| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |

স্বাধীনতার দাবিতে উত্তাল মোজাম্বিকের কাবো-ডেলগাডো প্রদেশের মুসলিমরা!!
দক্ষিণ-পূর্ব আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক।
একটু মানচিত্রের দিকে তাকালে দেখবেন যে মোজাম্বিকের দক্ষিণ ও পশ্চিমে আর কোন মুসলিম দেশ নেই। ভারত মহাসাগরের কিনারা ঘেষে এই দেশটিতে পর্তুগীজদের আগমনের পূর্বে আরব বনিকেরা বানিজ্য করতে এসেছিলো। তখনই এই অঞ্চলে ইসলাম প্রচার হয়। যদিও সরকারি গেজেট ও উইকিপিডিয়ায় দেখানো হয় মোজাম্বিকে ১৮% মুসলমান কিন্তু দেশটির মুসলিম নেতারা বলছে প্রকৃতপক্ষে মুসলমানদের সংখ্যা ৪০% এর উপর। মুসলিম নেতারা দাবি করছে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ খ্রিস্টানরা সেখানে মুসলমানদের দমিয়ে রাখতে প্রকৃত সংখ্যা প্রকাশ করছে না। আর ১৯৭৫ সালে স্বাধীনতার পর থেকে মোজাম্বিকের ক্ষমতা সব সময় খ্রিস্টানদের কাছেই রয়েছে।
~
দেশের মোট ১০ টি প্রদেশের মধ্যে
উত্তরাঞ্চলীয় কাবো ডেলগাডো এবং নিয়াশশা প্রদেশ দুইটি মুসলিম অধ্যুষিত।
কলোনিয়াল আমলে প্রায় ৪০০ বছর পর্তুগীজ দ্বারা এবং স্বাধীনতা প্রাপ্তির পরে বামপন্থী গেরিলাদের দ্বারা মোজাম্বিকের মুসলিমরা ব্যাপক নির্যাতনের স্বীকার হয়। বর্তমান সময়ে এসেও যে নির্যাতন কমে গিয়েছে, এমনটা না। মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলগুলো বৈষম্যের কারণে দীর্ঘদিন ধরে স্বাধীনতার আন্দোলন করছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার তা দমিয়ে রেখেছে। সারাদিনই তো ব্যাস্ত থাকি আমেরিকা, চায়না ও তুর্কী নিয়ে। কিন্তু "কাবো ডেলগাডো" এর মুসলিমরা কেমন আছে জানেন কি!! আসুন জেনে নেই।
~
মুসলিম অধ্যুষিত প্রদেশ কাবো ডেলগাদো প্রদেশটিতে রয়েছে বিশ্বের পরবর্তী সর্বচ্চো লিকুইড ন্যাচারাল গ্যাসের খনি (LNG), বিশ্বের সবচেয়ে বড়ো এবং খুবই রেয়ার রত্ন পাথরের খনি( Pink Sapphire), রয়েছে মূল্যবান চুনা পাথর। ২০১১ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের এনার্জি কোম্পানি এনাডার্কো (Anadarko) এই অঞ্চলে তাদের আবিষ্কৃত Ravuma Basin থেকে উত্তলিত গ্যাসের ৭০% নিজেরা, ২০% মোজাম্বিক সরকার আর বাকি ১০% পাচ্ছে স্থানীয় সেনাবাহিনীরা নিচ্ছে।
~
এই প্রদেশই রয়েছে তেল ও গ্যাস ট্রানজিটের বন্দর Macimboa da praia, এই বন্দর দিয়েই পশ্চিমারা এই প্রদেশের সম্পদ, এই প্রদেশের মুসলমানদের বঞ্চিত করে তাদের চোখের সমানে দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে নিজ দেশে। খনি উত্তোলনের জন্য জোরপূর্বক মুসলমানদের বসতবাড়ি উচ্ছেদ করছে। গৃহহীন হচ্ছে হাজারো মুসলমান।
~
এই কোবা ডেলগাদোর মুসলমানদের প্রধান পেশা সমুদ্রের তীরবর্তী এলাকায় কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের এনার্জি কোম্পানি Anadarko, ইতালির এনার্জি কোম্পানি ENI, মোজাম্বিকের ধনী খ্রিস্টানা মিলে এসব সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায় নিজেদের কারখানা ও বিলাসবহুল হোটেলে স্থাপনের কারনে এখানকার মুসলমানরা কৃষি কাজও করতে পারছে না।
~
