![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যারা প্রেম করবেন, যারা প্রেম করছেন এবং যারা বিবাহিত - এ গল্পটি তাদের জন্য নিবেদিত ।
(১৯৯৪-২০০২ পর্যন্ত যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী তাদের অনেকেই এই গল্পটার শুরুটা জানেন, শেষটা জানেন না।আমি জানি! গল্পটার প্রতিটি ঘটনা সত্যি)
" নিশার জন্য শুভ কামনা। "
চারপাশে হাজারো মানুষের ভীড়ে কয়েকজন মানুষ থাকে আলোচনার শীর্ষে, আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে। কিছু মানুষ কেমন করে যেন অনেকের মন জয় করে নেয়। স্কুলে, কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয়ে, কর্মজীবনে সর্বত্রই এরা থাকে।
এসব মন জয় করা মানুষদেরই একজন বিপ্লব।বয়স যখন ১৯, ভর্তি হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।সময়টা ১৯৯৪। ক্লাশ শুরুর দিন থেকেই সহপাঠীদের সাথে তার হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠে। তবে মেয়েদের সাথে যেন একটু বেশি।এই একটু বেশি ধীরে ধীরে বাড়তেই থাকে।
বিপ্লব দেখতে কেমন? গল্পটি লেখার আগে বিপ্লবের দুই বান্ধবির সাথে আমার দীর্ঘ সময় কথা বলার সুযোগ হয়েছে। একজন বলেছেন, "ওকে দেখলেই তো ওর সাথে বিছানায় যেতে ইচ্ছে হয়! "
বিপদে পরেছে বন্ধুদের কেউ? বিপ্লব তার সাহায্যের হাত বিপদ থেকে উদ্ধার না পাওয়া পর্যন্ত গুটিয়ে নেয় নি কখনো।
ভালো নোট লাগবে, নাম্বার পাওয়ার জন্য স্যারকে বিশেষ তদবির করতে হবে, টাকা লাগবে - ধার করে সে এনে দিবে, বন্ধুদের জন্য কী না করে! এভাবেই বিপ্লব প্রবেশ করে যায় মানুষের মনের ঘরে।
নিজের ডিপার্টমেন্টই নয়, তার বন্ধুর সংখ্যা বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টেই বাড়তে লাগলো। স্যারদের কাছেও তুমুল প্রিয়। বন্ধুদের বিপদে আপদে দৌড়ে যাওয়া, বন্ধুদেরকে সময় দেয়া - এসবে পড়াশুনার অনেক ক্ষতি হওয়ার কথা। স্যারদের সাথে তার বিশেষ সম্পর্ক তার রেজাল্টকে রাখতো ঝামেলামুক্ত।
বিপ্লবের বিশ্বস্ততা নিয়ে প্রশ্নের উদ্রেক হওয়াই অবান্তর। অনেক তার মেয়েবন্ধু। কিন্তু মজার বিষয় হলো এই মেয়ে বন্ধুরা দারুণ সুন্দরী আর নজরকাড়া তাদের ফিগার। ক্যাম্পাসের সেরা সুন্দরী আর ফিগারিস্টদের নিয়ে বিপ্লব যখন আড্ডা দিতো টিএসসিতে, হাকিম চত্ত্বরে, লাইব্রেরির সামনে, তখন তা যে কারো বুকেই ঈর্ষার আগুন ধরিয়ে দিতো। একটা সময়ে ক্যাম্পাসের আড্ডাটা কমিয়ে দিয়ে আড্ডার পরিধী সে বাড়িয়ে নেয় আরো দূরে।
এভাবেই কেটে যেতে থাকে বিপ্লবের বিশ্ববিদ্যালয়ের আনন্দময় জীবন। তার সুন্দরী বান্ধবিদের একে একে বিয়ে হতে থাকে কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হলো সংখ্যাটা কখনো কমে নি! নিয়মিত ব্যায়ামে গড়া সুঠামদেহী বিপ্লবের হৈ হুল্লোরের জীবন দারুণ ভাবেই কাটছিলো। কিন্তু ছেলেটি কারো প্রেমে পড়ে নি যদিও তার প্রেমে অনেকেই পড়েছে।
