![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অন্যরকম মানুষ!
রাশেদ আর রাফি দুই বন্ধু। সারাদিন একই সাথে থাকে। বলতে গেলে টয়লেটে এবং ঘুমোতে যাওয়া ছাড়া সব কাজ তারা একত্রে করে। তাদের বাড়িও একেবারে পার্শ্ববর্তী। কাজকর্ম তেমন একটা করেনা। রাফির একটা মোটরসাইকেল আছে। ঐটা দিয়েই দুজনের টো টো কোম্পানীর ম্যানেজারি করে।
আড্ডা ফাড্ডা মেরে বাড়ি ফিরতে প্রায় রাত সাড়ে বারটা কিংবা একটা বেজে যায়। তো তাদের বাড়ি ফিরতে হলে একটা কবরস্থান দিয়ে আসতে হয়। ঐ জায়গাটা আগে থেকেই ভালো না বলে লোক মুখে শোনা যায়। কারণ ঐখানে দুজন মেয়ের কবর আছে যারা ফাঁস দিয়ে আত্বহত্যা করেছে। রাত বারটার পরে লোকজন নাকি প্রায়ই দেখতো ঐ কবর দুটির উপরে ফাঁসির দড়ি ঝুলছে। কখনো বা দেখতে দেখতো কবরগুলো পাশে দুইটা সাদা কাপড় পরা মেয়ে বসে আছে। কেউ কেউ ঐখানে নুপুরের শব্দ এবং দুজন মেয়ের কথা বলার শব্দও শুনেছে। এইরকম আরো নানা ঘটনার কারণে ঐ কবরস্থানের প্রতি গ্রামের মানুষের ভীতি জন্মাতে থাকে।
একদিন রাত সাড়ে বারটায় রাফি আর রাশেদ মোটরসাইকেলে করে বাড়ি ফিরছিলো। যখনই ওরা ঐ কবরস্থানের কাছে আসলো তখন দেখলো যে দুটো সাদা বিড়াল ঐ কবর দুটোর দিক থেকে এসে তাদের মোটরসাইকেলের সামনে এসে দাঁড়ালো। পথ আটকে দিলো তাদের। রাফি বারবার হর্ণ দিচ্ছে। কিন্তু ঐ বিড়াল দুটো সরছে না। তখন রাশেদ করলো কি, মোটরসাইকেল থেকে নেমে একটা লাঠি দিয়ে ঐ বিড়াল দুটোকে মারার ভঙ্গি দেখালো। কিন্তু তাতেও কাজ হলো না। এবার রাশেদ লাঠি দিয়ে বিড়াল দুটোকে আঘাত করলো এবং দেখলো যে বিড়াল দুটোর চোখগুলো আর স্বাভাবিক থাকলো না। চোখগুলো লাল অগ্নিকুন্ডের মতো হয়ে উঠলো। মনে হচ্ছে চোখগুলো রাশেদকে গিলে খাচ্ছে। এরপরেই বিড়ালগুলো কবরের দিকে দিলো দৌঁড এবং কবরের পাশে এসে মিলিয়ে গেলো। রাশেদ খুব সাহসী ছেলে। প্যারা-নরমাল কোনোকিছুতে ওর একদম বিশ্বাস নেই। রাফি এতটা সাহসী না। রাফি এতক্ষণ মোটরসাইকেলে বসে সব প্রত্যক্ষ করেছে। যাইহোক. ওরা বিশেষ করে রাশেদ ঘটনাটিকে একেবারেই গুরুত্ব দেয়নি। এরপর তারা নিজ নিজ বাড়ি ফিরে খাওয়া দাওয়া করে ঘুমিয়ে পড়লো। পরদিন রাত প্রায় একটায় তারা বাড়ি ফিরছে। ঐ কবরস্থানে একটা বিশাল বাঁশঝাড় ছিলো। তারা যখন কবরস্থানের কাছাকাছি এলো, তখন দেখতে পেলো বাঁশ কবরস্থান গুলোর মাঝখান বরাবর ক্রস করে রাস্তার মাঝখানে পড়ে আছে। পুরো রাস্তাটাই আটক। তখন শীতকাল ছিল। তুফান বা