নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিকোলাস বিপ্‌স

নিকোলাস বিপ্‌স › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার লিখা প্রথম ছোটগল্প

১৮ ই মে, ২০১৩ রাত ১২:২৩

"বলতেই হলো ভালবাসি"



তাদের মধ্যে ভালোবাসাবাসি খুব বেশি না। বরং বলা চলে এক্যুইরিয়ামে সাজিয়ে রাখা সুন্দর মাছের মত যেখানে সাগরের স্বাধীনতা নেই তবে মাছেদের সাঁতরানোর স্বাদ আছে। নাম তাদের আশিক ও সোমা । তাদের দু'জনের মধ্যে প্রেম-ট্রেমের মতো ব্যাপার থাকলেও তা আর বর্তমানে কোন কাঠামোর মধ্যে নেই। এক সময়কার প্রেম-ভালোবাসা পরস্পরের দীর্ঘ অনুপস্থিতির কারণে ঠুনকো হতে হতে আজ প্রায় নিঃশেষ। যেটুকু বাকি আছে তা ঐ এক্যুইরিয়ামের মাছের মত, স্বাধীনতা নেই কারো।



আশিক সোমা কে ছেড়ে এসেছে বছর চারেক হলো। এর মধ্যে একমাত্র ফোনেই যত কথা। খুব বেশি দেখা সাক্ষাত হয়নি ওদের। ফোনে কথা বললেও তা একেবারে মাখামাখি পর্যায়ের না। ঐ একদিন কিছুক্ষণ কথা হলো তো আর পাঁচদিনের খবর নেই। যতক্ষণ কথা হয় তাতেও কে কাকে কতটুকু ভালোবেসেছে, বিশ্বাস করেছে, কে প্রতারণা করেছে কী করেনি তারই হিসাব নিকাশ চলে। সোমা র কেবল একই জিজ্ঞাসা----





-তুমি কী আমাকে ভালবেসেছিলে?



এই প্রশ্নটা পেলে আশিক যেনো সবসময় চুপ হয়ে যায়। ইচ্ছে করেই এড়িয়ে চলে--



-কতবার বলেছি এই প্রশ্নটা আমাকে আর করবেনা।

-কেন? তুমি একবার বলে দিলেই পার।

-না, আমি কখনোও এ কথাটা তোমাকে আর বলবনা।

-কেন বলবেনা?

-কেন বলবনা তা জানিনা।



জানিনা বললেও আশিক বেশ ভালোভাবেই জানে যে সে তাকে ভালোবেসেছিল। কিন্তু এখন সে ভালোবাসার কোন যুক্তিগতা নেই। তাই সে ইচ্ছে করেই এড়িয়ে চলে প্রসংগটা। আশিকের কাছে এর কোন মানে না থাকতে পারে কিন্তু সোমা র জন্য এই সত্যিটা জানা প্রয়োজন। কারণ বর্তমানে সে যে জীবন ধারণ করছে তাতে এতটুকু সত্য ভালোবাসার অনেক মূল্য তার কাছে।





সোমা র কথা বলি। বাবা মা ছাড়া সংসারে ভাই ভাবীর আশ্রয়ে বড় হওয়া সোমা জীবনে খুব কম সময়ই জ়ীবন মানে সুন্দর তা উপলব্ধি করতে পেরেছে। তার কাছে জীবন মানেই অসহায়ত্ত্ব। ধুকে ধুকে চারপাশের মানুষের কাছ থাকে যন্ত্রণা সয়েছে, মুক্তি পায়নি কখনও। আশিক ছিলো তার একমাত্র মুক্তির পথ। কিন্তু অসহায় নারী, তাকেই কোনভাবে ধরে রাখতে পারেনি। শেষমেষ আশিক যখন তাকে ছেড়ে নিজের কর্তব্যের পথ বেছে নিয়ে দূরদূরান্তে চলে গেলো, ভালোবাসার কী মানেই বা থাকলো তার কাছে। শুধু এতটুকু জানার বাকী- সত্য ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্যতা কী তার নেই/কেউ কী তাকে সত্যিকারে ভালোবাসেনি?





মনে মনে জেদ চাপে সোমা র। সে ভালোভাবেই জানে আশিক তাকে আগেও ভালোবেসেছে, এখনও ভালোবাসে। তবে কেন সে এ সত্যটা স্বীকার করতে চায়না?



-তুমি শুধু আমাকে এতটুকু বলো আমাকে তুমি ভালোবাস। আমি আর কিছু জানতে চাই না।

-আমি বুঝি না, এতোদিন পরেও কেন তুমি এ কথাটা জানতে চাও। তোমার আর আমার মধ্যে এখন আর কি প্রেম-ভালোবাসার মত কোন ব্যাপার আছে?

