নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

I already pass 10 years in the multimedia reporting for television and text reporting for online and print media. I was engage myself with a television for 8 years. The name of television is Channel i. This Channel is one of the largest, Oldest and Popu

সামসুদ্দোহা পান্না

ডেইলি ইসলাম

সামসুদ্দোহা পান্না › বিস্তারিত পোস্টঃ

করোনায় গোলক ধাঁধাঁয় মু’মিন মুসলমান ।

০১ লা এপ্রিল, ২০২০ রাত ১:২১

জাকির হোসেন
কোভিড-১৯ নামক মহামারিতে আক্রান্ত সারাবিশ্ব। প্রাণঘাতী ভাইরাসটি নিজে খুব বেশি মারাত্মক না হলেও অতিসংক্রমণশীলতার কারণে দ্রুত পৃথিবীর প্রায় সব দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্বব্যাপী মানুষকে ঘরে বন্দি করে রেখেছে। তারই অংশ হিসেবে অনেক দেশে মসজিদে জামাত নিষিদ্ধ করা হয়েছে, ক্বাবা ও মসজিদে নববীসহ অনেক দেশের মসজিদে জামাতে মুসুল্লির সমাগম সীমিত করা হয়েছে। বাংলাদেশেও একই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে। বিভিন্ন ঘরণার আলেমগণের সাথে আলোচনা করে ইসলামিক ফাউন্ডেশন মসজিদে যারা তাদের সুস্থতার বিষয়ে শতভাগ নিশ্চিত নন, তাদের মসজিদে না যেয়ে বাসায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে জামাত করার অনুরোধ করেছেন। তারই প্রেক্ষিতে, জাতীয় মসজিদ বাইতুল মোকারমে গত শুক্রবার সীমিত আকারে জামাত হয়েছে। অন্যান্য অধিকাংশ মসজিদ এই সিদ্ধান্ত মেনে নিলেও কতিপয় আলেম এ সিদ্ধান্তের সাথে একমত হতে পারছেন না।

তাদের কেউ কেউ এই সিদ্ধান্তকে কুফুরি সিদ্ধান্ত এবং যারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা কাফের হয়ে গেছেন বলেও মন্তব্য করেছেন। এ ঘরণার আলেমগণ রসুলুল্লাহ (সা.) এর একটি বক্তব্য ‘সংক্রমণ বলে কিছু নেই’ (যা বেশ কয়েকটি সহীহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে) কে মূল ভিত্তি হিসেবে উপস্থাপন করছেন।

সাধারণ মানুষের মধ্যে একদিকে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ভয় কাজ করছে অপর দিকে তারা মসজিদে যেয়ে নামাজের ফজিলত প্রাপ্তির আশাও ছাড়তে পারছেন না। তারা এখন সত্যি সত্যি উভয় সংকটে আছেন। বিজ্ঞান নিশ্চিত করেই বলছে, করোনা ভাইরাস একজনের দেহ হতে আরেকজনের দেহে সংক্রমিত হয়। আবার রসুলুল্লাহ (সা.) এর সহীহ হাদিস বলছে, সংক্রমণ বলতে কিছু নেই।

তাহলে কি হাদিসের বক্তব্য নির্ভুল নয়? একজন মু’মিন কল্পনায়ও আনতে পারেন না যে, কোন সহীহ হাদিসের বক্তব্য নির্ভুল হতে পারে না। কারণ রসুলুল্লাহ (সা.) নিজ হতে কিছু বলেননি। তিনি সেই কথাই বলেছেন, সেই কাজই করেছেন যা আল্লাহ তাকে বলতে বলেছেন, আল্লাহ তাকে করতে বলেছেন। কাজেই সহীহ হাদিসের বক্তব্য ভুল হতে পারে না।

