নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ব্লগিং জগতে প্রথম ঢুকলাম...

জীবনের পথে চলা নবীন এক পথিক...

রাফীদ চৌধুরী

জীবনকে সাজাতে চাই সুন্দর বাগিচায়... তাই করি যা মনে চায়... live it love it ENJOY it!!

রাফীদ চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

আনমনে...(১)

২৪ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১১:১৫

দেখেছিস ডিপার্টমেন্টের নতুন মেয়েটাকে? কুনুই দিয়ে আলতো গুতো দিল শোভন। আমাদের ডিপার্টমেন্টেই দেখছি!

হু? কি বলছে মাথার মাঝে ঠিক ঢুকছে না আমার।

আরে বললাম নতুন… তুই আমার কথা শুনছিস না তাই না? ঝাকি দিয়ে বলল। এখনো কালকের ঘোরের মাঝে আছিস?

আসলেই ঘোরের মধ্যেই ছিলাম কিন্তু মুখে বললাম না না কি যে বলিস! মুখে হাসি ফুটিয়ে তুললাম।

হ্যা কোন মেয়েটা যেন?

ওই যে সবুজ জামা পরা…

এক ঝলকের জন্য দেখতে পেলাম ছিপছিপে সবুজ রঙের বাহার সামনের ক্লাশে ঢুকে গেল। তার পিঠ সমান হালকা কোকড়া কালো চুল তাকে ফলো করে ভেতরে ঢুকে গেল।

হ্যা ভালোই তো…

জানিস কালকের পারফর্মেন্সে আমরা কতটা ফেমাস হয়ে গেছি! হাসতে হাসতে বলল জনি। দুইটা মেয়ে আমার সাথে ফটো তুলেছে! গর্বে যেন মাটিতে পা পরে না তার!

গত রাতের কথা এক ঝলকে চোখের সামনে দিয়ে রিক্যাপ হয়ে গেল। গীটারে আমি, জনির বেস কান ফাটিয়ে দিচ্ছে… পেছনে তুহিনের ড্রামস… সামনে পাগলপ্রায় দর্শক… আহা এমনটা তো প্রত্যেক ব্যান্ডের মেম্বারই চাইবে…

তবে কালকের টা একটু বেশিই ছিল। ভার্সিটির নবীন বরণ অনুষ্ঠানে আমরা সবাই এই প্রথম ব্যান্ড নিয়ে পারফর্ম করলাম। প্রথমে ভীষণ নার্ভাস ছিলাম… গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তুহিনের ড্রামসের তাল সব ভয় ডর উবে গেল… সামনে এসে গীটার তুলে রীফ শুরু করলাম… সাথে জনি আর হিমেল… স্বপ্নময় একটা সময় পার হলো আমাদের জন্য…

কল্পনার জগৎ থেকে ফিরে এলাম। ট্রিপল ই ক্লাশে যেতে হবে…

কতক্ষণ থাকবি? পেছন থেকে চিৎকার জুরলো শোভন।

জানি না আছি কিছুক্ষণ… ক্লাশের পর মিউজিক ক্লাবের একটা মিটিং আছে…

ঠিক আছে থাক তাহলে আমি চলে যাই…

যা…বাই…

আমিও পথ বাড়ালাম…



ক্লাব থেকে বেড় হয়ে দেখি সন্ধ্যা প্রায় হয় হয়। ক্যাফে থেকে একটা কফি নিয়ে রাস্তার সামনে দাড়ালাম। বাসের লাইনটা আজকে তেমন বড় নয়। যাহ শান্তিমতই যাওয়া যাবে তাহলে!

