![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
খুব সাদামাটা একজন শান্তিপ্রিয় মানুষ। কিন্তু কাকতালীয় ভাবে মাঝে মাঝেই এমন কিছু অনাকাঙ্খিত ঘটনার মুখোমুখি হতে হয় যা মেনে নেয়া যেমন কষ্টকর তেমনি প্রতিবাদ করে কিছু একটা করা আমার মতো একজন সামান্য মানুষের জন্য প্রায় অসম্ভব। তাই ভাবলাম অন্তত লেখালেখি করে কিছু না হোক মনের খেদটুকুতো মেটাতে পারবো। অবশেষে তাই ...............
বিলাসি’র হাতের খাবার খেয়ে মৃত্যুঞ্জয় যে অন্ন পাপ করেছিলো তার প্রায়শ্চিত্ত শরৎচন্দ্রের বর্ণনায় শুনেছি, নিজের চোখে দেখিনি। কিন্তু দিপা দি এ কি করলেন! এ যে মৃত্যুঞ্জয়ের অন্ন পাপের থেকে বড় পাপ! এর প্রায়শ্চিত্ত যে কিভাবে হবে তা দেখার সৌভাগ্য বুঝি এবার আমার হতে চলেছে। দিপা দি হচ্ছেন আমার ছোট বোনের ইংরেজি শিক্ষিকা। আমি তখন সবে সম্মান প্রথম বর্ষের ছাত্র। কোন এক ছুটিতে বাড়িতে গিয়ে বোনের পড়াশোনার বিষয়ে পাণ্ডিত্য ফলাতে লাগলাম। সামনে ওর মাধ্যমিক পরীক্ষা। ইংরেজির প্রসঙ্গ তুলতেই বলল “দেখ তোর এত পণ্ডিতি করতে হবেনা। আমাদের এক নতুন ম্যাডাম এসেছেন, খুব ভালো পড়ান। আমি তাঁর কাছে পড়ছি, তুই অঙ্ক করা।” নতুন ম্যাডামের কথা শুনে তাঁর সম্পর্কে যতোটা না আগ্রহ হল তার থেকে বেশি আগ্রহ হল তাঁর ভালো পড়ানোর কথা শুনে। আর যখন শুনলাম ম্যাডাম অবিবাহিতা, দেখার আকাঙ্খা আর সংবরণ করতে না পেরে পরবর্তী দিন বোনের সাথে বিদ্যালয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নিলাম। বাবা তখন ঐ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক , আমিও ঐ একই বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম । ভাবলাম অনেকদিন পরে স্যারদের সাথেও দেখা করা হবে আর নতুন ম্যাডামকে দেখার সুপ্ত বাসনাও পুরন হবে। চিন্তা অনুযায়ী কাজ, কিন্তু আশার বিপরীত ফল। আমাকে দেখেই ম্যাডাম বললেন “ বিপ্লব, কেমন আছ? তোমার পড়ালেখা কেমন চলছে?” আমিতো একেবারে ভ্যাবাচ্যাকা, কোনপ্রকারে নিজেকে সামলে নিয়ে বোকার মতো উত্তর দিলাম, ভালো। বেশ কিছুক্ষণের আলাপচারিতায় আস্তে আস্তে নিজেকে সামলে নিলাম ঠিক কিন্তু ততোক্ষণে তিনি আমার মনে এক বিশেষ স্থান দখল করে নিয়েছেন। তাঁর চেহারা, কথা, আচরন, ব্যক্তিত্ব সব মিলিয়ে অনন্য। এক কথায় এক পরিপূর্ণ মানবী। সত্যিকার অর্থে আমি তাঁর বশীভূত হলাম, এক বিনম্র শ্রদ্ধাবোধ কাজ করতে লাগলো। ঐ দিনই মনে হয়েছে শিক্ষিকা হিসেবে তিনি অসাধারন। ফেরার পথে বোনের কাছে শুনলাম আমাদের এক স্যারের ছোট বোন তিনি নাম দিপা, ইংরেজিতে মাস্টার্স। আমাদের বাড়িতে প্রায়ই যান , আমার মা’র সাথে বেশ সখ্যতাও গড়ে উঠেছে। পারিবারিক ফটো এ্যালবাম দেখেই সে আমাকে চেনে। আমার সম্পর্কে অনেক কিছু জানে মা’র কাছে গল্প শুনে। এরপর থেকে বাড়িতে গেলে প্রায়ই দেখা করতাম দিপা দি’র সাথে। তাঁর সাথে কথা বলতে, সময় কাটাতে খুব ভালো লাগত। সুশিক্ষিত মানুষ বলতে যা বোঝায় তাঁকে ১০০% উপযুক্ত বলে মনে হয়েছে আমার। সর্বশেষ সাক্ষাতের প্রায় ৩ বছর পরে কোন একদিন বাড়িতে গিয়ে প্রসঙ্গত মা’র কাছে দিপা দি’র কথা জানতে চাইলে মা খুব তাচ্ছিল্লের সাথে উত্তর দিলেন “ তোমার দিপা দি যা করেছে, তাঁর কথা আর জানতে চেওনা। অশিক্ষিত , গেঁয়ো, মূর্খ এক চাষাকে বিয়ে করেছে সে। তাছাড়া সে অন্য এক স্কুলে চলে গেছে।” আমার মা’কে আমি খুব ভালো করে