দৃশ্যত মু’মিন মুসলমানের বিশ্বাস এবং বিজ্ঞানের নিশ্চিত তথ্য পরস্পর বিপরীত মেরুতে অবস্থান করছে। এর কি কোনও ব্যাখ্যা আছে? এক বিষয়ে দু’টি বিপরীতমুখী সিদ্ধান্ত সত্য হতে পারে না। হয় বিজ্ঞান ভুল, নয় হাদিস (নাউযুবিল্লাহ)। অথবা এর কি অন্যকোন অর্থ আছে যা আমাদের অজানা থেকে যাচ্ছে। এমনকি কোন ব্যাখ্যা আছে যা দিয়ে বোঝা যাবে, হাদিস এবং বিজ্ঞান আসলে একই কথা বলছে?
চলুন আমরা এ বিষয়ে একটু গবেষণা করি। তবে প্রিয় পাঠক, মনে রাখবেন, লেখক না বৈজ্ঞানিক, না আলেম। লেখক ভূতত্ত্ব ও ব্যবসায় প্রশাসনে পড়াশুনা করেছেন এবং কাস্টমস ও ভ্যাট নিয়ে কাজ করেন। কাজেই লেখকের বোঝায় ভুল থাকতে পারে। আল্লাহই ভালো জানেন। ভুল হলে অগ্রীম ক্ষমাপ্রার্থী এবং সঠিক পথের অনুসন্ধিৎসু যাত্রী।

চলুন হাদিসগুলো দেখি: আমরা বিষয়টিকে শুধু একটি হাদিসের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে প্রাসঙ্গিক আরো কয়েকটি হাদিসের সাথে সমন্বয় করে দেখতে পারি। সংক্রমণ সংক্রান্ত অনেকগুলো হাদিস আছে। এখানে আমরা শুধু প্রাসঙ্গিক কয়েকটি সহীহ হাদিস উপস্থাপন করছি। আশা করা যায় এতেই গোলক ধাঁধাঁ হতে বের হওয়ার জন্য আমরা পথের দিশা পাব ইনশা আল্লাহ। সহীহ বুখারি, হাদিস নং ৫৭৭৩। সংক্রমণ বলতে কিছু নেই। সহীহ বুখারি, হাদিস নং ৫৭৭০। রোগের মধ্যে কোন সংক্রমণ নেই, সফর মাসের মধ্যে অকল্যাণের কিছু নেই এবং পেঁচার মধ্যে কোন অশুভ আলামত নেই। তখন এক বেদুঈন বলল, হে আল্লাহর রাসূল! তাহলে যে উট পাল মরুভূমিতে থাকে, হরিণের মতো তা সুস্থ ও সবল থাকে। উটের পালে একটি চর্মরোগওয়ালা উট মিশে সবগুলোকে চর্মরোগগ্রস্ত করে দেয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তবে প্রথম উটটির মধ্যে কীভাবে এ রোগ সংক্রমিত হলো?

সহীহ বুখারি, হাদিস নং ৫৭০৭। রোগের কোন সংক্রমণ নেই, কুলক্ষণ বলে কিছু নেই, পেঁচা অশুভের লক্ষণ নয়, সফর মাসের কোন অশুভ নেই। কুষ্ঠ রোগী থেকে দূরে থাক, যেভাবে তুমি বাঘ থেকে দূরে থাক।

সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ৫৭১৫। আমর ইবনু শারদ (রাযি.)-এর সানাদে তার পিতা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাকীফ সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি দলের মধ্যে জনৈক কুষ্ঠ রোগী ছিলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নিকট (খবর) পাঠালেন যে, আমরা তোমাকে বাইআত করে নিয়েছি; তুমি ফিরে যাও।

সহীহ বুখারি, হাদিস নং ৫৭৭৪। রোগাক্রান্ত উট নীরোগ উটের সাথে মিশ্রিত করবে না। সুনানে আত তিরমিজী, হাদিস নং ১০৬৫। যে গযব বা শাস্তি বানী ইসরাঈলের এক গোষ্ঠীর উপর এসেছিলো, তার বাকি অংশই হচ্ছে মহামারি। অতএব, কোথাও মহামারি দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থানরত থাকলে সে জায়গা হতে চলে এসো না। অপরদিকে কোন এলাকায় এটা দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থান না করলে সে জায়গাতে যেও না। [হাদিসটি সহীহ সনদে বর্ণিত]

