নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রহরশেষের আলোয় রাঙা সেদিন চৈত্রমাস–\n তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ।।

রাধে দেবনাথ

প্রহরশেষের আলোয় রাঙা সেদিন চৈত্রমাস– তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ।।

রাধে দেবনাথ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মা কে নিয়ে লেখা কিছু আসাধারন কবিতাঃ লেখক - রাধে দেবনাথ

১২ ই জুন, ২০১৭ সকাল ১০:৫৮



১। প্রকাশিত ২০০৫


"মিথ্যাবাদী মা"

“এতোটা দিন পেরিয়ে আজো মায়ের জন্য কাঁদি
কারণ আমার মা যে ছিলো ভীষণ মিথ্যাবাদী
বাবা যেদিন মারা গেলেন আমরা হোলাম একা,
সেদিন থেকেই বাঁক নিয়েছে মায়ের ভাগ্য রেখা।

মা বলতো বাবা নাকি তারার ভিড়ে আছে
লেখাপড়া করি যদি নেমে আসবে কাছে।
তারায় তারায় বাবা খুঁজি – তারার ছড়াছড়ি
আমার মায়ের মিথ্যা বলার____সেটা প্রথম হাতেখড়ি।

পাড়া পড়শী বলল এসে জীবন কঠিন ভারী !
একা একা এতোটা পথ কেমনে দিবে পাড়ি।
ভালো একটা ছেলে দেখে বিয়ে করো আবার
মা বললো ওসব শুনলে ঘেন্না লাগে আমার।
একা কেনো? খোকন আছে, বিয়ের কি দরকার
ওটা ছিলো আমার মায়ের চরম মিথ্যাচার।

রাত্রি জাগে সেলাই মেশিন, চোখের কোণে কালি
আমার নতুন জামায় ঘর ভরে যায়, মায়ের কাপড়ে তালি।
ঢুলু ঢুলু ঘুমের চোখে সুই ফোটে মা-র হাতে
আমি বলি শোও তো এবার, কী কাজ এতো রাতে?
শরীর এবার করবে খারাপ, দূর্বল এমনিতেই,
আচ্ছা,___ সবারিতো ছুটি আছে,মা, তোমার কি ছুটি নেই?
মা বলতো ঘুম আসেনা, শুয়ে কী লাভ বল
ওটা ছিলো আমার মায়ের মিথ্যা কথার ছল।

স্কুল থেকে নিতে আসা গাড়ী ঘোড়ার চাপে
আমার জন্য দাঁড়ানো মা কড়া রোদের তাপে।
ঘামে মায়ের দম ফেটে যায়, দু চোখ ভরা ঝিম
ছোট্ট মলিন ব্যাগ খুলে, আমায় দিতো আইসক্রীম
মায়ের দিকে বাড়িয়ে ধরে বলতাম একটা নাও
মলিন হেসে মা বলত- না বাবা তুমিই খাও।
আমার আবার গলা ব্যথা ঠান্ডা খাওয়া মানা
ওটা ছিলো আমার মায়ের নিঠুর মিথ্যাপনা।

বড় হয়ে চাকুরী নিয়ে বড় শহরে আসি
টুকটুকে বউ ঘরে আমার বউকে ভালোবাসি।
স্টেশন পাশে ফ্ল্যাট নিয়ে ডেকোরেটর ধরে
সাজিয়ে নিলাম মনের মতো অত্যাধুনিক করে।
মা তখনো মফস্বলে বেড়া, টালির তলে,
লোডশেডিং এর অন্ধকারে সন্ধ্যা বাতি জ্বালে।
নিয়ন বাতিতে মোড়া শহর আলোয় ঝলমলো...
মাকে বলি গঞ্জ ছেড়ে এবার ফ্ল্যাটে চল।
মা বললো,___ এই তো ভালো, খোলা মেলা হাওয়া
কেনো আবার তোদের ওই, ভিড়ের মধ্যে যাওয়া
বদ্ধ ঘরে থাকলে আমার হাপানি ভাব হয়
ওটা ছিলো আমার মায়ের মিথ্যা অভিনয়।

তারপর, আমি একজন নামকরা শহরের অধিবাসী
নামকরা এক বিশেষজ্ঞ সুনাম রাশি রাশি।
দায়িত্বশীল পদে আমার কাজের অন্ত নাই
মায়ের খবর নেব, এমন সময় কমই পাই।
মা বিছানায় একলা পড়া খবর এলো শেষে
এমন অসুখ হলো যার চিকিৎসা নেই দেশে।
উড়ে গেলাম মায়ের কাছে অনেক দূরের পথ
পায়ে পড়ি বলি মাকে এবার ফিরাও মত।
একা একা গঞ্জে পড়ে কী সুখ তোমার বলো
আমার সঙ্গে এবার তুমি এ্যামেরিকা চলো।
এসব অসুখ এ্যামেরিকায় কোন ব্যাপার নয়
সাত দিনের চিকিৎসাতেই সমূল নিরাময়।
কষ্ট হাসি মুখে এনে বলল আমার মা
প্লেনে আমার চড়া বারণ তুই কি জানিস না?
আমার কিছু হয়নি তেমন ভাবছিস অযথা।
ওটাই ছিলো আমার মায়ের শেষ মিথ্যা কথা।


কদিন পরেই মারা গেলো নিঠুর মিথ্যাবাদী
মিথ্যাবাদী মায়ের জন্য আজো আমি কাঁদি।



২। প্রকাশিত ২০১৪

"পাগল ছেলে একটা"

