| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আজ থেকে প্রায় সাড়ে চার বছর আগে আমার জীবনে এমন এক সময় এসেছিল, যখন আমি বুঝতে পারছিলাম না যে, আমার আব্বুটা মরে গেলেই ভাল না বেঁচে থাকলে ভাল।
তখন বয়সটাও অনেক কম ছিল। সদ্য যৌবনে পা দিয়েছি।
লেখা-পড়ার অনেক চাপ। সামনেই ভার্সিটির এ্যাডমিশন টেস্ট।
প্রায় প্রায়ই বাবা গভীর রাতে অসুস্থ হয়ে পড়তেন। তাকে নিয়ে ছুটতে হত ক্লিনিকে, হাসপাতালে।
একবার এক শীতের রাতে বাবা খুব অসুস্থ হয়ে পড়লেন। এর আগে তার দু’বার হার্ট একাট হয়ে গ্যাছে। তার তলপেটে প্রচুর ব্যথা অনুভূত হচ্ছিল। ব্যথার তাড়নায় ঘর থেকে বেরিয়ে পড়লেন খুড়িয়ে খুড়িয়ে। বাড়ির আঙ্গিনায় গিয়ে শুয়ে পড়লেন। তিনি উঠতে পারছিলেন না।আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলেন তাকে ওঠানোর জন্য। হাত গুলো খুব নরম ছিল। অস্বাভাবিক রকমের নরম।
সে যাত্রায় তিনি বেঁচে যান।তার এ্যাপেনডিক্স এর অপারেশন হয়েছিল। কিন্তু অপারেশনটা সাক্সেসফুল হয়নি। তার তলপেটের কাটা জায়গাটা থেকে সবসময় পুঁজ পড়ত। বাবা কষ্টে কুকিয়ে উঠতেন।
অসুস্থ বাবাকে হাসপাতালে ফেলে রেখে এক সন্ধ্যায় আমাকে চলে আসতে হল। যাবার সময় আমার হাত ধরে বাবা বললেন, বাবা, ভাল করে পড়ালেখা করো। তোমাদের জন্য তো কিছুই করে যেতে পারলাম না। মনের মধ্যে সাহসটাকে রাখ। যেন আমি না থাকলেও তুমি লেখাপড়াটা চালিয়ে যেতে পারো।
২
বাবাকে নিয়ে আমার এই পথচলা সেই ২০০৩ থেকে, যখন লিভার ক্যান্সারে আমার মা আমাকে ছেড়ে চলে যান।
মা মারা যাবার পর বাবা আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি। শারীরিক, মানসিক- দু’দিক থেকেই ভেঙ্গে পড়লেন মারাত্মক ভাবে।
আমি তখন সবে মাত্র ক্লাস এইটে উঠেছি। আর কিছুদিন পরই আমার বৃত্তি পরীক্ষা।আর্থিক অনটন শুরু হয়ে গ্যাছে পুরোদমেই।বাবার অসুস্থতা আর সরলতার সুযোগ নিয়ে কিছু অসৎ লোক অফিসের গোডাউন থেকে পুকুরচুরি করে ন্য়ে। জমি-জমা সব বেঁচে সরকারের দেনা পরিশোধ করতে হয় বাবাকে। বেঁচে যায় কেবল বাড়ি-ভিটেটা।
জুনিয়ন বৃত্তি পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করার পর খুশি হয় সবাই। কিন্তু বাবা খুব বেশি খুশি হবার সময় পান নি। সেইদিন তিনি আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন।
বৃত্তিপ্রাপ্তদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বাবাকে নিয়ে গিয়েছিলাম। আমার গলায় একটি মেডেল দেখে বাবা খুশি হয়েছিলেন। শিশুর মতো করে তিনি হাসছিলেন। একমাত্র সেই মুহূর্তেই আমার মনে হয়েছিল যে, আমার বাবা সম্পূর্ণ সুস্থ। কে বলবে, আমার বাবা বারোমাসের রুগী?
