![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কষ্টের দোকানদার পসড়া করে ফিরে হাজারও কষ্ট, আপনার পছন্দের কষ্ট কিনেনিতে পারেন আপনার কষ্টকে কমানোর জন্যে । রমিজ মিয়া কষ্টের আরেক নাম, বাহারি কষ্ট নিয়ে ঘুরে ফিরেন; ক্রেতারা নিজ নিজ কষ্টের এক ধাপ উপরের কষ্ট কিনে নিয়ে যায় নিজের কষ্টটাকে কমাতে । ১৯৬৮ সালে জন্ম নেন রমিজ মায়ের ঘরে; বাবাকে জানেনা, মায়ের ঘর বলতে রেললাইনের পাশের ঝুপড়ি ঘর । মন্মের পড়থেকে আরকিছু বুঝে উঠার আগেই আধপেটা খেয়ে নির্ঘুম রাতকাটানোর অভিজ্ঞতা লব্ধকরেছে সে । কিশোর বয়সে মিরাজ দেখেছে মায়ের শ্লিলতাহানীর দৃশ্য, ৭১ এ রেলের পাশে ফিরিঙ্গিদের অস্ত্রের মূখে মায়ের বিবস্ত্র চিত্কার, লাগাতার সাত নরপশুর কাম খোড়াকের পর দেখেছে মায়ের রক্তাক্ত শরীর আর সারা রাত ধরে যন্ত্রনার কাতরানো ; রমিজ বড় হতে হতে দেখেছে ফতোয়ার কবলে কিভাবে মাকে ভন্ড হুজুরের সেবাদাসি হয়ে রাত কাটাতে হয়েছে । কৈশর বয়েসে দেখেছে মায়ের নিস্তেজ দেহ গাছে ঝুলে থাকতে, মায়ের আদর থেকে মা তাকে বঞ্চিত করে চলেগেছেন নিজের অপমান আর সইতে নাপেরে । রমিজ বাচার তাগিদে কতকিইনা করতে হয়েছে, গেঠুগানের দলে গিয়ে তাকে বহু রাত ব্যাথায় কাতরাতে হয়েছে; জীবনে এসেছিল সুখের বাতাস হয়ে রুপা । যে বস্তিতে থাকতো রমিজ তারি পাশের ব্যাবসায়ী বাপের আদুরে কন্যা । রমিজের নাচ,গান আর সহজ জীবনের প্রতি মূগ্ধ হয়েই রুপা রমিজের হাত ধরে । সে বাতাস বেশিদিন বয়নি রমিজের জীবনে, সুখের বাতাস কেড়েনিল রমিজের বাম পায়ের কব্জি অবদি । রুপার সহজ প্রেমের প্রতিদান সরুপ ব্যাবসায়ী বাবা কেড়ে নিল রমিজের পা । এলাকা ছাড়া হয়ে রমিজ এক পায়ে কিছুদিন ভিক্ষে করে রেলগাড়ি করে । রমিজের কোন অভিযোগ নেই কারো প্রতি, কারো করুনা নিয়ে বাচারও তার কোন প্রত্যাশা নেই; কিছুদিনের মধ্যেই রমিজ ছোট্ট একটা পানের দোন দেয় ইস্টিশনে, প্রতি সন্ধায় পুলিশের চাদা আর স্থানীয় প্রভাবশালীদের বখড়া দিতে দিতে আর চালাতে পারেনি । একপায়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে জীবন চালাতে বড়ই কষ্ট হচ্ছে রমিজের, রমিজ আর ভিক্ষে করে জীবন চালাতে চায়না, কাজ নিল একটা সাইবার ক্যাফের ওয়াচ ম্যান হিসেবে; ক্রেতারা নিয়মিত আসে ইন্টারনেটে কাজ করে, রমিজ তাদের সময় সংরক্ষন করে এবং সময় অনুপাতে ভাড়া বুঝে নেয় । রমিজ শিক্ষিত না হলেও যোগ বিয়োগ আর গুনেনর কাজটুকু পারে ভালই । পঙ্গু জীবনে সে একটা কাজ ভাল করতে পারে, যা