নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সমাজ বদলাতে হবে। অনবরত কথা বলা ছাড়া এ বদ্ধ সমাজ বদলাবে না। প্রগতিশীল সকল মানুষ যদি একসাথ কথা বলতো তবে দ্রুতই সমাজ বদলে যেতো। আমি ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে, নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে অনবরত বলতে চ

মুজিব রহমান

মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনষ্ক মানুষ

মুজিব রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রিয়র তালিকায় যোগ হল আরেকটি উপন্যাস

২৭ শে মে, ২০১৪ সকাল ৯:৪৪

কয়েক বছর আগে বইমেলা থেকে নোবেল বিজয়ী জার্মান লেখক হেরমান হেস এর ‘সিদ্ধার্থ’ উপন্যাসটি কিনেছিলাম। কিন' একজন কবিবন্ধু ছুঁ মেরে পড়ার জন্য নিয়ে গেল। আর যা হয়, বই আর বউ একবার চলে গেলে আর ফিরে আসে না। সপ্তাহখানেক আগে বইটির আরেকটি কপি হাতে আসে। মাত্র ১৯ পৃষ্ঠা পড়েই মনে হল- আজ এটুকুই থাক। যেটুকু পড়লাম তা নিয়ে অনেক কিছু ভাবনার আছে। এটুকু পড়েই বুঝেছি আমার পড়া আরেকটি সেরা বই হতে যাচ্ছে এটি। পুরোটা পড়ে আমি এর অসাধারণত্বে ঝিম মেরে যাই।

গৌতমবুদ্ধের আরেক নাম সিদ্ধার্থ। আমি ভেবেছিলাম এটি বুদ্ধকে নিয়ে লেখা উপন্যাস। কিন' উপন্যাসে গৌতম বুদ্ধ থাকলেও তারা দুজন সম্পূর্ণ ভিন্ন ব্যক্তি। এখানে অভাবিতভাবে বুদ্ধর দর্শনকে অতিক্রম করে একই ভূবনে ভিন্ন দর্শন সৃষ্টি করা হয়েছে। বুদ্ধর মতোই অল্প বয়সে সন্ন্যাস গ্রহণের জন্য গৃহ ত্যাগ করেছিল ব্রাহ্মণ কুমার সিদ্ধার্থ। সে সন্ন্যাসীদের সাথে তিন বছর কাটায়। গৌতম বুদ্ধ নামে মহাত্মার আবির্ভাবের কথা তারা বনে বসেও জানতে পারে। সে তার বন্ধু গোবিন্দকে বলে, বিদ্যা এবং উপদেশে আস'া হারিয়ে ফেলেছি, গুরুবাক্যে আর বিশ্বাস নেই। নতুন উপদেশ শুনতে তারা বুদ্ধর কাছে যায়। বুদ্ধর উপদেশ শোনার পর তাঁর সাথে অনেক কথা হয় সিদ্ধার্থের। সিদ্ধার্থ বলে, . . সংসারের ঊর্ধ্বে উঠবার এবং নির্বাণ লাভ সম্বন্ধে আপনার মতবাদ আকস্মিক এবং খাপছাড়া মনে হয়। বুদ্ধ বলে, . . দুঃখের হাত থেকে মুক্তি পাবার পথ খুঁজে পেতে সাহায্য করাই আমার লক্ষ্য। সিদ্ধার্থ বলে, . . উপদেশ থেকে আপনি কিছু শিক্ষালাভ করেননি; এবং হে মহাভিক্ষু, আমার মনে হয়, অপরের উপদেশের সাহায্যে কেউ মোক্ষলাভ করতে পারে না।. . সকল গুরু এবং তাদের শিক্ষা ত্যাগ করে নিজের পথ ধরে একাকী লক্ষ্যে পৌঁছব, অথবা প্রাণ দেব- এই সংকল্প নিয়ে আবার পথ চলব। . . আমরা যারা ঘর ছেড়েছি তারা মুক্তি চাই অহং থেকে। আপনার শিষ্যত্ব গ্রহণ করলে যে মুক্তি পেতাম তা হত বাহ্যিক; মুক্তির প্রতারণা দিয়ে নিজের মনকে শান্ত করতে চেস্টা করতাম. .। বুদ্ধ তাকে বিদায়ের ইঙ্গিত জানিয়ে বললেন, হে সন্ন্যাসী, তোমার বুদ্ধি তীক্ষ্ণ; চমৎকার করে কথা বলবার কৌশলও তোমার জানা আছে বন্ধু। সিদ্ধার্থ ভাবে, শুধু একজন লোক দেখেছি যার সামনে দাঁড়িয়ে আমার চোখ নত হয়। আর কারো সামনে আমার দৃষ্টি নত হবে না। এঁর ধর্ম শিক্ষাই আমাকে আকৃষ্ট করতে পারেনি, সুতরাং অন্যকোন ধর্মোপদেশও পারবে না। বুদ্ধ আমার সব কেড়ে নিয়েছে কিন' ফিরিয়ে দিয়েছেন সিদ্ধার্থকে, আমাকে।