৩
কিন্তু, বাবা দিনদিন আরও অসুস্থ হয়ে পড়তে থাকে। সংসারের টানাপোড়েন আরও বাড়তে থাকে।বড়বোনটা শান্তিনিকেতনে পড়ত তখন।খুব ভাল গান করত। রংপুর বেতারের নিয়মিত শীল্পি হয়ে গেল। কিন্তু বড়বোনকে দেশের বাহিরে পড়ানো, সাথে সাথে আমার পড়ালেখার খরচ মেটানো এক দুঃসাধ্য কাজ হয়ে পড়ল বাবার জন্য। আমাদের কাউকে তিনি কিছু বুঝতে দিতেন না। যতক্ষণ সুস্থ থাকতেন, হাসি মুখে কথা বলতেন। রাতে আমি বাবার পাশে গিয়ে শুয়ে পড়তাম। মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে দেখতাম, একা আঙ্গিনায় মাথা নামিয়ে বাবা পায়চারী করছেন।
সুসময়ের বন্ধুরা একে একে চলে যায়। একসময় যারা স্যার স্যার করতে করতে অস্থির হয়ে যেত, তারা বাবাকে দেখে মাথা নামিয়ে পাশ কেটে চলে যায়। আমি দেখি, হাসি। বাবা ওসব দেখেনও না, হাসেনও না।তার মাথায় তখন ঘোরাঘুরি করে কি করে তার ছেলে-মেয়ে দুটিকে মানুষ করা যায়।
৪
ইন্টারমিডিয়েট সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি তখন। ফাইনালের আর খুব বেশি দিন বাকি নেই। পড়াশোনার অনেক চাপ।
বিকেলে প্রাইভেট থেকে ফিরে এসে শুনি, বাবা অসুস্থ।তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
একথা শুনে একটা সন্তানের যতটুকু বিচলিত হবার কথা আমি ঠিক ততটা হলাম না। কারণ এর আগে আমি আরও অনেকবারই এমন পরিস্থিতির সম্মুখিন হয়েছি। তারপরও, বাবার অসুস্থতার কথা শুনে কোন সন্তানই বা স্থির থাকতে পারে।ছুটে গেলাম হাসপাতালে।হাসপাতালের একটি মলিন বেডে বাবা অনেক পরিচিত ভঙ্গিমায় চিৎ হয়ে পায়ের উপর পা তুলে শুয়ে ছিলেন। হাত আর পা গুলো ছিল অস্বাভাবিক রকমের ঠান্ডা।আমি দ্রুত দোকান থেকে সরিষার তেল কিনে এনে বাবার হাতে-পায়ে তেল মালিশ করা শুরু করলাম। খুব বেশি লাভ হল না তাতে।মামা আমাকে পাঠিয়ে দিলেন আমার এক দাদুকে ডেকে আনতে।দাদু পরে আসবেন বলে আমাকে পাঠিয়ে দিলেন। আমি আবার ফিরে এলাম হাসপাতালে। ভেতরে ঢুকতে না দিয়েই মামা আমাকে আবার বাড়িতে পাঠিয়ে দিলেন। সবাই যেন আমাকে তাড়ানোর চেষ্টা করছে। কিছু বুঝে উঠতে পারছিলাম না।
শুধু বুঝেছিলাম যে, আমার বাবাটার অনেক কষ্ট হচ্ছিল। কিন্তু দাঁতে দাঁত চেপে সব সহ্য করে যাচ্ছিলেন।তখন ঠিক বুঝতে পারছিলাম না, তার একটা কষ্ট পেয়ে বেঁচে থাকা ভাল হবে, না কি মরে গিয়ে শান্তি পাওয়া ভাল হবে।
আমি জানি না, মানুষ মরে গেলে সত্যিই শান্তি পায় কি না। কিন্তু কেন যেন মৃত মানুষকে দেখে মনে হয় তিনি খুব শান্তিতে আছেন।আমার বাবাও তখন সেই শান্তির খুব কাছাকাছি ছিল।
আসলে, হাসপাতালে কেউ আমাকে বলতে চায় নি যে বাবা আর নেই। তাই সবাই আমাকে তাড়ানোর চেষ্টা করছিল। বাড়িতে ফিরে দেখি সবাই ইচ্ছেমত কান্না-কাটি করছে। সে এক ভয়াভয় অবস্থা। মানুষ মরে গেলে কি এত কাঁদতে হয়?
আমি তাই কাঁদি নি।ঠিক পাঁচ বছর আগে একই সময়ে আমার মা মারা যান।আমি তখনও কাঁদিনি। না কেঁদে থাকার অভিজ্ঞতাটা আমার আছে, ভালমতই আছে।
৫
আমার খুব কাছের বন্ধু নাজমুল নাবিদ এর আব্বু কিছু দিন আগে মারা গেলেন।আঙ্কেল অসম্ভব রকম ভাল মানুষ ছিলেন।সাদাসিধে, নরম স্বভাবের একজন মানুষ ছিলেন তিনি।
এখন কেন যেন জীবিত বাবার থেকে মৃত বাবাকে অনেক বেশি সম্মান করতে ইচ্ছে করে। জীবিত বাবার থেকে মৃত বাবাকে অনেক বেশি পবিত্র বলে মনে হয়।
পৃথিবীতে কত লোকের আব্বু প্রতিদিন মারা যাচ্ছে। তারা কত কান্না-কাটি করছে, হা-হুতাশ করছে। তারা আসলে জানেই না যে, আব্বু কোন দিনও মারা যায় না। আব্বু চিরকালই বেঁচে থাকে তাঁর সন্তানদের মধ্য দিয়ে।পৃথিবীতে কারও আব্বু যেন কোনদিন মারা না যায়।।
১৯ শে নভেম্বর, ২০১২ রাত ৮:৫৯
পেলব চক্রবর্তী বলেছেন: শুভকামনার জন্য ধন্যবাদ......।
দেরী করে উত্তর দেবার জন্য দুঃখিত।
২|
১৬ ই নভেম্বর, ২০১২ রাত ১:৫৮
মনে নাই বলেছেন: বলার মত কিছু খুজে পাইনা, কারোর কাছের কেউ মারা গেলে আমি নির্বাক হয়ে যাই, সান্তনাসূচক কিছু মুখ দিয়ে আসেনা আমার।
বাবারা বেচে থাকে চিরকাল তাদের সন্তানদের মাঝে।
১৯ শে নভেম্বর, ২০১২ রাত ৯:০১
পেলব চক্রবর্তী বলেছেন: ধন্যবাদ।
দেরী করে উত্তর দেবার জন্য দুঃখিত।
৩|
১৬ ই নভেম্বর, ২০১২ রাত ৩:৫০
সবুজসবুজ বলেছেন: প্রিয়জন হারানোর যন্ত্রণা খুব কষ্টের
১৯ শে নভেম্বর, ২০১২ রাত ৯:০৩
পেলব চক্রবর্তী বলেছেন: আসলেই তাই। যার হারিয়ে যায় কষ্টটা শুধু সেই বোঝে।
দেরী করে উত্তর দেবার জন্য দুঃখিত।
৪|
১৬ ই নভেম্বর, ২০১২ ভোর ৪:১৪
একজন আরমান বলেছেন: বাবারা বেঁচে থাক সন্তাদের মাঝে ...
