নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রবিন.হুড

রবিন.হুড › বিস্তারিত পোস্টঃ

দীপাবলী-পর্ব-০৮

১৬ ই জুন, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৪


দীপাবলী চিঠিতে অনন্তকে জানিয়ে দিয়েছে শনিবারের ভোরের ট্রেনে চট্টগ্রামে আসছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে এক অভিনব জায়গা যেখানে প্রয়োজন মতো ট্রেনের টিকিট পাওয়া যায় না। স্টেশনের টিকিট কাউন্টারে লাইন ধরে টিকিট কাটতে গেলে লাইন শেষ হওয়ার আগেই টিকিট শেষ হয়ে যায়। আবার অনলাইনে টিকিট কাটতে গেলে সময় মতো লগ-ইন করা যায় না। অথচ ৫০ কোটি টাকার টিকিট বিক্রি করতে টেকিনিক্যাল কোম্পানিকে অনলাইন প্রসেসিং ফি প্রদান করে ১০০ কোটি টাকা। তাইতো এতো চাহিদা সম্পন্ন একটা সার্ভিসে বছর শেষে মোটা অংকের লোকশান গুনতে হয়। এতো ঝক্কি ঝামেলার মধ্যে দীপাবলী তার জন্য একটা টিকিট সংগ্রহ করতে সমর্থ হলো।
শুধু টিকিট কাটলেই তো হবে না। সবকিছু ঠিকঠাক মতো গুছিয়ে ট্রাভেলিং ব্যাগে প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে সময় মতো স্টেশনে পৌঁছাতে হবে। তারপর ট্রেন সময় মতো যাত্রা করবে কিনা তা কেউ বলতে পারে না। স্টেশন মাস্টারের নিকট জানতে চাইলে তিনি জানান, ট্রেন কখন আসবে সে খবর ছাড়া সব খবরই তিনি দিতে পারেন। আবার ট্রেনের যাত্রীদের টিকিট পরীক্ষা করার জন্য দুই ধরনের পরীক্ষক থাকে। এক জন টিসি অর্থাৎ টিকিট কালেক্টর। অন্য জন, টিটিই অর্থাৎ ট্রাভেলিং টিকিট এগজ়ামিনার। দু’জনেরই কাজ এক। কিন্তু ক্ষেত্র আলাদা। টিসি বা টিকিট কালেক্টরদের কাজ হল স্টেশন এবং প্ল্যাটফর্মে যাত্রীদের টিকিট পরীক্ষা করা। এঁদের মূলত স্টেশনে ঢোকার মুখে বা প্ল্যাটফর্মে টিকিট পরীক্ষা করতে দেখা যায়।টিটিই অর্থাৎ ট্রাভেলিং টিকিট এগজ়ামিনার বা ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরীক্ষক। ট্রেনে সফর করার সময় যাত্রীদের যাঁরা টিকিট পরীক্ষা করেন তাঁদের টিটিই বলে। শুধু টিকিট পরীক্ষাই নয়, যাত্রীদের পরিচয়পত্র পরীক্ষা করা, তাঁরা ঠিক মতো আসন পেলেন কি না বা তাঁদের কোনও অসুবিধা হচ্ছে কি না, এ সবও নজরে রাখেন তাঁরা। অনেক সময় দূরপাল্লার ট্রেনে অনেক রাতের দিকে টিটিই যাত্রীদের জাগিয়ে তুলে টিকিট বা পরিচয়পত্র দেখতে চান। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী, রাত ১০টার পর টিটিই কোনও যাত্রীর টিকিট বা পরীক্ষা করতে পারেন না। সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্তই তাঁরা টিকিট পরীক্ষা করতে পারবেন। তবে রাত ১০টার পর কোনও স্টেশন থেকে নতুন কোনও যাত্রী উঠলে, তাঁর টিকিট পরীক্ষা করতে পারবেন টিটিই।
বাংলাদেশের ট্রেন সময় মেনে না চললওে আজ দীপাবলীকে বহন করা ট্রেন নির্দিষ্ট সময় চট্টগ্রাম স্টেশনে এসে পৌঁছালো। আগের থেকেই রেল স্টেশনে অপক্ষায় ছিলো অনন্ত। অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ট্রেন থেকে নামলো দীপাবলী। মুখে কথা না বললেও চোখে চোখে কথা হলো দুজনার। অনেক দিনের প্রতিক্ষার প্রহর ভাঙতে নিরবে কিছুক্ষন দাড়িয়ে রইল দুজন দুজনার দিকে তাকিয়ে। অবশেষে নীরবতা ভেঙ্গে দীপার হাত থেকে ট্রাভেলিং ব্যাগ নিয়ে অনন্ত বলে উঠলো!
