নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তথ্যের মৌমাছি, জ্ঞানের ভিক্ষুক, প্রজ্ঞার সাধক।

মিথমেকার

তথ্যের মৌমাছি, জ্ঞানের ভিক্ষুক, প্রজ্ঞার সাধক।

মিথমেকার › বিস্তারিত পোস্টঃ

৭১ এ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র=২৪ এ স্বাধীন বাংলা মিম পেইজেস-গ্রুপস-চ্যানেলস!

১৮ ই আগস্ট, ২০২৪ দুপুর ১:২২



স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র সম্পর্কে বাংলাদেশের মানুষ বেশ ভালো করেই জানে। ৭১ এর মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অবিস্মরণীয় ভূমিকা এখনও দেশের মানুষকে আবেগপ্লুত করে তোলে। ১৯৭১ এ স্বাধীনতা যুদ্ধের বস্তুনিষ্ঠ খবর প্রচার, রক্তে আগুন জ্বালা প্রতিবাদী গান-কবিতা প্রচার সহ বিভিন্ন বড় অপরেশনের সিগন্যাল হিসাবে গান বাজিয়ে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র অমর অবদান রেখেছিল আমাদের মুক্তির সংগ্রামে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের নাম বদলে রাখা হয় বাংলাদেশ বেতার। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ইতিহাস-অমরগাথা লিখতে গেলে বড় বড় অনেক বই লেখা যাবে।

কিন্তু আজ আমরা স্বাধীন বাংলা বেতারের জেন-জি ভার্সন নিয়ে জানবো!
কী তাহলে স্বাধীন বাংলা বেতারের জেন-জি ভার্সন? হয়তো খুব কম সংখ্যক মানুষই জানেন সেটা কী। সেটা হলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মিম পেইজ-গ্রুপস-চ্যানেল গুলো! ২০২৪ এর ছাত্র জনতার স্বৈরাচার থেকে মুক্তির নিরস্ত্র-যুদ্ধে মিম পেজ-গ্রুপস-চ্যানেল গুলোর ভূমিকা ছিল অবিস্মরণীয়। অনেকেই হয়তো মিম শব্দটার সাথে তেমন পরিচিত নন। বা মিম দেখেছেন কিন্তু সেটাকে যে মিম বলে সেটা জানেন না। মিম নাম শুনেই আবার এটাকে আবরি-জঙ্গি মেটেরিয়াল ট্যাগ লাগায়া দিয়েন না! আগে পুরোটুকু জেনে নিন।

মিম এমন একটি ফেনোমেনা যেটা দারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা অন্য কোথাও কোনো একটা বিষয় বস্তুকে বিভিন্ন ভাবে উপস্থাপন করা হয়। এই উপস্থাপন হতে পারে; মজার, প্রতিবাদের, প্রশংসার, আয়রনির ছাড়াও আরও অনেক বিশেষণ নির্ভর। মিম ছবি, ভিডিও, ছোট লেখা, বা অন্য অপ্রত্যাশিত অনেক কিছু দিয়েই হতে পারে। দ্বিতীয় ছবিটা একটা মিম। জেন-জি, মিলেনিয়ালস বাদে অন্য যারা আছেন যেমন বোমার্স তাঁদের জেন-জি মিমস এর ভাবার্থ বুঝতে বা কনটেক্সট বুঝতে একটু সমস্যা হতে পারে। যেমন ধরুন; ওপরের দ্বিতীয় ছবিটাতে যে বক্তিকে দেখতে পাচ্ছেন সে আমেরিকার অনেক ফেমাস একজন সংগীত শিল্পী, নাম ড্রেক। এখন আবার ভেবেন না উনি আবার নিজের ছবি এমন কেন করল! উনি নিজের ছবি এমন করে নাই। যারা মিম বানায় তাঁরা হলো মিমার। এরাই তাঁর কোনো ভিডিও বা ছবি থেকে এমন দুটো ছবি খুঁজে বের করেছে, শুধু মাত্র এই মিমটা বানানোর জন্য। ড্রেকের যে ছবি দেখছেন সেটা এখন মিম টেমপ্লেট বা এটা নিয়ে ভরপুর মিম বানানো হয়। তাহলে মিম পেজ-গ্রুপস-চ্যানেল আবার কী? মিম পেইজস-গ্রুপস-চ্যানেল হলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এমন কিছু অবিচ্ছেদ্য অংশ যেটা থেকে মিমারেরা তাঁদের মিম শেয়ার করে থাকে। হয়তো এই অনু আলোচনার মাধ্যমে মিম সম্পর্কিত সবকিছুর একটি সাধারণ ধারণা দিতে পেরেছি।

