নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শুন্য থেকে শুরু করলাম.।.।.।.।.।

নিয়াজ মাহমুদ ফয়সাল

কিছুই মনে আসছে না ....

নিয়াজ মাহমুদ ফয়সাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

আহনাফের গল্প; পর্ব-১

১০ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:০৩

("লেবু সুন্দরী" (রূপকথার গপ্পো )'র মত এই গল্পটাও আমার ছোট বোনের লেখা। গল্পটা একটু বড়। তাই দুই পর্বে পোস্ট করলাম।)



- আহনাফ।

- জ্বি খালামনি।

- তোমার বই খাতা গোছানো হয়েছে আব্বু?

- হুম।

- তাহলে ড্রেস চেঞ্জ করে নাও, বাস আসতে আর বেশি দেরী নেই। আমি বের হয়ে যাচ্ছি, তুমি বের হবার সময় দরজা ভালভাবে লক করে দেবে। ঠিক আছে?

- আচ্ছা।

খালামনি আহনাফের মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিয়ে বেরিয়ে যায়। ও ড্রেস চেঞ্জ করে ইউনিফরম পরে। প্রায় দু’বছর হয়ে গেল,ওর প্রতিটা সকাল এভাবেই শুরু হচ্ছে।

আহনাফ হোসেন, বয়স এগারো বছর। বাবা-মার একমাত্র ছেলে। বাবা ডাক্তার, ঢাকা মেডিকেলের একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর। মা চাকরি করেন একটা বেসরকারি ব্যাংকে বেশ বড়সড় পোস্টে, ‘এজিএম’ বা ‘ডিজিএম’ এরকম কিছু একটা হবে, আহনাফ মনে রাখতে পারে না। বাবা রোগী দেখেন প্রায় মাঝরাত পর্যন্ত, মাও বাসায় ফিরে ব্যস্ত থাকেন হিসাব পত্র নিয়ে। বোঝার মত বয়স হবার পর থেকে কখনই বাবা-মাকে খুব বেশি সময়ের জন্য কাছে পায় নি। মা-বাবার ব্যস্ততার কারণেই মাত্র আট বছর বয়সেই তাদেরকে ছেড়ে সিঙ্গাপুরে ওর খালামনির কাছে চলে আসতে হয়। খালামনি বা খালু যে ওকে বেশি সময় দিতে পারে তাও না। তবে ওর সিঙ্গাপুরে আসার আসল কারণটা ও ভালই জানে, বাবা-মার সাথে ফোনে কথা বলার সময় সবসময়ই তা শুনতে হয়।

এসব কথা ভাবতে ভাবতে আহনাফ সু-র ফিতা বাধে। এমন সময় কলিং বেল বেজে ওঠে। ‘এসময় আবার কে? খালামনি বা খালু কি ভুল করে কিছু ফেলে গিয়েছে?’ দরজার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে –‘হু ইজ দেয়ার...?’

- আমি।

দরজার বাইরে থেকে একটা মেয়ে কন্ঠ শোনা গেল। ‘বাংলায় কথা বলছে, তারমানে খালামনির পরিচিত কেউ হবে’, আহনাফ ভাবে।

- বাসায় তো কেউ নেই এখন।

- ও আচ্ছা। আমরা তোমাদের পাশের ফ্ল্যাটেই থাকি। আজই উঠেছি। দরজাটা কি একটু খোলা যাবে?

- হ্যা।

আহনাফ দরজা খুলে অবাক হয়ে গেল। একজন মহিলা দাঁড়িয়ে আছেন, অবিকল ওর মায়ের মত চেহারা। আহনাফ ভাবল, ওর মা মনে হয় ওকে দেখতে এসেছে। ও ‘মা...’ বলে ডাকতে যাবে, তখনি মহিলাটি বলে উঠে,

- কি নাম তোমার বাবু?

আহনাফ নিমেষেই ওর ভুল বুঝতে পারে। ও যা ভাবছে তা কল্পনা ছাড়া আর কিছুই না। এতদূরে ওর মা কেন আসতে যাবে! নিজেকে সামলে নিয়ে বলে, আমার নাম আহনাফ হোসেন।

- তোমার আব্বু-আম্মু বাসায় নেই?

- জ্বী, তাঁরা এখানে থাকেন না।

- কোথায় থাকেন?

- বাংলাদেশে।

- ও...। তুমি কার সাথে থাক এখানে?

- খলামনি আর খালুর সাথে।

- তারা কেউ নেই এখন?

- না, বাইরে গিয়েছেন, রাতে ফিরবেন।

- আমি তাহলে এখন আসি। রাতেই তাদের সাথে কথা বলব। আমরা বাংলাদেশ থেকেই এসেছি। শুনলাম তোমরাও বাংলাদেশী, তাই দেখা করতে এলাম। আমরা তোমাদের পাশের ফ্ল্যাটেই উঠেছি। তোমার যখনই ইচ্ছা হবে আমাদের বাসায় চলে আসবে, ঠিক আছে?

- আচ্ছা।

মহিলা চলে গেলে আহনাফ দরজা বন্ধ করে দিল। “ ইস্, মাত্র পাঁচ মিনিটের মত সময় আছে।” কোনমতে জুতার ফিতা বেধে, ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। দরজা বাইরে থেকে লক করে পেছন ফিরেই দেখে তার বয়সী একটা মেয়ে সিড়ির কাছে দাঁড়িয়ে আছে। ও কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই মেয়েটি তার দিকে এগিয়ে এসে বলল, তুমি কি আহনাফ?

