নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আয়েশ করে, আলসেমিতে...

অলসদের দিয়ে কী আর হয়। আলসেমি ছাড়া!

মুনির হাসান

অলস লোক। নানা কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকার খায়েশ কিন্তু করতে পারি না!

মুনির হাসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

নারিকেল জিঞ্জিরায় পাঁচজন, বানরটা ফাও!

০৮ ই জুলাই, ২০১৩ সকাল ৯:০২



এ গল্পটা ম্যালা দিন আগের। বঙ্গোপসাগরের বুক চিড়ে ওঠা ছোট নারিকেল জিঞ্জিরা নামের দ্বীপটির কথা তখনো সবার অজানা (সেন্ট মার্টিন সাহেব তখনো এই দ্বীপের খবর পাননি)। তবে উপকূলের মাঝিদের কাছে অজানা নয়। দ্বীপজুড়ে খালি নারিকেল গাছের সারি, যত দুর চোখ যায়।



বসতবাড়ি নেই! কেউ থাকেও না। আমি সে সময়কালের গল্প বলছি, তখনো বঙ্গোপসাগর বিক্ষুব্ধ হতো প্রায়ই। এমনই এক ঝড়ের দিনে একটি নৌকা সয়মতো ফিরতে পারল না তীরে। ঝড়ে তাদের উড়িয়ে ফেলল নারিকেল জিঞ্জিরায় আর ভাসিয়ে নিয়ে গেল তাদের নৌকা!



নৌকায় ওরা ছিল পাঁচ বন্ধু। ঝড় থেমে যাওয়ার পর জ্ঞান ফিরে পেল সবাই। দেখল দ্বীপে ওরাই কেবল! না, দেখা গেল একটা বানরও রয়েছে সেখানে! (ব্যাটা বানর কোথা থেকে এল তা অবশ্য আমার জানা নেই!)

ঝড় থামলে ওরা বের হলো খাদ্যের সন্ধানে। কিছুক্ষণের মধ্যে টের পেল নারিকেল ছাড়া আর কিছুই নেই এই দ্বীপে। তখন মনস্থির করল সারা দিন নারিকেল কুড়োবে। বানর ব্যাটা যেহেতু আছে, কাজেই তারেও কাজে লাগানো যাবে! যেই বলা সেই কাজ। সারা দিন ওরা অনেক নারিকেল কুড়াল এবং কুড়াতে কুড়াতে সন্ধ্যা। তারপর ঠিক করল, পর দিন সকালে সব নারিকেল ভাগাভাগি করবে। ঘুমোতে গেল সবাই (ওরা ওই দিন কী খেয়েছে, তা পাঠক নিজেদের মতো ভেবে নিতে পারে!)।

কিছুক্ষণ পর জেগে উঠল একজন। ভাবল, সকালে যা পাব, তা তো পাবই। এখন বরং একভাগ আলাদা করে রাখি। দেখল, বানরটা জেগে আছে। তখন সে সব নারিকেল সমান পাঁচ ভাগে ভাগ করল। দেখা গেল একটা বাড়তি থাকে। বাড়তিটা বানরকে ঘুষ দিয়ে নিজের ভাগটা লুকিয়ে ফেলল সে। তারপর ঘুমাতে গেল!

প্রিয় পাঠক, ঠিক ধরেছেন। একটু পর আর একজন ঘুম থেকে উঠল একই মতলব নিয়ে। সে-ও সমান পাঁচ ভাগ করল, একটা বানরকে দিল আর নিজের ভাগ সরিয়ে রাখল। এরপর বাকি তিনজনের প্রত্যেকে উঠে উঠে একই কাজ করল।

প্রতিবার ভাগ পেয়ে বানরটাও খুশি থাকল।



সকালে পাঁচ বন্ধু জেগে নারিকেলগুলো সমান পাঁচ ভাগ করল এবং বাড়তিটা বানরটিকে দিয়ে দিল। (প্রত্যেকে দেখেছে সকালে নারিকেল অনেক কম, তবুও চেপে গেছে। কারণ, নিজেরা তো জানে রাতে কী হয়েছে!)

বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মূল ভূখণ্ড থেকে উদ্ধারকারী নৌকা এসে পাঁচ বন্ধুকে নিজ নিজ নারিকেলসহ ফেরত নিয়ে গেল। বানরটি কোনো বন্ধুর সঙ্গে যেতে রাজি না হওয়ায় সেটি সেখানেই থেকে গেল!

প্রশ্ন হলো, পাঁচ বন্ধু সে দিন কমপক্ষে কতটি নারিকেল কুড়িয়ে ছিল?

অনেকেই ভাবছেন, শেষে ছয়টি নারিকেল দিয়ে শুরু করে অচিরেই সমাধানে পৌঁছাবেন, তাঁরা সেখানে চেষ্টা করুন। আমরা দেখি বীজগণিত দিয়ে এ সমস্যার কীভাবে সমাধান করা যায়।

প্রতিবারের ঘটনাকে যদি আমপা গাণিতিকভাবে লিখি, তাহলে ছয়টি সমীকরণ লিখতে পারব।

N=5A+1

4A=5B+1

4B=5C+1

4C=5D+1

4D=5E+1

4E=5F+1

এখানে N হলো শুরুতে নারকেলের সংখ্যা, আর F হলো প্রত্যেক বন্ধুর সকালবেলায় পাওয়া নারিকেলের সংখ্যা। ছয়টি সীকরণের মধ্যবর্তী মানসূহ যদি আমরা ক্রমান্বয়ে প্রতিস্থাপন করতে থাকি, তাহলে শেষ পর্যন্ত একটি মাত্র সীকরণ পাওয়া যাবে।

1024N=15625F+11529...........(১)

১ নং সমীকরণটি দুটি অজানা রাশি সংবলিত একটি ডায়াফন্টাইন সমীকরণ। চেষ্টা ও ত্রুটির মাধ্যমে এটি সমাধান করা যেতে পারে! (যারা এ লাইনে চেষ্টা করতে চান, তারা শুরু করে দিন)।

গাণিতিক সমীকরণের মজা হলো, একবার লিখে ফেললে সেটির নানা সম্ভাবনা তৈরি হয়। আমরা দেখছি N কে মোট ছয়বার ভাগ করা হয়েছে প্রতিবার পাঁচ ভাগ করে। কাজেই এটি খুবই সহজ যে প্রথম সমাধানের সঙ্গে ৫^৬ (বা ১৫, ৬২৫) বা এর গুণিতক যোগ করে এই সীকরণের অগুণতি সমাধান পাওয়া যাবে।

[ধনাত্মক সংখ্যয় সমাধান খুঁজছেন যারা, তাঁরা কী প্রথম সমাধানটি পেয়েছেন?]









নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী পিএ এম ডিরাক এ সমীকরণ সমাধানের জন্য প্রথম ঋণাত্মক সংখ্যা ব্যবহার করেন। এখন আমরা ১নং সমীকরণের সমাধান চেষ্টা করতে পারি N=-1, -2, -3, -4, -5... এভাবে বসিয়ে।



[গণিতের এটা একটা বড় বাহাদুরি। নারিকেলের ব্যাপারটা শেষ পর্যন্ত থাকছেই না সমাধানে। কাজেই ঋণাত্মক সংখ্যা দিয়ে সমীকরণের সমাধান হবে বইকি? যদিও সেটা বাস্তব সমাধান না-ও হতে পারে!]

একটু চেষ্টা করলেই দেখবেন N=-4 বসালে সমীকরণের সহজ সমাধান পাওয়া যায়।

অর্থাৎ শুরুতে নারিকেল ছিল -4টি। প্রথম বন্ধু প্রথমে একটি ধনাত্মক নারিকেল (+1) দিল বানরটিকে। তাতে তাদের মোট হবে -5টি নারিকেল, যা সমান পাঁচ ভাগে ভাগ করা যাবে। এর মধ্যে -1টি সে লুকিয়ে বাকি -4টি সে রেখে দেবে পরেরজনের জন্য। পরের জন একই কাজ করবে। এভাবে সকালে -4টি থাকবে, যা আবার -1টি করে সবাই পাবে আর বানর পাবে ধনাত্মক (+1) নারিকেলটি! [বানরটি শেষ পর্যন্ত ছয়টি ধনাত্মক নারিকেল পাবে আর প্রত্যেক বন্ধু পাবে -2টি করে!]