এবার চলো, যাওয়া যাক!
দীপাবলী অনন্তের সাথে কার পার্কিং এর দিকে হাটতে শুরু করলো। তবে প্লাটফর্মের গেট দিয়ে বের হওয়ার সময় পড়লো বিপাকে। গেটে দাড়িয়ে টিকিট কালেক্টর টিকিট জমা নিয়ে যাত্রীদের বের হওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে। দীপাবলীর রেল ভ্রমের টিকিট থাকলেও অনন্তের প্লাটফর্মের টিকিট নাই। বিনা টিকিটে হজারো লোক ভ্রমণ করলেও প্লাটফর্মের টিকিট না থাকায় অনন্তকে জরিমানা দিতে হলো। ফলে এতোদিন পর জীবনসঙ্গীকে কাছে পাওয়ার আনন্দে কিছুটা ভাটা পড়লেও হাটার গতি বাড়িয়ে গাড়ীর নিকটে এসে পৌঁছালো। গাড়ীর চালক এগিয়ে এসে লাগেজ নিয়ে গাড়ীর ব্যাক ডালায় রেখে দরজা খুলে দিলো। অনন্ত ও দীপাবলী গাড়ীতে উঠে বসলে চালক গাড়ী চালাতে শুরু করলো। চলন্ত গাড়ীতে নীরবতা ভেঙ্গে দীপাবলী বলে উঠলো,
আমার জন্য তোমাকে কত ঝামেলা পোহাতে হলো
আরে না কি যে বলো, এটা কোন বিষয়ই না! তোমার জন্য ১০৮ টি নীল পদ্ম আনতে না পারলেও অগনিত লাল শাপলা আনতে পারবো, গরুর গাড়ীতে চড়াতে না পারলেও মোটর গাড়ীতে আমার বাড়ীতে নিয়ে যেতে পারবো।
তোমাকে কিছু করতে হবে না, শুধু এভাবে হাতটি ধরে সারা জীবন আগলে রেখ।
জোর হুকুম, ম্যাডাম!
দীপাবলী অনন্তের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে গাড়ির জানালা দিয়ে সড়কের দৃশ্য দেখতে লাগলো। শহরটি আগের থেকে জনবহুল হয়ে গেছে। বেড়ে গেছে গাড়ীর চাপ। তাই মোড়ে মোড়ে ট্রাফিক জ্যামে দাড়িয়ে থাকতে হচেছ। বাণিজ্যিক রাজধানীতে আকাশচুম্বী অট্টালিকা যেভাবে বাড়ছে সেই ভাবে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করতে পারে নাই চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।
রাস্তার দুপাশের দৃশ্য দেখতে দেখতে এবং দীপাবলীর সাথে আলাপ করার ফাঁকে গাড়ী এসে থামলো অনন্তের বাড়ীর সামনে। আগমনের খবর বাড়ীতে আগেই জানানো হয়েছিল তাইতো অধীর আগ্রহ নিয়ে আগ্রাবাদের বাসায় মিঃ এন্ড মিসেস মুখার্জী বরণ ডালা নিয়ে অপেক্ষায় আছে বৌমাকে বরণ করার জন্য।
বৌদি এসে গেছে বলে চিৎকার করে গাড়ীর দরজার নিকট হাজির হলো বাড়ির কাজের ছেলে। কাজের ছেলে গাড়ির দরজা খুলে দিতেই দীপাবলী ধীর পায়ে গাড়ী থেকে নামলে শ্বাশুড়ী বরণ ডালা নিয়ে এগিয়ে বরণ করে নিলো নব বধুর মতো করে। দীপাবলী বিনয়ের সাথে শ্বশুর-শ্বাশুড়ীকে কঁদমবুচি করে উঠে দাঁড়াতেই শ্বাশুড়ী বরণডালা রেখে দীপাবলীকে বুকে জড়িয়ে ধরে। অতঃপর ধীরে ধীরে সবাই মিলে অন্দর মহলে প্রবেশ করে। আজ মূখার্জী বাড়িতে আনন্দে ভরপুর।

দীপাবলী Click This Link
দীপাবলী-০১ Click This Link
দীপাবলী-০২ Click This Link
দীপাবলী-০৩ Click This Link
দীপাবলী-০৪ Click This Link
দীপাবলী-০৫ Click This Link
দীপাবলী-০৬ Click This Link
দীপাবলী-০৭ Click This Link

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.