চিনি, খুবই সহজ সরল মনের একজন মাটির মানুষ। যে যা বোঝায় তাই বোঝে। মানুষের কথা শুনে তাঁরও চিন্তা একজন উচ্চশিক্ষিতা মেয়ের পক্ষে একজন অশিক্ষিত , গেঁয়ো, মূর্খ চাষাকে বিয়ে করাটা মহাপাপ। কিন্তু এই রহস্যের মর্মোদ্ধারে আমার মন অস্থির হয়ে উঠলো। রাতে বাবাকে জিগ্যেস করে যা উদঘাটন করলাম তা হল দিপা দি তাঁর ভালবাসার মানুষটিকেই বিয়ে করেছে। সে ইচ্ছে করলেই ডাক্তার,ইঞ্জিনিয়ার কিংবা কোন এক ক্যাডার ছেলেকে বিয়ে করতে পারতো। সে তা না করে ভালবাসার যথার্থ মূল্যায়ন করেছে। দিপা দি যে আজ একজন সুশিক্ষিকা, তার পেছনে সম্পূর্ণ কৃতিত্ব ঐ ডিগ্রীহীন ছেলেটার। বাবা বললেন “ আমি ঐ ছেলেকে অশিক্ষিত বলতে পারবনা , কারন প্রাতিষ্ঠানিক কোন সনদ হয়তো ওর নেই, কিন্তু তাঁর মাঝে যে আলো আছে তার শিখায়ই দিপা আজ আলোকিত। ওদের দু’জনের বাড়ি পাশাপাশি। দিপার আর্থিক অসংগতি যখন ওর মাধ্যমিকের ফর্ম ফিলাপ বন্ধের প্রধান কারন হয়ে দাঁড়ালো ঠিক তখনই ধ্রুব পাশে এসে দাঁড়ালো। ধ্রুব নিজের ফর্ম ফিলাপের টাকা দিয়ে দিপা’র ফর্ম ফিলাপ করার ব্যাবস্থা করে দিল। ধ্রুব’র আর পড়ালেখা করা হয়নি, সব ছেঁড়ে দিয়ে জমিতে কাজ করতে শুরু করল দিপার পড়ালেখার খরচ যোগাতে। সেই যে শুরু, আজো দিপার যেকোনো সমস্যায় ধ্রুব তাঁর জীবন উৎসর্গ করতেও প্রস্তুত। দিপাও ধ্রুব’র ত্যাগ ও ভালোবাসার ভালবাসার এতটুকু অমর্যাদা করেনি। ধ্রুব’র প্রতি সে অশেষ কৃতজ্ঞ। তাইতো আত্মীয়-স্বজন এবং স্বার্থপর এই নিষ্ঠুর সমাজের ভ্রূকুটি উপেক্ষা করে ভালবাসাকে আঁকড়ে ধরে আছে। ওদের একটি ছেলে হয়েছে। দিপা স্কুলে গেলে ধ্রুবই ছেলের দেখাশোনা করে, রান্না করে, বাসার যে সকল কাজ দিপা থাকলে করত তাও করে। বেশ সুখে আছে ওরা।”
আমারও বিশ্বাস, ওঁরা সুখে আছে। কেননা, দিপা দি’র মতো মানুষ কখনও খারাপ থাকতে পারেনা। সমস্যা যতো আমাদের সমাজের। সমাজের জ্বালা দুজনকে নিয়েই। দিপা কেন একটা চাষাকে বিয়ে করল, আর ধ্রুব কেন বাড়িতে বসে মহিলাদের কাজ করবে? দুজনই যেন সমাজের বড় কোন নিয়ম ভঙ্গ করে মহা অন্যায় করেছে। তাদের দ্বারা সমাজ যেন কলুষিত হচ্ছে। ওদের সমাজচ্যুত না করলে কোনভাবেই যে সমাজপতিদের গাত্রদাহের নিবৃত্তি হচ্ছেনা। অসম বিয়ে করে ওরা যে পাপ করেছে তার প্রায়শ্চিত্ত কবে হবে সে চিন্তায় কতজনের চোখে যে ঘুম নেই তার ইয়ত্তা নেই। পারলে কতজনে অভিশাপ দিয়ে ওদের ভস্ম করে দেয়। কিন্তু দিপা দি, শকুনের অভিশাপে গরু মরবে কিনা, আপনাদের পাপের কিভাবে প্রায়শ্চিত্ত হবে, কবে হবে তা আমি জানিনা। আমি শুধু জানি আমার মনে আপনার জন্য যে আসনটি বরাদ্দ ছিল তা এখন স্থানান্তরিত হয়ে অনেক উঁচুতে স্থাপিত হয়েছে। আপনি যেখানেই থাকেন অনেক ভালো থাকবেন ঈশ্বর আপনাদের অনেক অনেক সুখে রাখবেন এই প্রত্যাশায় আপনার উদ্দ্যেশ্যে জানাই স্বশ্রদ্ধ স্যালুট।
২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:৩৫
নীরব বিপ্লব বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ।
আমার বাকি লেখাগুলো পড়ার জন্য অনুরোধ রইলো।
সবগুলো বাস্তব ঘটনা......।
২| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:২৪
নীরব বিপ্লব বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে
©somewhere in net ltd.
১|
২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:৪১
মেহেদী হাসান ভূঁঞা বলেছেন: ভালো লাগল।