![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একবার ভাবুন তো , শত্রুপক্ষের মেশিনগানের মুহুর্মুহু আক্রমণ চলছে আপনার দিকেই – আপনার বয়স মাত্র ১৮ আর আপনার দায়িত্ব সেই মেশিনগানের আক্রমণ থামানো! পারবেন? সাহস করে গেলেন, কী হবে? গুলি খেয়ে আপনি মরে যাবেন কিন্তু মুহুর্মুহু আক্রমণ কীভাবে থামাবেন?
তারমানে শুধু গুলি খেয়ে মরলেই চলবে না, আপনাকে (১) মেশিনগানের কাছে যেতে হবে , (২) গ্রেনেড মেরে তাতে আঘাত হানতে হবে, এবং (৩) মেশিনগানটি যারা চালাচ্ছে তাদেরও থামাতে হবে!!
চোখ বন্ধ করে একবার ভাবুনতো! এই তিনটি কাজই করেছিলেন বীরশ্রেষ্ঠদের মধ্যে কনিষ্ঠতম, বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান (২ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৩ – ২৮ অক্টোবর ১৯৭১)।
২ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৩ তে জন্মগ্রহণ করেন আর ২ ফেব্রুয়ারি ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। মাত্র এক মাস পরেই বাজে যুদ্ধের দামামা! ২৫ মার্চ রাতে তার চোখের সামনেই তার কর্মস্থলে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী অসহায় ২৫০০ নতুন রিক্রুট আর বাঙালি সৈনিকদের হত্যা করে। সেখান থেকে পালিয়ে চলে আসেন নিজ গ্রাম ঝিনাইদহ জেলার কালিগঞ্জের খদ্দখালিশপুর গ্রামে।
কিন্তু যুদ্ধের ডাক তাঁকে আর ঘরে থাকতে দেয়নি।। মায়ের অনুমতি নিয়ে যোগ দেন ১ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সাথে (সৈনিক নাম্বার ৩৯৪৩০১৪)। তার দায়িত্ব রান্নার কাজ হলেও মনে তার সম্মুখ যুদ্ধের তীব্র বাসনা। তার এই অদম্য আগ্রহে শেষ পর্যন্ত তিনি সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রহণের সুযোগ পান।
১৯৭১ এর অক্টোবরের শেষ দিকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পরাজয় আস্তে আস্তে অনেকটা নিশ্চিত হয়ে আসছিলো, আর সীমান্তের চৌকিগুলো ক্রমশই মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে আসতে থাকে। কিন্তু তখনো বাকি সিলেট জেলার শ্রীমঙ্গল থানার ধলই চা বাগানের পূর্বপ্রান্তে অবস্থিত শক্তিশালী হানাদার বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত ফাঁড়ি!
সময়কালটা ২৮ অক্টোবর ১৯৭১! ১ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ফাঁড়িটি দখল করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু ফাঁড়ির মেশিন গান পোস্ট থেকে বিরামহীন আক্রমণে সুবিধা করা দুরূহ। এগুতে হলে মেশিনগান থামাতে হবে। কিন্তু কীভাবে তা সম্ভব ? একটা অসম্ভব উপায় হলো গ্রেনেড মেরে গানপোস্ট ক্ষতিগ্রস্ত করা! ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট সেটিকেই সম্ভব মনে করলো – সিদ্ধান্ত নিলো গ্রেনেড মেরে এই পোস্ট ক্ষতিগ্রস্ত করতে হবে। কিন্তু গ্রেনেড হামলা করবে কে, ওই গান পোস্টের কাছেই কে যাবে মৃত্যু যেখানে নিশ্চিত?
