![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিজের সম্পর্কে কি লিখবো সেটা বুঝতে পারছি না। আমি এখানে একদমই নতুন। লেখায় ভুল ত্রুটি হলে অবশ্যই জানাবেন। আমার লেখা গল্প ভালো লাগলে অবশ্যই জানাবেন। এছাড়াও আমাকে ফেসবুকে পেতে পারেন এই লিঙ্কে গিয়েঃ https://www.facebook.com/maskneon
পকেটে ছিল ১১৬ টাকার মতো। অনিমেষের ফোন।
-দোস্ত আমি আশিক আর সানি সাজেক যাচ্ছি। তুই ও চল।
- টাকাই তো নাই। জামুনা আমি।
- আরেহ ব্যাটা ম্যানেজ কর। ইঞ্জিনিয়ার হবি আর কয়দিন পর। এখন ম্যানেজ করা না শিখলে আর ক্যামনে?
"কি আছে জীবনে? এখন না ঘুরলে আর কখনোই না।" এই দুটি লাইনকে মন্ত্র বানিয়ে নিজের উপর ঐ মন্ত্র ফুকে শুরু হল ধার করন প্রক্রিয়া। ধার দেনা করে, অসুস্থ চোখ নিয়ে ২ তারিখ পরীক্ষা দিয়ে রাতের বাসে টিকিট কেটে ছুটলাম খাগড়াছড়ির উদ্দেশে। ওহ আর একটা কথা। বন্ধুত্তের টান ছিঁড়তে না পেরে অভিও চলল আমাদের সাথে।
৩ তারিখ ভোরে ফজরের আজানের সময় আমরা নামলাম খাগড়াছড়ি শাপলা চত্বর। সেখান থেকে আমরা ৫ জন চান্দের গাড়ি ভাড়া করে ছুটলাম বাঘাইছরায়। সেখানে সকালের নাস্তা করে সাজেকগামী গাড়ি ভাড়া করার চেষ্টা করলাম। বৃথা চেষ্টা। অতিরিক্ত ভাড়া। সিন্ডিকেটের খপ্পর থেকে রেহাই পেতে ভাবলাম দীঘিনালা যাই। গাড়িতে উঠা মাত্রই আল্লাহ্ মনে হয় আমাদের প্রতি সদয় হলেন। মিলে গেলো আরও পাঁচ জনের একটা গ্রুপ। ব্যাস। তারপর ১১টার এস্কোরটে আমরা ১০ জন চান্দের গাড়ির ছাদে করে রওনা দিলাম সাজেকের পানে।
দীঘিনালা থেকে সাজেকের উঁচুনিচু সাপের মতো আঁকাবাঁকা রাস্তায় ভ্রমণটা ছিল অসাধারণ একটা অভিজ্ঞতা। চারপাশে বড় ছোট পাহাড়। কখনো পাহাড়ি নদী। কখনোবা পাহাড়ি ঝর্ণার ঝিরিপথ। মনোরম সব দৃশ্য চোখের লেন্সে আটকা পড়ে স্মৃতি হয়ে জমা হওয়া শুরু করলো আমার মস্তিস্কের হার্ডডিস্কে।পরবর্তীতে স্মৃতিচারণ করার জন্য কিছুটা আমার মোবাইলের হার্ডডিস্কেও জমা রাখলাম। সূর্যের প্রখর উত্তাপকে উড়িয়ে দিচ্ছিল পাহাড়ি বাতাস। সাথে না ঘুমানোর এবং বাস যাত্রার ক্লান্তিটা ও উরে যাচ্ছিলো নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখে। বলতে বাধ্য হচ্ছিলাম, "সৌন্দর্যে ঝলসে যাচ্ছে। এতো সুন্দর এই প্রকৃতি?"