সহীহ বুখারি, হাদিস নং ৩৪৭৩। প্লেগ একটি আযাব। যা বনী ইসরাঈলের এক সম্প্রদায়ের ওপর পতিত হয়েছিল অথবা তোমাদের পূর্বে যারা ছিল। তোমরা যখন কোন স্থানে প্লেগের ছড়াছড়ি শুনতে পাও, তখন তোমরা সেখানে যেয়ো না। আর যখন প্লেগ এমন জায়গায় দেখা দেয়, যেখানে তুমি অবস্থান করছো, তখন সে স্থান হতে পালানোর লক্ষ্যে বের হয়ো না।

হাদিসগুলো পর্যালোচনায় দুটি বিষয় লক্ষণীয় হয়, যথা: প্রথমত: সহীহ বুখারির হাদিস নম্বর ৫৭৭৩, ৫৭৭০ ও ৫৭০৭ এর মাধ্যমে স্পষ্ট
হওয়া যায় সংক্রমণ বলে কিছু নেই। এসব রোগের কোন সংক্রমণও নেই। সারমর্ম: কোন রোগ সংক্রমক নয়।

দ্বিতীয়ত সহীহ বুখারির হাদিস নম্বর ৫৭০৭ ও ৫৭৭৪ এবং সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ৫৭১৫ এর মাধ্যমে স্পষ্ট নির্দেশ হলো: কুষ্ঠ রোগী হতে দূরে থাক যেমন বাঘ থেকে দূরে থাক এবং রোগাক্রান্ত উটকে নীরোগ উটের সংস্পর্শে নিয়ো না। অর্থাৎ কতিপয় রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি বা পশু হতে সুস্থ্য ব্যক্তি ও পশুকে দূরে রাখ। আবার সুনানে আত তিরমিজী, হাদিস নং ১০৬৫ এ রসুল (সা.) মহামারি প্রবণ এলাকা হতে বের হতে বা সে এলাকায় প্রবেশ করা হতে বিরত থাকতে নিষেধ করেছেন। একইভাবে সহীহ বুখারির হাদিস নম্বর ৩৪৭৩ এ প্লেগ রোগের নাম উল্লেখ করে একই নির্দেশ দিয়েছেন। বৈজ্ঞানিক তথ্য মতে, প্লেগ একটি সংক্রামক রোগ। সারমর্ম: সংক্রামক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি বা প্রাণী হতে দূরে থাক যাতে তা হতে তুমি আক্রান্ত না হও।

বিষয় দুটিকে মিলাতে কষ্ট হচ্ছে? পরস্পর বিপরীতমুখী মনে হচ্ছে? চলুন দেখা যাক বিজ্ঞান কি বলে। ভাইরাসকে জানি: ভাইরাস হলো একপ্রকার অতিক্ষুদ্র জৈব কণা বা অণুজীব যারা জীবিত কোষের ভিতরেই মাত্র বংশবৃদ্ধি করতে পারে। এরা অতি-আণুবীক্ষণিক এবং অকোষীয়। ভাইরাস জীব হিসেবে বিবেচিত হবে কি না, এ নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে দ্বিমত আছে। ভাইরাসকে জীবাণু না বলে ‘বস্তু’ বলা হয়। কেবল উপযুক্ত জীবন্ত পোষকদেহের অভ্যন্তরে তারা বংশবৃদ্ধি করতে পারে। জীব দেহের বাইরে এরা বংশ বিস্তার করতে পারে না। অর্থাৎ ভাইরাস জীবদেহের বাইরে জড় বস্তু হিসাবে বিবেচিত হয়। তারা জীবদেহে জীব এবং জড় বস্তুতে জড় হিসাবে আচরণ করে। যেহেতু পোষক বা জীব-দেহের বাইরে তারা জড় বস্তু সেহেতু তারা নিজেরা চলাচলও করতে পারে না।

