![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
খারাপ মানুষেরা আমায় খারাপ বলে, আর ভালো মানুষেরা আমায় ভালো বলে।
খাসিয়া সম্প্রদায়ের নারী কাঁকন বিবি,
১৯৭১ সালে সংঘটিত বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের এক বীরযোদ্ধা, বীরাঙ্গনা ও গুপ্তচর।
তাঁর আসল নাম কাঁকাত হেনিনচিতা।
তিনি সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার ঝিরাগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
নিজের এলাকায় তিনি ‘মুক্তি বেটি’ নামে পরিচিত ছিলেন। জীবনবাজি রেখে পাকিস্তানী মিলিটারির তথ্য সংগ্রহ করে আনতেন আর সরবরাহ করতেন মুক্তিবাহিনীর মধ্যে। সাহসী এই নারী সরাসরি অংশ নিয়েছেন আমবাড়ি, বাংলাবাজার, টেবলাই, বলিউরা, মহব্বতপুর,বেতুরা, দূরিনটিলা, আধারটিলাসহ প্রায় ৯টি সম্মুখযুদ্ধে।
১৯৭১ সালের জুন মাসে পাকিস্তানী বাহিনীর কাছে ধরা পড়েন কাঁকন বিবি, এবং তাদের বাঙ্কারে দিনের পর দিন অমানুষিকভাবে নির্যাতিত হয়। কিছুদিন পর তাঁকে ছেড়ে দেয় পাকিস্তানি বাহিনী। এখান থেকে মুক্ত হয়ে কাঁকন বিবি আবার মুক্তিযোদ্ধাদের গুপ্তচর হিসেবে দায়িত্ব নেন। গুপ্তচরের কাজ করতে গিয়েই দোয়ারাবাজার উপজেলার বাংলাবাজারে পাক বাহিনীর হাতে পুনরায় ধরা পড়েন তিনি। এবারে একনাগাড়ে ৭ দিন পাকিস্তানী বাহিনীও রাজাকারেরা তাঁকে বিবস্ত্র করে তাঁর উপর অমানুষিক নির্যাতন চালায়। লোহার রড গরম করে তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছেঁকা দেয়া হয়। মৃত ভেবে অজ্ঞান কাঁকন বিবিকে পাক বাহিনী ফেলে রেখে যায়। কয়েকদিন পরে জ্ঞান ফিরে আসলে তাঁকে উদ্ধার করে বালাট সাবসেক্টরে নিয়ে আসা হয়। সুস্থ হয়ে তিনি পুনরায় ফিরে আসেন বাংলাবাজারে। অস্ত্র চালনায় প্রশিক্ষিত হন মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলীর কাছে।
এর পরবর্তীকালে তিনি সম্মুখ যুদ্ধ আর গুপ্তচর উভয় কাজই শুরু করেন।এরপরে প্রায় ২০টি যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন তিনি। ১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসে টেংরাটিলায় পাক সেনাদের সাথে সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেন তিনি। এই যুদ্ধে তাঁর দেহে কয়েকটি গুলি বিদ্ধ হয়। দেশ স্বাধীন হলে তিনি দোয়ারাবাজার উপজেলার ঝিরাগাঁও গ্রামে এক ব্যক্তির কুঁড়েঘরের বারান্দায় মেয়ে সখিনাসহ আশ্রয় নেন।
এর পরে প্রায় ২ যুগ ধরে কোন এক অভিমানে দীর্ঘদিন তিনি লোকচক্ষুর আড়ালে ছিলেন। স্বাধীনতার ২৫ বছর পর ১৯৯৬ সালে সাংবাদিক রনেন্দ্র তালুকদার পিংকু তাকে ভিক্ষারত অবস্থায় খুঁজে পান। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁকে এক একর খাস জমি প্রদান করেন। ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁকে বীরপ্রতীক উপাধীতে ভূষিত করার ঘোষণা দেন।
কিন্তু আজও তা গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়নি।
যার কারণে তিনি কোনো সুযোগ সুবিধা পান নি।
কাঁকন বিবি জীবদ্দশায় দেখে যেতে পারলেন না প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তাকে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
কারণ তিনি ২১/০৩/২০১৮ বুধবার রাত ১১টা ৫ মিনিটে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
পরিশেষে শুধু বলতে চাই বাংলাদেশে অনেক ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধার খেতাব পেয়ে সুবিধাভোগ করছেন।
অথচ কাঁকন বিবির মত এরকম সত্যিকারের যোদ্ধারা অবহেলিত হচ্ছে।
এসব আসল যোদ্ধাদের আমরা মনে রাখি না।
--কাঁকন বিবির ঋণ শোধ করার ক্ষমতা আমার নেই, শুধু তাকে অনেক অনেক শ্রদ্ধা ও সম্মান জানাচ্ছি।
ওপারে ভালো থাকবেন।
©somewhere in net ltd.