![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অামি একজন ব্যর্থ মানুষ। জীবনে কখনো সফলতার স্বাদ পায়নি। জীবনে যা চেয়েছি তার বিপরীতটাই পেয়েছি। এর পর থেকেই হতাশা অামাকে গ্রাস করে। হতাশা থেকে মুক্তির জন্য ঘুরেত থাকি। হতাশা থেকে মুক্তি পাই না। কেউ অামাকে হতাশা থেকে মুক্তি দিতে পারে না। অামি নিজেকে ও হতাশা থেকে মুক্ত করতে পারছিলাম না। সমগ্র পৃথিবী তন্ন তন্ন করে খেঁাজেছি এক মুঠো শান্তির অাশায়। হতাশা থেকে মুক্তির অাশায়। কেউ অামাকে মুক্তি দিতে পারে নি। মুক্তি অামি শেষ পর্যন্ত পাই। মুক্তি পাই বই থেকে। প্রচুর বই পড়তে থাকি হতাশা থেকে মুক্তির জন্য। কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক সব। সাহিত্যর সব জায়গায় বিচরণ করতে থাকি। এভাবেই চলে অনেক বছর। এর পর থেকে নিজের মনেই অাসতে থাকে কিছু সৃষ্টি করার। নতুন কিছু সৃষ্টি করার। নতুন কিছু সৃষ্টি থেকেই কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক লেখা শুরু করি। যা অামাকে হতাশা থেকে মুক্তি দেয়। এখানে ও জানি সফলতা পাব না। ব্যর্থতা যাকে ঘিরে ধরে সে সফলতা পায় না। অামি ও পাব না। অনেক লেখি। কোন লেখা বই অাকারে প্রকাশ পায় না। কোন লেখা থেকে জীবন বাঁচানোর জন্য এক কাপ চায়ের পয়সা ও অাসে না। লেখক হিসেবে ও স্বীকৃতি মিলে না। যাক কিছু না হোক হতাশা মুক্ত হোক
অজপাড়া গাঁ
কামরুল হাছান মাসুক
গ্রামের নাম কুসুমপুর। অজপড়া গাঁ বলতে যা বুঝায় তার চেয়েও খারাপ অবস্থা। গ্রামে বিদ্যুৎ নেই। গ্যাসের ব্যবস্থা থাকার প্রশ্নই আসে না। গ্রামে অদ্ভুত একটা চল আছে। চলটি হচ্ছে গ্রাম থেকে কেউ বের হয় না। মানে গ্রাম ব্যতিত গ্রামের লোক অন্য কোথায়ও যায় না। এখানে কোন আমদানি বা রপ্তানি মানে গ্রামে কোন কিছু বাহির থেকে ঢুকে না। গ্রাম থেকেও বাহিরে কোন কিছু যায় না। এই হচ্ছে গ্রামের অবস্থা। এই গ্রামটি দেখার জন্য জাতীয় দৈনিকের সিনিয়র কিছু সাংবাদিক গেলেন পরিদর্শনে। গ্রামে গিয়েই বুঝতে পারলেন অবস্থা ভাল না। গ্রামে থেকে কেউ যেমন বের হয় না তেমনি নতুন কোন মানুষ গ্রামে প্রবেশ করে না। সাংবাদিকরা প্রবেশ করার মুখেই আটকে গেলেন। নতুন মানুষ দেখে তাদের ঢুকতে দিচ্ছেন না। শর্তসাপেক্ষ অনেক কষ্ট করে সাংবাদিকরা ঢুকলেন। গ্রামের যে নেতা তিনি সাংবাদিকদের থাকলে দিলেন। ভাল করে বলে দিলেন ওদের জন্য গ্রামে যেন কোন সমস্যা না হয়। সাংবাদিকরা সাথে করে মোবাইল, ল্যাপটপ এবং প্রজেক্টর নিয়ে গিয়েছিলেন। গ্রামের ভিতর