২০০১ সালে একই ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হয়, নিশা। উচ্চতা ৫ ফিট ৫ ইঞ্চি! দারুণ সুন্দরী।গত সাত বছরে বিপ্লব যত সুন্দরী দেখেছে, নিশার কাছে তাদের যেন হার মানতেই হবে। ক্লাসের শুরুতে ছাত্রছাত্রীদের অনেক ধরনের সাহায্যের দরকার হয়। বিপ্লব তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতেই হাত বাড়িয়ে দেয় নিশার প্রতি।
ব্যস, শুরু একসাথে পথচলা। ১৮ বছরের নিশা, ২৬ বছরের বিপ্লবের প্রতিদিনের আচরণে শুধু বিস্মিত হতেই থাকে। বিস্ময় থেকে বিশ্বাস আর বিশ্বাস থেকে ভালবাসায় মন গড়াতে থেকে নিশার।
এদিকে বিপ্লবের তখন ক্যাম্পাস ছাড়ার সময় হয়ে যায়। দুর্দান্ত নেটওয়ার্ক যার, সে তো সফল হবেই। অনেক সিনিয়র ভাইদের তুলনায় সে দ্বিগুণ বেতনেই দারুণ এক অফার পেল। ব্যস্ততা বাড়তে থাকে।
আর নিশা? বিকাল হলেই অপেক্ষা, অপেক্ষা, আর অপেক্ষা, কখন আসবে অফিস শেষ করে! নিশা প্রেমে ঠিক পাগোল হয়ে যায় - এত সুদর্শন, এত ভালো, এত অসাধারণ একজন মানুষকে সে পাবে জীবনসাথী হিসাবে, এ যেন কল্পনাকেও হার মানায়।
নিশা মহা আনন্দেই তার ক্যাম্পাস জীবনে এগিয়ে যেতে থাকে।
পড়াশুনা, বিপ্লবের সাথে প্রেম আর পাঁচ ওয়াক্ত নামায নিয়মিত আদায় - এভাবেই নিজের আনন্দভূবনে নিত্য বিচরণ করতে থাকে।
একবার, দু'বার যে ঝগড়া হয় নি, তা নয়। নিশা বেইলি রোডে মাঝে মাঝেই যায় কেনাকাটা করতে। দু' বার সে দেখেছে বিপ্লবকে অন্য মেয়ের সাথে। কিছুটা ঘনিষ্ঠভাবে! এ নিয়ে নিশা কথা বললেও বিপ্লব অনেকটা বিয়ের রাতে বিড়াল মারার মতই এ বিষয়ে নিশার কণ্ঠ এভাবেই থামিয়ে দেয়, " দেখো ভালোবাসার প্রাণ হচ্ছে বিশ্বাস। সন্দেহ ক্যান্সারের মত, ভালোবাসার সর্বনাশ করে। আর তুমি যদি আমাকে বিশ্বাস না করতে পারো, তবে তোমার স্বাধীনতা তো আছে! তুমি আমাকে বিদায় জানাতে পারো। "
ব্যস, নিশা আর কোনদিনই এ বিষয়ে কথা বলে নি। বিপ্লবের ব্যস্ততা বাড়ুক বা যে কোন কারণেই হোক, তাদের দেখা করাটা কমতে থাকে, বাড়তে থাকে ফোনে আলাপ। সেখানেও একটু ঝামেলা হতো। নিশা চাইতো আরো বেশি বেশি কথা বলতে, কিন্তু বিপ্লবের ফোন প্রায়শই থাকে বিজি।
তবুও সহজ বিশ্বাসী, বিশ্ববিদ্যালয়ের আগে যে মেয়েটি কখনো কো - অ্যাডুকেশনে পড়ে নি, বিপ্লবের প্রতি বিশ্বাসে ছিলো অটল। নিশাদের পরিবার, বিপ্লবদের পরিবার থেকে একটু বেশি উঁচু ক্লাসের হলেও সুদর্শন বিপ্লবের দারুণ সম্ভাবনাময় ক্যারিয়ারের কারণে শ্রেণিবিভেদ তাদের বিয়েতে কোন বাঁধা হয়ে দাড়ায়নি।
বিয়েটা বেশ ভালোভাবেই হয়ে যায়। বিয়েতে আসা বিপ্লবের পুরোনো বান্ধবিদের দু এক জনের ম্লান মুখ নিশার নজরেতো আর আসার কথা নয়।
ঝামেলাটা শুরু হয় বিয়ের পরে। নিশা একটু একটু অবাক হতে থাকে, সংসারে যথেষ্ট সময় বিপ্লব দিচ্ছে না এবং সব সময় কিছুটা যেন ক্লান্ত থাকে। তার মত সুঠাম পুরুষের কাছে একজন রমণী যতটা আশা করে, প্রত্যাশার তুলনায় তা অনেক কম। নিশা ভেবে নেয়, প্রাকটিস মেইকস এ ম্যান পারফেক্ট! বিয়ের শুরুতে এমন হতেই পারে!
