নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রবিন.হুড

রবিন.হুড › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঈদ উল আযহা ও কোরবাণীর শিক্ষা

২২ শে জুন, ২০২৩ দুপুর ১:২৬


ঈদুল আযহা বা ঈদুল আজহা বা ঈদুল আধহা (আরবি: عيد الأضحى‎, অনুবাদ 'ত্যাগের উৎসব'‎, ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় দুটো ধর্মীয় উৎসবের দ্বিতীয়টি। চলতি কথনে এই উৎসবটি কুরবানির ঈদ নামেও পরিচিত। এই উৎসবকে ঈদুজ্জোহাও বলা হয়। ঈদুল আযহা মূলত আরবি বাক্যাংশ। এর অর্থ হলো ‘ত্যাগের উৎসব’। এই উৎসবের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হল ত্যাগ করা। এ দিনটিতে মুসলমানেরা ফযরের নামাযের পর ঈদগাহে গিয়ে দুই রাক্বাত ঈদুল আযহার নামাজ আদায় করে ও অব্যবহিত পরে স্ব-স্ব আর্থিক সামর্থ্য অনুযায়ী গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ ও উট আল্লাহর নামে কোরবানি করে।
ইসলামি চান্দ্র পঞ্জিকায়, ঈদুল আযহা জ্বিলহজ্জের ১০ তারিখে পড়ে। আন্তর্জাতিক (গ্রেগরীয়) পঞ্জিকায় তারিখ প্রতি বছর ভিন্ন হয়, সাধারণত এক বছর থেকে আরেক বছর ১০ বা ১১ দিন করে কমতে থাকে। ঈদের তারিখ স্থানীয়ভাবে জ্বিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে।
ইসলামের বিভিন্ন বর্ণনা অনুযায়ী, মহান আল্লাহ তা’আলা ইসলামের রাসুল হযরত ইব্রাহীম কে স্বপ্নযোগে তার সবচেয়ে প্রিয় বস্তুটি কুরবানি করার নির্দেশ দেন: “তুমি তোমার প্রিয় বস্তু আল্লাহর নামে কোরবানি কর “
ইব্রাহীম স্বপ্নে এরূপ আদেশ পেয়ে ১০টি উট কোরবানি করলেন। পুনরায় তিনি আবারো একই স্বপ্ন দেখলেন। অতঃপর ইব্রাহীম এবার ১০০টি উট কোরবানি করেন। এরপরেও তিনি একই স্বপ্ন দেখে ভাবলেন, আমার কাছে তো এ মুহূর্তে প্রিয় পুত্র ইসমাইল ছাড়া আর কোনো প্রিয় বস্তু নেই। তখন তিনি পুত্রকে কোরবানির উদ্দেশ্যে প্রস্তুতিসহ আরাফাতের ময়দানের উদ্দেশে যাত্রা করেন। এ সময় শয়তান আল্লাহর আদেশ পালন করা থেকে বিরত করার জন্য ইব্রাহীম ও তার পরিবারকে প্রলুব্ধ করেছিল, এবং ইব্রাহীম শয়তানকে পাথর ছুঁড়ে মেরেছিলেন। শয়তানকে তার প্রত্যাখ্যানের কথা স্মরণে হজ্জের সময় শয়তানের অবস্থানের চিহ্ন স্বরূপ নির্মিত ৩টি স্তম্ভে প্রতীকী পাথর নিক্ষেপ করা হয়।
যখন ইব্রাহীম আরাফাত পর্বতের উপর তার পুত্রকে কোরবানি দেয়ার জন্য গলদেশে ছুরি চালানোর চেষ্টা করেন, তখন তিনি বিস্মিত হয়ে দেখেন যে তার পুত্রের পরিবর্তে একটি প্রাণী কোরবানি হয়েছে এবং তার পুত্রের কোনো ক্ষতি হয়নি। ইব্রাহীম আল্লাহর আদেশ পালন করার দ্বারা কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এটি ছিল ছয় সংখ্যক পরীক্ষা। এতে সন্তুষ্ট হয়ে আল্লাহ ইব্রাহীম কে তার খলিল (বন্ধু) হিসাবে গ্রহণ করেন।
এই ঘটনাকে স্মরণ করে সারা বিশ্বের মুসলিমরা আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য প্রতি বছর এই দিবসটি উদ্যাপন করে। হিজরি বর্ষপঞ্জি হিসাবে জিলহজ্জ্ব মাসের ১০ তারিখ থেকে শুরু করে ১২ তারিখ পর্যন্ত ৩ দিন ধরে ঈদুল আজহার কুরবানি চলে। হিজরি চান্দ্র বছরের গণনা অনুযায়ী ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহার মাঝে ২ মাস ১০ দিন ব্যবধান থাকে। দিনের হিসেবে যা সর্বোচ্চ ৭০ দিন হতে পারে।[
ইসলাম মতে ঈদুল আযহার দিনে যার যাকাত দেয়ার সামর্থ্য আছে অর্থাৎ যার কাছে ঈদের দিন প্রত্যূষে সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্য বা সমপরিমাণ সম্পদ (যেমন জমানো টাকা) আছে তার ওপর ঈদুল আযহা উপলক্ষে পশু কুরবানি করা ওয়াজীব। ঈদুল আযহার দিন থেকে শুরু করে পরবর্তী দুইদিন পশু কুরবানির জন্য নির্ধারিত। মুসাফির বা ভ্রমণকারির ওপর কুরবানি করা ওয়াজিব নয়| ঈদুল আযহার নামাজ শেষে কুরবানী করতে হবে। ঈদুল আযহার নামাজের আগে কুরবানি করা সঠিক নয়।
বাংলাদেশের মুসলিমরা সাধারণত গরু ও ছাগল কুরবানি দিয়ে থাকেন। এছাড়া কেউ কেউ ভেড়া, মহিষ, উট, দুম্বাও কোরবানি দিয়ে থাকেন। এক ব্যক্তি একটি গরু, মহিষ, উট, ছাগল, ভেড়া বা দুম্বা কুরবানি করতে পারেন। তবে গরু, মহিষ ও উটের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৭ ভাগে কুরবানি করা যায় অর্থাৎ ২, ৩, ৫ বা ৭ ব্যক্তি একটি গরু কুরবানিতে শরিক হতে পারেন। কুরবানির ছাগলের বয়স কমপক্ষে ১ বছর হতে হবে। গরু ও মহিষের বয়স কমপক্ষে ২ বছর হতে হবে। নিজ হাতে কুরবানি করা ভাল। কুরবানি প্রাণীর দক্ষিণ দিকে রেখে কিবলামুখী করে, ধারালো অস্ত্র দিয়ে 'বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার' বলে জবাই করতে হয়।
সাধারণত আমাদের দেশে কুরবানির মাংস তিন ভাগে ভাগ করে ১ ভাগ গরিব-দুঃস্থদের মধ্যে ১ ভাগ আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে এবং ১ ভাগ নিজেদের খাওয়ার জন্য রাখা হয়। তবে মাংস বিতরণের কোন সুস্পষ্ট হুকুম নেই কারণ কুরবানির হুকুম পশু জবেহ্‌ হওয়ার দ্বারা পালন হয়ে যায়। কুরবানির পশুর চামড়া বিক্রির অর্থ দান করে দেয়ার নির্দেশ রয়েছে।

তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে কোরবানী একটা লোক দেখানো অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। ঈদ উল আযহা বা কোরবানীর মূল শিক্ষা বা উদ্দেশ্য হচ্ছে ত্যাগ। এই দিনে ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হবে সবার জীবন। এই দিন থেকে ত্যাগের শিক্ষা নিয়ে ব্যক্তি জীবন ও সামাজিক জীবনে প্রয়োগ করবে এটাই কোরবানীর শিক্ষা। কিন্তু বাস্তবে যে সঠিক নিয়মে যাকাত আদায় করে না লোক দেখানোর জন্য মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে বড় গরু জবাই করে লোকের কাছে বাহাবা পেতে চায়। বেশিরভাগ লোক দেখানো কোরবানী অবৈধ টাকা (সুদ, ঘুষ, চাঁদাবাজী, চুরি, ডাকাতি, বাটপারি) দিয়ে করে থাকে। আবার গরীব দূঃখীর হক মেরে সেই মাংস ডিপ ফ্রিজে সংরক্ষন করে সারা বছর তৃপ্তির সাথে খায়। কর্পোরেট জগৎ ও ঈদ উল আযহার উৎসবকে বাণিজ্যিক উৎসবে পরিণত করে বিভিন্ন লোভনীয় অফার দিয়ে ডিপফ্রিজ কিনতে উৎসাহিত করে যাতে করে কোরবানীর মাংস সংরক্ষন করতে পারে।
এ ক্ষেত্রে ঘরের বধুরাও কম নয়। তারা ত্যাগ না করে মাংস আত্মসাৎ করার প্রতিযোগিতায় নামে। যৌথ পরিবারের অন্য কেউ তার চেয়ে বেশি মাংস নিলো কি না বা তার বাপের বাড়ির আত্মীয় স্বজনদের বেশি করে মাংস পাঠানো হলো কি না এই নিয়ে তটস্থ। হাতে বেশি মাংস থাকলে দান না করে ডিপ ফ্রিজে রাখতে হবে। ফ্রিজ না থাকলে বাড়ির কর্তাকে নতুন ফ্রিজ কেনার চাপ দিতে হবে। কোরবানীর আসল শিক্ষা কেউ গ্রহণ করতে চায় না। আমরা যদি ধর্মীয় মূল্যবোধ থেকে কুরবানী করি তবে আল্লাহ যেমন খুশি হবেন তেমনি ত্যাগের মানসিকতা সমাজে সংসারে সকলকে সুখী হতে সহায়তা করবে।
ঈদ উল আযহার ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হোক সবার জীবন।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে জুন, ২০২৩ বিকাল ৪:২১

জটিল ভাই বলেছেন:
মাশাল্লাহ্।

২| ২২ শে জুন, ২০২৩ রাত ৮:৪২

রাজীব নুর বলেছেন: কোরবানী কি মানুষ কেয়ামাত পর্যন্ত দিয়েই যাবে? দিয়েই যাবেয়? এর কি শেষ নেই?

৩| ২২ শে জুন, ২০২৩ রাত ১১:৪৭

কামাল১৮ বলেছেন: প্রানী হত্যা করে এটা কেমন ত্যাগ?এটাতো নিষ্ঠুরতা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.