এখন চলুন এই আজব জীব-জড় বৈশিষ্টের বস্তুটি কিভাবে চলাচল করে সে বিষয়ে কিঞ্চিত আলোচনা করা যাক। ভাইরাস যেহেতু নিজে চলাচল করতে পারে না কাজেই তাকে অন্য কারোর ওপর ভর করে চলাচল করতে হয়। যার মাধ্যমে ভাইরাস স্থানান্তরিত হয় তাকে বাহক বলা হয়। যেমন মানুষ, অন্যকোন প্রাণী বা ব্যবহার্য কোন বস্তু।

সংক্রামক রোগ কী? যে রোগ ব্যাকটিরিয়া, ভাইরাস, পরজীবী বা ছত্রাকের মতো রোগসৃষ্টিকারী অণুজীবের মাধ্যমে সৃষ্ট এবং কোন বাহকের মাধ্যমে এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তিতে ছড়িয়ে যেতে পারে সেটিই সংক্রামক রোগ। এখানেও রোগটি ছড়ানোর জন্য বাহক বাধ্যতামূলক।

ভাইরাস কি সংক্রামক? যে ভাইরাস নিজে চলতে পারে না, যে পোষক দেহের বাইরে জড় বস্তু, তার নিজে নিজে সংক্রমিত হওয়ার প্রশ্নই আসে না। তবে কোন উপযুক্ত বাহক পেলে সে স্থানান্তরিত হয়ে অন্য পোষক দেহে প্রবেশ করে সেখানে রোগ সৃষ্টি করতে পারে।
একইভাবে কোন রোগ যেমন প্লেগ বা করোনা ভাইরাস সৃষ্ট কোভিড-১৯ রোগ হিসাবে নিজে ছোঁয়াচে বা সংক্রামক নয়। আসলে রোগের নিজের সংক্রামক হওয়ার কোন সুযোগ নেই। রোগ সৃষ্টিকারী ভাইরাস যখন এক পোষক হতে বাহকের মাধ্যমে অন্য পোষকের দেহে স্থানান্তরিত হয় তখন ভাইরাসটি নতুন পোষকের দেহে রোগ সৃষ্টি করে।

চলুন এবার সূত্র মেলাই। রসুলুল্লাহ (সা) এর কথা - বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা কী বলে?
সংক্রমণ বলতে কিছু নেই -কোন রোগ বা ভাইরাস নিজে নিজে একজনের দেহ হতে অন্য জনের নিকট স্থানান্তরিত হয় না। কোন না কোন বাহক লাগে। তাই বাহক বিহীন অবস্থায় কোন সংক্রমণ নেই। রোগের মধ্যে কোন সংক্রমণ নেই বা রোগের কোন সংক্রমণ নেই - আমরা তোমাকে বাইআত করে নিয়েছি; তুমি ফিরে যাও- দলের সাথে একজন কুষ্ঠ রোগী থাকায় রসুল (সা.) তার সংস্পর্শে না এসে তাকে দূর থেকে বাইয়াত করান। এর কারণ যদি কুষ্ঠ রোগীর সাথে রসুল (সা.) মোসাবা করতেন তাহলে স্পর্শের মাধ্যমে তার দেহেও কুষ্ঠ রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা থাকতো। তাই তিনি সাবধানতা অবলম্বন করেছেন। এ সাবধানতা অণুজীব দ্বারা সৃষ্ট যেকোন রোগের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে।

তবে প্রথম উটটির মধ্যে কীভাবে এ রোগ সংক্রমিত হলো?- মানুষ শূন্য থেকে কোন কিছু সৃষ্টি করেত পারে না। তারা এক বস্তুকে অন্য বস্তুতে রূপান্তর করে তার ব্যবহারে বৈচিত্র আনতে পারেন। আল্লাহই শূন্য হতে নতুন কিছু সৃষ্টি করতে পারেন। প্রথম উটের অসুখ আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলার তরফ থেকেই এসেছে।