কিন্তু, ২৪ এর স্বৈরাচার থেকে মুক্তির নিরস্ত্র-যুদ্ধে মীম পেজ-গ্রুপস-চ্যানেলস এর ভূমিকা কী? আগেই উল্লেখ করেছি, ২৪ এ মিম পেজস-গ্রুপস-চ্যানেলস গুলোর ভূমিকা ছিল ৭১ এর স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের মতো! কারণ, মিমারেরা মুক্ত স্বাধীন। এরা কারো নিকট দায়বদ্ধ নয়। তাঁরা স্বৈরাচারী শাসন আমলের পঁচে-গলে বিক্রি হয়ে যাওয়া চাটুকার মেনস্ট্রিম মিডিয়ার মতো নয়। মিমারদের সংখ্য অগণিত। নিজের বানানো মিমস তাঁরা নিজের প্রোফাইল থেকেও প্রকাশ করতে পারেন অথবা বিভিন্ন পেইজ, গ্রুপস, চ্যানেলস থেকেও প্রকাশ করতে পারে। এ জন্য স্বৈরাচারী সরকারের পক্ষে মিমারদের ট্র্যাক করা কঠিন হয়ে পরে। যদিও সরকার পেজ গ্রুপ এগুলো ট্র্যাক করে এগুলোর অ্যাডমিনদের আটক করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ফল তেমন কিছুই হয় না। প্রতিবাদ আরও তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে। কারণ, মিম পেইজ-গ্রুপস-চ্যানেলস এর সংখাও অগণিত। এবং এমন পেইজ, গ্রুপ, চ্যানেল খুব সহজেই খোলা যায়।

২৪ এর কোটা আন্দোলন যখন তীব্র হতে থাকে তখন থেকেই মিমারেরা প্রচণ্ড সক্রিয় ছিল। নানান ভাবে ছবি, ভিডিও মিম বানিয়ে তাঁরা আন্দোলনকে বেগমান করেছে। ২৪ স্বৈরাচার থেকে মুক্তির নিরস্ত্র-যুদ্ধে ভিডিও মিমস গুলো ঘরে বসে থাকা ছাত্র-জনতাকে রাজপথে নামতে বাধ্য করেছিল। ভিডিও মিমস গুলোর ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকে ব্যবহার হয়েছিল সেই ৭১ এর রক্তে আগুন জ্বালা গান, কবিতা গুলোই! অন্যভাবে বলতে গেলে, বিশ্বে বাংলাদেশি এবং সকল বাংলাভাষী মানুষ খুবই ভাগ্যবান! কারণ, তাঁদের রয়েছে অসংখ্য প্রতিবাদী রক্তে আগুন জ্বালা গান আর কবিতা।

মিম পেইজস-গ্রুপস-চ্যানেল গুলো যে শুধু মিম বানিয়ে চুপ করে বসেছিল এমনটি নয়। তাঁরা প্রতি মুহূর্তে বস্তুনিষ্ট খবর পরিবেশনের মাধ্যমে ২৪ গণঅভ্যুত্থানকে বিজয়ের পথে নিয়ে গেছে। ফ্যাক্ট চেকিং এর মাধ্যমে কুচক্রী মহল এবং স্বৈরাচারী সরকারের সকল প্রোপাগান্ডা রুখে দিয়েছে। তাঁদের তৎপরতা এতটাই বেশি ছিল যে শেষ দিকে এসে স্বৈরাচারী সরকার উম্মাদের মতো আচরণ শুরু করে।