সাজেক পৌঁছে আমাদের আগে থেকে বুকিং করা মেঘ মাচাং কটেজটাতে ঢুকে ব্যাগ রেখে বারান্দায় দাঁড়াতেই মনটা আনন্দে নেচে উঠলো। মেহজাবিনের ভাষায় এত্তো গুলা সুন্দর ভিউ।
এবার আমাদের ড্রাইভার বিলাল ভাই সহ আমাদের দুই গ্রুপের দশজন বের হলাম কমলক ঝরনায় গোসল করবো এই ভেবে। স্থানীয় পিচ্চি গাইড সুমন (প্রথমে ছেলেটার উপর রাগ হলেও পরে খুব মায়া পরে গেছে ছেলেটার জন্য। বেশ ভালো ছেলে সুমন।) আমাদের বলল, " আমার সাথে আসেন। সামনেই খুব সুন্দর একটা ঝর্ণা আছে। ৩০ মিনিটের রাস্তা। মজায় মজায় আমরাও নাচতে নাচতে ওকে অনুসরণ করে ওর সাথে আগাতে শুরু করলাম। নামছি তো নামছিই। কখনো বা খানিকটা উপরে উঠছি। আবার খাড়া পাহাড় বেয়ে নামছি। প্রায় ৫০০ ফিটের মতো (আমাদের ধারনা) নেমে দেখি একটা ঝর্ণার কিছুটা অংশ। পা রীতিমতো কাঁপছে। ঠাণ্ডা কিংবা ভয়ে কিছুতেই না। ব্যথায় কাঁপছিল। কিন্তু আসল ঝর্ণা তখনও আরও আনুমানিক ২০০ ফুট নিচে নামতে হবে। আমি আর বন্ধু ওমর, বিলাল ভাই সহ আরেক গ্রুপের ৫ জন সেখানেই ইস্তফা দিলাম। অনিমেষের নেতৃত্বে অভি আর আশিক গাইডের পিছু পিছু নেমে গেলো "সিকাম তুইসা" এর উদ্দেশে। এদিকে আমরা সাতজন সেখানেই গোসল করতে থাকলাম। খানিকবাদে বাকী তিনজনকে নিয়ে চিন্তা হওয়া শুরু হল। কোন বিপদ হল না তো ওদের? ওরা কি ভুল কোন সিদ্ধান্ত নিল? অনেক ভয়াবহ কুচিন্তা মাথায় ভঁর করা শুরু করলো। অনেকক্ষণ পর নিচ থেকে অভির গলার আওয়াজ পেলাম। মনটা আনন্দে ভরে উঠলো। যাক হারামিগুলা ফিরে আসছে। এবার উঠার পালা। নামাটা মনে হচ্ছিল সহজ। গরমে আর পরিশ্রমে বারবার থামতে হচ্ছিল। ফুসফুস ঠিক মতো অক্সিজেন পাচ্ছিল না। হৃদপিণ্ড ঘণ্টার মতো ধুঁকধুঁক করে শব্দ করছিল। মনে হচ্ছিল আজ বুঝি সন্ধার আগে উঠতে পারবো না। এদিকে ক্লান্তি এতোটাই ভঁর করেছিলো যে সত্যি বলতে শরীরে কোন শক্তির উপস্থিতি পাচ্ছিলাম না। আর গলাটাও শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছিলো। বারবার বসে পড়ছিলাম। আমাদের গাড়ির ড্রাইভার মানুষটা খুব ভালো। তাকে বললাম ভাই বাঁচান। পানি দরকার। লোকটার এই অঞ্চলটা পরিচিত। সে দৌড়িয়ে উপরে উঠে যাচ্ছিলো। যাইহোক উপরে উঠতে উঠতে তেষ্টায় বারবার মনে হচ্ছিল হয় নিজের হাত কেটে রক্ত পান করি কিংবা মুত্র থেরাপি কাজে লাগাই। তৃষ্ণা নিবারণ করতেই হবে। পরে "কলাগাছ থেকে পানি পাওয়া যায়" এই কথাটা মাথায় আসলেও কলাগাছ নড়াবার শক্তিও ছিল না। থাকবেই বা কিভাবে? সকালে মাত্র ২টা পরটা আর কিছু কলা আর কতোই শক্তি দিবে? যা ছিল সব তো শেষ। পথ চলছিলাম পুরোটাই মনের জোরে। হঠাৎ মনে পড়লো আমার টি-শার্টটা তো ভেজা। সাথে সাথে টি-শার্ট শুষে কিছু পানি দিয়ে গলাটা কিঞ্চিৎ ভেজালাম। তারপর আবার শুরু করলাম উপরে উঠা। সেদিন বুঝলাম মনের জোর আর বেঁচে থাকার ইচ্ছা থাকলে আল্লাহ্ বাদে আর কেউ মারার