-না।

-তাহলে?

-তাহলে আর কী। শুধু জানতে ইচ্ছে করে।





আশিকের সামনে অনেক বড় একটা ভবিষ্যত। জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে এই তাগিদে কখনো কোন বন্ধনে জড়ায়নি নিজেকে যেনো কোন পিছুটান না থাকে। ক্ষণিকের মোহে ভালোবেসেছিল সোমা কে। অসহায় যে মেয়েটাকে পেয়েছিলো পাশে তাতে তাদের পাশাপাশি হাটা হয়নি বেশিদিন। সে জানলো সোমা কে নিয়ে সে সংসার গড়তে পারবে না। আপাতত সে সময়ের জন্য না। কিছু অজুহাতে সে বেরিয়ে এলো। কিন্তু সময় বড় কঠিন। সময়ের স্রোতে গা ভাসিয়ে সে আর সোমা কে পেলো না। এজন্য তার একটা দুঃখ থেকে গেলো বটে। তবে সোমা কে সে যে কঠিন অবস্থার মধ্যে ফেলে এসেছিলো তার চেয়ে আরও বেশি কঠিন সময় সোমা কে এখন পার করতে হয়। এজন্য মনে মনে আশিক নিজেকেও কিছুটা দূষারোপ করে থাকে।



আর এজন্যেই এতদিনেও সে সোমা র সাথে সামান্য যোগাযোগ বজায় রাখে। সে চায় সোমা প্রতিষ্ঠিত হোক, খারাপ সময়গুলো থেকে বেরিয়ে আসুক। তবে ‘ভালোবাসি’ এ কথাটা আর নতুন করে বলতে চায় না। 'ভালোবাসি' এ কথাটা বলে সে চায় না চার বছর পিছনে ফিরে যেতে। আশিক জানে সোমা র কাছে 'ভালোবাসি' এর আলাদা অর্থ আছে যা তাকে সবকিছু থেকে ছিন্ন করে আশিকের কাছে নিয়ে আসবে। আশিক তা কিছুতেই চায়না।





-আশিক ?

-হুম

-চলোনা আমরা কোথাও দেখা করি।

-দেখা করে কী হবে?

-কী আর হবে! তোমাকে জড়িয়ে ধরবো। আর কী !



প্রায়ই এমন আলাপচারিতা তাদের দু'জনের মধ্যে হয়। তবে সে ধরণটা আশিক আর বেশিদূর এগুতে দেয় না। নানাভাবে অন্যসব প্রসঙ্গে চলে যায়। সে ভাবে ব্যাপারটা অনৈতিক। তার নীতিবিরূদ্ধ। তবে সোমা র কাছে এসবের কোন ভাবনা নেই। সে এইসব রীতিনীতি অনেক পেছনে ফেলে এসেছে। তার চাই ভালোবাসা। সত্যিকারের ভালোবাসা। যা অন্ত্যত তার অসহায়ত্বকে কিছুটা হলেও ঘুচাবে। সে জানবে তাকে কেউ ভালবেসেছে।





এরকম অনেক আলাপচারিতার পর আশিকের সাথে দেখা করার অনুমতি মেলে সোমা র কোন এক ভ্যালেন্টাইন ডে'তে। আশিক কে এক নির্জন বাড়িতে নিয়ে যায় সোমা ।





-কত দিন পর আমরা আবার এত কাছে, তাইনা?

-হুম, কিন্তু তুমি আমাকে এখানে নিয়ে এলে কেনো?

-নিয়ে এলাম, এমনিতেই।

-এটা কার বাড়ি?

-এটা আরেকজনের বাড়ি। আমি এই রুমটা ভাড়া নিয়েছি। এখানে আমি একাই থাকি।

-একা থাকো মানে? তোমার হাসব্যান্ড কোথায় থাকে?

-হাসব্যান্ডের সাথে থাকি না। আমাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে।

-ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে, মানে কী? তুমিতো আমাকে এ কথা আগে কখনও বলনি !

-বলিনি...। বলার মত কিছু না তাই।

-এটা কী বলার মত কোন ঘটনা না!

- বললে কী হতো? তুমি কী আমার জন্য পারতে কিছু করতে?





আশিক চুপ হয়ে গেলো। তার চোখে বিস্ময়। চেয়ে আছে অন্য দিকে। কিছুটা নীরবতার পর সোমা মুখ খুলল-



-তোমাকে তো বলেছিলাম চার বছর আগেই। কী, পেরেছিলে কিছু করতে?