১৯ শে নভেম্বর, ২০১২ রাত ৯:০৪
পেলব চক্রবর্তী বলেছেন: আমরা সবাই সে আশাই করি।
দেরী করে উত্তর দেবার জন্য দুঃখিত।
৫|
১৬ ই নভেম্বর, ২০১২ ভোর ৫:২৪
অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: আব্বু কোন দিনও মারা যায় না। আব্বু চিরকালই বেঁচে থাকে তাঁর সন্তানদের মধ্য দিয়ে।পৃথিবীতে কারও আব্বু যেন কোনদিন মারা না যায়।। ++++++++++++++++
১৯ শে নভেম্বর, ২০১২ রাত ৯:০৬
পেলব চক্রবর্তী বলেছেন: ধন্যবাদ........
৬|
১৬ ই নভেম্বর, ২০১২ ভোর ৬:১৩
মাক্স বলেছেন: শুভকামনা রইল আপনার জন্য।
১৯ শে নভেম্বর, ২০১২ রাত ৯:০৭
পেলব চক্রবর্তী বলেছেন: আপানাকে ধন্যবাদ।
দেরী করে উত্তর দেবার জন্য দুঃখিত।
৭|
১৮ ই নভেম্বর, ২০১২ দুপুর ১:৫৯
ভুং ভাং বলেছেন: বাবা মারা যাবার পর অনেকক্ষণ ভাবলাম আমি নিশ্চই কোন স্বপ্ন দেখছি, কিন্তু হায় এই স্বপ্ন যেন কোন দিন শেষ হয় না । সত্যিই কেন যেন জীবিত বাবার থেকে মৃত বাবাকে অনেক বেশি সম্মান করতে ইচ্ছে করে। জীবিত বাবার থেকে মৃত বাবাকে অনেক বেশি ভালবাসার বলে মনে হয়। ++++++++++++++++
১৯ শে নভেম্বর, ২০১২ রাত ৯:১৯
পেলব চক্রবর্তী বলেছেন: অনুভূতিগুলো অনেকক গভীরের। কারণ, ভালবাসাটা অনেক গভীর থেকে আসে।
প্রিয় ভুং ভাং ভাই, আপনাকে ধন্যবাদ।
৮|
২৭ শে মার্চ, ২০১৩ সকাল ১১:৩৩
স্বপনীল জলরং বলেছেন: আব্বু চিরকালই বেঁচে থাকে তাঁর সন্তানদের মধ্য দিয়ে
আপনার এই কথা টা খুব এ ভাল লেগেছে। আল্লাহ তালা আপনার ভাল করুক।
২৮ শে মার্চ, ২০১৩ সকাল ১১:৩৮
পেলব চক্রবর্তী বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ জলরং ।।
৯|
২৮ শে মার্চ, ২০১৩ সকাল ১১:৫৮
নিমচাঁদ বলেছেন: 'ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুর ই অন্তরে '
বাবারা সব সময়ই আমাদের ভিতরে ঘুমিয়ে থাকেন।তাই বাবা কে হৃদয়ে ধারণ করুন আমৃত্যু।
২৯ শে মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১২:৪৮
পেলব চক্রবর্তী বলেছেন: ঠিক বলেছেন নিমচাঁদ দা, সহমত ।।
©somewhere in net ltd.
১|
১৬ ই নভেম্বর, ২০১২ রাত ১:৫০
নানাভাই বলেছেন: বাবারা চিরকাল বেঁচে থাকেন, তাদের সন্তানদের মাঝে। ভালো কাজ করবেন, আর বাবার জন্য দুয়া করবেন মহান আল্লাহর কাছে; আল্লাহ তাদের আত্মাকে নিশ্চয়ই শান্তি দেবেন।আর আপনিও তাদের দুয়া পাবেন।