নিজেদের বিশাল প্রাকৃতিক সম্পদ থেকেও না খেয়ে মারা যাচ্ছে, মাইন উত্তোলনের জন্য জোরপূর্বক ঘরবাড়ি হারিয়ে গৃহহীন, ধর্মের কারনে কেন্দ্রীয় সরকারের বৈষম্যের শিকার হয়ে এবং একমাত্র অবলম্বন কোস্টাল এরিয়ায় নিজেদের কৃষি জমি হরিয়ে এখানকার মুসলমানরা যেন এক নিদারুণ, নিষ্ঠুরতায় কোন রকমে বেচে আছে।
~
এই নিঃস্ব মুসলমানদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে, আর্থিক সহযোগিতার নামে এখানে দুটি জঙ্গি সংগঠন তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। একটি সোমালিয়ার জঙ্গি সংগঠন আল শাবাবের সমর্থিত "Ahlu Sunna Wal Jammah" (ASWA) এবং অন্যটি ISIS এর এ্যাফিলিয়েটেড ও আফ্রিকায় আইএসের প্রশাসনিক শাখা "The Islamic State Central Province" (ISCAP)।তারা এখানে সিরিয়ার মতো খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে।
~
দেশটিতে ১৪৯৮ থেকে ১৯৭৫ এই ৪০০ বছর ধরে চলে পর্তুগিজ শাসন। স্বাধীনতা অর্জন করে ১৯৭৫ সালে। স্বাধীনতা যুদ্ধে মোজাম্বিকের অন্যতম রাজনৈতিক দল "The Mozambique Liberation Front"
যাকে সংক্ষেপে ফ্রিলিমো (FRELIMO) বলে,
এর সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মোসলমানরাও পর্তুগীজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জীবন দিয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে সংখ্যা গরিষ্ঠ খ্রিস্টানরা মুসলমানদের এই অবদানকে অস্বীকার করে। যুদ্ধে মুসলমানদের ভূমিকা তারা মেনে নিতে নারাজ।
~
নাগরিকদের গড় আয়ু অত্যন্ত কম। এইডসের কারণে মৃত্যুর হার অত্যন্ত বেশি। একই সঙ্গে শিশু মৃত্যুর হারও কম নয়। দেশের মেডিকেল সাপ্লাই যোগান দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। HIV ও এইডস নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্র কাজ করছে এই অঞ্চলে। আবার এই অঞ্চলে চীন অবকাঠামো খাতে অনেক বিনিয়োগ করছে। মোজাম্বিকে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের আধিপত্যের পাশাপাশি রয়েছে ইতালিয়ান গ্যাস কোম্পানি। বর্তমানে প্রেসিডেন্ট ফিলিপ নাউসি এবং প্রধানমন্ত্রী কার্লস অগস্টিনো ডি রোসারিও এর হাত ধরে মোজাম্বিকের শিল্প খাত ও অর্থনৈতিক কিছুটা উন্নত হলেও বৈষম্যের শিকার মুসলিম অধ্যুষিত কাবো ডেলগাডোর হাজার হাজার মুসলিম শিশু অপুষ্টি, ডায়রিয়া, কলেরা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে। উপায়ন্তর না দেখে বছরের পর বছর নির্যাতিত হয়ে এখন তারা মনে করছে মোজাম্বিক থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই
মোজাম্বিকের দক্ষিণে-পশ্চিমে ও আশেপাশে যেহুতো তেমন কোন শক্তিশালী মুসলিম রাষ্ট্র নেই। সম্প্রতি এই প্রদেশর জঙ্গি গোষ্ঠীরা তাদের সংগঠনে যোগ না দেওয়ার অপরাধে প্রায় ৫০ জনের মাথা কেটে (Beheading) রাস্তায় ফেলে রাখে। তারপর থেকেই পুনরায় আলোচনায় আসে মোজাম্বিক। আফ্রিকার এই অসহায় নিগ্রো মুসলমানদের জন্য অন্যান্য মুসলিম দেশগুলো কি ভাবছে? কাশ্মীর, উইঘুর এর মতো মোজাম্বিকের "কাবো ডেলগাডোর" মুসলমানরাও কি বছরের পর বছর এভাবে নির্যাতিত হতে থাকবে?
লেখক ;
Muhammad Miraj Mia
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
©somewhere in net ltd.