পাশে তাকিয়ে দেখি সেই মেয়েটা! সকালে যার কথা বলছিল শোভন। বাসের জন্যেই ওয়েট করছে বোধহয়! ঘড়ি দেখছে বারবার। মুখটা একটু ফ্যাকাশে… প্রথম ক্লাশ দেখে একটু নার্ভাস ছিল বোধহয়। এমনি মেয়েটা দেখতে ভালই সুন্দর! বলা যায় অনেক কিউট! বড় বড় মায়া ঝরানো চোখগুলোর দিকে তাকালে যে কারো গাল টিপে দিতে ইচ্ছে করবে। দেখেই মনে হয় ছোট্র মেয়ে! ভার্সিটিতে পড়ে?

নিজের চিন্তায় নিজেই হেসে ফেললাম! ধুর কি ভাবছি আমি! এমন সময় বাস চলে আসল আর আমি আগে সিট দখল করার জন্যে দৌড় লাগালাম!

বাস থেকে আড়মোড়া ভেঙ্গে নামলাম। লাস্ট স্টপেজ। আজিমপুর মোড়। এখানেই আমি নামি…হেটে হেটে বাড়ি যাই। কিন্তু আজকে অবাক হলাম সবুজ জামা পরা মেয়েটাও এখানেই নামল! ব্যাপারটা কেন জানি মজার লাগল। ভাবলাম ফলো করি!

আমার রাস্তা ধরেই হেটে যাচ্ছে… তাই পিছু পিছু আমিও যাচ্ছি। সন্ধ্যার রোদের বিপরীতে তার অবয়বকে রহস্যময় মনে হচ্ছে… রহস্যময় কিন্তু…আকর্ষণীয়…

এই যে দাঁড়াও তো! পেছন থেকে ডাকলাম।

তার প্রথম এক্সপ্রেসন ছিল ব্যাগ শক্ত করে ধরা! সুক্ষ্ণ অপমানিত বোধ করলাম। শেষ পর্যন্ত আমাকে ছিন্তাইকারি ভাবল!

উহুম… প্রথম দিন কেমন গেল?

শুন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল মেয়েটা।

আমি আর তুমি একই ডিপার্টমেন্টে পরি। আমাদের বাসাও দেখা যাচ্ছে একি দিকে।

শুন্য দৃষ্টিটা অবাক দৃষ্টিতে পরিণত হল।

পাশে এসে দাড়ালাম। কালকের অনুষ্ঠানটা কেমন ইনজয় করলে। তোমাদের জন্য আমরা স্পেশিয়াল সব গানের এরেঞ্জ করেছিলাম। কেমন লেগেছে।

মাথা কাত করল একটু। ভালো কি মন্দ বুঝতে পারলাম না। পাশাপাশি হাটতে থাকল সে।

ছিলে কাল?

ও… হ্যা ছিলাম।

ব্যান্ড পারফর্মেন্স কেমন লেগেছে? আশা করলাম এবার হয়তো আমাকে চিনবে।

ব্যান্ডের ওই গানগুলো? ভালোই…

আমি ওই ব্যান্ডের লীড গিটারিস্ট এন্ড ভোকালিস্ট।

ওহ তাই নাকি!

মেয়েটার রিয়েকশানে অবাক হচ্ছি! সে চেনে না!!

তুমি দ্য ড্রিমার চিনো?

বিরক্ত চোখে তাকালো।

না।

হায়! তুমি এই ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হলে আর আমাদের ব্যান্ডই চেন না! আমার এক্সপ্রেসন দেখে মনে হল পুরো বেকুব হয়ে গেছি!

মেয়েটা থেমে ঘুরে দাড়ালো। মুখ গম্ভীর। না চিনি না! আমার ব্যান্ড ফ্যান্ড ভালো লাগে না! তাদের noisy music আমার কখনোই পছন্দ না। তাই বলতে বাধ্য হচ্ছি কালকের অনুষ্ঠানটা ব্যান্ড আসার আগে পর্যন্ত যথেষ্ঠ ভালো ছিল…

বলে আর দাড়ালো না। মেইন রোড থেকে এক গলির দিকে চলে গেল। আর আমি মেইন রোড ধরেই হাটতে থাকলাম। ভাবছি…

ব্যাটা সাগর! এখনো বুঝতে পারলে না কিভাবে মেয়েদের সাথে কথা জমাতে হয়! অবাক লাগল বেশ কয়েকটা ব্যাপার! আমাদের ব্যান্ড চেনে না! আমাদের ব্যান্ড!!!