কাজেই -4 হচ্ছে এর সবচেয়ে সহজ সমাধান।

অবশ্য বাস্তবে ধনাত্মক নারিকেল দরকার। আমরা আগেই জেনেছি, যেকোনো সমাধানের সঙ্গে ৫^৬ যোগ করলেই পরবর্তী সমাধান পাওয়া যাবে।

কাজেই, মোট কুড়ানো নারিকেলের সংখ্যা হলো -4+5^6=15621



নারিকেল কুড়োনোর এ সমস্যাটি গণিতের ইতিহাসে খুবই বিখ্যাত। ১৯২৬ সালের ৯ অক্টোবর দ্য স্যাটারডে ইভনিং পোস্টে এটির একটি সংস্করণ প্রকাশিত হলে এ সমস্যাটি গণিতবিদদের নজরে আসে। তারপর এ সমস্যা নিয়ে ভাবেননি এমন গণিতবিদ খুবই কম। ঋণাত্মক সংখ্যার ব্যবহার একটি জটিল সমস্যার কত সহজ সমাধান দিতে পারে এটি তার একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ। ঋণাত্মক সংখ্যার ব্যবহার থেকে আমরা সমস্যাটির একটি সাধারণ সমাধান বের করতে পারিব, যেখান N-সংখ্যাটি লোক n-ভাগের ১ ভাগ করে নেবে এবং n+১ বার ভাগ করবে। যদি বন্ধু হয় চারজন, তাহলে আমরা শুরু করব -3 দিয়ে, আর যোগ করব 4^5। আর যদি বন্ধু হয় ছয়জন, তাহলে হবে -5 আর 6^7! গণিতের ভাষায় বলা যাবে মোট নারিকেলের সংখ্যা হবে k(nn+1)-m(n-1)। এখানে k হলো বন্ধুর সংখ্যা আর n হলো প্রতিবারের বানরের জন্য বরাদ্দ আর m একটি প্যারামিটার!

তবে ইভনিং পোস্ট-এর প্রথম সংস্করণটিতে একটু ঝামেলা ছিল! সেখানে সকালবেলায় ভাগ করার সময় পাঁচ বন্ধু আর বানরকে নারিকেল না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ফলে, ওরা সকালে সব নারিকেল সমান পাঁচ ভাগে ভাগ করে প্রত্যেকে এক ভাগ করে নিয়ে যায়। বেচারা বানরকে কোনো ভাগ দেওয়া হয়নি।



সবার সেকেন্ড ডিফারেন্সিয়বল নেগেটিভ হোক।



পুনশ্চ: কথাসাহিত্যিক জেরোম কে জেরোমের বিখ্যাত গ্রন্থ থ্রি অন দি বোট-এর একটি বাংলা অনুবাদ করেছিলেন শ্রদ্ধেয় আবদার রশীদ। তাঁর অনুবাদটির নাম ছিল এক নায়ে তিনজন (কুত্তাটা ফাও)। আমার এ নিবন্ধের নামকরণের অনুপ্রেরণা আবদার রশীদের ওই অনুবাদ গ্রন্থটি।

মন্তব্য ২৪ টি রেটিং +১২/-০

মন্তব্য (২৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই জুলাই, ২০১৩ সকাল ৯:৩৪

বটের ফল বলেছেন: অনেক মজা করে লিখেন আপনি। খুব ভালো লেগেছে। একগুচ্ছ প্লাস।
++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++

০৮ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ৯:৪৮

মুনির হাসান বলেছেন: ধন্যবাদ।
যেমন করে আমি বলি তেমন করে লিখতে চাই। তবে মনে হয় সব সময় পারি না।

২| ০৮ ই জুলাই, ২০১৩ সকাল ৯:৩৬

আরমিন বলেছেন: প্রথম ছবিটা নারিকেল জিন্জিরার ? অসাধারণ !

০৮ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ৯:৪৯

মুনির হাসান বলেছেন: আমি ইন্টারনেট থেকে নিছি। মনে হচ্ছে ঠিকই আছে।

আমার বার দুয়েকের অভিজ্ঞতা তাই বলে।

আমাদের নানান স্বেচ্ছাসেবী দলের কংগ্রেস এবার সেন্ট মার্টিনে হওয়ার কথা। দেখা যাক।

৩| ০৮ ই জুলাই, ২০১৩ সকাল ৯:৪৪

ভারসাম্য বলেছেন: দারুন!!!!!!!!!

