নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি বাই ব্লাড বাংলাদেশি। কারো মাস্তানি ভালো লাগে না, কিন্তু সহ্য করি। সবসময় ভাবি: আহা, সবাইকে যদি মুক্ত আকাশে ছেড়ে দিতে পারতাম। আপাতত যুক্তরাষ্ট্রে বসে অনর্থক একটা বিষয় নিয়ে পিএইচডি করছি।

কাজী মেহেদী হাসান

খুবই সাধারণ মানুষ। খেটে খাওয়া শ্রমজীবি। ধর্ম ও রাজনীতি নিয়ে খুব উদার মনোভাব পোষন করি। পৃথিবীটাই আসলে প্রত্যেকের। জাতি, ধর্ম, বর্ণ ও সীমানার বাধনে বাধা ঠিক নয়। এই মত লালন করি। আমার কামনা পুরো পৃথিবী একদিন একটাই দেশ হবে।

কাজী মেহেদী হাসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলা সনের জানা-অজানা কিছু কথা

১৪ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৩:০০



প্রচলিত বাংলা সন কি আসলেই বাংলার? ইতিহাস বলে এর উৎপত্তি মোগলদের হাতে। ভারতের অনেক স্থানের মানুষ একে নিজেদের ক্যালেন্ডার হিসেবে গ্রহণ না করলেও, চারশ বছর ধরে এটি গ্রহণ করে নিয়েছে দুই বাংলার মানুষ। তবে এতে নানা সময় হয়েছে বেশকিছু ঘসামাজা, কারা করেছে জানেন?

১.মোঘল সম্রাট আকবর (১৫৫৬-১৬০৫) কর আদায়ের উদ্দেশ্যে নতুন বাংলা ক্যালেন্ডার প্রচলন করেন। এর আগে মুসলিম শাসনামলে কৃষি ও ভূমিকর আদায় করা হতো ইসলামিক হিজরী ক্যালেন্ডার অনুসারে। হিজরী পঞ্জিকা চন্দ্র নির্ভর হওয়ায় কৃষিবছর ও অর্থবছর আলাদা হয়ে যেত। তাই ফসল না উঠলেও কর দেয়ার সময় চলে আসতো। অসময়ে কর পরিশোধ করতো হতে ব’লে কৃষকদের কষ্টের সীমা ছিলনা। সহজে কর আদায়ের উদ্দেশ্যে সম্রাট আকবর ক্যালেন্ডার সংশোধনের নির্দেশ দেন।


মোগল সম্রাট আকবরের সভাসদ

২. কর আদায়ের জন্য ক্যালেন্ডার তৈরি করেন নির্দেশমত সে সময়ের বিখ্যাত পন্ডিত, রাজ জ্যোতিষি ও সম্রাটের উপদেষ্টা আমীর ফাতেউল্লাহ সিরাজী। তিনি চান্দ্র-হিজরী ক্যালেন্ডারের ওপর ভিত্তি করে হিন্দু সৌর মাসের সমন্বয়ে নতুন ক্যালেন্ডার তৈরি করলেন। যার নাম হয় তারিখ ই এলাহি।

৩. তারিখ ই এলাহি বা “সৌর ক্যালেন্ডার” যা “বাংলা সন” নামে পরিচিত তা সরকারীভাবে চালু করা হয় ১৫৮৪ সালে। যদিও এটা আকবর-এর রাজত্বের ২৯ বছর পর চালু করা হয় তবুও এর গননা করা হয় ১৫৫৬ সাল থেকে যখন সম্রাট আকবর সিংহাসনে আরোহণ করেন।১৫৫৬ খৃস্টাব্দে হিজরী সাল ছিল ৯৬৩। ফলে ওই বছরকে ৯৬৩ সৌর বছর ধরে সাল গণনা শুরু হয়।

৪. তারিখ ই এলাহি ক্যালেন্ডারের প্রচলন পরবর্তী ফসল কাটা হলে কৃষকেরা কর পরিশোধ করেন। পরের বছরও তাই করেন। ফলে কৃষকদের কাছে এটা ‘ফসলী সন’ বলে পরিচিত ব্যাপকভাবে পরিচিত হয়। বাংলার সু্বেদাররা ফসলী সন হিসেবেই কর আদায় শুরু করলে মোঘল আমলে বাংলায় এটি সরকারী ক্যালেন্ডার হিসেবে মর্যাদা পায়।

৫. ফতে উল্লাহ সিরাজী বারোমাসের নাম রাখেন হিন্দু জ্যোতিষশাস্ত্র সম্মতভাবে নক্ষত্রের নামে। ১. বিশাখা (Librae) থেকে বৈশাখ ২. জাইষ্ঠা (Scorpii) থেকে জৈষ্ঠ ৩. আষাঢ়া (Sagittarii) থেকে আষাঢ় ৪. শ্রাবণা (Aquilae) থেকে শ্রাবণ ৫. ভাদ্রপাদা (Pegasi) থেকে ভাদ্র ৬. আশ্বিনী (Arietis) থেকে আশ্বিন ৭. কৃতিকা (Tauri) থেকে কার্তিক ৮. পুস্যা (Aldebaran) থেকে পৌষ ৯. আগ্রৈহনী (Cancri) থেকে অগ্রহায়ন ১০. মাঘা (Regulus) থেকে মাঘ ১১. ফাল্গুনী (Leonis) থেকে ফাল্গুন এবং ১২. চিত্রা (Virginis) থেকে চৈত্র।

