নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ওয়াহিদবুরাদ রাকিব হাসান

ওয়াহিদবুরাদ রাকিব হাসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

অচিন ঠিকানা

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৭:৪২

-অনেক দিন পর গ্রামে বেড়াতে যাচ্ছি। কারণ গ্রামটা আমার কাছে খুব ভালো লাগে। প্রায় ১০ বছর পর গ্রামে যাচ্ছি।যখন আমি ১০ শ্রেনিতে পরতাম তখন গ্রামে একবার ঘুরতে গিয়েছিলাম তারপর থেকে আর গ্রামে যাওয়া হয়নি
আপনাদের পরিচয়টা দিয়ে দেয় আমি আবির।থাকি শহরে অথাৎ বগুড়ায় আর গ্রামের বাড়ি নওগাঁ জেলায় বদলগাছী পাহাড়পুর এলাকায়।এই এলাকাটা আমার কাছে খুব ভালো লাগে
বাসে উঠলাম প্রায় দুঘন্টা লং জার্নির পর গ্রামে পৌছালাম।দেখলাম ছোট কাকি এগিয়ে আসতেছে আমাদের দিকেই
-দে আবির ব্যাগ গুলো আমার হাতে দে
-না কাকি আমি নিয়ে যেতে পারবো
-আরে তোমাকে নিয়ে যেতে হবে না আমি নিয়ে যাচ্ছি
-আচ্ছা নাও
সবার সাথে আলাপ করে রুমে এসে ঘুমিয়ে পড়লাম
শরীরটা খুব ক্লান্ত লাগছে যার কারণে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই ঘুম চলে এলো
ঘুম থেকে যখন উঠলাম তখন দেখি প্রায় সন্ধ্যা হয়ে আসছে । ছোট কাকার ছেলেকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।উদ্দশ্য যাব বাজারে।বাজারে গিয়ে আমার স্কুল লাইফের বন্ধুদের সাথে দেখাও হয়ে গেলো । তাদের সাথে কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে চলে আসলাম।এসে আবার ঘুমিয়ে পড়লাম। তখনই প্রতিদিনের মতো আজও মাথা ব্যথা শুরু হয়ে গেলো। পৃথিবীর সব কিছু যেন ঝাপসা ঝাপসা দেখতে লাগলাম.তার পরে আর কিছু মনে নেই।
সকাল হয়ছে।ভোরের আলো চারি দিকে ফুঠে ওঠছে আজ মসজিদে যাওয়া হলো না তাই তারাতারি অযু করে নামাজটা পড়লাম । কাকির ঘর থেকে কাকির কোরআন টা নিয়ে এসে কিছু তিলাওয়াত করলাম
তারপর গ্রামের আকা বাকা মেঠো পথ ধরে হাটা ধরলাম।একলা পথিকের মতো।হেটেই চলেছি।আজ কেমন যেনো হাটতে ভালো লাগছে.আর মনে হয় বেশি দিন এই পৃথিবীতে এই রকম হাটতে পারবো না।হঠাৎ একটি মেয়েলী কন্ঠ আমার কানে ভেসে এলো
পিছনে তাকিয়ে দেখলাম।একটি মেয়ে হাতের ইশারায় আমাকে থামতে বলছে
-এই যে মিষ্টার কানে কম শুনেন নাকি কখন থেকে থামতে বলছি । আর ওনি হেটেই চলেছে।আপনার সাথে সাথ ধরতে হাপিয়ে গেছি
-ভালো কিছুটা সকালে ব্যায়াম হলো
-এই রাখেন আপনার ফাজলী.বেড়াতে এসেছেন আমার সাথে একটু দেখা করতে পারতেন তো হ্যা
-আচ্চা আপনিতো ছিলেন না নানুর বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলেন বলে বড় আম্মু বললো
-হুম তোমার কথা যখন শুনলাম তুমি এখানে এসেছো তাই সকাল সকাল চলে আসলাম
-ওহ আচ্ছা চলেন একটু ঘুরে দেখি গ্রাম
-এই কখন থেকে আপনি আপনি করছো কেন
-ও আচ্ছা সরি
-হুম চলেন
যার সাথে এতক্ষণ কথা বললাম সে হলো আমার ফুফাতো বোন অথাৎ আমরা দূজনে একই বয়সের।আমার এই ফুফুর বিয়ে হয়েছে বাড়ির কাছেই
আমার ফুফাত বোনের নাম হলো নুসরাত
-এই আর কতো ঘুরবে এখন বাসায় চলো
-কেন
-খুব ক্ষুধা লাগছে আমাকে
-আচ্ছা চলো
এই বলে বাসার দিকে হাটা ধরলাম
বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে গেলাম
তারপর
সবাই মিলে খাওয়াটা শেষ করলাম।তারপর সবাই মিলে আড্ডা দেওয়া শুরু করলাম
-আড্ডা দিয়ে সবাই মিলে পুকুরে গোসল করতে চলে গেলাম।অনেক দিন হলো খোলা পানিতে মুক্ত ভাবে গোসল করি নাই। সেখানে গিয়ে খোলা পানিতে মুক্ত ভাবে সাতার কাটলাম।তারপর সেখান থেকে চলে আসলাম
দেখতে দেখতে অনেক দিন কেটে গেলো. আমার বন্ধুদের মধ্যে অনেকে বিয়ে করেছে।আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলো রাকিব।আজ তার বিয়ে সেখানে গেলাম।
-দোস্ত তুই এসেছিস আমি খুব খুশি হয়েছি
-আরে তোর বিয়ে আর আমি আসবো না এটা কোনো কথা হলো
-হুম চলেক ওখানে চলে
সেখানে গিয়ে দেখি আমার আরো বন্ধুরা সকলে মিলে আড্ডা দিচ্ছে আমিও ওখানে গিয়ে আড্ডা দিলাম। সকল বন্ধুদের বউ অথাৎ ভাবিদের সাথে পরিচয় হলাম।আজ কেমন জানি ছোট বেলার কথা মনে পড়ছে । কতোই না আমরা আগে মারামারি করেছি খেলাধুলা করেছি।কান্না কাটি করেছি।ভাবতেই অবাক লাগছে।এই সুন্দর পৃথিবীটাকে একদিন ছেড়ে চলে যেতে হবে।দুচোখ দিয়ে দুফোটা নোনা জল গাল বেয়ে বয়ে পড়লো
-কিরে আবির তুই কাদছিস কেন
-কই নাতো রাকিব
-আরে তুই কাদছিস।আচ্ছা বলতো তোর কি হয়ছে
-আরে কিছুনা ছোট বেলার কথা মনে পড়ছে।তোদের সাথে আড্ডা দেওয়ার কথা মনে পড়ছে । তাই হয়তো অজানায় দুফোটা চোখের জল বয়ে পড়ছে