মৃত্যু নিশ্চিত জেনে দায়িত্বটি নেন ১৮ বছরের হামিদুর রহমান, কর্মজীবনে যার বয়স তখন ৯ মাসও হয়নি। গ্রেনেড নিয়ে পাহাড়ি খালের মধ্য দিয়ে বুকে হেঁটে যতটা কাছ থেকে আক্রমণ করলে তা মেশিনগান পোস্টকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, হামিদুর রহমান পৌছে যান সেই দূরত্বে। গ্রেনেড ছুড়তে থাকেন হামিদুর রহমান। দুটো গ্রেনেড আঘাত হানতে সক্ষম হয় মেশিনগান পোস্টের ঠিক নিশানায়। তবে মেশিনগানের গুলি হামিদুর রহমান এড়াতে পারেননি, কারণ সেটা ছিলো অনেকটাই অসম্ভব।
ঘটনা এখানেই থেমে যেতে পারতো। হামিদুর রহমান কিন্তু সেখানেই থেমে যান নি।
গুলিবিদ্ধ হামিদুর রহমান সে অবস্থায় পৌছে যান মেশিনগান পোস্টে। হানাদান বাহিনীর দুই হানাদারের সাথে হাতাহাতি যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। হামিদুরের মাথায় তখন কী ছিলো? হ্যাঁ, দুজনকে ব্যস্ত রাখতে পারলে মেশিনগানের হামলা কিছুক্ষণ বন্ধ থাকবে (সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই সময়টুকু) আর সেই সময়টুকুতে ইস্টবেঙ্গলের সৈন্যরা ফাঁড়ির কাছে চলে আসতে পারবেন।
গুলিবিদ্ধ হামিদুর রহমানের সাথে দুই পাকিস্তানি হানাদারের হাতাহাতি যুদ্ধ চলছে – ক্ষণিকের জন্য থেমে গেছে মেশিনগানের আক্রমণ। আর সেই সময়টুকুকে কাজে লাগিয়ে ইস্টবেঙ্গলের সৈন্যরা অদম্য গতিতে ফাঁড়ির কাছে চলে আসেন এবং ফাঁড়ির দখল চলে আসে আমাদের।
এভাবেই হামিদুর রহমান অসীম সাহস, বুদ্ধি আর জীবনের বিনিময়ে আমাদেরকে বিজয়কে নিশ্চিত করেছেন।
কী করে ভুলে যাবো এই অসমসাহসী সৈনিক বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানকে? যাদের ত্যাগের বিনিময়ে পেয়েছি এই দেশ, পেয়েছি লেখার এই স্বাধীনতা। তাঁর এই বীরত্বগাঁথা এখন আমাদের জানা আরো বেশি প্রয়োজন। এই বীরত্বপূর্ণ আত্মত্যাগ যে কোন সংকটে আমাদের পথ দেখাবে।
[তাঁকে কবরস্থ করা হয় ত্রিপুরা রাজ্যের হাতিমেরছড়া গ্রামের এক পরিবারের পারিবারিক কবরস্থানে। ২০০৭ সালের ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ রাইফেলসের একটি দল ত্রিপুরা সীমান্ত থেকে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুরের দেহবশেষ গ্রহণ করেন এবং ১১ ডিসেম্বর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁকে ঢাকার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।]
২| ২৭ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৯:৫৭
তাল পাখা বলেছেন: শিহরণ যাগানো লেখা।
আফসোস -
যে স্বাধীনতা অর্জন করতে আমাদের মাত্র নয় মাস সময় লেগেছে। সেই স্বাধীনতার চুয়াল্লিশ বছরে পদার্পণ করেও আমরা স্বাধীনতার অর্থ খুজে পাইনা।
৩| ২৭ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১০:০১
তাল পাখা বলেছেন: বুকের কষ্টে আপনাকে ধন্যবাদ জানাতে ভুলে গিয়েছিলাম বলে দুঃখিত।ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন।
৪| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৮:৫৯
শামছুল ইসলাম বলেছেন: অসমসাহসী বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের দেহ ও আত্মার শান্তি কামনা করছি।
সেই সাথে আপনাকেও ধন্যবাদ আজকের এই দিনে তাঁকে স্মরণ করে মুক্তিযুদ্ধের শিহরণ জাগানো দিন গুলোর স্মৃতিকে জাগিয়ে তোলার জন্য।
ভাল থাকুন। সবসময়।
৫| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ২:৪৩
কিরমানী লিটন বলেছেন: "ওরা আসবে,চুপি চুপি ...
যারা এই দেশটাকে ভালবাসে-দিয়ে গেছে প্রাণ ।"
চমৎকার পোষ্ট,অনুভুতিকে আরেকবার নাড়া দিয়ে গেলো,শুভকামনা রইলো আপনার প্রতি ...
©somewhere in net ltd.
১|
২৭ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৯:৪৩
ধমনী বলেছেন: মরকে তো হবেই। সাহস করে কিছু করে যাওয়াইতো জীবনের স্বার্থকতা। শ্রদ্ধা হামিদুরের জন্য।