- হ্যা, তুমি?

- আমি নওরীন। তোমাদের পাশের ফ্ল্যাটে এসেছি। আম্মু আমাকে তোমার কথা বলেছে।

- ও হ্যা... আন্টির সাথে আমার একটু আগেই দেখা হয়েছে।

- আমাদের বাসায় আসবে?

- আসব। কিন্তু আমি তো এখন স্কুলে যাচ্ছি।

- তাহলে পরে দেখা হবে।

আহনাফ আর কোন কথা না বলে নিচে নেমে গেল। নিচে এসে দেখল বাস দাড়িয়ে আছে। আর একটু দেরি হলে বাস মিসই হয়ে যেত। ও তাড়াতাড়ি বাসে উঠে বসে পড়ল। ওর স্কুলটা অবশ্য বেশি দূরে না, বাসে যেতে মাত্র মিনিট দশেকের মত লাগে। বাসে যেতে যেতে ও অনেক কিছু ভাবতে থাকে।

প্রায় দু’বছর হল আহনাফ সিঙ্গাপুরে ওর খালামনির কাছে আছে। খালামনি, খালু আর ও। তিনতলার ফ্ল্যাটে তিনজন মাত্র মানুষ। খালামনি একটা শপিং মলে চাকরি করেন আর খালু একটা ফাইভস্টার হোটেলের ম্যানেজার। দু’জনকেই অনেক সকালে বের হয়ে যেতে হয়, ফিরতেও হয় রাত করে। খালু হয়ত কোন কোন রাতে ফেরেনও না, হোটেলেই থেকে যান। দুপুরে খালুর হোটেল থেকে একজন লোক এসে আহনাফের জন্য খাবার দিয়ে যায়। সারাটা দিন আহনাফ একাই থাকে। খালামনির কোন পিচ্চি বাবুও নেই যে তার সাথে খেলা করা যায়। স্কুল থেকে ফিরে ও এঘর-ওঘর অস্থিরভাবে ঘুরে বেড়ায়। কখনো টিভি দেখে, কখনো গেমস খেলে। যখন কিছুই ভালো লাগে না, তখন এসে খোলা ব্যালকনিটাতে দাড়ায়। তাকিয়ে থাকে বাইরের মানুষগুলোর দিকে। ওর খুব ইচ্ছে হয় বাইরের জগতটাকে দেখতে। “বাইরের জগতটা কি অনেক সুন্দর?!”- ওর খুব জানতে ইচ্ছা করে। সকালে স্কুলে যায় গাড়িতে, স্কুল শেষে বাসায়ও ফেরে গাড়িতে। বাসার বাইরে পা দেয়া ওর জন্য বারন। ও এখনো ছোট, বাইরে বের হলে যদি হারিয়ে যায়, তাই। এ শহরের সবকিছু ওর অচেনা, এমনকি বাসার আশপাশও ঠিকমত চেনে না। দুই বছর হতে চলেছে, তারপরও সবকিছু নতুনের মতই। তবে খালামনি মাঝে মাঝে ওকে নিয়ে শপিংমলে যান। সেদিনটা ওর খুব মজায় কাটে। কিন্তু সবথেকে ভালো লাগে যখন ওর বাবা-মার সাথে কথা হয়। মা দু’একদিন পরপরই ফোন করে। অবশ্য ফোনে তাদের একটাই কথা, “আব্বু, তোমার পড়াশুনার খবর কি? তুমি ভালো করে পড়াশুনা কর, তোমাকে অনেক বড় হতে হবে......।” আহনাফ যতই বলে যে ও বাবা-মার কাছে ফিরে যেতে চায়, তাঁরা ততই নারাজ। “দেশে ভালো কোন স্কুল নেই, ভালো বলতে যেসব স্কুল আছে সেগুলোতেও এখন লেখাপড়ার পরিবেশ নেই...”,এসব বলে আহনাফকে বোঝাতে থাকে। কিন্তু এতটুকু একটা ছেলের মনের অবস্থা কেউ বুঝতে চায় না। খালামনি, খালু রাতে ফিরে ডিনার সেরে কিছুক্ষন টিভি দেখেন। তারপর যে যার মত ঘুমাতে চলে যান। আহনাফের চোখে ঘুম আসে না। অনেক রাত পর্যন্ত খোলা ব্যালকনিতে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে।

আহনাফ যে লেখাপড়ায় খুব একটা ভালো তাও না। স্কুলে একা একা বসে থাকে। ব্রেক এর সময় অন্য বাচ্চারা ছোটাছুটি করে বেড়ায় আর আহনাফ ক্যান্টিনের কোনার দিকের একটা টেবিলে একা একা বসে থাকে। এই দুই বছরেও ওর একটা ভালো বন্ধু হয় নি। “আচ্ছা, আমাদের পাশের ফ্ল্যাটে বাংলাদেশ থেকে যে মেয়েটি এসেছে, ও কি আমার বন্ধু হবে?” আহনাফ ভাবে, “স্কুল থেকে ফিরে ওদের বাসায় যাব।”



পরবর্তী অংশটুকু পড়ুন.।.আহনাফের গল্প; পর্ব-২

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.