নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

www.facebook.com/rafiuzzamansifat

মুহাম্মদ রাফিউজ্জামান সিফাত

প্রকাশিত লেখার স্বর্বস্বত্ব লেখক কতৃক সংরক্ষিত।লিখিত অনুমতি ব্যতিরেকে কোন অংশ হুবহু পুনর্ব্যবহার নিষিদ্ধ।ফেইসবুক : http://www.facebook.com/rafiuzzamansifat

মুহাম্মদ রাফিউজ্জামান সিফাত › বিস্তারিত পোস্টঃ

সেন্টমার্টিন ট্র্যাজিডি - নেপথ্যে প্রশাসনের গাফিলতি - চাই নিরাপদ পর্যটনকেন্দ্র

২০ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১০:১৭

গত চৌদ্দ এপ্রিল , ২০১৪ । সেন্টমার্টিনে সমুদ্র । নীল জলে নিহত হল সদ্য ইঞ্জিনিয়ার খেতাব পাওয়া চারজন যুবক । এখন পর্যন্ত নিখোঁজ আরও দুইজন ( ২০ এপ্রিল ) । একজন প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে সহজেই বলে দেয়া যায় এই ছয়জন মেধাবী যুবকের এইভাবে হারিয়ে যাওয়া কোন নিছক দুর্ঘটনা নয় । তাদের চলে যাওয়ার পিছনে ভূমিকা ছিল প্রশাসনের চরম গাফিলতি , আমাদের পর্যটনশিল্পের অনিরাপদ ব্যবস্থাপনা ।

সেন্টমার্টিনে উত্তর বিচ নামক যে জায়গায় আমার বন্ধুরা পানিতে ডুবে মারা যায় সেই স্থানটি এক ভয়াবহ বিপদজনক খাদ । কোমর সমান পানি । অথচ মাত্র এক স্টেপ সামনে এগোলেই প্রায় দেড়শ ফুট গভীর খাত । স্থানীয়দের মতে গত তিন বছরের ঠিক সেই জায়গায় মারা যায় প্রায় ১৩ জন্য ( নিখোঁজ দুইজনকে বাদ দিয়ে )

এতোটা বিপদসংকুল স্থান অথচ আশেপাশে নেই একটি লাল পতাকা । নেই বিপদজনক স্থান সমূহ চিহ্নিত করণসরুপ কোন সাইনবোর্ড । শুধু সেখানে কেন সমগ্র সেন্টমার্টিনে নেই সচেতনতা মূলক কোন সাইনবোর্ড , যা দেখে কোন পর্যটক বুঝতে পারবে কোথায় কি আছে , কোথায় বিপদ জনক স্থান !! কিচ্ছু নেই । আবার বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন নিয়ে আমাদের পর্যটন শিল্পের চলছে রমরমা বিজনেস ।


( নীল চিহ্নিত করা স্থান সেই মৃত্যুকুপ )

বন্ধুরা সামনে প্রিয় মুখগুলো ধীরে ধীরে ডুবে যাচ্ছে , ভাটার টানে গভীর খাদের আরও ভিতরে চলে যাচ্ছে ছেলেগুলো । বাঁচার জন্য তাদের সুতীব্র আকুতি । প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত উদ্ধারকর্মী ছাড়া তাদের ঐ স্থান থেকে উদ্ধার করা অসম্ভব । আমরা পাগলের মতো তাদের উদ্ধাররের জন্য চিৎকার করে যাচ্ছি । ছুটছি এদিক , ওদিক । কেউ নেই । আশেপাশে নেই একজন লাইফগার্ড । নেই উদ্ধার করবার মতো কোন প্রকার রেস্কিউ টিউব , দড়ি বা কোন কিছু ।

স্থানীয় মানুষের সহায়তায় উদ্ধার করা হল কয়েকজনকে । তাদের ভিতর সঙ্গে সঙ্গে মরে গেল দুইজন । ইভান এবং অংকুর । নিখোঁজ হল আরও চারজন । যাদের ভিতর দুইজনকে তার দুদিন পর সমুদ্র থেকে উদ্ধার করা হয় । এখনো নিখোঁজ আরও দুইজন । সাব্বির , উদয় ।

