![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিজেকে অদৃশ্য ভাবতে খুব ভালো লাগে সেটা থেকে ভুতের ছানা নামটা মাথায় আসে।যদিও জ্বীন ভূত কে অস্বাভাবিক রকম ভয় পাই।খাই,দাই,ঘুমাই এবং কাজ করি।এসবের ফাঁকে সময় খুঁজে পেলে কিছু লেখার চেষ্টা করি.
১.
ভালোবাসা কথাটি ছোটবেলা খুবই লজ্জাজনক শব্দের মধ্যে একটা ছিল।তখন শুক্রবারে বিটিভি তে বাংলা সিনেমা দেখার জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করতাম।আর সিনেমাতে যখন নায়ক নায়িকা কে "আই লাভ ইউ অথবা আমি তোমাকে ভালোবাসি" কথাটা বলতো তখন সেই সময়টা ছিল অত্যন্ত লজ্জাজনক মুহূর্তগুলোর একটি। তখন থেকেই শিখে আসছিলাম ভালোবাসা এবং প্রেম মানে অত্যন্ত লজ্জাজনক ব্যাপার বৈকি আর কিছু নয়।
৫ম শ্রেণিতে পড়ার সময় বৃত্তি পরীক্ষার জন্য স্কুলে আলাদা কোচিংএর ব্যবস্থা ছিল।ছাত্র খুব খারাপ ছিলাম না।ঠিকঠাক মত পড়ালেখা করে যাচ্ছিলাম।একদিম ক্লাস টেস্ট পরীক্ষার রেজাল্টের সময় আমার রেজাল্টা স্যার প্রথমে না বলে পরে বলে।আমি খুব অবাক হই,কারণ আমাকে পেছনে ফেলতে পারে এমন ছাত্রছাত্রী আমার নজরে পড়েনি।যাই হোক আমি দ্বিতীয় হলাম আর প্রথম হল একটা মেয়ে।যদিও মেয়েটার দিকে রাগান্বিত হয়ে তাকাই কিন্তু চোখে চোখ পড়ার সাথে সাথেই মেয়েটার প্রতি কেমন যেন মায়ার সৃষ্টির হয়।আর সেদিনই প্রথম কোন মেয়ের দিকে মনোযোগ দিয়ে তাকানো।তারপর থেকে মেয়েটাকে না দেখলে ভালো লাগে না।স্কুলে না আসলে কেমন যেন লাগে।তখন আসলে বুঝতামনা যে এটাই ভালোবাসা।৫ম শ্রেণি শেষ করে আমি রেসিডেন্সিয়ালে চলে আসি।হাউজে থাকতাম বলে কারো তেমন কোনো খোঁজখবর নেয়া হত না।৬ষ্ঠ অথবা ৭ম শ্রেণি পড়ার সময় জানতে পাড়ি যে মেয়েটা নাকি আমাকে পছন্দ করতো।এখানে মেয়েটা পছন্দ করতো পর্যন্তই রয়ে গেলো।৯ম শ্রেণিতে উঠার সময় হাউজ ছেড়েদিলাম।বাসা থেকে আসা যাওয়া শুরু করলাম।আম্মাজান নিয়ে আসেন নিয়ে যান।যার ফলে প্রেম ভালোবাসার প্রতি অন্যরকম একটা বেষ্টনী পড়ে যায়।কোচিংএ মডেল টেস্ট দেয়ার সময় ভিএনসির এক মেয়ের সাথে পরিচয় হয়।পড়া লেখা নিয়ে কথা হতে হতে কথা বলাটা ভালোলাগার দিকে চলে গেল।এমনেতে কথা হত ফোনেই।তখনতো আর স্মার্ট ফোনের যুগ ছিলো না।তখন নোকিয়া ফোনের অনেক কদর ছিলো।তখন এন৭০ সেট ইউজ করতাম।নিমবাজ দিয়ে ফেসবুক চালানো লাগতো চ্যাট করার জন্য।অপেরা থেকে চ্যাট করা যেতো না।দিনে কোচিংএ দেখা বিকেলে ফোনে কথা বলা এবং রাতে ফেবুতে কথা বলা এভাবেই দিন কাটছিল।এসব ঘটনা আমার আম্মাজানের চোখ এড়ায়নি।যখন আমাদের মাঝে সুন্দর সম্পর্কের সৃষ্টি হল,সময়টাও ভালোই যাচ্ছিলো।ঠিক তখন দাবার ঘরের শেষ চালটা খেললেন আমার আম্মাজান।আমাদের মাঝের মিষ্টি সম্পর্কটাকে একদম বিষিয়ে দিলেন।আমার কিছুই করার ছিল না।বাধ্য ছেলের মত শুধু দেখে যেতেই হল।মেয়েটার সাথে পরে অবশ্য আর কথা হয় নাই।
২.