আশিক অন্যদিকে চেয়ে আছে। এমন একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি হবে তা সে ভাবেনি। ভাবতে পারলে হয়তো এবারও পালাতো। উদ্ভট পরিস্থিতিটা সোমা ই সামলে নিল কিছুক্ষণ পর। বলল-





-আজ একটা শেষ অনুরোধ করব তোমাকে। রাখবে?

-কী?

-আজ রাতটা তুমি আমার সাথে থাকবে।

-এটা কি করে সম্ভব!

-প্লীজ।





আশিক কিংকর্তব্যবিমূড়। কী করবে বুজতে পারছে না। তবে এখান থেকে ছুটে যাবার চেষ্টা সে আর করলো না। কি হবে কি হবে না এই বিচার আচারে সে সারা জীবন পার করেছে। কোন ঘটনাই নিছক নয় এই বিশ্বাস তার কাছে সবসময়। তবে এখন সে দেখল মানুষের জীবনে নিছক ঘটনা ঘটে যা মানুষ নিজে তৈরি করতে পারে না। আবার জীবনে এর কী প্রভাব পরবে তাও সে আন্দাজ করতে পারে না। আর পারলেও সেটা অনেকসময় ভুল হয়ে যায়। তাই এবার আশিক সেখান থেকে পালালো না।





রাত হলো। আশিকের সামনে সোমা বসে আছে, বিবস্ত্র। আশিক কখনও এমন উলংগ নারী চোখের সামনে দেখেনি।



সোমা র চোখে আজ অন্য রকম দৃষ্টি। তার শরীরে আজ অন্য রকম ঢেউ। তার মুখের ভাষা আজ অন্যরকম। কিসের যেন এক অহংকার, এমন এক রাত সে পেয়েছে যার প্রতীক্ষা তার বহুদিনের।



সোমা র উস্কো চুল, তীক্ষ্ণ চোখ, লাল ঠোঁট, বিবস্ত্র ধবধবে শরীর দেখে আশিক বিমোহীত। এর যে কী আকর্ষণ শক্তি আশিক টের পেলো। আর আটকাতে পারলো না নিজেকে। জড়িয়ে ধরতে গেলো তাকে। দূরে সরে গেলো সোমা । বিস্ময়ে তাকালো আশিক । সোমা বলল-





-তুমি কী আমাকে ছুঁতে চাও?

-হ্যাঁ

-আমাকে kiss করতে চাও?

-হ্যাঁ

-আমার এই শরীরের ঊষ্ণ স্পর্শ পেতে চাও?

-হ্যাঁ



-কেন?





থমকে গেলো আশিক । এই 'কেন?' এর উত্তর সে কি দিবে। এমন এক মুহুর্তে সে উপনীত যেখানে তার কামনা শক্তি প্রবল কিন্তু চিন্তা শক্তি দুর্বল। সে কিছু বলতে পারলো না। সোমা সহাস্যে বলল-





-আমি জানি এর উত্তরটা কী?

-কী

-তুমি বলো- "আমি তোমাকে ভালোবাসি"

-কিন্তু আমিতো তোমাকে ভালোবাসি না।

-ভালোবাসনা, তো এখানে এসেছ কেন?

-সোমা , আমাকে নিয়ে খেলোনা।

-আমি কিছুতেই খেলছি না। তুমি শুধু বলো তুমি আমাকে ভালোবাস...

-আমাকে এ কোন পরীক্ষায় ফেললে?

-জীবনে অনেক কঠোর পরীক্ষা আমি দিয়েছি। তুমি শুধু আমাকে এই ছোট্ট একটা পরীক্ষা দাও। আমি

অনেক শান্তি পাব। তোমার কাছে আমি আর কিছুই চাই না। তোমার বউ হতে চাই না,

তোমার ভবিষ্যতের বাঁধা হতে চাই না। তোমার কাছে একটু শান্তি চাই। আজ রাতেটা শুধু ।





আশিকের মোহ আশিকের বিবেককে আটকাতে পারলো না।কোন পুরুষ কি তা পারে। সে বলতে থাকলো.........



-আমি তোমাকে ভালোবাসি

আমি তোমাকে ভালোবাসি

আমি তোমাকে ভালোবাসি









মন্তব্য ৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই মে, ২০১৩ রাত ১২:৩৯

মাক্স বলেছেন: ভালো লিখেছেন!

১৮ ই মে, ২০১৩ রাত ১২:৪৩

নিকোলাস বিপ্‌স বলেছেন: ধন্যবাদ মাক্স ।

২| ১৮ ই মে, ২০১৩ রাত ২:০২

গ্রীনলাভার বলেছেন: আহেম... বড় গল্প। তাই আমি প্রথম ১০ লাইন আর শেষের ১০ লাইন পড়ছি.... :D

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.