-ওহ আচ্ছা
রাকিবের বিয়েতে অনেক আনন্দ করলাম।কারণ আর কোনো দিন কারো বিয়েতে আনন্দ করতে পারবো।একদিন কলেজ থেকে বাসায় ফিরে আম্মুকে বললাম
-আম্মু আমার খুব মাথা ব্যথা করছে
-কেন বাবা তোর আবার কি হলো।তোর বাবাকে ফোন করবো ডাক্তার ডেকে আনবে নি
-আরে আম্মু সামান্য মাথা ব্যথার জন্য ডাক্তার ডাকতে হবে নাকি
হঠাৎ মাথা ব্যথা এতো বেড়ে গেলো যে।আমি সহ্য করার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেললাম। ফ্লোরোমে পড়ে গেলাম।যখন আমার জ্ঞান ফিরলো তখন একটি কথা আমার কানে ভেসে এলো
-আপনার ছেলের আয়ু আর মাত্র 130 দিন।এই কদিন পর আপনার ছেলেকে আমরা চিরকালের মতো হারিয়ে ফেলবো
-প্লিজ ডাক্তার সাহেব আমার ছেলেকে সুস্থ করে তুলুন যত টাকা লাগবে আমি দিবো

তারপর সেদিন জানতে পারলাম আমার ব্রেন ক্যান্সার হয়ছে
-সেদিন বাসায় এসে অন্ধকারে বসে অনেক কেদেছিলাম
আব্বু আম্মু ও আজ কাদে আমার জন্য
যে দিন আমি চলে যাবো সেদিন শুধু এই পরিবারে থেকে যাবে শুধু আব্বু আম্মু।কারণ আমি তাদের একমাত্র ছেলে।
সেই দিনের পর থেকে মাথার ব্যথা উঠলে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।কষ্টে জীবনটা বাহির হতে চেয়েও যেতে পারে না অচিন ঠিকানায়।যে ঠিকনা আমার জানা নেই।যেই ঠিকানা থেকে কেউ আর কোনো দিন ফিরে আসে না।একদিন আমাকেও সেই ঠিকানায় পারি দিতে হবে।
সুন্দর এই পৃথিবী ছেড়ে একদিন চলে যেতে হবে অচিন ঠিকানায়
আম্মুর ডাকে হুশ ফিরলো
-কিরে এতো কি ভাবিস
-কিছু না আম্মু
-আয় খাবি চল
-আচ্ছা চলো
খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।আবারো মাথা ব্যথ্যা শুরু হয়ে গেলো।খুব কষ্ট হচ্ছে যে কষ্ট সহ্য করার শক্তি আমি হারিয়ে ফেলেছি
দু হাত দিয়ে মাথাটা চেপে ধরলাম
আবারো জ্ঞান হারিয়ে ফেলাম
ভোরের দিকে
-মোয়াজ্জিমের মধুর কন্ঠ শুনে ঘুম ভাঙ্গলো।বিছানা থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে মসজিদের দিকে হাটা ধরলাম । নামাজ পরে বাসায় চলে আসলাম আজ কেন জানি কোনো কিছু ভালো লাগছেনা কোরআন তিলাওয়াত করে মোনাজাত করলাম আল্লাহর দরবারে
হে আল্লাহ আমি কি এত বড় অন্যায় করেছি যার পাপের শাস্তি আমাকে এভাবে তিলে তিলে পেতে হচ্ছে।হে আল্লাহ এই রকম কষ্ট যে আমি আর সয়তে পারছিনা।কেন আমার এতো কষ্ট দিচ্ছো।আমারে কেন তোমার অচিন ঠিকানায় তুলে নিচ্ছো না। এই তীব্র কষ্ট যে আমি আর সয়তে পারছি না কেন আমার আমার মৃত্যু হচ্ছে না। কি আমার অপরাধ যার কারণে এভাবে আমাকে দিনের পর দিন কষ্ট পেতে হচ্ছে
