নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি বাই ব্লাড বাংলাদেশি। কারো মাস্তানি ভালো লাগে না, কিন্তু সহ্য করি। সবসময় ভাবি: আহা, সবাইকে যদি মুক্ত আকাশে ছেড়ে দিতে পারতাম। আপাতত যুক্তরাষ্ট্রে বসে অনর্থক একটা বিষয় নিয়ে পিএইচডি করছি।

কাজী মেহেদী হাসান

খুবই সাধারণ মানুষ। খেটে খাওয়া শ্রমজীবি। ধর্ম ও রাজনীতি নিয়ে খুব উদার মনোভাব পোষন করি। পৃথিবীটাই আসলে প্রত্যেকের। জাতি, ধর্ম, বর্ণ ও সীমানার বাধনে বাধা ঠিক নয়। এই মত লালন করি। আমার কামনা পুরো পৃথিবী একদিন একটাই দেশ হবে।

কাজী মেহেদী হাসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

মন্ত্রীর সাথে হঠাৎ দেখা

০১ লা নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:২৬




পয়সা বাচানোর জন্য কেবল ম্যাসড পটোটো (আলু ভর্তা)নিয়েছি। খেতে বেশ সুস্বাদু। মাথাটা কিছুটা নীচু করে চামচ দিয়ে কেটে কেটে খাচ্ছি, যাতে কোন বাঙ্গালির চোখে না পড়ি। রেস্টুরেন্ট এরিয়া হওয়ায় চারিদিকে চামচের টুং টাং আওয়াজ। এর মধ্যে নারী কণ্ঠ শুনলাম, এক্সিকিউজ মি। মে আই সিট হেয়ার?

অবশ্যই, আমি মুখ তুলে দেখলাম। ভদ্রমহিলার হাতে কফির মগ। আমার সামনের খালি চেয়ারে বসলেন। তার গলায় ঝোলানো কার্ডের ওপর বড় করে লেখা ‘পাটি’। তার মানেই ইনি হোমরা-চোমরা। হয় মন্ত্রী, সচিব না হয় পরিবেশ বিশেষজ্ঞ।

ভদ্রমহিলা নিজেই কফি নিয়ে এসেছেন। ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত কোপেনহেগেন জলবায়ু সম্মেলনের বেলা কনভেনশন সেন্টারে এ দৃশ্য নতুন কিছু নয়। আপনার আশেপাশেই মন্ত্রী ও রাষ্ট্রপ্রধান বা প্রধানমন্ত্রীরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাদের কারো কারো সাথে
দু-এক জন নিরাপত্তা রক্ষীও আছেন। ভদ্রমহিলার চেহারা থেকে আমার ভারতীয় বা শ্রীলঙ্কান বলে মনে হলো। আমি জানতে চাইলাম, আপনি কি ভারতীয়। আগে তিনি কিছুটা হেসে না সূচক মাথা নাড়লেন। একটা চুমুক নিয়ে কফির কাপটা নামালেন তারপর
বললেন, আমি গায়ানার। ব্রিটিশ গায়ানা। ব্রিটিশ গায়ানা?-

আমি প্রশ্নবোধক মুখ করে তার মুখের দিকে তাকালাম। কারণ তখনও আমি জানতাম না গায়ানা নামে পৃথিবীতে
দুটো দেশ আছে। উনি বললেন, একটি ব্রিটিশ গায়ানা আরেকটি ফ্রেঞ্চ গায়ানা। উপনিবেশ শাসনের কারনে একদেশের লোক কথা বলে ইংরেজি আরেক দেশের লোক ফরাসিতে। দক্ষিণ আমেরিকার এই দেশটির মাঝখানে সুরিনাম নামে একটি দেশ আছে।

ভদ্রমহিলার নাম জানা হলো ক্যারোলিন। আমিও পরিচয় দিলাম। বাংলাদেশ নামের দেশটি একবারেই চিনতে পারলেন এবং প্রধানমন্তী শেখ হাসিনা ও ডক্টর ইউনুসকে চেনেন বলে জানালেন। কফি শেষ হতেই তিনি উঠে দাড়ালেন। ‘পাটি’ লেখা দেখিয়ে জানতে
চাইলাম তিনি কি হিসেবে এসেছেন। হ্যান্ডব্যগ থেকে কার্ড বের করে একটু হেসে চলে গেলেন।

কার্ডের উপর লেখা ক্যারোলিন রডরিগস, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, গায়ানা।