কুষ্ঠ রোগী থেকে দূরে থাক, যেভাবে তুমি বাঘ থেকে দূরে থাক- কুষ্ঠ রোগ ব্যাকটেরিয়া সৃষ্ট। এ রোগের জীবাণুও এক পোষকের স্পর্শ, সর্দি-কাশি ইত্যাদি বাহক মারফত অন্য পোষকে সংক্রমিত হয়। নিজে হয় না। যেহেতু একজন রোগীর সংস্পর্শের মাধ্যমে এ রোগ অন্য জনের নিকট সংক্রমিত হয় সেহেতু কুষ্ঠ রোগী হতে দূরে থাকতে বলা হয়েছে। দূরে থাকলে এ রোগের ব্যাকটেরিয়া সংক্রমিত হবে না।

রোগাক্রান্ত উট নীরোগ উটের সাথে মিশ্রিত করবে না- রোগের জীবাণু এক উটের স্পর্শ বা মল-মূত্রের মাধ্যমে অন্য উটে সংক্রমিত হতে পারে। রোগটি নিজে নিজে সংক্রমিত হয় না। যেহেতু একটি অসুস্থ উটের সংস্পর্শের মাধ্যমে জীবাণু অন্য একটি উটে সংক্রমিত হয় সেহেতু অসুস্থ উটকে সুস্থ্য উটের সাথে মিশাতে নিষেধ করা হয়েছে।

কোথাও মহামারি দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থানরত থাকলে সে জায়গা হতে চলে এসো না। অপরদিকে কোন এলাকায় এটা দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থান না করলে সে জায়গাতে যেও না। মহামারী সাধারণত কোন ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার কারণেই হয়ে থাকে। যেমন স্পেনিশ ফ্লো, কোভিড-১৯ ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট। আবার প্লেগ সৃষ্টি হয় ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে। এরা সবই বাহকের মাধ্যমে এক পোষক হতে অন্য পোষকের দেহে স্থানান্তরিত হয়।

প্লেগ বা অন্য যে কোন মহামারি সৃষ্টিকারী অণুজীব যাতে নতুন স্থানে ছড়িয়ে পড়তে না পারে তার জন্য মহামারি আক্রান্ত স্থান হতে কাউকে বাইরে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। একই ভাবে সুস্থ্য কেউ যাতে মহামারি আক্রান্ত স্থানে গমন করে নিজে আক্রান্ত না হতে পারেন তার জন্য তাকে আক্রান্ত স্থানে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।

দুইয়ে দুইয়ে চারই হয়: বর্ণিত হাদিসসমূহ এবং ভাইরাসের প্রকৃতি পর্যালোচনা করলে আমরা সহজেই বিজ্ঞান এবং হাদিসের মধ্যে পার্থক্যের বদলে ঐক্য দেখতে পাই। কোন রোগ সংক্রমিত হয় না যতক্ষণ না সে কোন বাহক পায়। বাহক হতে পারে রোগী নিজে বা তার হাঁচি-কাশি, মল-মূত্র, ঝরে পড়া পশম-চুল বা মৃত দেহকোষ, হতে পারে বাতাস, পানি, মাটি বা অন্য কোন জড় বস্তু অথবা কোন প্রাণী। রসুল (সা.) এর বর্ণিত হাদিসগুলো একসাথে মিলালে দেখা যাবে, একদিকে তিনি রোগটিকে সংক্রমক নয় বলে উল্লেখ করেছেন এবং অপর দিকে তার বাহকের স্পর্শে না আসতে নির্দেশ দিয়েছেন।

