![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অন্যরকম মানুষ!
গত শুক্রবার অর্থাত্ ৪ঠা ডিসেম্বর ২০১৫ ইং তারিখে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করে সকাল ১০টা পর্যন্ত একটু পড়ালেখা করি। সপ্তাহে এই ছুটির দিনটাতে শুধু মন মতো ঘুমাতে পারি। ব্যাস! ১০টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ঘুমানোর টার্গেট নিয়ে দিলাম ঘুম। এর প্রায় আধা ঘন্টা কিংবা এক ঘন্টা পরেই আমার মোবাইলে একটা কল আসে। ঘুম থেকে উঠে কল রিসিভ করতে করতে সেটা কেটে যায়। নাম্বারটা ঠিক চিনি নাই। ব্যালেন্সও ছিল না। তাই কল ব্যাক করতেও পারিনাই। যাক ঘুম থেকে উঠে গোসল টোসল করে জুমার নামায পড়ার জন্য মসজিদে যাওয়ার পথে ফারুক বললঃ
- ঘটনা শুনছস?
- কি ঘটনা?
- আরে আজকে সকালে থেকে তো বাবুর চাচাতো ভাই মিরাজ নিখোঁজ।
- এখনো পায় নাই?
- না। আমরা এতক্ষণ খুঁজছি। দরবেশ বলছে এখনো গ্রামের ভিতরেই আছে।
আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম সাথে সাথে। মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। বারবার ছেলেটার কথা মনে পড়ছে। আর এতক্ষণে আমার বুঝতে বাকি ছিল না যে ঐ কলটি কে করেছিল। কোনো রকমে জুমার নামাযটা পড়ার পর দাদার কবর যিয়ারত বাড়ি ফিরলাম। কিছুক্ষণ পরে আবার ঐ নাম্বারটি থেকে কল আসে। আমি কল রিসিভ করেই অনুমানের উপর বলিঃ
- কি রে বাবু?
- দোস্ত, তুই একটু কষ্ট কইরা রাসেল ভাইদের বাড়িতে যাইয়া ওনারে আমাদের বাড়িতে আসতে বল। মাইকিং করতে হবে।
- রাসেল ভাই তো মাদ্রাসায়!
- না। মাদ্রাসায় নাই। তুই তাড়াতাড়ি বাড়ি যা।
- ঠিকাছে দোস্ত।
তখন ভাতও খাই নাই। ভাতের কথা ভুলে গিয়েই যত দ্রুত সম্ভব রাসেল ভাইদের বাড়ি গেলাম। কিন্তু একটু হতাশই হলাম। রাসেল ভাই অসুস্থ। মাইকিং করতে পারবেন না। তারপর বাবুর সাথে রাসেল ভাইয়ের কথা বলিয়ে দিলাম। যাইহোক, বাবুরে অন্য ব্যবস্থা করার কথা বলে। সেখান থেকে বাড়িতে আসলাম। সেদিনটা এবং পরের দিন (শনিবার) দুপুর পর্যন্ত মনটা ছটফট করতেছিল। বাবুর সাথে যোহরের নামায পড়লাম। নামায শেষে বাবু আমাকে বললঃ
- ইনশাআল্লাহ! মিরাজকে আমরা সুস্থাবস্থায় পেয়ে যাব।
- ইনশাআল্লাহ! তাই যেন হয় দোস্ত।
সারা বিকাল কেটে গেল। সন্ধ্যাও শেষ হলো। সময়টা তখন রাত সোয়া ৮টা কিংবা সাড়ে ৮টা। হঠাত্ বাবু ফোন করল। ভাবলাম মিরাজকে বোধয় খুঁজে পাইছে। যাইহোক, কল রিসিভ করে বললামঃ
- হুম, বাবু! বল।
- (কেঁদে কেঁদে বলছে) দোস্তরে! মিরাজরে জানি কারা মেরে গাঙে ফেলে দিছে।
- কি. . . . . . . . কি বলিস এগুলা?
- ইমন তুই আসবি?