৬. ১৯৬৬ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমীর তত্ত্বাবধানে ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর নেতৃত্বে একটি বিশেষ কমিটি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জন্য বাংলা ক্যালেন্ডার পরিমার্জন করেন। অন্যান্য ক্যালেন্ডারের মতো এতে ৩৬৫ দিনে এক বছর। সূর্যের চারদিকে একবার ঘুরে আসতে পৃথিবীর সময় লাগে ৩৬৫ দিন ৫ ঘন্টা ৪৭ সেকেন্ড। এই অমিলে সমতা আনতে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার প্রতি চার বছর অন্তর ফেব্রুয়ারী মাসে একটি অতিরিক্ত দিন যোগ করে। একে লিপ ইয়ার বলে।

জ্যোতিষশাস্ত্রের ওপর নির্ভরশীল বাংলা ক্যালেন্ডারে এই অতিরিক্ত এক দিন কম হতো। তাছাড়া বাংলা মাসগুলোর দৈর্ঘ্য ছিল ভিন্ন ভিন্ন। এই অসামঞ্জস্য মেটাতে ও আরও যথাযথ করতে বাংলা একাডেমীর প্রস্তাবনা এরকমঃ

* বছরের প্রথম পাঁচটি মাস, বৈশাখ থেকে ভাদ্র, গঠিত হবে ৩১ দিনে।
* বছরের বাকি সাতটি মাস, আশ্বিন থেকে চৈত্র, গঠিত হবে ৩০ দিনে।
* বছর শুরু হবে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের ১৪ এপ্র্রিল। এবং প্রতি লিপ ইয়ার বছরের ফাল্গুন মাসে অতিরিক্ত একটি দিন যোগ হবে।

এটি ১৯৮৭ সাল থেকে সরকারিভাবে এটি গ্রহণ করা হয়।

৭. বৈশাখ মাসের এক তারিখ বা পহেলা বৈশাখ বাংলা বছরের প্রথম দিন। ভারতের পশ্চিম বাংলায় এটা চন্দ্র-সূর্য তিথি গণনা করে পালিত হয় এপ্রিল মাসের ১৪ অথবা ১৫ তারিখে।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৩:৩০

আনামুল হক ইনাম বলেছেন: ভাল লিখা

১৪ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৩:৪১

কাজী মেহেদী হাসান বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৪:২০

আহলান বলেছেন: জানলাম অনেক কিছু! ধন্যবাদ!!

৩| ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৫:৪৯

শাহ আজিজ বলেছেন: আপনার ৫নং পয়েন্ট সঠিক নয় । আরব, পারসিয়ান , মুঘল যারাই ভারতবর্ষে এসেছে , লুটপাটের জন্য।এর আগে কিভাবে চলত এই বৃহত্তর উন্নত সমাজ? আমাদের পঞ্জিকার ব্যাপারটা জানেন অবশ্যিই । এই বিষুবীয় এলাকার প্রায় সব খানে একি সময়ে সন গননা হত । জেদ্দা থেকে ভিয়েতনাম প্রায় কাছাকাছি সময়ে নববর্ষ উদযাপন করত। পঞ্জিকার বদলে তারা তিথি , নক্ষত্রের অবস্থান এবং জোয়ার ভাটার পরিস্থিতি বুঝতে পারতেন। পঞ্জিকার উদ্ভাবনা সম্পর্কে জানতে পারিনি আজও । মিন্টু ভাই (প্রয়াত এনায়েতুল্লাহ খান ৮৭তে বেইজিঙে বৈশাখী উৎসব করেন বেশ জোরে সোরে । তাতে ইরান, শ্রীলঙ্কা , ভারত, মালদিভ , বার্মা থাইল্যান্ড ,পাকিস্তান, ভিয়েতনামের কূটনীতিকরা হাজির ছিলেন তারা মিন্টু ভাইয়ের ইংরেজি ভাষণের বিপরিতে জানান দেন তাদের কৃষি ভিত্তিক সমাজে একি আদলের সনের উপস্থিতির কথা। আমিও প্রথম জেনেছিলাম এই বিষয়টি । আকবর আরবীয় চন্দ্র সন চালু করে একটা বিপদেই পড়েছিলেন , তাকে অনেক বিসয়েই সংস্কারক বলা হয়। অনেক ক্ষেত্রে এক গরু দুবার জবাইএর ঘটনা আছে। কিন্তু এই বাংলা -ভারত উপমহাদেশের যে শক্ত সাংস্কৃতিক ভিত্তি তা লুটেরা মোগলদের ছিলনা। শুন্য সংখ্যার ইতিহাস পড়ে নেবেন ।

৪| ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:২৫

কাজী মেহেদী হাসান বলেছেন: ধন্যবাদ জনাব, শাহ আজিজ সাহেব, আমি যেখান থেকে তথ্য নিয়েছি সেখানে এর রেফারেন্স হিসেবে একটি বইয়ের নাম দেয়া আছে। বইটি আমার পড়া হয় নি। আপনি যদি পান পড়ে দেখতে পারেন। এখানে বইটির তথ্য দিয়ে দিচ্ছি;
Bag, A. K. (2005), Fathullah Shirazi: Cannon, Multi-barrel Gun and Yarghu, Indian Journal of History of Science, pp. 431–436.


৫| ১৭ ই মে, ২০১৬ দুপুর ১২:২৩

মুহিব বলেছেন: অনেক কিছু জানলাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.