![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যদিও আমি কখনো দুঃস্বপ্নে বিভোর ছিলামনা এবং আজও না ।তবে একটা জাগ্রত স্বপ্ন দেখতাম ; একদিন ভালোবাসব ,ঐ আকাশের বিশালতার মতো নয় কেবল আমার মনের গভীরতা থেকে ।
(এক)
নীলদা,
হঠাৎই ভীষণ মনে পড়লো গো তোমায়। নতুন বউদির সাথে তোমার এই ছবিগুলো বড্ড বেমানান লাগে আমার কাছে। আজ আবার নীলাদির সেইসব দিনগুলোকে ভীষণ মিস করছি! তুমি বলতে পারো নীলাদির কি দোষ ছিল সেদিন ! না ; তা পারবেনা। কারণ এতটুকুই জেনেছিলে যে তুমি ; নীলাদি তোমাকে পাগলের মতো ভালোবাসতো,এটাই ছিল নীলাদির সবচেয়ে বড় দূর্বলতা। আর আজও সে তোমাকেই.... ।
জানোতো নীলদা,
নীলাদি তোমাকে কত নামে ডাকতো ; তার মধ্যে নীল নামটা আমার কাছে সবচেয়ে বেশী ভালো লাগতো তাই আমিও এই নামেই ডেকেছি তোমাকে । আর হ্যাঁ,নীলাদির চোখে আজও তুমিই সেই শ্রেষ্ঠ পুরুষ রয়ে গেছ,তুমিই পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর মানুষ। জানো,আজও তোমার ব্যাক্তিত্বের কথা বলে বেড়ায় সবার কাছে। তোমার সম্পর্কে একটা নেতিবাচক কথা আজও শুনতে রাজি না নীলাদি। কি মধুর ভালোবাসা ছিলো গো তোমাদের; কিন্তু কি যে হয়ে গেলো ! যার ভার আজও নীলাদিকেই একা বয়ে বেড়াতে হচ্ছে আর তুমি তোমার স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করছো ।
নীলদা,
সম্পাদিকে বিয়ে করার পর প্রথম যেদিন সম্পাদির ঐ অগোছালো সংসার দেখতে গেলাম সেদিন তোমাদের বেডরুমে ঢুকতেই আমার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো ! বিয়ের প্রায় দেড় বছর আর নীলাদিকে ছেড়ে যাবার ছিল তখন প্রায় চার বছর অথচ তোমার বিছানার পাশে নীলাদির দেয়া উপহারগুলো অনেক যত্নে গুছিয়ে রাখা। কেন! কেন এটা করেছিলে তুমি নীলদা ! তবে কেন সেদিন নীলাদিকে ছেড়ে গিয়েছিলে? তা আজও জানতে পারলোনা নীলাদি ! শুধু এতটুকুই জেন,নীলাদি আজও তোমাকে মন ভরে ভালোবেসে শান্তি পায়, তোমাকে মনে করে কিছুক্ষণ কেঁদেকেটে প্রশান্তি লাভ করে। আজও রাত ভোর করে ফেলে তোমার কথা ভেবে ভেবে। সেদিনের সেই পাগল নীলাদি আজও তোমার জন্যই পাগল।
যাক ; সবকিছুর পরেও তোমাদের জন্য সবসময়ই অসংখ্য শুভকামনা থাকবে যেন তোমরা আরো সূখি হতে পারো তোমাদের সুন্দর দাম্পত্য জীবনে। তোমাদের মেয়েটা যেন তোমার মতই হয় নীলদা ! তুমি যেমন অনেক ইনোসেন্ট ছিলে ঠিক তেমনটি যেন হয়! তোমার মতো মিষ্টি মন ভোলানো হাসি দিয়ে যেন জয় করে নেয় তোমাদের মন আজীবন। খুব খেয়াল রেখো মেয়েটির; কারণ নীলাদিও একটা মেয়েই ছিল নীলদা, তাঁর বাবা-মা হয়তো তাঁর খেয়ালে অবহেলা করাতে আজ নীলাদি প্রতিটা মুহূর্তেই পোড়ে ছাই হচ্ছে । সেদিন যদি নীলাদি তাঁর পরিবারের কথা রাখতো তবে হয়তো নীলাদির জীবনে আজ এমন বিপর্যয় নেমে আসতোনা ; দেখো তোমার মেয়েটি যেন তোমাদের অবাধ্য না হয়!
