![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মানুষ তুমি মানুষ হয়েই থাকো অমানুষ বা অন্য রূপে নয়
কঠিন কঠোর কর্মসূচির বাংলাদেশ
অরণ্য আবীর
‘বাবা ছাড়া আরেকটা ঈদ কাটালাম। যত আনন্দ করি না কেন, প্রতিটা কদমে বাবা না থাকার কষ্টটা অনুভব করলাম...আল্লাহ, তুমি বাবাকে সুখে রাখো।’গত ১৬ অক্টোবর ফেসবুকে বাবার বেশ কয়েকটি ছবি দিয়ে নিজের কষ্টের কথা গুলি লিখেছিলেন হাজি ওজিউল্লাহর পুত্র ঢাকা কলেজের প্রথম বর্ষে ছাত্র ওহিদুর রহমান ওরফে বাবু। প্রায় তিন বছর ধরে নিখোঁজ বাবাকে খুঁজে ফিরছিলেন তিনি। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শাহবাগে বাসে পেট্রলবোমা হামলায় দগ্ধ হওয়া ১৯ জনের মধ্যে তিনিও একজন। তার চিকিৎসা চলছিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে। কিন্তু সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে আজ বুধবার ভোর সাড়ে চারটার দিকে নিবিড় পর্যবেক্ষণকেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যান না ফেরার দেশে।
কি অপরাধ ছিল তার? কে জবাব দিবে এই প্রশ্নের? মৃত্যুশোকে স্তব্ধ মা মাঝেমধ্যে হাহাকার করে উঠছিলেন, ‘বাবু, তুমি আমারে ছেড়ে যাইতে পারলা!’ কি সান্তনা দিবে এই মা কে?
রাজনীতির আগুনে পুড়ছে মানুষ। আগুনে পুড়ে মারা গেছে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র মনির, বাবার সামনে অগ্নিদগ্ধ হয়েছিলো সে, তার পুড়ে যাওয়া কালো দেহের অভিশাপে পুড়ছে বাংলাদেশ। অভিশাপ্ত তালিকায় প্রতিদিনই যোগ হচ্ছে নতুন নতুন নাম। চাকুরিজীবী মোস্তাফিজ, দোকানী হাবিবুর, সিএনজি চালক আসাদ গাজী, স্বর্ণের দোকানের কর্মচারী মন্টু পাল, মাদ্রাসা শিক্ষক আবদুস সাত্তার, ইজিবাইকচালক স্বপন, ব্যাংকার সহ আরো অনেকে। সবশেষ এ তালিকায় যুক্ত হলো অহিদুর রহমান বাবু। এটা হয়ত আরো বাড়তেই থাকবে যা কাহারো কাম্য নয়। এই মৃত আত্মারা কাদের অভিশাপ দিচ্ছে? এদের অভিশাপ আমাদেরই প্রাপ্য। কারন আমরা নপুংসক, প্রতিবাদের ভাষা ভুলে গেছি। আমরাই অপরাধী।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিট পরিদর্শন শেষে আবেগাপ্লুত শেখ হাসিনা সেদিন বলেছেন, তিনি এবার “কঠিন” হবেন। কি ভাবে কঠিন হবেন? কতটা কাঠিন্য হবে তা? আপনার এই কঠিনতা কি রাজপথের আগুন নিবাতে পারবে? নাকি তা হয়ে উঠবে আরো উত্তপ্ত প্রজ্বলিত? যাতে পুড়ে ছাই হবে আরো কিছু সাধারন মানুষ। আপনার পুলিশ কি জানে না, কারা ২০০ টাকায় ককটেল ফাটায়, ৫০০ টাকায় পেট্রোল বোমা ছুড়ে আর ১০০০ টাকায় বাসে আগুন দেয়। এদের ধরা কি খুব কঠিন কাজ? রাজনীতির খেলা খেলবেন না। কঠিন হলে এমন কঠিন হন যাতে দেশের মানুষ শান্তি পায়। মুক্তি পায় এই নোংরা রাজনীতি থেকে।
বিএনপির নতুন মুখপাত্র সালাহউদ্দিন আহমদ আজ বুধবার সকালে অজ্ঞাত স্থান থেকে তার ক্ষুব্ধ নেত্রীর নির্দেশে এক ভিডিও বার্তায় হুমকি দিয়ে বলছেন, দাবি না মানলে আরও “কঠোর” কর্মসূচি দিবেন। কতটা কঠোর হবেন? পারবেন এই “কঠোর” হয়ে নিজের বাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দিতে। পারবেন নিজের শরীরের এক ইঞ্চি অংশ আগুনে পুড়াতে? পারবেন? যদি পারেন, তবে আমরাও আপনার সাথে আছি। আপনাদের দাবি আদায়ের জন্য নিজের জীবন দিয়ে হলেও লড়াই করে যাবো। সুষ্ঠ আন্দোলনে জনতাও আপনাদের পাশে থাকবে। কিন্তু চামচিকার মত লুকিয়ে থেকে নয় সামনে এসে বুক ফুলিয়ে কথা বলুন, আপনাদের নেতানেত্রীর সংখা তো কম নয়। সরকার ধরবে? ধরে ধরে জেলেই তো ভরবে, কতজন কে ধরবে। কিন্তু দোহাই লাগে, কাপুরুষের মত লুকিয়ে থেকে কোন আন্দোলনের ডাক দিবেন না। আন্দোলনের নামে নাশকতা করে মানুষ পুড়াবেন না। তাহলে দেখবেন একদিন এই পুড়ে যাওয়া মানুষ গুলির অভিশাপে আপনারা বাংলার ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবেন।
©somewhere in net ltd.