প্রবেশ করার আগেই এগুলি রেখে দেওয়া হয়েছিল। সাংবাদিকরা গ্রামের নেতাকে অনুরোধ করলেন তাদের ব্যবহার্য জিনিষগুলি যেন ফেরত দেওয়া হয়। সাংবাদিকদের অনুরোধে যারা সাংবাদিকদের জিনিষগুলি নিয়েছেন তাদের ডাকলেন এবং বললেন সাংবাদিকদের জিনিষগুলি যেন দিয়ে দেওয়া হয়। জাহান নামের এক ছেলে বলল, হুজুর ঐ গুলি দিয়ে এরা কি করবে। টিনের বেড়ার মত কি যেন এরা এনেছে। আমরা এই টিনের বেড়াটা একজন গরীব মহিলাদের দিয়ে দিয়েছি। টেপটেপ কি যেন বলে ওরা ত লেপটেপ আনে নি। ওরা ভারী শক্ত কি জিনিষ যেন এনেছে আমরা ছোটপিচ্ছিদের দিয়ে দিয়েছি। ওরা খেলতে পারবে। মোবাইল না কি যেন বলল না ওটা আমরা রেখে দিয়েছি। টিপ দিলেই বাতি জ্বলে। গ্যাসলাইট হবে বোধহয়। এটা আমাদের কাজে লাগবে। মাঝে মাঝে বিড়ি খাই।
সাংবাদিকরা মাথায় হাত দিয়ে ফেললেন। কি বলে এরা। এরা কি পাগল হয়ে গেল। নেতাকে বললেন, ওরা যে একটা মহিলাকে টিনের বেড়া দিয়ে দিয়েছে এটা টিনের বেড়া নয়। এটা হচ্ছে প্রজেক্টর। এই প্রজেক্টর এর দাম এক লক্ষ টাকা। বাচ্চাদের যা খেলতে দিয়েছে এটা বাচ্চাদের খেলনা নয় এটা হচ্ছে ল্যাপটপ। এটার দাম ষাট হাজার টাকা। মোবাইল গুলি লাইটার নয় এগুলি হচ্ছে কথা বলার মেশিন। এগুলি এক্ষনি এনে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।
নেতা বলল, এই মিয়া আপনারা আমারে বলদ পাইছেন। এক দের লক্ষ জিনিষ হাতে নিয়ে ঘুরছেন। এক দের লক্ষ টাকা বুঝেন। এই টাকা দিয়ে পাঁচ বিঘা জমি রাখা যায়। আপনারা মিয়া মজা করেন। জীবনে কোনদিন শুনছেন এক দের লক্ষ টাকা হাতে নিয়ে কেউ কোথায়ও গেছে। আপনারা মিয়া ফাউল। আপনারা এখনই আমার গ্রাম থেকে বেগে যাবেন। আপনাদের দেওয়া শর্ত আপনারা পালন করতে পারেন নি। আপনারা এখনই চলে যান।
আমাদের একথা আপনি শুনুন। টাকার কোন বিষয় না। আপনারা আমাদের জিনিষগুলি ফেরত দিয়ে দেন। তাহলে আমরা চলে যাব। তারাতারি ব্যবস্থা করেন। নইলে দামি দামি জিনিষগুলি নষ্ট করে ফেলবে। যদি প্রমাণ চান তাহলে জিনিষগুলি আমাদের সামনে আনেন। আমরা আপনাদের এর ব্যবহার দেখাই। যদি আমরা জিনিষগুলির ব্যবহার না দেখাতে পারি তাহলে আপনি যে শাস্তি দিবেন আমরা তা মাথা পেতে নিব।
ঠিক ত মিয়া। যদি তেরিবেড়ি করেন তাহলে আপনাগ কপালে হারাপি আছে। এই এদের জিনিষগুলি নিয়ে আয়।