- আসতেছি দোস্ত।
আমি তখন লিখতেছিলাম। খবরটা পেয়ে তড়িঘড়ি করে বাবুদের বাড়িতে গেলাম। সেখান থেকে ডিরেক্ট স্পটে চলে গেলাম। দেখলাম আমাদের মিরাজ ভাই পানিতে ভেসে আছে। আমার দৃষ্টি স্থির হয়ে গেছে। শরীরের সমস্ত শক্তি যেন এক জায়গায় এসে স্তব্ধ হয়ে গেছে। চোখে পানি চলে এসেছে। কিন্তু সেই পানিটাও চোখের কোনে এসে স্তব্ধ হয়ে গেছে। চলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। কেমন জানি এলোমেলো হয়ে গেছি। কতক্ষণ সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম জানিনা। হঠাত্ আরিফের ডাকে স্বাভাবিক হলাম। পারভেজ ভাইও সাথে ছিল। ওনাদের সাথে আবার বাবুদের বাড়িতে যাই। বাবুর সাথে দেখা হয়। কি বলবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। তখন বাবুই বলে উঠল, "কি দোষ করছিল ছোট ছেলেটা?" আমি নির্বাক। এসময় শান্তনা দেয়াটা সমীচিন কিনা জানা ছিলন। যাক ওর সাথে আরো কথা হলো। কিছুক্ষণ পর পুলিশ এলো। পুলিশের তত্বাবধানে ভুট্ট আর মামুন ভাই ছোট্ট মিরাজের নিথর দেহটাকে পানি থেকে তুলে আনলো। লাশটাকে চেতনা সংঘ ক্লাবের সামনে রাখলো। এরপর আমার মুখ আর কিছু বলল না। কান দুটো শুধু শুনে রইলো একটা পরিবারের মর্মান্তিক আর্তনাদ। ছেলেহারা মায়ের আহাজারি।
[কিছু বিষয় জানিয়ে রাখা জরুরি। ছেলেটা ছিল বাবুর চাচা-চাচীর পালিত সন্তান। ২-৩ সপ্তাহ আগে বাবুর চাচীর একটা মৃত সন্তান হয়। তদকারণে তিনি ডিপলি শোকাহত। তার উপর আবার আজকে. . . . . . . . . ]
মিরাজের গায়ে শার্ট প্যান্ট এখনো আছে। এমনকি চামড়া জুতা গুলোও এখনো পায়ে রয়েছে। শার্ট প্যান্ট খোলা হলে দেখা যায় শরীরের কয়েকটা জায়গায় আঘাতের স্পট। দু-একদিন না খেলে একটা পাঁচ বছরের ছেলের পেট যেমন থাকবে মিরাজের পেটের কন্ডিশনও ঠিক একই রকম। সবকিছু স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করতেছি। ছেলেটার পালক মা তথা বাবুর চাচীর কোনো ছেলে মেয়ে না থাকায় ছেলেটাকে নিজের জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসতেন। তখন তার একটা কথা আমার কানে এখনো ভাসছে, "তোরা আমার কাছে টাকা চাইতি, তোদের টাকা দিতাম। আমার ছেলেরে তোরা মারলি কেন?"
কে দিবে ঐ মায়ের প্রশ্নোত্তর?
কি দোষ ছিল মিরাজ নামের পাঁচ বছরের সেই ছোট্ট ছেলেটার?
ও তো আবুধাবি থাকে। এখানে বেড়াতে আসছিল। কেন তোরা ওকে মেরে ফেললি?
মানুষের মধ্যে যে সামান্যতম মানবিকতা থাকতে হয়, তাও আজ নেই। স্বার্থান্বেষী হয়ে একটা ছোট্ট নিষ্পাপ ছেলেকে হত্যা করতে তাদের বিবেকে কি একটু খানিও বাঁধে নি? জানিনা এর উত্তর। শুধু মিরাজের স্মৃতিটা হৃদয় মাঝে ফালি ফালি কষ্ট দিয়ে যাচ্ছে, এটা জানি। কবে এই পশু গুলো মানুষ হবে? কবে মানুষ হিংসা বিদ্বেষ ভুলে যাবে? প্রশ্ন রয়ে গেল। উত্তর পাবো কিনা জানিনা।
মিরাজকে যে হত্যা করা হয়েছে এর যুক্তিযুক্ত প্রমাণঃ কেউ কেউ বলতে পারেন মিরাজ তো পানিতে ডুবেও মরতে পারে। না, পারে ঠিকই। কিন্তু পানিতে ডুবে মরেনি। তাকে হত্যা করে পানিতে ফেলা হয়েছে। কারণ ওর মুখ গলায় কিছু স্পট পাওযা। মিরাজ যদি ডুবে মরত তাহলে ও পানি খেত এবং ডুবে মরার যন্ত্রনায় ও হাত পা নাড়তে থাকতো, যাতে করে ওর পায়ে জুতা গুলো থাকতো না। কিন্তু আগেই বলেছি মিরাজকে পানি থেকে ওঠানো পরে দেখা গেছে যে ওর জুতাগুলো এখনো পায়েই আছে এবং পেটটা সম্পূর্ণ অভুক্ত। কিচ্ছু নেই পেটে। সম্পূর্ণ খালি। এছাড়া গাঙের যেই জায়গায় মিরাজকে পাওয়া গেছে ঐ জায়গায় অনেকবার খুঁজা হয়েছে মিরাজকে। তখন ওকে পাওয়া যায়নি কেন? সুতরাং, এথেকে সুস্পষ্ট বোঝা যায় যে, মিরাজকে হত্যা করে গাঙে ফেলে দেওয়া হয়েছে। আর এই ঘটনাটি ঘটেছে ফেনীর জেলার ফুলগাজী উপজেলার ০৯নং আমজাদহাট ইউনিয়নের ০৫নং ওয়ার্ডের পূর্ব বসন্তপুর গ্রামে।
©somewhere in net ltd.
১|
০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৪৮
আজমান আন্দালিব বলেছেন: অভিশাপ দেই যারা মেরেছে এই মাসুম বাচ্চাকে।