(দুই)
নীলদা,
যতবার আমার মোবাইলের গ্যালারিতে ঢুঁ মারি আর নতুন বউদির সাথে তোমার ছবিগুলো দেখি ঠিক ততোবারই হারিয়ে যাই আমি নীলাদির সাথে তোমার সেই অনিন্দ্যসুন্দর আর উজ্জ্বল স্বপ্নময় দিনগুলোতে! মনে পড়ে যায় ছলোছলো করা নীলাদির দুটি চোখ। কি হাসি আর আনন্দে ভেসে থাকতো সারাক্ষণ । মনে পড়ে, তোমার সাথেই হতো সর্বাগ্রে নীলাদির দৃষ্টি বিনিময়! কথা ছিল তোমার চোখের দিকে চেয়ে থাকবে দুচোখ ভরে চিরটাকাল! কিন্তু তা আর হলনা; হঠাৎ তাঁর বুকের মধ্যে কিশোরিবেলার দুঃখগুলো মোচড় দিয়ে উঠলো ,তাঁর জীবনে নেমে আসলো সূর্যাস্তের ছায়া; ভাংচুর হতে থাকলো নীলাদির ভেতরটা !
নীলদা, জগতের সমস্ত সৌন্দর্য দিয়ে আল্লাহ তোমাকে সৃষ্টি করেছেলিন ঠিকই; তাই বলে তুমি এ সৌন্দর্যের অপব্যবহার করবে তা ভাবিনি কখনো। নীলাদির এ অগাধ বিশ্বাসটুকু ধুলিসাৎ করে দিয়ে তুমি যে অশনিসংকেত রেখে গিয়েছিলে তার জীবনে; তা আজও স্মৃতির রুমাল হয়ে পড়ে আছে। নীলাদি আজও অপেক্ষায় থাকে তার ঐ সকালের নিমগ্ন ঘুম ভাঙিয়ে দিয়ে যাবে বলে। কিন্তু না ; সেই ঘুম আজ আর নীলাদির ইচ্ছেমতও ভাঙেনা। অলস দুপুরে শুরু হয় নীলাদির সকাল। আর ভাটিয়ালি গানের মত কাটে উদাস দুপুর আজ। তবু তোমার ফোন আর আসেনা নীলদা! নীলদা, তুমি হয়তো ভুলেই গিয়েছো সেই দিনগুলোর কথা ; যখন মোবাইলের কল রেট ছিল ২.৮৮ পয়সা তখন নীলাদি ক্লাস নাইনে পড়ে আর সেই সময়ই নীলাদি ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলতো তোমার সাথে। হ্যাঁ ,তুমিও কল করতে তা মিথ্যে নয় কিন্তু তুমি তো বেশ কয়টা টিউশন করে হাজার হাজার টাকা কামাই করতে পারতে কিন্তু নীলাদি কি করে জোগাড় করতো সেই টাকাগুলো! স্কুলের টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে,কখনো রিক্সায় না গিয়ে পায়ে হেটে স্কুলে গিয়ে যে টাকাগুলো বেঁচে যেত সেই টাকা দিয়ে নিজের সখের কোনকিছু না কিনে কিংবা না খেয়ে তোমাকে ফোন করবে বলে কার্ড কিনে রেখে দিত। আর নীলাদির ঘরের ল্যান্ডফোনটা মাস শেষে বিলের যে কাগজটা শো করতো তা দেখে নীলাদির পরিবারের বুঝতে বাকি থাকতোনা যে এমন সু-বুদ্ধিসম্পন্ন কাজ নীলাদি ছাড়া আর কারোর নয়। একদিকে মোবাইলে এতো এতো খরচ তার উপর আবার ল্যান্ড ফোনের এতোগুলো বিল তাতেও ক্ষান্ত থাকতোনা নীলাদি । কখনোই তার বিবেকে বাঁধতোনা যে সে কিসের পেছনে এতো ছোটাছুটি করছে ! আজ সে অনুধাবন করছে যে সেইদিন সে একটা অন্ধকার ছায়ার পেছনে বিরামহীনভাবে দৌড়োচ্ছিল ! আজ অনুধাবন করতে পারছে রাতের পর রাত সে যার সাথে কথা বলে কাটিয়ে দিয়েছিল সে তুমি ছিলেনা; তোমার অন্য রূপ ছিল নীলদা।