এই কথোপকথন দীর্ঘ কিন' আকর্ষণীয়। দুজনের মধ্যেকার চিন্তা ভাবনার পার্থক্য স্পষ্ট হয়। সিদ্ধার্থ তার বন্ধু গোবিন্দকে রেখেই পা বড়ায় নতুন পথে। বুদ্ধের মতো মহাত্মা, জ্ঞানী, শ্রেষ্ঠ এবং পুণ্যাত্মাকেও সিদ্ধার্থ গুরু বলে স্বীকার করতে পারল না; গ্রহণ করতে পারল না তাঁর উপদেশ। তাই সিদ্ধার্থ দূরে সরে এসেছে। এক গ্রামে এক নারীর কামনা এড়িয়ে শহরে এসে এক কারুকার্যখচিত চতুর্দোলায় দেখল- একরাশ কালো চুলের নিচে উজ্জ্বল, বড় মধুর, অতিশয় বুদ্ধিদীপ্ত মুখখানি; সদ্য-কাটা ডুমুরের মতো রক্তিম ওষ্ঠাধর; গভীর কালো চোখে সজাগ দৃষ্টি; একজোড়া সূক্ষ্ম ভ্রূ-মনে হয় যেন তুলি দিয়ে আঁকা। সবুজ শাড়ির সোনালি পাড় ছাড়িয়ে দেখা যায় সুকুমার গ্রীবা; দৃঢ় ও মসৃণ, দীর্ঘ ও কমনীয় দুই বাহু; মণিবন্ধ জুড়ে আছে সোনার বালা। এই অপূর্ব সৌন্দর্য দেখে সিদ্ধার্থ উৎফুল্ল হয়ে উঠল। এই নারীর নাম কমলা- সুপরিচিত বারাঙ্গনা। সিদ্ধার্থ জানে অপেক্ষা করতে, চিন্তা করতে এবং উপবাস করতে। এক সময় তাকে জয় করে নেয়, তার পরামর্শে বাণিজ্য করে বহু অর্থ আয় করে। বহু বছর কমলার জন্য আয় করে, তাকে উপহার দিয়ে তার সান্নিধ্যে থাকে কিন' কেউ কাউকে ভালবাসেনি। বিলাসী জীবন যাপন করতে থাকে। সিদ্ধার্থ জানে, অধিকাংশ লোকই ঝরাপাতার মতো হাওয়ায় উড়ে যায়, ভেসে বেড়ায় কিছুক্ষণ, তারপর মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়ে। কিন' অল্প কয়েকজন আছেন যাঁরা আকাশের নক্ষত্রের মতো নির্দিষ্ট কক্ষপথে চলেন। তার পিতার কথা, গোবিন্দের কথা এবং বুদ্ধের কথা ভাবতে ভাবতে একসময় সম্পত্তি কুড়ানোর প্রবৃত্তির মৃত্যু ঘটে। সে বিদায় নিল বাড়ি, শয্যা ও খাবারের কাছ থেকে। ঘুরতে ঘুরতে চলে এল এক নদীর ধারে। এই নদীর মাঝি বাসুদেব একদিন তাকে বিনা ভাড়ায় নদী পার করে দিয়েছিল। এখানেই সিদ্ধার্থ খেয়াঘাটের মাঝি হয়, শিখতে থাকে নদীর কাছ থেকে।