ক্ষমতা রাখে না। উঠলাম। দেখলাম আমাদের গাড়ির হেল্পার এক বোতল পানি হাতে দাড়িয়ে আছে। এতো আনন্দ হচ্ছিল বুঝাতে পারবো না। উপরে উঠে আসা এবং খাবার পানি পাবার আনন্দ। পানি খেয়ে মাথায় পানি দিয়ে ফিরতে শুরু করলাম আমাদের কটেজে। তারপর হাটতে হাটতে একসময় বসে পড়লাম রাস্তায় বন্ধু সানিকে সাথে নিয়ে। পরে দেখলাম আমাদের ড্রাইভার বিলাল ভাই তার গাড়ি নিয়ে আসছে। গাড়িতে করে আমি চলে গেলাম কটেজে ফ্রেশ হওয়ার জন্য আর বাকী সবাই খাবার হোটেলে।
বিকেলের সাজেকটা অন্যরকম সুন্দর। স্থানীয় আদিবাসীরা তাদের নিজেদের মধ্যে খোশগল্পে মশগুল। কেউবা তাদের বাচ্চাদের নিয়ে খেলছে। কেউ বা আবার বাঁশের তৈরি ইয়া লম্বা হুক্কা টানছে নারীপুরুষ নির্বিশেষে। আমরা ছবি তুললাম। চা খেলাম। সূর্যাস্ত দেখলাম। বন্ধুত্বটা চাঙ্গা করলাম আরেকবার।
রাতের খাবারে ছিল এক পাহাড়ি আকর্ষণ। বাঁশ কুরুন। বেগুন, মরিচ আর কচি বাঁশ দিয়ে রান্না এক ধরনের খাবার। তৃপ্তি নিয়েই খেলাম সেই খাবার। রাতে খাওয়ার পর আমরা কটেজের বারান্দায় বসে-শুয়ে আড্ডা দিলাম, গান গাইলাম এক সাথে। এক সাথে সাজেকের বৃষ্টি উপভোগ করলাম। আর অনুভব করলাম মেঘ এসে আমাদের কখনো কখনো ঢেকে দিয়ে যাচ্ছে। এতো কাছ থেকে মেঘ দেখাটা অন্যরকম অনুভুতি। বলা যায় সুখানুভুতি। তারপর বারান্দাতেই কম্বল গায়ে জরিয়ে এক ঘুমে ভোর।
সানি আর অনিমেষের ডাকাডাকিতে ঘুম ভেঙ্গে উঠে আরেক অসাধারণ দৃশ্য দেখলাম। মেঘ আমাদের নিচের সব পাহাড়-গাছগাছালী ঢেকে ফেলেছে। নিজের চোখে না দেখলে বুঝা যাবে না যে আসল অনুভুতিটা আসলে কেমন?
আমরা এরপর আমাদের গাড়িতে করে রওনা হলাম কমলা বাগান ও কংলাক পাড়ার দিকে। নির্দিষ্ট স্থানে গাড়ি থামালে আমরা পাহাড়ের গা ঘেঁসে পাহাড়ি রাস্তা ধরে চলা শুরু করলাম কংলাক পাড়ায়। সেখানে আরেক ধরনের নতুন সৌন্দর্য। সম্পূর্ণ সাজেক দেখা যায় সেখান থেকে। পাহাড়-গাছপালায় সে সবুজের এক বিশাল সমারোহ। সেখানে গিয়ে মুগ্ধ হতেই হবে যে কাউকে। কিছু মুহূর্তকে করলাম ক্যামেরার ফ্রেমে বন্দি। সেখান থেকে ফেরার পথে কমলা বাগান দেখলাম। সাজেকে ফিরে সকালের নাস্তা করলাম খিচুড়ি আর ডিম ভাজা দিয়ে।
এবার ফেরার পালা সাজেক থেকে। আমরা ব্যাগ এন্ড ব্যাগেজ সব গুছিয়ে আবার চার তারিখে সকাল এগারোটার এস্করটে সাজেক ভ্যালীকে পেছনে ফেলে রেখে চান্দের গাড়িতে করলে চললাম হাজাছরা ঝর্ণা দেখতে। ১৫ মিনিটের মতো হেটে গিয়ে ঝর্ণা দেখে ঝর্ণায় ভেজার লোভ সামলাতে পারলাম না। মোবাইল মানিব্যাগ রেখে ভিজলাম ঝর্ণায়। আর কি শান্তি! কি ঠাণ্ডা পানি। কিছু পানি খেলাম। স্বাদু পানি। অসাধারণ তার টেস্ট। ভেজা অবস্থায় গাড়ির ছাঁদে উঠে বসলাম। জানতাম সূর্যের তাপে জামা কাপড় শুকিয়ে যাবে। সেই সাহস করেই ভিজেছিলাম ঝর্ণায়।