কিছুই দেখুক খুবই অল্প সময়ে রপ্ত করে নেয়ার ক্ষমতাটা তার অসাধারন; রমিজ এই কাজের ফাকে ফাকে মেক্যানিকের কাজ শিখে, কিভাবে বসে বসে কোন একটা ইলেক্ট্রিক জিনিস নষ্ট হয়েগেলে তা ঠিক করতে হয় । বছর তিনেক পর রমিজের জীবনে একটি সুযোগ এল দেশের বাইরে যাওয়ার, নিয়মিত সাইবার ক্যাফে আসা এক ভদ্রলোক সুযোগ করে দিল অল্প খরচে বিদেশে তার পরিচিত এক জনের দোকানে কাজ পাইয়ে দেয়ার । রমিজ চলে যায় কানাডায়, ঘরে বসে বসে সে সারাদিন কাজ করে, বাইরে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই, বাইরের জগতে সে কিছুই বুঝেনা ও বলতেও পারেনা । রমিজ বছর দুই পরে একটা বিকল্প পা লাগিয়ে নেয়, এখন সে অনেক সুখি একটা মানুষ । ৫ বছর পর রমিজ দেশে ফিরে একটা বিয়ে করে, নিজে একটা ব্যাবসা দেয়, ভালই চলছিল রমিজের যতদিন না সে তার স্ত্রীর কিছু কিছু বিষয় চোখে ধরা না পরছিল । রমিজের ৩ বছরের সুখের সংসার এক পলকেই ধূলোয় মিশে গেল, প্রতিদিনের মত রমিজ তার নিজের ব্যাবসায় যায় রমিজ, শরীরটা ভাল লাগছিলনা বিধায় ঘন্টা ২ পর বাসায় ফিরে কলিং বেল বাজাতে্ থাকে কিন্তু ঘরের দরজা খুলছিলনা ওপাশ থেকে, বেশ কিছুক্ষন যাওয়ার পর দরজা খুলে অবাক দৃষ্টিতে তাকায় রমিজের স্ত্রী- তুমি ! রমিজ বুঝতে পারেনা কথাটার অর্থ, শরীর ভালনা বলে ঘরের ভিতরে যেতেচাইলে বলে কি হয়েছে তুমার ড্রয়িং রুমে বস । শরীরটা ভালনা বলে বেড রুমে ঢুকেই রমিজ বুঝতে পারল কেন প্রতি দিন ঘন্টায় ঘন্টায় খবর নিত তার স্ত্রী কখন ঘরে ফিরবে । রমিজ কিছুই না বলে বেরহয়ে গেল; রাতে ঘরে ফিরে দেখে কেউ নেই ঘরে; পরেরদিন ব্যাংক থেকে টাকা উঠাতে গিয়ে দেখে ব্যাংকের একাউন্টে কোন টাকা নেই, বিশ্বাস করে চেকে সই করে রেখেছিল রমিজ যেন কোথাও গেলে তার স্ত্রীর টাকার কোন সমস্যা না হয়, সে সুযোগটা আজ তার ভিকিরীর কারন হয়ে দাড়াল । ৭ দিন পর রমিজের বাসায় একটা চিঠি এল রেজিস্টার করা, পড়তে পারেনা রমিজ তাই পাশের বাসার লোক মারফত জানতে পারল তার বিরোদ্ধে নারী ও শিশু সুরক্ষা আইনে মামলা হয়েছে; মূকদ্দমা শেষ করতে করতে ৩ মাস জেল খেটে সব বিক্রি করে আজ সে নিশ্ব, আজ আবার সে রাস্তায় রাস্তায় ফেরি করে ফেরিওয়ালা । আজ রমিজ ফেরিকরে বিক্রি করে কষ্ট । আজ সে কষ্টের ফেরিওয়ালা । যাদের কোন কষ্ট নেই তারাও কিনে কষ্ট, যাদের আছে কষ্ট তারা কিনে অধিকতর কষ্ট । কষ্ট নিকে কষ্ট, আমার কাছে হরেক রকম কষ্ট আছে, কষ্ট নিবে কষ্ট, রমিজ আলীর নষ্ট হয়া জীবনের কষ্ট ।
©somewhere in net ltd.