আর আমাকে পাত্তা দিল না! বেশ কিছু মেয়ে তো আমার জন্যে পাগল! হ্যা আমি ব্যাপারটা জানি কিন্তু পাত্তা দেই না! উঠতি ইয়াংস্টারদের মত ভাব মারি আর কি! হাহা! আসলে ব্লুজ ও সফট রক জেনরের ব্যান্ড অনেকেই পছন্দ করে। কেউ নতুন রিলেশন করল…এই টাইপের গান শোনে, কেউ ব্রেক আপ করল তো এই টাইপের গান শোনে। সো আমাদের ভালোই যাচ্ছিল সব মিলে। মাঝে মাঝে বিভিন্ন জায়গা থেকে ডাক পাই শো এর জন্য… যেহেতু প্রফেশনাল কেউই না সো আমাদের চলে যায় ভালোভাবেই!



বাসায় যেতেই ছোটবোন সাথী লাফ দিয়ে আমার উপর পরল! কি এনেছ আমার জন্য!

পরের বার বের হলে নিয়া আসব। আইস্ক্রীম! প্রমিস!

এতটা আশাবাদী মনে হল না তাকে। তিন দিন ধরে আইস্কীম আনার কথা বলছি আমি। তাই গজগজ করতে করতে চলে গেল টিভি দেখতে।

রুমে গিয়ে চিৎ হয়ে ধপাস দিয়ে বিছানার উপর পরলাম। হাত বাড়িয়ে এক্যুস্টিকটা নিলাম… আনমনে প্লাকিং দিতে থাকলাম গীটারের তারের মাঝে… সি# মাইনর থেকে ই মেজর… থেকে এ মেজর… আঙ্গুল নাচতে থাকল গীটারের তারে আর আমার মাথায় চলতে থাকল অন্য জগতের ভাবনা।

গত কিছুদিন ধরে সব কিছু বেশি পারফেক্ট হয়ে যাচ্ছে। লেসারের মিক্স এলবামের জন্য দুটো গান সিলেক্ট হওয়া, ব্যান্ড হিসেবে পারফর্ম করা… আবার হঠাৎ আজকের এই পুতুল টাইপের মেয়েটার সাথে দেখা হওয়া… ভাবতে ভালো লাগল মেয়েটা এই এলাকাতেই থাকে, মাঝে মাঝে তাহলে দেখা হয়েই যেতে পারে! হাহা!

দড়জায় নক পড়ল। সাগর খেতে আসো! আম্মু ডাকল।

পরে খাবো আম্মু! এখন না!

উঠে এলাম বিছানা থেকে, জানালার স্লাইড গ্লাসের অপর পাশে তাকিয়ে দেখলাম হালকা বৃষ্টি পড়ছে। বৃষ্টি দেখলেই মনটা খারাপ হয়ে উঠে… পুরোনো অনেক কথা মনে পড়ে যায়… কাউকে প্রথম না পাওয়া… কারো জন্যে বৃষ্টির মাঝে অপেক্ষা করা… তখন মাত্র ফার্স্ট ইয়ারে পরি… ব্যান্ড করা, গান গাওয়া তখনো হয়ে উঠে নি…

আর মনে পরে ওয়ারফেজের একটা গান… তোমাকে মনে পড়বে… যখনি জোছনা হাসে… বর্ষা কালে…



আবার এমন ভুল করা কি ঠিক হবে? জানি না আমি… কিছুই জানি না… মন বলে হয়তো আবারো অনেক কষ্টের মুখোমুখী হতে যাচ্ছি…

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.