জিনিষগুলি আনা হল। বাচ্চারা খেলতে গিয়ে ল্যাপটপের অনেক অংশই নষ্ট করে ফেলেছে। ভাগ্য ভাল ছিল বলে চালু হয়েছে। নইলে গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টগুলি জলে যেত। মোবাইল গুলি অক্ষত অবস্থায় পাওয়া গেছে। প্রজেক্টরটিকে সত্যিই টিনের বেড়া হিসেবে লাগানোর চেষ্টা চালানো হয়েছি। যাক ভাগ্য বলে কথা। মোটামোটি সবগুলিই অক্ষত অবস্থায় পাওয়া গেছে।
সাংবাদিকদের পরীক্ষা দেওয়ার পালা। নেতা হাসি মুখে আসেন। উনি একশত ভাগ নিশ্চিত এরা পরীক্ষায় পাস করতে পারবে না। টিন, লাইটার, ইটার চাক্কার মত ভারী একটা যন্ত্র দিয়ে যদি কিছু করা যেত তাহলে মানুষ মানুষ থাকত না। মানুষ জিন হয়ে যেত।
নেতা এবং গ্রামবাসী মুড়ে মুড়ে হাসেন। বারবার সাংবাদিকদের দিকে তাকান। আজকে তাদের অবস্থা যে কি হয় কেউ জানে না। গ্রামের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুতর সাজা তারাই পাবেন। গ্রামভর্তি লোক এসে হাজির হল।
সাংবাদিকরা প্রশ্ন করল আপনারা যদি গ্রামের বাহিরে না যান তাহলে আপনাদের ্িবয়ে শাদি হয় কিভাবে।
একজন দাঁড়িয়ে বলল, বিয়ে শাদি মানে। গ্রাম ছাড়া কি বিয়ে শাদি হয়। আমরা জানি এই গ্রামের বাহির আর কিছুই নেই। আপনারা কোথায় থেকে আসলেন তা আমরা জানি না। আমরা ভাবতাম এই গ্রামের বাহির আর কিছুই নেই। আমরা এখান থেকে বের হই না। এই গ্রামেই সব কিছু আছে। বাজার থেকে শুরু করে যা যা দরকার সবই আছে। যদি কখনো এখানে খরা দেখা দেয় তাহলে আমরা সবাই না খেয়ে থাকি। বেশি উৎপাদন হলে নষ্ট করে ফেলি।
নেতা হাসতে হাসতে বললেন, মিয়ারা তারাতারি দেখান। না হলে বুঝতেই পারছেন। জনগণের মাইর। অবস্থা ভয়াবহ হবে।
সাংবাদিকরা প্রজেক্টর লাগালেন। প্রজেক্টরে একটা ছবি ছাড়লেন। গ্রামবাসী অবস্থা দেখে সবাই চোখ বন্ধ করে ফেলল। কয়েক মুহুর্তের জন্য সবাই হারিয়ে গেল। টিনের ভিতর কি দেখা যাচ্ছে। বাপরে বাপ। টিনের ভিতর মানুষ এনে ফেলেছে। মানুষদের কিভাবে টিনের ভিতর ঢুকাল। এরা জাদুঘরের চেয়েও বড় জাদুঘর। নেতার মুখটা মলিন হয়ে গেল। সাংবাদিকরা কয়েক ঘন্টা প্রজেক্টর লাগিয়ে রাখলেন। সমগ্র গ্রামবাসী আশ্চর্য হয়ে দেখতে লাগলেন। বোমা যখন ফুঁটে তারা ভয়ে চিৎকার দিয়ে উঠেন। চোখ খুলে দেখেন কিছুই হয় না। গাড়ী, বাড়ীর অবস্থা দেখে তারা মনে করেন বেহেস্ত থেকে কিছু নিয়ে আসল নাকি। এভাবে সাংবাদিকরা ল্যাপটপ এবং মোবাইলের ব্যবহার দেখালেন। সবকিছুতেই গ্রামবাসী এতটা আশ্চর্য হয়েছে যা ওরা জীবনে কখনো হয় নি। সাংবাদিকরা এখান থেকে বাচাই করে মেধাবী কয়েকজন গ্রামবাসীকে আধুনিক দুনিয়া দেখাতে নিয়ে এলেন। ওদের চিরদিনের বিশ্বাস, ধ্যান, ধারণা সবকিছু ভেঙ্গে দিলেন।
লালবাগ, ঢাকা।
©somewhere in net ltd.