আচ্ছা নীলদা, চলেই যাবে যদি তবে সেদিন কেন করেছিলে নীলাদির বহু ক্ষতের শুশ্রূষা ? কেন বয়েছিল তার সকল দুঃখভার ? তারপর তার হাতে ভিক্ষাপাত্র তুলে দিয়ে, ছিঁড়ে ফেলে দিলে সব প্রিয় আকর্ষণ, সব মায়ার বন্ধন! অথচ নীলাদি আজও তোমার ঘৃণার বদলে ভালোবাসার গোলাপ ছড়ায় ! তোমার ঘৃণা আর তাচ্ছিল্যতা উপেক্ষা করে নীলাদি আজও ব্যথিত-ব্যাকুল হৃদয়ে তোমাকেই ভালোবেসে যায় অবিরত! কোনোকিছুই আজ তাকে রুদ্ধ করতে পারেনি ! জানো নীলদা,আজও নীলাদির বুকের বাম পাশটা খালিই পড়ে আছে ; সেখানে কেবল পাতা ঝরার শব্দ ,পার ভাঙার শব্দ! ইচ্ছে করলেই মনের দুঃখে নিজেকে অকূলে ভাসিয়ে দিতে পারেনা ; পারেনা হাতে তোলে নিতে বিষ! অনেক ইচ্ছে হলেও পারেনা খুলে ফেলে দিতে তোমার সভ্যতার মুখোশ ; শুধু পারে চোখের জলে বুকটা ভাসিয়ে দিতে ।
(তিন)
তোমার চলে যাওয়াটা নিছকই একটা ভূল বুঝাবুঝি ছিল নাকি তোমার ঘৃণা থেকে ছিল তা আজও জানা হলোনা নীলাদির। নীলদা, সবথেকে বেশি কষ্ট লাগে এ কথা ভেবে যে,সকল শঙ্কা আর ভয়কে অতিক্রম করে নীলাদি তোমার হাত ধরেই তোমার কাছাকাছি চলে এসেছিল শুধু তোমাকে পাওয়া সহজ হবে বলে। তারপর? তারপর প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূর থেকে তোমার কথামতো তোমারই প্রিয় নগরীতে চলে আসতে দ্বিধাবোধ করতোনা সেদিন নীলাদি ; আর তুমি বিমুখ দৃষ্টিতে চেয়ে থাকতে কখন আসবে ! তারপর ঘরে পৌঁছাতে রাত হলে অন্য জনকে হাত করে ঘরে ঢুকতে হতো নীলাদিকে; তুমিও সহযোগীতা করতে সবসময় । অনেক চিন্তায় পড়ে যেতে তুমি ; কি হবে ভেবে । তবু পরের সপ্তাহে আবার ঐ একই আবদার থাকতো তোমার ; নীলাদিকে ৮০ কিলোমিটার জার্নি করাতে দ্বিধাবোধ ছিলোনা তোমারও নীলদা ; তারপর তোমার পঙ্খিরাজ বাইকে মাইলের পর মাইল ঘুরে বেড়ানোটাই ছিল তোমার আর নীলাদির সবথেকে নিকটে আসার সময় ! নীলদা,তুমি কি করে ভূলে যেতে পারলে তুমি এই বাইকটা অনেক কষ্টের জমানো টাকা থেকে কিনেছিলে শুধু নীলাদিকে নিয়ে ঘুরে বেড়াবে বলে । অথচ যেই সীটে নীলাদির বসার কথা ছিলো সেই ওই সীটটাতে নতুন বউদিকে নিয়ে কি করে পারো ঘুরতে ? আচ্ছা নীলদা, তোমার বুকটা কি কখনোই হাহাকার করেনা ? ঐ প্রসন্ন মুখটি কি একবারও তোমার চোখে ভেসে ঊঠেনা ?