হাদিস কোন বিজ্ঞানের গ্রন্থ নয়। হাদিসকে কখনো কখনো বিজ্ঞানের আলোকে ব্যাখ্যা করা যাবে। কখনো সেটা সম্ভব নাও হতে পারে। যেখানে সেটি পারা যাবে না, বুঝতে হবে, বিজ্ঞানকে আরো এগুতে হবে, সে এখনো অসম্পূর্ণ আছে। বিজ্ঞানে শেষ বা চূড়ান্ত বলে কিছু নেই। যেমন ধরুন, প্রথম দিকে বলা হয়েছে, করোনা ভাইরাস ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপে বিস্তারলাভ করে না। এখন বলা হচ্ছে সেটি সঠিক নয়। আবার কয়েকদিন আগেই বলা হতো, করোনা ভাইরাস এতোই ভারী যে, রোগী হাঁচি দিলে সেই ভাইরাস ১ মিটার দূরে যাওয়ার আগেই ধপাস করে মাটিতে পরে। দুর্ভাগ্য, এটিও হয়তো ঠিক নয়। আমেরিকার বিজ্ঞানীরা ইতিমধ্যেই বলতে শুরু করেছেন, করোনা ভাইরাস ৩ঘণ্টা পর্যন্ত বাতাসে ভাসতে পারে! ২ সপ্তাহ পরে আমরা হয়তো এ সম্পর্কে ভিন্ন রকমের তথ্য জানবো।

বিশ্বব্যাপী মসজিদে জামাত সীমিত করার সিদ্ধান্ত: শুরুতে আমরা যা বলছিলাম, এক ঘরণার আলেম মসজিদে স্বাভাবিক জামাত না করার সিদ্ধান্তের বিপক্ষে মতামত দিচ্ছেন। তারা ‘সংক্রমণ বলে কিছু নেই’ হাদিসের যে যুক্তি দিচ্ছেন তা কতোটা নির্ভরযোগ্য তা বোঝার জন্য আমরা আরো ২টি হাদিস দেখে নিই।

সহীহ বুখারি, হাদিস নং ৯০১। ইবনু ‘আববাস (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি তার মুয়ায্যিনকে এক প্রবল বর্ষণের দিনে বললেন, যখন তুমি (আযানে) ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ বলবে, তখন ‘হাইয়া আলাস্ সালাহ্’বলবে না, বলবে, ‘সাল্লু ফী বুয়ুতিকুম’(তোমরা নিজ নিজ বাসগৃহে সালাত আদায় কর)। তা লোকেরা অপছন্দ করল। তখন তিনি বললেন, আমার চেয়ে উত্তম ব্যক্তিই (রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) তা করেছেন। জুমু’আহ নিঃসন্দেহে জরুরি। আমি অপছন্দ করি তোমাদেরকে মাটি ও কাঁদার মধ্য দিয়ে যাতায়াত করার অসুবিধায় ফেলতে।

সহীহ বুখারি, হাদিস নং ৬৩২। নাফি (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, প্রচণ্ড এক শীতের রাতে ইবনু ‘উমার (রা.) যাজনান নামক স্থানে আযান দিলেন। অতঃপর তিনি ঘোষণা করলেন, তোমরা আবাস স্থলেই সালাত আদায় করে নাও। পরে তিনি আমাদের জানালেন যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফরের অবস্থায় বৃষ্টি অথবা তীব্র শীতের রাতে মুয়ায্যিনকে আযান দিতে বললেন এবং সাথে সাথে এ কথাও ঘোষণা করতে বললেন যে, তোমরা নিজ বাসস্থলে সালাত আদায় কর।

মসজিদে জামাতে নামাজ আদায় অবশ্যই অনেক নিয়ামতের। তা হতে বঞ্চিত হওয়া বড়ই কষ্টের। কিন্তু এমন মহামারীর পরিস্থিতিতে বাসায় নামাজ পড়ার জন্য যথেষ্ট যুক্তি কি বর্ণিত হাদিসগুলোতে নেই? অনেকেই আবেগ প্রবণ হয়ে বলছেন, মসজিদ আল্লাহর ঘর। সেখান থেকে করোনা ছড়াবে না। তারা জেনে রাখুন, আল্লাহ এমন কোন প্রতিশ্রুতি কোথাও দেননি। বরং মসজিদেও মশা কামড়ায়। পবিত্র ক্বাবায়ও দুর্ঘটনায় হাজি মারা যান।