পাগল ছেলে একটা...
কেন ভালোবাসিস আমায় ?
প্রশ্নটার বয়স আজ মনে নেই ।
কিন্তু যান মা !
আমার কিছু মিষ্টি মুহুর্ত মনে আছে
সকালে ঘুম ভাঙত তোমার চুমুতে
আজ অবশ্য তার প্রয়জন পড়েনা
সকালে ঘুম আপনাতেই ভেঙে যায়
বাড়ির কত্তো কাজ থাকে...
তুমি আমার জন্য দুধ গরম করে আনতে না মা !
দুধ থেকে মনে পরল
যান মা আমি এখন সব রান্না করতে পারি...
এই দেখো হাত পুরেগেছে...
ও মাঝে মধ্যেই পোরে,এখন আর ব্যাথা করে না ।
দুফুরে লুকিয়ে লুকিয়ে তোমার বানান আচার চুরি
সে স্বাদের মজাই আলাদা ।
যান মা সেদিন একটা বোয়াম হাত ফোঁসকে ভেঙে গেছে
তাইতো এই কালো দাগ নতুন মা.....থাক সে কথা ।
মা যান নতুন মা আমায় খুব ভালোবাসে...
আমি জাতে মোটা না হয়ে যাই তাই একবার খেতে দেয় ।
নতুন ভাই ও আমায় খুব ভালোবাসে
যান সে কামড় দিয়ে আমার হাতে ঘড়ি এঁকেছে...
আমার একটুও লাগেনি...
তুমি আগে আমায় পড়ার জন্য বকতে না মা !
এখন আর আমায় কেউ পড়ার জন্য বকে না...
তুমি বলতে না যে রাতে খালিপেটে ঘুমতে নেই
যান মা আমি এখন আর রাতে খালিপেটে ঘুমই না
পেট ভরে জল খাই ।
কষ্ট শুধু একটা মা....
তোমার ঘুম-পরানি গান আর শুনতে পাই না ।
খুব কান্না পায়...
তখন আমি চুপটি করে তোমার সেই লাল শাড়িটাকে
জরিয়ে ঘুমিয়ে পরি...
তাতে যে তোমার গন্ধ পাই মা ।
মনে হয় তুমি আমায় জরিয়ে আছো ।
বাব্লু বলল যে ওদের পারার মণ্ডপে নাকি দূর্গা মা এসেছে !
তিনি নাকি সবার মা,
গিয়ে দেখলাম পুরো তোমার মত দেখতে !
তার যান দশটা হাত আছে ।
কিন্তু কই সে তো আমায় তোমার মত জরিয়ে ধরল না ।
আজ অনেক দিন পরে তোমার সাথে দেখা মা
খুব ঘুম পাচ্ছে
তোমায় জরিয়ে ধরে একটু ঘুমোই...
বলতে বলতে একটা আর্ধ-বিবস্ত্র বছর সাতেকের বাচ্চা ছেলে
কবরটাকে জরিয়ে ঘুমিয়ে পরল ।।



৩। প্রকাশিত ২০১৫

"আমার দুর্গা"

ডেইলি পেসেঞ্জাররা বধহয় জানেন…
নৈহাটি স্টেশনে এক নামি চপের দকানের পাসে
এক ছোট্ট ছেলে আছে…।
হাজার রকম সপ্ন যে তার মা কে নিয়েই বাঁচে…।
ছারতে তখনও দেরি মেম লকাল,বড্ড বিরক্তিকর ভাই…
ভাবলাম,
পুচকেটাকে একটু জালাই…after all মজার খোরাকতো চাই…।
ততক্ষণে বন্ধী যে সে…আমার এই দুই হাতে
“কিরে বেটা দুর্গা দেখতে জাবি আমার সাথে…?”
এমা ! দুর্গা দেখতে জাব কেন…?আমার দুর্গা আছে…
ঐযে দেখো আমার দুর্গা এঁটো বাসন মাজে…।
বাচ্চা ছেলের বাক্য-বানে ক্ষত-বিক্ষত আমি ও বোদ্ধা দল…
ঐযে যারা আমার সাথে মজা নিতে এসেছিল,
সেই ছিন্নমলিন বস্ত্রধারি শিশুটির ভাষা
দুহাতে মেখে এসেছি সাহস করে বলতে...

তোমার দুর্গা সোনায় মোরা,গলায় সোনার হার...
আমার দুর্গার মাথায় বোঝা,নুইয়ে গেছে ঘার...।।
তোমার দুর্গা রান্নাঘরে মোগলাই কাটলেট…
আমার দুর্গা মাজছে দেখো তোমার এঁটো প্লেট…।।
তোমার দুর্গা ব্যাস্ত দারুন সাজাতে তার ঘর...
আমার দুর্গা জল-সাবানে, তারযে ভীষণ জ্বর…।।
তোমার দুর্গা প্রতিবছর বাপেরবাড়ি আসে…
আমার দুর্গা প্রতিরাতে নয়ন জলে ভাষে…।।

কারণ,

আমার গায়ে নেইকো জামা,তার দুঃখ ভারি।
তোমার দুর্গার গায়ে যে আজ হাজার টাকার সাড়ি…।।
তোমার দুর্গা দেখছ বসে জেগে সারারাত…
আমার দুর্গা চাইতে গেছে আমার জন্য ভাত…।।
যাও তোমার দুর্গা মহান বেশি…নিলাম আমি মেনে।
আমার দুর্গা ক্লান্ত ভীষণ ইট-বালি-বোঝা টেনে…।।
তোমার দুর্গা দশভুজা প্রণাম কর তাকে…
আমার দুর্গা দু-হাত ই সই জরিয়ে আমায় রাখে…।।
অবশ্য...

এক বিষয়ে পরাজিত তুমি আমার কাছে…
তোমার দুর্গার কপালেতে ...
বিসর্জন লেখা আছে…।।


মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.