আমরা দেখেছি সেন্টমার্টিন প্রসাশনের দুর্বলতা । তারা যেন মৃত্যুর সমস্ত আয়োজন করে সাজিয়ে রাখে আগত পর্যটকদের জন্য । কেউ জীবিত ফিরে আসতে পারলে সেটা তার ভাগ্য । এবং মৃত্যুবরণকারী মানুষটি মরে যাওয়ার কয়েক সেকেন্ড আগেও টের পাবে না তাকে সেন্টমার্টিনের নাজুক দুর্বল প্রসাশন মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে অপরিকল্পিত পর্যটনকেন্দ্রের মাধ্যমে । যেখানে নিরাপত্তার বিন্ধুমাত্র সুযোগ নেই । এর চেয়ে বাজে পরিনতি আর কি বা হতে পারে ।

আমি জবাব চাই মাত্র এক হাত লাল কাপড়ের মূল্য কতো ? আমি জবাব চাই কুইক রেস্কিউ টিম কেন এমন বিপদ জনক এরিয়ায় সার্বক্ষণিক তৈরি থাকে না । আমি জানতে চাই কেন হোটেল ব্যবসায়ী তাদের টুরিস্টদের সাবধান করে দেয় না ? প্রতি রাস্তায় একটা বিপদ সংকেত মূলক সাইনবোর্ড কেন লাগানো হয় না ?
আমরা জানতে চাই ।

ইতিমধ্যে গত ১৯ এপ্রিল আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস সুমুক্ষে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্র ছাত্রীদের সরাসরি স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহনে নিরাপদ পর্যটনকেন্দ্র চাই : পর্যটন এলাকাতে অবিলম্বে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয় ।
ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য আমাদের এই শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন আমরা তুলে ধরি ১২ দফা দাবী । দাবী সমূহ --

১) প্রতি পর্যটনকারীদলের সাথে একজন প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত “পর্যটক গাইড” নিয়োগের বাধ্যতামূলক নিয়ম চালু করতে হবে ।

২) পর্যাপ্ত এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য উক্ত পর্যটন এলাকায় নিশ্চিত করতে হবে । সমুদ্রের জন্য কুইক “ লাইফ গার্ডের” সংখ্যা আরও বৃদ্ধি করতে হবে ।

৩) বিপদজনক পর্যটন এলাকায় বিশেষ সতর্কতা মূলক সাইন ব্যবহার করতে হবে ।

৪) স্থানীয় জনগন যেন উদ্ধার কাজে সহায়তা করতে পারে তারজন্য তাদের বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে ।

৫) প্রতি পর্যটন এলাকার জন্য একটি করে আলাদা পর্যটক গাইড বই এর ব্যবস্থা করতে হবে । যেখানে উক্ত এলাকার সমস্ত বিবরণ চিত্র সহকারে বর্ণিত থাকবে ।

৬) পর্যটন এলাকায় ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল ইউনিট স্থাপন করতে হবে ।

৭) বিপদজনক স্থানসমূহ রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে এবং জনসাধারনের প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে হবে । বিষয়টি তদারক করতে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ করতে হবে ।

৮) পর্যটন এলাকার সর্বত্র দ্রুত উদ্ধার কাজ পরিচালনার জন্য “ উদ্ধারকারী বুথ ” স্থাপন করতে হবে ।

৯) “ওয়াচ টাওয়ার” সহ প্রতি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে “ সচেতনামূলক সাইনবোর্ড “ স্থাপন করতে হবে ।


১০) প্রত্যেক পর্যটন এলাকায় যেকোন প্রয়োজন স্বার্থে একটি বিশেষ ইমারজেন্সি মোবাইল নাম্বার প্রদান করতে হবে ।