আল জাজিরা টিভির বিগত ১৮ মার্চের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, সেদিন পর্যন্ত মালয়েশিয়াতে যে ৬৭৩ জন লোক করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন তার দুই-তৃতীয়াংশ কুয়ালালামপুরের নিকটবর্তী এক মসজিদে আগত তাবলিগ জামাত হতে আক্রান্ত হয়েছিলেন।
মূল বিষয় হলো জনসমাগম। সেটি মসজিদেই হোক আর খেলার মাঠ বা রাজনৈতিক ময়দানেই হোক। করোনায় আক্রান্ত কারো স্পর্শে আসলেই তাতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।

আলেমগণ যদি সিদ্ধান্ত নেন যে, মসজিদে স্বাভাবিক জামাত হবে, আর হাজার হাজার মানুষ মসজিদে নামাজ পড়তে যায়। তাদের একজনের যদি করোনা থাকে তাহলে লক্ষ লোকে ছড়াতে সাত দিনের বেশি লাগবে না। আর যদি জানা যায়, মসজিদ হতে লক্ষ লোকে করোনা ছড়িয়েছে, তাহলে ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে আমাদের জবাব দিহি করতে হতে পারে। মসজিদ হতে সংক্রমিত হয়ে যদি মানুষ মারা যায়, আর সংখ্যাটি যদি অনেক হয়, ভবিষ্যত প্রজন্ম বলবে, যে মসজিদ হতে ব্যাপকভাবে করোনা ছড়িয়ে হাজার হাজার মানুষ মারা যায়, সে মসজিদে যেয়ে কী হবে। তারা মসজিদ বিমুখ হতে পাড়তে পারে। অতীতে গীর্জা নিয়ে এমন হয়েছে। খৃষ্টানদের গীর্জা বিমুখ হওয়ার পেছনে গীর্জার পাদ্রীদের এমন অনেক ভুল সিদ্ধান্ত দায়ী। তাই, বাংলাদেশের আলেমদের প্রতি সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের অনুরোধ রইল। করোনা ভাইরাসকে হালকাভাবে নিবেন না, আবেগ দিয়েও দেখবেন না।

লেখাটি সংগ্রহ করা হয়েছে
মুল লেখক: জাকির হোসেন
কমিশনার, কাস্টমস এক্সসাইজ অ্যান্ড ভ্যাট কমিশনারেট, যশোর।
জাকির হোসেন ( ইসলামিক চিন্তাবিদ ও গবেষক)

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা এপ্রিল, ২০২০ ভোর ৪:০৩

নেওয়াজ আলি বলেছেন: ধেশের আলেম তারা এখন জালেম। একটার পিছনে একটা লেগে আছে

২| ০১ লা এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১০:২৫

এভো বলেছেন: করোনায় গোলক ধাঁধাঁয় মু’মিন মুসলমান ।

ভাই আপনার কথার গোলক ধাধায় আমরা পরে গেলাম , ভাইরাস কোন বাহকের মাধ্যমে সংক্রমিত হয় , ভাইরাস নিজে নিজে সংক্রমনিত হতে পারে না তাতে কি ভাবে প্রমাণ হোল সংক্রমনিত রোগ বলে কিছু নেই ? যে সকল রোগ সংক্রমনের মাধ্যমে ছড়ায় তাকে সংক্রমিত রোগ বলে । সংক্রমনের মাধ্যম অনেক কিছুই হতে পারে । হাদিসটিতে বলছে সংক্রমন রোগ বলে কিছু নেই । ধন্যবাদ

৩| ০১ লা এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ২:৪৮

রাজীব নুর বলেছেন: শেষমেশ মানুষের জয় হবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.