ব্লগিং-এ শান্তির দামে অশান্তি

২৯ শে জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ১০:০৫

♦أَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشِّيْطَانِ الرَّجِيْمِ (বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহ্'র নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি)
♦بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ (পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহ্'র নামে)
♦ٱلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ (আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক)

(ছবি নেট হতে)

গত পোস্ট “ব্লগে কেনো”-এর প্রেক্ষিতে ব্লগার “শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু” যে মন্তব্য করেছেন তাতে আমি সত্যি অভিভূত। তিনি যে মন্তব্য করেছেন তা আমি নয়, প্রতিটি ব্লগারের মনের কথা যা ইতিমধ্যেই অনেকেই নিজের করে নিয়েছেন। এই কমেন্টের কারণে আমার পোস্টের উদ্দেশ্য অর্জন অনেকটাই সহজ হয়ে গিয়েছে। তাই উক্ত ব্লগার ভাইকে আন্তরিক জটিলবাদ জানাই। তো আসুন দেখি তিনি নিজের শ্রম, মেধা, সময়, এবং মননের মাধ্যমে কি প্রকাশ করেছেন। তিনি সুন্দরভাবে গুছিয়ে বলেছেন-

প্রশ্নঃ আপনি কেনো ব্লগে আসেন?
উত্তরঃ গুড কোয়েশ্চেন। আমি ব্লগে আসি মূলত অবসর সময় কাটানোর জন্য।
প্রশ্নঃ আপনার ব্লগে আসার উদ্দেশ্য কি?
উত্তরঃ উদ্দেশ্য খুব সাধারন। ব্লগ পোস্ট করার জন্য। নিজের ব্লগে যারা মন্তব্য করেছেন তাদের রিপ্লাই দেয়ার জন্য আর অন্যদের পোস্টগুলো ভালো লাগলে পড়ার জন্য। ব্লগ লিখে দেশ বা সমাজ উদ্ধারের কোনো উদ্দেশ্য আমার নেই।
প্রশ্নঃ ব্লগে আপনি কি চান?
উত্তরঃ আমি চাই ব্লগ যেন এক স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ জায়গা হয়, যেখানে সবাই নিজের মতামত খোলামেলাভাবে প্রকাশ করতে পারে। আমি চাই ব্লগ যেন এক সৃজনশীল মঞ্চ হয়, যেখানে নতুন নতুন ধারণা ও চিন্তাভাবনা জন্ম নিতে পারে।
প্রশ্নঃ কেমন তথ্য বা পরিবেশ চান?
উত্তরঃ আমি চাই ব্লগে যেন সত্য, সঠিক এবং প্রাসঙ্গিক তথ্য থাকে। আমি চাই ব্লগ যেন এক সুস্থ ও স্বচ্ছ পরিবেশ হয়, যেখানে সবাই পরস্পরের প্রতি সম্মান দেখায়।
প্রশ্নঃ কিছু শিখতে আসেন নাকি শেখাতে আসেন?
উত্তরঃ আমি মনে করি শিক্ষা একটি দ্বিমুখী প্রক্রিয়া। আমি অন্যদের কাছ থেকে শিখি এবং আমার জ্ঞান অন্যদের সাথে শেয়ার করি। আমি সবসময় শিখতে আগ্রহী এবং আমার জ্ঞান অন্যদের সাথে ভাগ করে নিতে পেরে আমি আনন্দিত হই।
প্রশ্নঃ কিছু জানতে আসেন নাকি জানাতে আসেন?
উত্তরঃ দুটোই।
প্রশ্নঃ পত্রিকা বা মিডিয়া বাদ দিয়ে কি আপনি ব্লগে খবর জানতে আসেন?
উত্তরঃ ব্লগ পত্রিকা বা মিডিয়ার একটি পরিপূরক হিসেবে কাজ করে। ব্লগে আমরা বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে খবর পেতে পারি, যা পত্রিকা বা মিডিয়ায় পাওয়া যায় না।
প্রশ্নঃ স্কুল কলেজ বাদ দিয়ে কি আপনি ব্লগে পড়ালেখা করতে আসেন?
উত্তরঃ স্কুল কলেজের গন্ডি বহু বছর আগে পার করে ফেলেছি। এখানে আসি মূলত টাইম পাস করতে।
প্রশ্নঃ নাকি ধর্ম শিখতে আসেন?
উত্তরঃ ধর্ম মানব জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ব্লগে ধর্ম নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা হয়, যা আমাদের ধর্ম সম্পর্কে আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করে।

