয়ে বললাম, “ দেখো, যেহেতু আপু বলেছো সেহেতু আপু যা বলি তাই শোনো, মোবাইল রেখে পড়াশুনা করো। আর আমাকে ডিস্টার্ব করো না।” বলেই লাইনটা কেটে দিলাম। তারপর অসংখ্যবার কল আসলও রিসিভ করি নি।

পরদিন আবারও সেই নাম্বার। রিসিভ করতেই বলে, “আপু তোমাকে আমি দুটো প্রশ্ন করবো। যদি সত্যি উত্তর দাও, তাহলে আর কল দিব না।” বললাম ঠিক আছে বল। ও আমার নাম, ঠিকানা জানতে চাইলো। ফোন কল থেকে মুক্তি পাবো এই ভেবে আমি সত্যি সত্যি সব বলে দিলাম।

এর কিছু দিন পর আমার ঠিকানায় আমার নামে একটা পার্সেল এলও। বুঝলাম না কে পাঠিয়েছে? শুধু লেখা ''নিলয়''। ওই দিন রাতে সে নাম্বার থেকে sms আসল, “আপু পছন্দ হয়েছে তো?” বুঝতে পারলাম এটা এই পাগলের কাজ। গিফটটা তখনো খুলে দেখিনি। খুলে দেখি একটা লাল ওড়না। আর সাথে চিরকুট। তাতে লেখা, “আমার মিষ্টি আপুর জন্য”

আমি মনের অজান্তেই হেসে দিলাম। তারপর ওকে ধন্যবাদ জানিয়ে একটা এস এম এস করলাম। এর পর থেকেই ওর সাথে আমার প্রতিদিন কথা হত। ও আমাকে ''মিষ্টি আপু'' বলে ডাকত এবং প্রতি মাসে একটা করে গিফট পাঠাতো।

নিজের কোনো ভাই নেই – এই দুঃখটা সব সময় করতাম। ওকে পেয়ে বোধ হয় সব ভুলে গেলাম। ঠিক করলাম ওর সাথে দেখা করবো। দেখা করবো জেনে নিলয় খুব খুশি হয়েছিল এবং ওর ঠিকানা দিল।

একদিন ওর জন্য একটা গিফট কিনে ওর বাসায় হাজির হলাম। কলিং বেল চাপতেই এক মাঝ বয়সী মহিলা দরজা খুলে জানতে চাইলেন কাকে চাই। আমি বললাম “আমি নিলয়ের বড় বোন”. উনি খুব অবাক হয়ে বললেন, “ ওরতো কোনো বোন নেই।” আমি একটু হেসে বললাম, “ফোনে ওর সাথে আমার পরিচয় ও আমাকে মিষ্টি আপু ডাকে” উনি বিরক্তি ভাব নিয়ে বললেন, “ ছেলেমানুষ, হয়তো দুষ্টুমি করেছে।” উনি কেমন যেনো আমাকে তাড়িয়ে দেওয়ার ভঙ্গিতে বললেন, “তুমি চলে যাও।”

আমি বললাম, “আমি তো নিলয়ের সাথে দেখা করতে এসেছি। আপনি একটু নিলয়কে ডেকে দিন না।”

অনেক অনুরোধ করার পর উনি আমাকে ভিতরে নিয়ে বসালেন। তারপর বলতে শুরু করলেন, “আমি নিলয়ের মা।আমার মেয়ের নাম মিষ্টি। গত বছর ব্লাড ক্যান্সারে মিষ্টি মারা যায়। এরপর থেকেই ওর এই অবস্থা। ও ওর আপুকে খুব ভালবাসত। ওর আপু মারা যাওয়ার পর থেকে ওর মনে যেই নাম্বার আসে তাতে কল দিয়ে মেয়ে কণ্ঠ শুনতে পেলে, তাকেই ওর মিষ্টি আপু বানিয়ে ফেলে। সারাদিন ঘরের মধ্যে থাকে । মাঝে মাঝে যখন ভালো থাকে তখন বাসা থেকে বের হয়।”

বলতে বলতে উনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন। আমি কি করবো বুঝতে না পেরে শুধু বললাম, “ আমি কি নিলয়ের সাথে দেখা করতে পারি?”

উনি আমাকে একটা রুমের জানালার কাছে নিয়ে গেলেন। আমি জানালা দিয়ে দেখলাম, একটা ১৪/১৫ বছরের ছেলে মেঝেতে বসে একটা বড় ছবি হাতে নিয়ে একা একা নিজের মনে বিড়বিড় করে যাচ্ছে।কিছু সময়ের জন্য বোধ হয় আমি পাথর হয়ে গেলাম। তারপর যখন নিজের মাঝে ফিরে এলাম তখন আমি কিছু না বলে নিলয়ের মায়ের হাতে গিফটটা দিয়ে চলে এলাম।

আসার সময় একটা কথায় বার বার কানে বাজছিল, “আপু, এই মিষ্টি আপু”

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা আগস্ট, ২০১৫ রাত ৯:১৯

বিল্লাল হোসাইন বলেছেন: অত্যন্ত হৃদয়বিদারক ।

০৭ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১০:২১

প্রীতি পারমিতা বলেছেন: :(

২| ০১ লা আগস্ট, ২০১৫ রাত ৯:৪৯

কি করি আজ ভেবে না পাই বলেছেন: স্পর্শী :(

০৭ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১০:২১

প্রীতি পারমিতা বলেছেন: :(

৩| ০১ লা আগস্ট, ২০১৫ রাত ১০:৫৩

মিথুন রায় বলেছেন: সত্যিই হৃদয়বিদারক, তবে মিষ্টি আপু তোমার সাথে কি এখনও ছেলেটার কথা হয়? জানালে খুশি হবো

০৭ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১০:২২

প্রীতি পারমিতা বলেছেন: না এখন কথা হয় না। :)

৪| ১৪ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ২:৩৯

অনবদ্য অনিন্দ্য বলেছেন: অন্যরকম একটা গল্প ! মন খারাপ করে দিয়ে গেলো একটু । চালিয়ে যান, লেখালেখি থামাবেন না

৫| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১১:২৪

প্রীতি পারমিতা বলেছেন: ধন্যবাদ
চেষ্টা করব মন ভালো করার গল্প লেখার :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.