নীলদা,সকলেরই মতো নীলাদিরও তৃষ্ণা ছিল, ভালবাসা ছিল । নিলাদিও স্বপ্ন খুঁজেছিল ফাল্গুনী হাওয়াতে ! মনে আছে তোমার, নীলাদির সাথে মাঝরাতে বৃষ্টিপাতের শব্দ শুনতে; তুমি বলতে বৃষ্টিই তোমার প্রিয় গান ।মনে পড়ে? চৈত্র মাসের বৃষ্টিরাতে যমুনারঘাটে বড়শি দিয়ে মাছ ধরতে যেতে, নীলাদি সঙ্গে নেই; ফোন এর ঐপারে, তবু তুমি বলতে তোমার সাথেই আছে ।মনে পড়ে নীলদা ? তোমার বাড়ির ধারের স্কুল মাঠে বসে নীলাদির সাথে কথা বলতে বলতে সন্ধ্যা পেরিয়ে কখন যে রাত হয়ে যেত তুমিও খেয়ালই করতে পারতেনা ! নীলদা মনে কি আছে তোমার? প্রতিটা রমজান মাসের ইফতারের আগের আধা ঘণ্টা যেন তোমার জন্যই বরাদ্ধ ছিল নীলাদির । সন্ধ্যার কিছু আগেই হঠাৎ বেজে উঠত নীলাদিদের ল্যান্ডফোনটা আর নীলাদি মুহূর্তেই যেন হয়ে উঠতো চঞ্চল হরিণ ! যেন তুমি ছিলে তার মাথার উপর ছায়াময় স্নিগ্ধ নীলাকাশ । সেদিন নীলাদি ছিল তোমার কাছে দুপুরের খরতাপ শেষে একটা শান্ত সন্ধ্যা ; তোমার স্মৃতির অববাহিকায় ছিল একটি প্রিয় নদী নিরবধি !
(শেষ)
অথচ আজ পাল্টে গিয়েছে সমস্ত পটভূমি! এখন নীলাদির বুকের ভেতর বেজে যায় অবিরত অন্তহীন একটি গাঢ় টেলিফোন! মাথায় রৌদ্র-আলো নিভে গিয়ে নেমে এসেছে শুধুই মেঘ নীলাদির জীবনে। নীলাদির বুকের ভেতর বর্ষার নদীর মতো ঢেউ উঠে ! তোমারও আবেগ ফুরিয়েছে আর নীলাদির মনে অনন্ত শূণ্যতা ছাড়া আর কিছুই নেই।স্মৃতি আর স্বপ্নে আজ কেবল কাঁপছে তার বুক। হয়তো একদিন নীলাদিরও আবেগের নদী শুকিয়ে যাবে ঢেকে যাবে ঘন অন্ধকারে উজ্জ্বল আলোর ভোর। আর কখনো অনুভূতিগুলি সঞ্চারিত হবেনা ; হয়তো মর্মমূল ছুঁয়ে যাবে পুরনো সেই দিনগুলো! নীলাদিও হয়তো কোনো এক শ্রাবনের ধারাজলে ধুয়ে নেবে ব্যর্থতার গ্লানি ; নতুন কোনো এক বর্ষার জলে পুনোরায় সঞ্জীবিত হবে
বিঃদ্রঃ গল্পে "আমি" একটা কাল্পনিক চরিত্র বাকি সব বাস্তব !
০৬ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ৮:০১
অবনি মণি বলেছেন: অশেষ ধন্যবাদ !
২| ০৬ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ৮:৩১
লীলা চক্রব্ত্তী বলেছেন: একটি ব্যাথায় ভরা মনের জন্য যে বেদনা, কল্পনা করা যায়, সেই অনুভূতি সবার হোক।
০৬ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ৮:৩৯
অবনি মণি বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ আপনার মূল্যবান মন্তব্যের জন্য!
৩| ০৭ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ৮:৪১
মোস্তফা সোহেল বলেছেন: গল্পের চেয়ে মনে হল একটা চিঠি পড়লাম। অনেক সুন্দর হয়েছে।
০৮ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৩:৫৭
অবনি মণি বলেছেন: হ্যাঁ, গল্পটা চিঠি আকারেই লেখা। ধন্যবাদ!
৪| ০৭ ই মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১৭
হামিদ আহসান বলেছেন: চমৎকার লেখা ... +++++
০৮ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৩:৫৭
অবনি মণি বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ!
৫| ১০ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১২:১৮
জিয়ানা বলেছেন: সুন্দর।
১০ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১২:২৯
অবনি মণি বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
০৬ ই মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪৯
বিজন রয় বলেছেন: এত সুন্দর লেখা! মন ভরে গেল।
++++