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগের মন্ত্রী এমপি এবং চেলা গুলোর একেরপর এক মিথ্যাচার হাতেনাতে ধরে এক্সপোজ করেছে এই মিম পেইজস-গ্রুপস-চ্যানেলস। বদমাইশ গুলোর মন্তব্য, বক্তিতা, ইন্টারভিউ এর চুলচেরা বিশ্লেষণ করে ওদের আপকামিং স্ট্রাটেজিও ইউনভেইল করা হয়েছে মিম পেইজস-গ্রুপস-চ্যানেলস এর মাধ্যমে। রাজপথে যখন স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ-ছাত্র লীগ-যুবলীগ-পেটুয়া পুলিশ নির্বিচারে নির্মম ভাবে ছাত্র-জনতাকে হত্যা করছে তখন এই মিম পেইজস-গ্রুপস-চ্যানেল গুলোয় সবার আগে এসব খবর প্রকাশ করেছে। বিশ্বগণমাধ্যমের নিকট ওদের বীভৎস অত্যাচার তুলে ধরেছে। হায়নার পালের তোপের মুখে যখন নিরস্ত্র ছাত্র-জনতা কোণঠাসা হয়েছে তখনই তাঁদের নতুন স্ট্রাটেজি প্ল্যান এবং ব্যাকআপ সাপোর্ট দিয়েছে মিম পেইজ-গ্রুপস-চ্যানেল গুলোই। আহত-নিহত সকল নিরস্ত্র বীর যোদ্ধাদের লোকেশন, পরিচয় প্রকাশ থেকে শুরু করে তাঁদের দ্রুত সময়ের মধ্যে ফার্স্ট এইডের ব্যবস্থা করেছে মিম পেইজস-গ্রুপস-চ্যানেলস গুলো। তাঁদের অবদান যে কতটা এটা শুধু তাঁরাই বুঝবে যারা প্রতাক্ষ-পরোক্ষ ভাবে স্বৈরাচার থেকে মুক্তির লড়াইয়ে যুক্ত ছিলো, এবং যারা জেন-জি এর হিউমর বোঝে।

২৪ এর স্বৈরাচার থেকে মুক্তির লড়াইয়ে মিম পেইজস, গ্রুপস, চ্যানেলস এবং মিমারদের অবদান থাকবে অমর হয়ে। অন্য জেনারেশনের সেটা বোধগম্য হোক বা না হোক যারা জেন-জি র সম্পর্কে ধারণা রাখে ওদের পালস বোঝে ওদের এন্থুসিয়াসম বোঝে, ওদের আইরনি বোঝে, তাঁরা বুঝবে এই জেনারেশন নিজের দেশটাকে কতটা ভালবাসে!

পরিশেষে আরও একটি মিম দিচ্ছি। এবং সাথে সেটার এক্সপ্লানেশনও। হয়তো এই মিম জেন-জি এর সাথে অন্য জেনারেশনের যে ব্যপক একটি "জেনারেশন গ্যাপ" সেটা বোঝাতে সক্ষম হবে।