উপর্যুক্ত মন্তব্য হতে এটা সুস্পষ্ট যে, ব্লগে কেউ ইমমেচিউর নয়, ব্লগে কেউ জীবিকার্জনের জন্যে আসে না, ব্লগে কেউ স্কলারসিপ নিতেও আসেনা, আসেনা ব্লগ পড়ে ধর্ম-কর্ম শিখতে। ব্লগে মূলত আসা যাস্ট টাইম পাস করা। হাজারো ব্যস্ততার ভেতর একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস গ্রহণ করা। একটা পোস্ট, কিছু প্লাস, কিছু মন্তব্য। এইতো?

আমার দৃষ্টিতে ব্লগ একটি খোলা খেলার মাঠ। সেই মাঠের এককোনে কেউ ফুটবল নিয়ে দৌড়ায়, এককোনে কেউ ব্যাটে-বলে ছয় হাকে, এককোনে কেউ বসে আড্ডা মারে, এককোনে কেউ বসে মোবাইলে সময় পার করে, কেউবা বসে দাবা-লুডু খেলে হোক সে মোবাইলে, কেউ হয়তো গামছা বিছিয়ে নামাজটা পরে নেয়, কোনো কোনে হয়তোবা গরু ঘাস খাচ্ছে, আবার সুযোগে কেউ এককোনে শৌচকার্যও সাড়ে, আবার এককোনে কেউ বসে এসব উপভোগও করে।

কখনোতো দেখিনা কেউ এসে উপদেশ দিচ্ছে ফুটবল মাঠের মাপ ঠিক নেই, ক্রিকেটের নিয়ম ঠিক নেই, মাঠ আড্ডা মারার জায়গা না, কেউ দেখিনা গরুকে খেলার মাঠে ঘাস না খাওয়ার জন্যে মটিভেসন দিচ্ছে, ইনডোর গেম কেনো মাঠে খেলছে সেটা নিয়েও কাউকে গেজাতে দেখিনা, কিংবা দেখিনা গাছের ছায়ায় গামছা পেতে নামাজ আদায়ে কারো সমস্যা হতে। সবাই একা কিংবা দলবদ্ধভাবে নিজের সময়টা কাজে লাগাচ্ছে আর উপভোগ করছে। তাহলে সমস্যা কোথায়? সমস্যা তখনই যখন একজন নিজের ক্ষেত্র রেখে অন্যের ক্ষেত্রে অনধিকারচর্চার অপচেষ্টা করে।

ভাবছেন ব্লগের সঙ্গে মিল কোথায় পাচ্ছি? মাঠের সময়টাও নিজেকে রিফিল করার, ব্লগের সময়টাও ঠিক তাই। মাঠে যে যেমনি পারছে নিয়মের ধার না ধেরে বৈধভাবে নিজেকে রিফিল করছে কোনো লাভের আশা ছাড়া। ব্লগেও তাই নয় কি? তাহলে কেনো পারিনা নিজের মতো করে নিয়মের ধার না ধেরে ব্লগিংটা করতে? কারণ-

এখানে অনেকেই চায় নিজের মতো করে নিয়মে সকলকে বেঁধে দিতে। কিন্তু কেনো এই অনধিকারচর্চা?

কেনো কবিতা অপছন্দ করা ব্যক্তির কবিতার পোস্টে কমেন্ট করতে হবে?
কেনো ছবি অপছন্দ করা ব্যক্তির ছবি পোস্টে আসতে হবে?
কেনো গল্পে এলার্জি থাকা ব্যক্তিকে গল্প পড়ে মন্তব্য করতে হবে?
কেনো রাজনীতি না বুঝা ব্যক্তির রাজনীতি নিয়ে কথা বলতে বা জ্ঞাণ দিতে হবে?
কেনো নিজে যেভাবে পৃথিবীকে দেখছে অন্যকেও সেভাবে দেখার জন্যে বাধ্য করার অপচেষ্টা করতে হবে?
কেনো ধর্মবিদ্বেষীকে ধর্মীয় পোস্টে এসে লেজ নাড়াতে হবে?
কেনো? কেনো? কেনো?

৩ টি +১/-০