মোনাজাতটা শেষ করে দরজার দিকে তাকিয়ে দেকি আম্মু কাদছে।আমিও আম্মুকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলাম
-আম্মু এই কষ্ট যে আমি আর সয়তে পারছিনা কেন আমার এত কষ্ট হচ্ছে কোনো কিছু ভালো লাগছেনা আম্মু
আম্মু কাদছে আমিও কাদছি
-বেলা অনেকটা হয়ে গেছে এখন আমি পুকুর পাড়ে বসে আছি
আমার পাশে এসে নুসরাতও বসলো
-আচ্ছা রাকিব তোমাকে একটা কথা বলি
-হুম বলো
-রাগ করবে নাতো
-না
-আমি আমি আমি
-কি আমি করছো
-আমি তোমাকে ভালোবাসি আবির
-সরি নুসরাত এটা আমার পক্ষে সম্ভব নয়
-কেন
-আমি তোমাকে ভালোবাসতে পারবো না
-প্লিজ আবির এমনটা করো না আমার সাথে
-আমার এই অনিশ্চিত জীবনের সাথে তোমাকে জোরাতে চাইনা
-প্লিজ আবির আমি তোমাকে ছাড়া বাচবো না
-প্লিজ নুসরাত কথাটা বুঝার চেষ্টা করো
-না আমি কোনো কথা শুনতে চাইনা।
-আর কয়েক দিনের অতিথি মাত্র আমি তারপর অচিন ঠিকানায় চলে যাবো
-কেন তোমার কি হয়ছে
নুসরাতের সাথে আর কোনো কথা না বলে সেখান থেকে চলে এলাম
দেখতে দেখতে 129 দিন চলে গেলো হয়তো আর একদিন এই পৃথিবীর মায়ার মাঝে বেচে আছি তারপর চলে যাবো অচেনা দূরে যার কোনো শেষ নেই
দাদুদের সাথে আড্ডা দেওয়ার সময়
হঠাৎ করে আবারো মাথা ব্যথা শুরু হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লাম।আর চিৎকার করছি।পৃথিবীর সব কিছু যেন আজ ঝাপসা ঝাপসা লাগছে।একটু আব্বু আম্মুকে চোখ খুলে দেখার জন্য চেষ্টা করলাম কিন্তু পারলাম না ।চোখটা বুজে এলো।সব কিছু যেন নিস্তেস হয়ে আসছে।হারিয়ে গেলাম এই পৃথিবীর মাঝ থেকে।আব্বু আম্মু কান্না করছে।আর নুসরাত বলেই যাচ্ছে না তুই আমাকে একা ফেলে যেতে পারিস না কেন আমার সাথে এমন করলি প্লিজ ফিরে আয়না এই বুকে তোকে কখনো হারাতে দিবো
জানি আজ সবাই কান্না করছে আমার জন্য একদিন ঠিক সবাই আমাকে ভুলে যাবে কেঊ আর আমাকে মনে রাখবেনা হয়তো আব্বু আম্মুও কয়েক দিন কাদবে তারপর ষব ঠিক হয়ে যাবে
অচিন ঠিকানায় চলে গেলাম এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে
-
-
-
-লেখকঃ পরীর আব্বু
-
-
-
-"""""""""""""""সমাপ্ত"""""""""""""""""
_"""""""""""THE END""".""""
-
-

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.