সিদ্ধার্থের সাথে শেষ মিলনে গর্ভবতী হয়েছিল কমলা। তারপর থেকেই সে আর বারাঙ্গনা থাকেনি। কমলা বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করে। বৌদ্ধভিক্ষুদের জন্য আশ্রম তৈরি করে। বুদ্ধের অসুস'তার কথা শুনে তাঁকে দেখার জন্য নদী পার হতে এসে সর্পকামড়ে তার মৃত্যু ঘটে। মৃত্যুর আগে অবশ্য সিদ্ধার্থের সাথে দেখা হয়, পুত্রকে তুলে দেয় পিতার হাতে। সিদ্ধার্থের মধ্যে পুত্রের প্রতি তীব্র ভালবাসা তৈরি হয়। কিন' পুত্র মায়ের প্রেমিককে সহ্য করতে পারে না। একদিন সে বাসুদেবের টাকা-পয়সা চুরি করে পালায়। একদিন বাসুদেবও চলে যায়। এই খেয়াঘাটেই একদিন আসে গোবিন্দ। গোবিন্দ বলে, বুদ্ধ শিখিয়েছেন দয়া, ক্ষমা, করুণা ও ধৈর্য- কিন' শেখাননি প্রেম। পার্থিব প্রেমে জড়িয়ে না পরতে তিনি উপদেশ দিয়েছেন। সিদ্ধার্থ গোবিন্দকে তার কপালে চুমু খেতে বলে। ঠোঁট দিয়ে স্পর্শ করামাত্র তৎক্ষণাৎ এক আশ্চর্য রূপান্তর ঘটল তার মধ্যে। গোবিন্দ মনে মনে বিচার করে দেখছিল সিদ্ধার্থের অদ্ভুত কথাগুলো, সময়ের অখণ্ডতা উপলব্ধি করার জন্য তখনো সে বৃথা চেষ্টা করছে, কল্পনা করতে চেষ্ট করছে সংসার ও নির্বাণ এক; বন্ধুর কথা রেখেছে, সহস্র সহস্র জন্ম-মৃত্যুকে এই হাসি দিয়েছে সমকালিীনতা। গোবিন্দের মনে হল, সিদ্ধার্থের এই আশ্চর্য হাসি অবিকল বুদ্ধের শান্ত, কোমল. দুর্জয়, বিজ্ঞ, করণাব্যঞ্জক অথবা বিদ্রূপাত্মক হাসির মতো বিচিত্র গুণসম্পন্ন। গোবিন্দের মাথা শ্রদ্ধায় আরো নত হল। সিদ্ধার্থের অচঞ্চল মূর্তি ও প্রশান্ত হাসির দিকে চেয়ে চেয়ে গোবিন্দের একসঙ্গে মনে পড়ে গেল জীবনে যা-কিছু সে ভালোবেসেছে, যা-কিছুকে পবিত্র বলে গ্রহণ করেছে এবং যা-কিছু কষ্ট জীবনে সে স্বীকার করেছে, তার সামনে যে লোকটি নিশ্চল হয়ে বসে আছে, তার মধ্যে এক হয়ে গেছে গোবিন্দের সে সকল মহৎ আদর্শ, মহৎ অভিজ্ঞতা।

গোবিন্দ মাটিতে মাথা রেখে তাকে প্রণাম করল।

এইতো গল্প! গল্প সামান্যই কিন' ঘটনার বর্ণনা পাঠককে নিয়ে যায় দর্শনরাজ্যে। বুদ্ধের দর্শন আর সিদ্ধার্থের দর্শন আলাদা। পাঠক উপভোগ করে, সিদ্ধার্থের মতো নিজেও চিন্তার রাজ্যে বিচরণ করে। পাঠক বুঝে এটি এমন এক উপন্যাস যা পড়া শেষ হলেও ভাবনা শেষ হবে না। তার মনে হবে, বিশ্ব সাহিত্যের সাথে বাংলা সাহিত্যর এখানেই পার্থক্য। ‘সিদ্ধার্থ’ লেখার সামর্থ আমাদের কারো নেই। এটি বিশ্বসাহিত্যের শেষ্ঠ উপন্যাসগুলোর মধ্যে শীর্ষস'ানীয়।

আলবেয়ার কাম্যুর ‘দ্য আউট সাইডার’, উইলবার স্মীথের ‘রিভার গড’, কিংবা রবার্ট লুই স্টিভেনসন এর ‘ড. জেকিল এবং মিস্টার হাইড’ এর মতো আমার পড়া প্রিয় উপন্যাসের তালিকায় যোগ হল হেরমান হেস এর ‘সিদ্ধার্থ’।



মন্তব্য ৭ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে মে, ২০১৪ সকাল ১১:২৫

মুনতাসির নাসিফ (দ্যা অ্যানোনিমাস) বলেছেন: বইটার কভারের একটা ছবি দিলে মন্দ হতো না ...
পড়তে হবে, অনলাইন কোন ভার্সন পাওয়া যাবেকি?
কোন প্রকাশনি থেকে বের হয়েছে জানাবেন?
আপনি যেটা পড়েছেন সেটা কি অনুবাদ কপি??

২৭ শে মে, ২০১৪ দুপুর ১:৩৪

মুজিব রহমান বলেছেন: অনুবাদ কপি।

২| ২৭ শে মে, ২০১৪ দুপুর ১২:১৩

রাজীব নুর বলেছেন: অধিকাংশ লোকই ঝরাপাতার মতো হাওয়ায় উড়ে যায়, ভেসে বেড়ায় কিছুক্ষণ, তারপর মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়ে। কিন' অল্প কয়েকজন আছেন যাঁরা আকাশের নক্ষত্রের মতো নির্দিষ্ট কক্ষপথে চলেন।

২৭ শে মে, ২০১৪ দুপুর ১:৩৫

মুজিব রহমান বলেছেন: ধন্যবাদ।

৩| ২৭ শে মে, ২০১৪ দুপুর ২:৩৮

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: সময় সুযোগ পেলে অবশ্যই পড়ব।

২৭ শে মে, ২০১৪ বিকাল ৫:০৮

মুজিব রহমান বলেছেন: পড়লে ভাল লাগবে বলেই বিশ্বাস করছি।

৪| ২৭ শে মে, ২০১৪ বিকাল ৩:১০

স্বপ্নচারী গ্রানমা বলেছেন:
'গৌতম বুদ্ধের ধর্ম ও দর্শন' নামে বইটি পড়েছেন ?

আপনার বইটিও সময় হলে পড়বো !

ভাল থাকুন ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.