++++++++++++++++++++

০৮ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ৯:৫০

মুনির হাসান বলেছেন: ধন্যবাদ

৪| ০৮ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১২:৪২

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: অংক বা সমীকরণ মাথায় ঢুকে না আমার। কিন্তু নারিকেল জিঞ্জিরার ছবি দেখে ভালো লাগছে

০৮ ই জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৩:৪৬

মুনির হাসান বলেছেন: ধন্যবাদ। একটু অন্যভাবে প্রেজেন্ট করার চেষ্টা করছি।

৫| ০৮ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ২:০৬

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:

অংক দিয়ে নারিকেল সমস্যার সমাধান অথবা নারিকেল দিয়ে অংক সমাধান যাই বলি পোস্টের প্রজেন্টেসন ভালো লাগল।

০৮ ই জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৩:৪৭

মুনির হাসান বলেছেন: ধন্যবাদ। একটু অন্যভাবে প্রেজেন্ট করার চেষ্টা করছি। তবে, ছবি দিয়ে পোস্ট আগে কখনো করি নাই।
ভাবছিলাম কেমন করলে বাচ্চারা পড়বে। মনে হল ছবি দিলে হয়তো ওদের আগ্রহ বাড়বে।

দেখা যাচ্ছে বড়রাও আগ্রহী হয়েছেন!!!

৬| ০৮ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ২:২৭

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: দারুন একটা পোষ্ট!!!! বেশি জোশ!!!!!!!!!!
অনেক ভালো লাগল। পোষ্টটা আমি প্রিয়তে নিলাম।

০৮ ই জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৩:৪৮

মুনির হাসান বলেছেন: ধন্যবাদ

৭| ০৮ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ৮:০৪

স্বপ্নবাজ অভি বলেছেন: দারুন!!!!!!!!!

++++++++++++++++++++

০৮ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ৯:৫০

মুনির হাসান বলেছেন: বাহ! অনেকের দেখি ভাল লেগেছে!!!

৮| ০৮ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ৮:১৭

নাজিম-উদ-দৌলা বলেছেন: হেব্বি পোস্ট! ++++++

০৮ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ৯:৫০

মুনির হাসান বলেছেন: ধন্যবাদ

৯| ০৮ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ৮:১৮

আশিকুর রহমান অমিত বলেছেন: স্যার ইঞ্জিনিয়ারিং এর ৩য় বর্ষ শেষেও এই ম্যাথ গুলো প্রচন্ড ভাল লাগে :) ব্লগে আরো কয়েকটা দিতে থাকেন

০৮ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ৯:৫১

মুনির হাসান বলেছেন: আর আমি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে এসেছি ২৫ বছর আগে!!!

১০| ০৯ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১:০৯

অচিন আলো বলেছেন: প্রিয়তে নিলাম। উপস্থাপনা মজার লেগেছে। কিন্তু একবার পরে সব মাথায় ঢুকাতে পারিনি, পরে সময় নিবে বসব।

১১| ০৯ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ২:০৯

সামসুন নাহার বলেছেন: ভালো লেগেছে লেখার প্রাঞ্জলতা দেখে। কিন্তু এমন কঠিন অংক আমার মাথায় ঢোকেনা। আপনার পোষ্ট আজ প্রথম পড়লাম। কেন পড়লাম পড়ে বলবো।

১২| ০৯ ই জুলাই, ২০১৩ ভোর ৪:৩০

মেহেদী_বিএনসিসি বলেছেন: :( :( মজাদার এক এ্যডভেঞ্চার মার্কা ভ্রমন কাহিনীর লোভ দেখাইয়া দেখি কি সব অংক টংকের দিকে চলে গেলেন....... B:-) B:-)

১৩ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ৯:৪৯

মুনির হাসান বলেছেন: পরের পোস্ট থেকে শুরুতে লিখে দিচ্ছি যে এটি অক-টংকের পোস্ট!!!
B:-)

১৩| ০৯ ই জুলাই, ২০১৩ সকাল ৯:৩৭

সোহানী বলেছেন: বরাবরের মতই ভালো মুনির ভাই....+++++

১৪| ২৭ শে জুলাই, ২০১৩ ভোর ৫:০৭

ধূসর প্রেইরী বলেছেন:
:)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.