এর মধ্যেই স্বামীধন মনোযোগী হয় বাবা হওয়ার জন্য। নিশা এবার খুশি হয়, আল্লাহর ইচ্ছায় সে সংসারের দিকে মনোযোগী হচ্ছে।
নিশা সন্তানসম্ভবা। একদিন বিকালে ফোন আসে নিশার বান্ধবি কনার। "বিপ্লব ভাইয়ের সাথে তন্দ্রা আপুকে দেখলাম। তন্দ্রা আপুকে যা সুন্দর লাগছে। দেখে বুঝার উপায় নেই, আপু দুই বাচ্চার মা। কিন্তু দুজনের হাবভাবেতো মনে হচ্ছে তারাই হাজব্যান্ড ওয়াইফ! " তন্দ্রা ফোনটি করেছিলো থাইল্যান্ড থেকে। অফিসিয়াল ট্যুরে বিপ্লব ছিলো তখন ব্যাংকক এ। কিন্তু তন্দ্রা আপু সেখানে কী করে!
নিশা মনে কখনো খটকা রাখে না। সরাসরি ফোন। "তুমি নাকি তন্দ্রা আপুর সাথে পাততাইয়া ঘুরে বেড়াচ্ছো? বিপ্লবের মন অত্যন্ত ট্রেইন্ড! মুহূর্তের মধ্যে সামলে নিয়ে জানায়, সেটা একটা দারুণ ঘটনা। তন্দ্রাও একই কনফারেন্সে এসেছে! অনেক দিন পরে দেখা, তা আবার দেশে না! "
ডেলিভারির সময় ঘনিয়ে আসে। নিশা এখন পুত্র সন্তানের মা।
মাস ছয়েক পরে আবারো কনার ফোন। "শুনেছিস নিশা, তন্দ্রা আপুর নাকি ডিভোর্স হয়ে গেছে! বিপ্লব ভাইয়ের বান্ধবীগুলার কি মড়ক লেগেছে! তিন তিনটা বান্ধবির ডিভোর্স হলো, কী রকম দেখ, কী এক বিশ্রী অবস্থা! "
নিশা এবার যেন নড়েচড়ে বসে। বিশ্বাসের বাহনটাকে একটু রি হাউলিং যেন করাই লাগবে।
নিশার কাজিন রাগিব, বুয়েট থেকে পাশ করে জব করছে গ্রামীণে। ভাইকে বাসায় জরুরি তলব। রাগিবও আকাশ থেকে পড়ছে শুনে।
শুরু হলো ফোন ট্রাকিং। বিপ্লব চারটি সিম ব্যবহার করে। সেই ফোনের কললিস্ট রিপোর্ট দেখে নিশার মাথায় সত্যিই আকাশ ভেঙে পড়লো।
আজন্ম লালিত বিশ্বাস, " চরিত্রের চেয়ে বড় কিছু নাই।" সেই নিশা কী করে সংসার করবে এক ভয়াবহ চরিত্রহীনের সাথে। ভাবনা শুধু একটাই কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে - যদি বাবুটা হওয়ার আগে জানতে পারতাম!
জুন ২০০৯ - মার্চ ২০১৪। প্রায় পাঁচ বছর লেগে যায় নিশার একটা ডিভোর্স লেটার পাঠাতে।
দীর্ঘ ১৫ বছর লুকিয়ে রাখা বিপ্লবের আসল চরিত্র একে একে জানছে সবাই। যে অনেকের ঘর ভেঙেছে, তার ঘর কীভাবে অক্ষত থাকে!
নিশার জন্য শুভ কামনা থাকলো।
বিঃদ্রঃ নিশার কাজিন, রাগিব আমার বন্ধু। সেই সুবাদে এর আদ্যপান্ত জানার সুযোগ হয়, আর বিপ্লবের দুই বান্ধবি অনিচ্ছা সত্ত্বেও সময় দিয়েছিলো আমাকে।
২| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:৫৮
নিঝুমবাবুই বলেছেন: অপেক্ষাই হয়তো এর উত্তর দিবে। আপনাকে ধন্যবাদ, গুছানো মন্তব্যের জন্য।
৩| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:২৭
অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: +++++++++++
চরিত্র চেহারার চেয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ । সংসার জীবনে । যৌবন শেষ হয়ে যাওয়া বার্ধক্যে ।
ভালো থাকুন ।
৪| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:৩২
সকাল হাসান বলেছেন: গল্পটা কেমন যেন
©somewhere in net ltd.
১|
০৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:০৫
ইমতিয়াজ ১৩ বলেছেন: শুভ কামনা করে কি হবে ? বিপ্লবের চরিত্র কি ঠিক হবে? বিপ্লব ফিরে আসুক নিশার কাছে নিশার মতো করেই।