বৃষ্টির কোনো সম্ভাবনাই ছিলো না এবং তা হয়ও নি। রাফি এটা নিয়ে একটু হ্যাজিটেড থাকলেও রাশেদের ভাষ্য মতে, হয়তো বা কোনো কারণে বাঁশটি রাস্তায় পড়ে আছে। রাশেদ রাফিকে বলল, "আমি বাঁশটাকে সরাচ্ছি, তুই মোটরসাইকেল দিয়ে জায়গাটা ক্রস করবি।" রাশেদ বাঁশটাকে সরাতে মোটরসাইকেল থেকে নামল। যেই বাশঁটাকে সরে বাঁশের মাঝখানে গিয়ে দাঁড়ালো অর্থাত্ বাঁশটা যখন রাফির দু'পায়ের মাঝখানে তখন পলকের মধ্যে বাঁশটা রাশেদকে নিয়ে উপরের দিক উঠে যায় এবং এর পাঁচ সেকেন্ড পরেই রাশেদের আর্তনাদিত একটা বিকট শব্দ শুনা যায়। রাফি শ্রবণ শক্তির বাইরে ছিল তা এবং মনে হচ্ছিল এই আওয়াজ পুরো এলাকাটাকে ধ্বংস করে দিতে সক্ষম। এই আওয়াজে কোনো মানুষের পক্ষে ঘুমিয়ে থাকা অসম্ভব। রাফি সেখানেই সেন্সলেস হয়ে যায়। পরদিন ভোর যখন মানুষজন ঐ রাস্তা মসজিদে যাচ্ছিল তখন তারা রাফিকে বেহুশ অবস্থায় দেখতে পেল। রাফির চোখে মুখে পানি মেরে ওর যখনই সেন্স আনা হলো তখনই ওর মুখ থেকে রাশেদের নাম বের হলো। এরপর পাঁচ মিনিটের জন্য রাফি নির্বাক। রাফি রাশেদের কথা জিজ্ঞাস করে কোনো উত্তর না পেয়ে লোকজন ইতোমধ্যে রাশেদকে খোঁজা শুরু করলো আশেপাশে। হঠাত্ রাফির মনে পড়ে গেলো রাতের ঘটনা। ভয়ে ভয়ে তাকালো ঐ বাঁশঝাড়ের দিকে। এরপর যা দেখলো তাতে আর নির্বাক থাকতে পারলো রাফি। রাশেদ বলে চিত্কার করে উঠল সে। বাশঁঝাড়ের উপর বাঁশগুলোর সাথে আটকে আছে রাশেদ। রাফি লোকজনকে বলে রাশেদকে সেখানে থেকে কোনোরকমে নামায়। নামিয়ে দেখতে পায় রাশেদের মাথাটা একেবার থেতলে গেছে, হাত দুটো ক্ষত বিক্ষত এবং চোখ দুটো নষ্ট হয়ে গেছে। লোকজনকে রাফি সবকিছু খুলে বলল এবং এক পর্যায়ে রাশেদের বিকট আওয়াজের কথা বলল। কিন্তু রাফি জেনে অবাক হলো যে, সেন্সলেস হয়ে যাওয়ার মতো রাশেদের বিকট আওয়াজটা রাফি ছাড়া কোনো গ্রামবাসীই শুনেনি। তো যাইহোক, রাশেদের কাফন দাফন শেষে গ্রামবাসীরা সিদ্ধান্ত নিলো ঐ কবরস্থানের পাশের রাস্তাটি একেবারে বন্ধ করে দেওয়া হবে এবং এর বদলে বিকল্প রাস্তা তৈরি করা হবে। আর সেই থেকেই পরিত্ত্যাক্ত হলো ঐ রাস্তাটি এবং শেষ হলো এক অভিশপ্ত রাস্তার কালো অধ্যায়।
২৫ শে নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১৮
মোঃ ইমতিয়াজ আহমেদ ইমন বলেছেন: থ্যাংকস।
©somewhere in net ltd.
১|
২৫ শে নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৪৭
পরিশেষের অপেক্ষায় বলেছেন: শিহরণ জাগানিয়া ...