এস,এস,সি দিলাম।হাতে অফুরন্ত সময়,সময় যেন আর কাটে না।সারাদিন হুমায়ুন আআহমেদ স্যার আর জাফর ইকবাল স্যারের বই পড়ে সময় কাটে।বন্ধুরা যে যার মত ঘুরতে গেছে।কেউ কেউ এন,ডি,সির জন্য কোচিং করছিলো।যার ফলে একা একাই সময় কাটাতে হচ্ছিল।আমার একজন বান্ধবী আবার তখন ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ কোর্স করার জন্য ভর্তি হয়।তার সাথে মাঝে মাঝে কথা হত। একদিন আমি তাকে বললাম "দোস্ত কোনো নাম্বার হবে?এরকম একা একা আর ভালো লাগে না"আসলেই একা একা ভালো লাগছিলো না।তখন সে আমাকে একটা বাংলালিংক নাম্বার দেয় এবং নাম বলে দেয়।মেয়েটা তাদের সাথে কোচিং করতো। তো নাম্বার পেয়ে আনন্দে আত্মহারা।ফোন দিলাম,সে ফোনটা রিসিভ করলো না।দ্বিতীয় বার দিলাম তখনো রিসিভ করলো না,এভাবে ৪বার ফোন দেয়ার পরও যখন রিসিভ করছিলো না।তখন মেসেজ দিলাম"ফোন রিসিভ করছেননা কেন?"সে উত্তর দিলো যে তিনি অপরিচিত কারো সাথে কথা বলেননা এটা সেটা(আসলে মেয়েরা প্রথমে যা বলে থাকে আর কি)।আমি মাঠে নামলাম এবং কনভেন্স করার চেষ্টা করলাম।একটা কথাতেই সে গলে গেলো। আমি তাকে বলেছিলাম"আপনি যখন প্রথম দিন স্কুলে গিয়েছিলেন তখন সম্পূর্ণ ইনভাইরোনমেন্টা ছিল আননোন।আস্তে আস্তে সবকিছু স্বাভাবিক হয়েছে,সবাই পরিচিত হয়েছে।হয়তো আমি আজকে অপরিচিত কিন্তু কিছুদিন পর থেকে আর অপরিচিত থাকবো না"।তারপর সে ফোন ধরলো। কথা বলতে লাগলাম পরীক্ষার রেজাল্ট প্রকাশিত হল।আমি গোল্ডেন পেলেও সে কোনোমতে এপ্লাস পেয়েছে।কলেজ ভর্তি নিয়ে সবাই যখন পেরা খাচ্ছে তখন আমি তাকে নিয়ে ঘুরে বেড়াই।সে ভর্তি হল সিটি কলেজে।আমাদের দিনগুলো ভালোই কাটছিলো। আগস্টের ২ তারিখ জীবনের প্রথম কাউকে প্রপোজ করি।ধানমন্ডি লেকে বসে তার সামনে হাতটা নিয়ে বলেছিলাম ভালোবাস কি আমায়?আমার জন্য কি কিছুটা জায়গা হবে তোমার মনে??উত্তরে সে কিছুই বললনা।বাসায় চলে গেল।সন্ধ্যার দিকে ওদের বাসার টিএন্ডটি লাইন থেকে ফোন আসলো।আমিতো মনে মনে আয়াতুল কুসরি পড়া শুরু করেছি।এই বুঝি ওর বাবা ফোন দিলো।ফোন রিসিভ করে সেই চিরচেনা গলাটা শুনতে পেলাম।ওপাশ থেকে খুব শক্ত ভাষায় কিছু কথা ভেসে আসছে যার পুরোটা আমি বুঝিনি,শুধু এতোটুকুই বুঝতে পেড়েছি যে ও বলছে,আমদের মাঝে ব্যাপার যায় না।আমি আচ্ছা বলে ফোনটা রেখে দিলাম।চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরে পড়লো।আম্মাজান ব্যাপারটা খেয়াল করলেন এবং জিজ্ঞাসা। আমি সম্পূর্ণ ব্যাপারটা খুলে বললে তিনি কিছু বলেননা।মনে হয় ছেলের দুঃখে আম্মাজান ও দুখী।যাই হোক,সেদিনের পর আমার প্রতিদিনের রুটিন আস্তে আস্তে চেঞ্জ হতে লাগলো।২সপ্তাহের মধ্যে আমি বদলে গেছি।এভাবেই দিন যাচ্ছিলো।আরফিয়ার সাথে অল্প অল্প কথা হচ্ছিলো।(সিটি কলেজের তেনার নাম আরফিয়া)।আমার বার্থডে ২০ শে সেপ্টেম্বর।সবাই ফেবু ওয়ালে উইশ করছিলো কিন্তু আরফিয়া উইশ করেনি,ইভেন ফোনও করেনি।খুবই খারাপ লাগছিলো।সন্ধ্যা ৭টার দিকে উনি ফোন দিয়ে আমাকে উইশ না করে বলে যে "আমার হৃদয় মাঝে তোমার জন্য জায়গা বরাদ্দ করা হয়েছে"।আমি আমার নিজের কানকে বিশ্বাস করাতে পাড়ছিলাম না।তারপর, তারপর আর কি আম্মাজানকে কথাটা জানাইলাম।দেখলাম আমার আম্মাজান খুশি হইছেন।অতঃপর প্রেম শুরু।সাথে ঘুরাঘুরিতো আছেই।১মাস পড়ালেখা বলতে কিছুই হয়নি।