এই মিমটার কিছু অংশ হয়তো বাংলাদেশের সবারই অনেক পরিচিত লাগার কথা, লাগাটাই সাভাবিক। কারণ, এই মিম এর টেমপ্লেট নেয়া হয়েছে আপনার বাচ্চাকে টিকা দিন নামের সেই ক্যাম্পেইন এর লোগোটা থেকে। একটি শব্দও অচেনা লাগছে না? পুকি! এটা আবার কী? জেন-জি তাঁদের প্রিয়জনকে পুকি নামে সম্মোধন করে। এখানে, জেন-জি এই মিম দিয়ে বোঝাতে চেয়েছে যে; তোমাদের ভালোবাসার মানুষকে রাজনীতি শেখাও। কারণ; নায্য অধিকার আদায়ের আন্দোলন থেকে স্বৈরাচার থেকে মুক্তির নিরস্ত্র-যুদ্ধে ভালোবাসার মানুষটা পাশে থাকলে মনোবল বহুগুণ বেড়ে যায়! সারাদিন রক্তক্ষয়ী পরিশ্রমের পর ভালোবাসার মানুষটার সাথে সেসম্পর্কে কথা বলতে পারা যে কতটা তৃপ্তির সেটা ৭১এর যারা মুক্তি যুদ্ধ করেছেন তাঁরা তো জানেনই। এই আলাপ আরও মধুর হয়ে ওঠে যখন ভালোবাসার মানুষটা রাজনীতি সম্পর্কে দারুন ভাবে সচেতন থাকে! তখন সে হয়ে যায় কমরেড! তখন সে মধুর আলাপ আর লুটুপুতু প্রেমে আড়ষ্ট থাকে না, সে আলাপ হয় দুজন বিপ্লবীর প্রেমের আলাপ, স্বৈরাচার থেকে মুক্তি লাভের লক্ষ স্বপ্ন-পরিকল্পনার আলাপ!

বিস্মিত হচ্ছেন? পুকি আবার কেমন শব্ধ? এটাতো আগে শুনি নাই বা পড়ি নাই। বাংলা একাডেমী এর ইয়া মোটা অভিধানেও এটার অস্তিত্ব নেই। থাকবে না। কারণ, জেন-জি এসবের ধার ধারে না। তাঁরা তাদের মনের কথা প্রকাশ করে তাঁদের মন মতো! হোক সেটা নতুন শব্দ বানিয়ে বা অন্য শব্দের বিকৃতি ঘটিয়ে! ওরা তথাকথিত নিয়মনীতির তোয়াক্কা করে না। ওরা যা বলবে যা করবে সেটা ওদের নিজেদের চয়েস। ওদের একটাই কথা; ভুল যদি করি আমরা নিজেদের বুদ্ধিতেই করতে চাই। সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে সঠিকটা শিখতে চাই। অন্যের বুদ্ধিতে ভুল করে বাকি জীবন রিগ্রেট করতে চাই না।

জেন-জি এর সাথে নজরুলের অমর কবিতা; মোরা ঝর্ণার মতো উদ্যম এর অবিকল মিল। ওরা আসলেই আকাশের মতো বাধাহীন!

-কবি হেলাল হাফিজ।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই আগস্ট, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৩

সৈয়দ মোজাদ্দাদ আল হাসানাত বলেছেন: অনেক কিছু জানতে পারলাম । ধন্যবাদ আপনাকে।

১৯ শে আগস্ট, ২০২৪ সকাল ১০:০৫

মিথমেকার বলেছেন: আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ!

২| ১৮ ই আগস্ট, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৪

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: এরা অনেক স্মার্ট। আন্দোলনের সময় এরা যখন রাস্তায় তখন ইন্টারনেট ছাড়া কিভাবে কানেক্ট হওয়া যায় সেই ব্যবস্থা এদের অনেকের কাছে ছিল। কিছু প্রযুক্তি সম্ভবত আছে যে ইন্টারনেট কানেকশন না থাকলেও অনলাইনে থাকা যায়। আমি অবশ্য এগুলি বুঝি না। তরুণ প্রজন্মের কাছে শুনেছি।

১৯ শে আগস্ট, ২০২৪ সকাল ১০:০৮

মিথমেকার বলেছেন: ওদের ব্রেন গুলির বেগে কাজ করে! খুবই দ্রুত এফিসিয়েন্ট সিদ্ধান্ত নিতে পারে ওরা। আওয়ামীলীগের স্বৈরাচারী সরকারও ওদের ক্রিটিকাল থিংকিং এর কাছে পরাজিত হয়েছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.