১১) প্রতিটি স্কুল , কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক চিকিৎসা সম্বন্ধীয় জ্ঞান লাভের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে ।

১২) পর্যটন এলাকার প্রতিটি হোটেল ব্যবসায়ীদের উক্ত এলাকা সম্পর্কে পর্যটকদের বিস্তারিত ধারনা দিতে হবে এবং প্রতি রুমে বিপদজনক স্থান চিহ্নিত করণসহ একটি গাইড ম্যাপ সরবরাহ করতে হবে ।





গত কিছুদিন যাবৎ সমস্ত মিডিয়া , ফেসবুকে মাতম সেন্টমার্টিনে পর্যটন মন্ত্রানালয়ের কাছে বলি হওয়া ছয় শিক্ষার্থীদের জন্য । জানি কিছুদিনের মধ্যেই কালো ফেসবুক আবার রঙিন হয়ে যাবে । ছয়টি নাম আর বুকে চিন চিন কাঁপন ধরাবে না । প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে আমাদের কিবোর্ডের খট খট আওয়াজ আর চোখ ভিজাবে না । হতে পারে এইটাই প্রকৃতির নিয়ম । প্রকৃতি হয়তো চায় না হারিয়ে যাওয়া প্রিয় মুখ চোখ লেপ্টে রাখতে সর্বক্ষণ । সময় পরিবর্তন ঘটাতে পারে সব কিছুর । সময়ের ক্ষমতা অসীম ।

আমি মনে প্রানে চাই -- রঙিন ফেসবুক আর যেন কোনদিন কালো করতে না হয় । তার জন্য ই খুব ছোট পরিসর থেকে ডাক দিয়েছিলাম নিরাপদ বাংলাদেশের । নিরাপদ পর্যটনকেন্দ্র নিশ্চিৎ করনে আমাদের শক্তি যুগিয়েছে সেই হারিয়ে যাওয়া প্রিয় মুখগুলো ।

আমাদের বন্ধুটি কথা দিয়েছিল তার মাকে সে নববর্ষের চার দিনের মধ্যে ফিরে আসবে বাসায় । সন্তান মাকে দেয়া কথা রাখতে পারেনি । তাকে রাখতে দেয়া হয়নি । আমাদের লড়াই ছিল প্রতিটি সন্তান যেন তার মাকে দেয়া কথা রাখতে পারে । বোনের অনাগত সন্তানকে নিয়ে ভবিষ্যৎ মামার স্বপ্ন যেন আর নষ্ট না হয় আমাদের সংগ্রাম ছিল তার জন্য । সংগ্রাম ছিল বন্ধুত্বের মর্যাদা রক্ষার । ভালোবাসার মানুষটির কাছে ফিরে আসার ।

" নিরাপদ পর্যটনকেন্দ্র চাই " ব্যানারে আমরা যে আন্দোলন শুরু করেছি সেটি আমার জন্য । আপনার জন্য । আমাদের জন্য । একে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব এখন সবার । বিশ্বাস করি বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ছাত্র সমাজ এখন যেভাবে এগিয়ে আসচ্ছে , সামনে আরও আসবে । প্রতিটি বাংলাদেশী নিজের অধিকার আদায়ে এগিয়ে আসবে । নন পলিটিক্যাল একদল সাধারণ ছাত্র ছাত্রীদের নিয়ে " নিরাপদ পর্যটনকেন্দ্রের ' যে দাবী আজ বাংলাদেশে ছড়িয়ে যাচ্ছে সেটি সুস্পষ্ট ভাবে প্রমান করে -- আমরাই পারি ।

জি আমরাই পারি পরিবর্তন ঘটাতে । দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করি -- পরিবর্তন ঘটবেই । ঐ তো আলো দেখতে পারছি । আর একটু পথ ।

মন্তব্য ১১ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১২:১৯

আবু শাকিল বলেছেন: লেখকের সাথে সহমত পোষণ করছি।
"চাই নিরাপদ পর্যটনকেন্দ্র"