লেখাটা এখানেই শেষ হতে পারতো যদি আমার ভাগ্য ভালো থাকতো।আমার ভাগ্য সবসময়ই আমায় নিয়ে খেলে।আমার কাছে ভালোবাসা মানে পার্কে বসে থাকা,রিক্সায় হুড খুলে ঘুরেবেড়ানো, বৃষ্টিতে ভেজা এবং রাতভর প্রিয়মানুষটার সাথে কথা বলা।আসলে এমনেই চলছিলো।নিজেদের মাঝে ঝগড়া হত।আপনা আপনি মিটে যেতো।আমি নিজে ফোন না দিলেও সে ঠিকই ফোন দিতে।নিজ থেকে আমার রাগ ভাঙাতো।একটা ব্যাপার নিয়ে আমাদের মাঝে প্রায়ই ঝগড়া হত।ভিএনসির মালিহা সম্পর্কে ওকে বলেছিলাম।মালিহা আমাকে মাঝে মাঝে ফোন দিত এটাই ছিল মূল কারণ।এই ব্যাপারটা নিয়ে দূরত্ব সৃষ্টি হতে হতে আমরা নিজেদের থেকে অনেক দূরে চলে গেলাম।কিভাবে যে এতোটা দূরে সরে গেলাম বুঝতে পারলাম না।আমাকে কেউ অবিশ্বাস করলে খুব খারাপ লাগে।আর এটাই মূল কারণ।
৩.
এইচ,এস,সি'র প্রিটেস্ট শুরু হয়ে গেছে।কোনোরকম পাশ করলাম।বুঝতে পাড়লাম পড়ালেখার ট্র্যাক থেকে অনেক দূরে সরে গেছি।এমন সময় আমার এক ফ্রেন্ড ফোন দেয় যে একটা মেয়েকে হেল্প করতে হবে।কিভাবে?মেয়েটার বিএফ সেজে।মেয়েটার নাকি খুব উপকার হবে ইত্যাদি ইত্যাদি।রাজি হলাম উপকার করার জন্য।ফেসবুকে কানেক্ট হলাম।জেনে নিলাম কিভাবে উপকার করা লাগবে।পরে অবশ্য উপকার করতে হয় নাই।একা একাই ঠিক হয়ে গেছে।একাছিলাম পড়ালেখায়ও তেমন সময় দিতে পাড়ছিনা।মাথায় শুধু একই চিন্তা ঘুরে।তখন আমার এই বৃত্য থেকে বের হওয়ার জন্য সত্যিই কাউকে দরকার ছিলো।এই বৃত্য থেকে আমাকে বের হতে সাহায্য করে লুবাবা(যার বিএফ হিসেবে অভিনয়ের কথা ছিল)।লুবাবার নামের সাথে আরফিয়ার নামের অনেক মিল রয়েছে।যাইহোক লুবাবাকে যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতাম।আর এদিকে আরফিয়ার নাম মনে আসলে আর ঠিক থাকতে পাড়তামনা।ফেবুতে দেখি এর সাথে ছবি ওর সাথে। নিজেকে গুছানোর চেষ্টা করতে লাগলাম।লুবাবা আমাকে বুঝানোর চেষ্টা করছিলো যে এভাবে জীবন চলতে পারে না এই সেই।সে আমাকে হেল্প করলো নিজেকে শক্ত হওয়ার জন্য বললো।নিজে নিজে পাড়লাম শক্ত হতে।এইচ,এস,সি পরীক্ষা দিলাম।লুবাবার সাথে খুব কথা হয়।আর কোচিংএ যাওয়া আসার সময় মাঝে মাঝে আরফিয়ার সাথে দেখা হয়।কিন্তু লুবাবা যেন কিভাবে আমাকে কনভেন্স করে ফেললো।তাকে এখন খুব ভালো লাগে।কারন দুজনের স্বপ্ন একই।আর সেটা হল বুয়েট।ভাগ্যের নির্মম পরিহাস।আমার যে রেজাল্ট আসলো সেটা দিয়ে বুয়েটে এপ্লাই করা যাবে না।এর দ্বারাই দুজনের স্বপ্ন আলাদা হয়ে গেল।আর এর দ্বারা আমাদের মাঝে একটা ফাটলের সৃষ্টি হল যা ক্রমশই বড় হচ্ছিলো।ফাটলটা এতো বড়ই হল যে এপাশ থেকে ওপাশ দেখা যায় না।আস্তে করে আমি সরে এসেছিলাম।
এখন মালিহা আছে অস্ট্রেলিয়া সিডনীতে,ফারিয়া আছে ঢাবিতে এবং লুবাবা আছে বুয়েটে আর আমি আছি আমার মত।
[বিঃদ্রঃ উপরিউক্ত ঘটনা ও নামসমূহ সম্পূর্ণ কাল্পনিক।কারো ব্যক্তিগত জীবনের সাথে মিলে গেলে আমি দায়ী নই]
©somewhere in net ltd.