এরপরের গন্তব্য ছিল খাগড়াছড়ি। সেখানে গিয়ে প্রথমে রাতে ঢাকাগামী শ্যামলী বাসের টিকেট কাটলাম। সেখান থেকে দুপুরে খাবার উদ্দেশে গেলাম সিস্টেম রেস্টুরেন্টে। সেখানের মানুষগুলোর ব্যবহার ছিল অমায়িক। আমরা খাবার অর্ডার করলাম ভাত, হাঁসের গোস্ত, মুরগীর গোস্ত, শুঁটকি ভর্তা, মাশরুম ভাজি, ডাল আর বেম্বু চিকেন! আফসোস বেম্বু চিকেন ছিল না। সেটা আগেই অর্ডার করতে হয়। যাই হোক আমাদের খাবার পরিবেশন করা হল। খাবারগুলো সুস্বাদু ছিল। খুব তৃপ্তি নিয়ে খেলাম আমরা।
সিস্টেম থেকে আমরা রওনা হলাম আলুটিলায়। সেখানে গিয়ে আমরা দক্ষিণ এশিয়ার সব চেয়ে বড় গুহা (আমি শুনেছি) রহস্যময় গুহা দেখতে গেলাম। গুহার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল কোন এক ঝর্ণার ঠাণ্ডা পানি। গুহার ভেতর ঘুরে দেখাটাও ছিল অন্যরকম এক অভিজ্ঞতা।
এবার রিছাং ঝর্ণা দেখার পালা। কিন্তু ড্রাইভার বিলাল ভাই বললেন যে গাড়ির ২টি চাকার ব্রেকের তাঁর ছিঁড়ে গেছে। রিছাং যাওয়ার রিস্ক তিনি নিতে চাইছিলেন না। অগত্যা রিছাং ঝর্ণা দেখা হল না।
এবার ফেরার পালা। রাত ৯ টার শ্যামলী বাসে করে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিলাম। শ্যামলী বাস যে এতো জঘন্য সেটা আমার আগে জানা ছিল না। লক্কর ঝক্কর বাস। নষ্ট সিট। গাড়ি লাফায়, সিট লাফায় আর সাথে সাথে আমিও লাফাই। পরে সামনের দিকে খালি সিটে গিয়ে বসলাম। বিদায় খাগড়াছড়ি। একটা ঘুম দিলাম। ঘুম ভাঙল ঢাকার কলাবাগান এসে। তারপর বন্ধুরা সবাই কলাবাগান নেমে গেলো। আর আমি গাবতলি নেমে সেখান থেকে যখন বাসায় ফিরছিলাম তখন ফজরের আজান হচ্ছিল। আমিও সুস্থ শরীরে ফিরলাম নিজের বাসায়।
এই ছিল আমার খাগড়াছড়ি-সাজেক ভ্রমণ কাহিনী।
বিঃদ্রঃ ১ঃ খাগড়াছড়ির সিস্টেম হোটেলে আমি আমার মোবাইল একটু চার্জ দেয়ার সুযোগ পেয়েছিলাম। বাকী সময় প্রয়োজন না হলে মোবাইল বন্ধ করে রাখতাম চার্জ বাঁচানোর জন্য।
বিঃদ্রঃ ২ঃ সাজেকে রবি বাদে অন্য কোন কোম্পানির নেটওয়ার্ক নেই।
বিঃদ্রঃ ৩ঃ আমি কানে ধরেছি আর কোনদিন শ্যামলী বাসে করে কোথাও যাবো না।
০৬ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১:৪৩
নিয়ন খান বলেছেন: জি। ঘুরে আসা উচিৎ কিন্তু
২| ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১:৩৬
মোটা ফ্রেমের চশমা বলেছেন: লেখা চমৎকার হয়েছে। গল্পের ছলে।
০৬ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১:৪৭
নিয়ন খান বলেছেন: ধন্যবাদ
৩| ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ২:২০
মধু সরদার বলেছেন: অসাধারণ .........
০৬ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ২:৩২
নিয়ন খান বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
০৬ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১:৩৫
মোটা ফ্রেমের চশমা বলেছেন: সাজেক, যেতে হবেই যেভাবেই হোক।