২১ শে এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১:২৫

মুহাম্মদ রাফিউজ্জামান সিফাত বলেছেন: "চাই নিরাপদ পর্যটনকেন্দ্র"

২| ২১ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১২:৫১

হোসাইনের ছেলে বলেছেন: আছি আপনাদের সাথেঃ শ্লোগানের সাথেও একমত, "নিরাপদ পর্যটন কেন্দ্র চাই"

২১ শে এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১:৪২

মুহাম্মদ রাফিউজ্জামান সিফাত বলেছেন: দাবী ছড়িয়ে যাক সর্বত্র ।

৩| ২১ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৩:১৭

শূণ্য মেঘকাব্য বলেছেন: দুই দিন পর আমরা সব ভুলে যাব কারন ঐ হারিয়ে যাওয়া মানুষটি কেও নয় আমদের।কিন্তু কারো কাছে তারাই সব ছিল।তার মা বাবা তার ভালোবাসার মানুষ... তার বন্ধু।
আমাদের কিছু হয়নি কিন্তু যারা হারিয়ে গেছে তাদের শুন্যতা পূরণ হবার নয়।

এভাবে চললে হবেনা।কাল অন্য কেও এর শিকার হতে পারে।হতে পারি আমি নিজেও। তাই আশা করি দাবী মেনে নেয়া হবে।

২১ শে এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১:৪৪

মুহাম্মদ রাফিউজ্জামান সিফাত বলেছেন: নিরাপদ পর্যটন কেন্দ্র আমাদের অধিকার ,কারও করুণা নয় । পর্যটন মন্ত্রানালয়কে বাধ্য করতে হবে , নিরাপত্তা মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে । সচেতনতা দরকার সবার

৪| ২১ শে এপ্রিল, ২০১৪ ভোর ৫:৫০

কমল০০৭ বলেছেন: যে হারায় সেই কেবল বুঝে এর মর্মযাতনা । তবুও এ অস্থির সমাজে মানুষ খুঁজবে নিরাপত্তা,শান্তি।

অামরা একটু যেন অপরের কথা,সমাজের কথা ,এ অনিন্দ সুন্দর গ্রহটির কথা ভাবি ।

৫| ২১ শে এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ৮:১৫

মামুন রশিদ বলেছেন: "ইয়াসির লাইফগার্ড" এর মত সামাজিক সংগঠন কক্সবাজারে পর্যটকদের নিরাপত্তা আর সচেতনার কাজ করে । এরকম সংগঠন সেন্টমার্টিনেও প্রয়োজন । সরকারের উপর তাকিয়ে থেকে লাভ নেই ।

২১ শে এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১:৪৬

মুহাম্মদ রাফিউজ্জামান সিফাত বলেছেন: মামুন ভাই , আমাদের এখনো ১১১ কিমি সমুদ্র সৈকত অরক্ষিত । প্রতি বছর মানুষ মারা যাচ্ছে । শুধু সমুদ্র নয় , নিরাপত্তা তো নেই পাহাড়েও ।

এইটা ঠিক যা করবার আমাদেরকেই করতে হবে , তারপরও আমরা আশায় আছি পর্যটন মন্ত্রানালয় এতো গুলো মৃত্যুর প্রতি নজর দিয়ে কিছুটা ব্যবস্থা গ্রহণ করবে । করা উচিৎ ।

৬| ২১ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৯:৩৯

বোধহীন স্বপ্ন বলেছেন: আমাদের দেশে সেপ দিয়ে লেপ দিয়ে চলার একটা প্রবণতা আছে। এই ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নেই। কিন্তু এভাবে আর কতদিন? কবে সবকিছু একেবারে ঢেলে সাজানোর মত সুযোগ হবে??

২২ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১২:৪১

মুহাম্মদ রাফিউজ্জামান সিফাত বলেছেন: চেষ্টা করে যেতে হবে , এ ছাড়া আর কি বা করতে পারি ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.