আহা আগে যদি জানতাম, একটা ছবি তুলে রাখতে পারতাম। জলবায়ু সম্মেলনে আরেক দিনের কথা। সম্মেলনের মিডিয়া সেন্টারে কাজ
করছি। আমার পাশে ক্যামেরাম্যান জুয়েল নুর। সামনের ভদ্রলোককে দেখিয়ে বললো, ব্যাটা নির্ঘাত ইন্ডিয়া থেকে এসেছে।
আমার মনে হলো লোকটা ভারতের এবং বাঙ্গালী। মুখ বাড়িয়ে জানতে চাইলাম আপনি কি ভারতীয়?
না আমি মরিশাস থেকে এসেছি। তবে ঠিক ধরেছেন, আমার পূর্বপুরুষ ভারতীয়। জানালেন, তার নাম নন্দকুমার বোধা। তিনি কিছুদিন দেশটির মন্ত্রী ছিলেন। বর্তমানে একটি সংবাদপত্রের সম্পাদক। সামনে তার দেশে নির্বাচন। তার দল জিতলে তিনি আগামীতেও মন্ত্রী হবেন।

বললেন, বাংলাদেশের অনেক শ্রমিক মরিশাসে কাজ করে। বাংলাদেশিরা খুব ভালো। তার দল ক্ষমতায় গেলে বাংলাদেশ ও ভারতের সাথে সম্পর্ক বাড়ানোর চেষ্টা করবেন। সংবাদপত্রে দেখেছিলাম, এই ঘটনার ছ’মাস পর আবার তিনি মন্ত্রী
হয়েছিলেন।

২০০৬ সালে মালয়শিয়ায় পুত্রজায়ায় অনুষ্ঠিত হলো ইসলামি সম্মেলন সংস্থা ওআইসির ১৩ তম সম্মেলন। এমন সময় সম্মেলন হলো তখন লেবানের ওপর ইসরাইল গোলা বর্ষন করছে। প্রতিদিন শত শত মানুষ মারা যাচ্ছে। আমরা সাংবাদিকরা মূল সম্মেলন কক্ষের বাইরে বসে প্রজেক্টরে সম্মেলন দেখছি। সবচেয়ে জ্বালাময়ি ভাষণ দিলেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমেদিনেজাদ। বক্তব্যের সময় আমাদের হাতে ধরিয়ে দেয়া ফাসী কপি। যার এক বর্নও বুঝি না। প্রথম পর্ব শেষ হতেই ছোট খাট গড়নের
আহমেদিনেজাদ বের হয়ে এসে সাংবাদিকদের সাথে কুশল মিনিময় করার জন্য দাড়ালেন। আমি সাহস করে বললাম, মি প্রেসিডেন্ট, আমাদের আপনার ভাষনের ইংরেজি কপি দরকার। প্রেসিডেন্ট তার সহকারী একজনকে
কানে কাছে কিছু নির্দেশনা দিলেন। সহকারী জানালেন, মিডিয়া সেন্টারে কিছুক্ষনের মধ্যেই ইংরেজি কপি পাওয়া যাবে।
পনের মিনিট পরে গিয়ে দেখি কপি আসেনি। বাধ্য হয়ে ইন্টারনেট থেকে দু একটা লাইন বের করে নিউজ লিখে ফেললাম।

এরপর সম্মেলন কেন্দ্রের বানকুয়েট হলে লাঞ্চ করতে গেলাম। হাজার হাজার লোকের মধ্যে এক ইরানি ভদ্রলোক কেমন করে আমাকে খাওয়ার টেবিলে খুজে পেলেন, তা বলতে পারবো না তবে একজন ইরানি কর্মকর্তার কর্তব্য
নিষ্টায় আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম। তিনি আমাকে ইংরেজি কপি দিতে এসেছিলেন। দেরি হওয়ার জন্য দুঃখ প্রকাশ করলেন।

ভদ্রলোকের নাম ছিল হায়দার মোসলেহি। তখন তিনি ছিলেন সহকারি তথ্যমন্ত্রী। পরে তথ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন। কয়েকবছর আগে প্রেসিডেন্ট আহমেদিনেজাদের সাথে দ্বন্দ্বের কারণেই তিনি মন্ত্রিত্ব হারিয়েছেন।

সাংবাদিকতা করতে এসে দেশ ও দেশের বাইরে এমন কতো বিখ্যাত মানুষের সাথে পরিচিত হয়েছি, তার হিসেব নেই। নিজেকে মাঝে মাঝে তাই ধন্য বলে মনে হয়।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:০৭

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: হুম ..

দারুন অভিজ্ঞতা! সমৃদ্ধতর :)

শেয়ার ধন্যবাদ

২| ০১ লা নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:৫৪

প্রামানিক বলেছেন: সৌভাগ্য এবং অভিজ্ঞতা দুটাই দারুণ।

৩| ০১ লা নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:০৯

কালীদাস বলেছেন: বৈদেশি আফামণি দেখতে বেশ কিউট দেখা যায়। ইনিই কি সেই মিনিস্টার আফা নাকি?

৪| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৬ ভোর ৪:২৪

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন:
ভাল সৌভাগ্য আপনার। B-))

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.