আধেক জনম

১১ ই নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩৮

আমার নিরুদ্দেশ বাবাকে খুঁজতে খুঁজতে

চিনতে শিখে ছিলাম পৃথিবী।

বেড়ে উঠে ছিলাম ছোট ছোট স্বপ্নের

মৃত্যু যন্ত্রনা সয়ে সয়ে।

কখনও সেই স্বপ্ন পূরণের বায়না মেটাতে

সাহস দেখাইনি কোনদিন।

কারণ, আমি তত দিনে বুঝতে পারছিলাম

আমার দুনিয়া অনেক ছোট, ভীষণ নাজুক

সীমাবদ্ধতার এক বিশাল প্রাচীর আমার সামনে খাড়া।

মনে সেই প্রাচীর গুড়ানো প্রত্যয় জাগলেও

আমি ছিলাম তখনও শিশু।

শিশুত্বের গ্লানি মাথা নূঁইয়ে দাফন করেছি

কিশোর বেলার স্নিগ্ধ বিকেল গুলোতেও।

আমার শিশুত্ব, স্বপ্নের মৃত্যু শোক, ছোট পৃথিবী

আর দণ্ডায়মান বিশাল প্রাচীরের কোনায়

চিক চিক করে জেগে উঠেছিল ভালোবাসার দূতি,

সেই দ্যূতিতেই দেখেছি অন্য এক রূপ পৃথিবীর।

কিন্তু সেই দ্যুতিময় পৃথিবীটিও ছিল

আমার উঁচু দেয়ালের ওপারে,

তাই সেই দ্যুতিময় আলোর ছটায়

রাঙাতে পারিনি আমার জীবন,

আমি যে তখনও নাজুক

উঁচু দেয়াল আমার সামনে খাড়া।

ভীষণ অসম্ভবের সেই বিঘ্নতা ডিঙানোর বাহুবল

তখনও তৈরী হয়নি আমার।

হারে হারে বুঝতে পারছিলাম

ডানা থাকতেও উড়তে না পারার কষ্ট।

সাধ্য আর সাধের হিসাব তখনও আমার কাছে গোলমেলে

ঠাওর করছিলাম

এ পৃথিবীর সব কিছু আসলে সবার জন্য নয়।

প্রবল স্বপ্নের বিভোরতা নিয়ে

মুখস্থ করছিলাম ধৈর্য্যের মন্ত্র।

সম্বরণ করছিলাম আমার সকল হিংস্রতা, অস্থিরতা

আর সইছিলাম ছোট পৃথিবীর গ্লানি।

সুরের মায়া শুষে নিয়ে

পা রেখেছিলাম তারুণ্যের আরাধনায়,

বেখেয়ালে থাকা আমার স্বপ্ন শোক

শিশুত্বের গ্লানি, উবে যাওয়া দ্যূতি

সবই এক সময় পরিণত হয়েছিল জিন্দাবাদে।

তবু অস্থির জিন্দাবাদ আর বিকালাঙ্গ রাজনৈতিক সভ্যতা

আসক্ত করেনি আমার জীবন।

মাদকতার মিছিলে খুঁজিনি অন্ন

ভেবেছি এ কাফেলায় যোগ দেওয়ার যোগ্যতা আমার নেই।

দূরে দাঁড়িয়ে দেখেছি সমবয়সীদের সীমাহীন উল্লাস

মুখবুজে সহ্য করেছি সকল বৈষম্য, বর্বরতা।

অসম্ভব বিনয় আর ক্লান্তিহীন ধৈর্য

ফিরিয়ে দেয়নি আমার শৈশব,

দেয়ালের ওপারে থাকা আমার কিশোর বেলার স্নিগ্ধ বিকেল।

ডানায় মেলেনি নতুন পালক

তবু ডানা ঝাপটাই, উড়বার সাধ আমার প্রবল

দুরন্ত ইচ্ছায় কাঁপে বুক।

০ টি +০/-০