![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আলতাফ সাহেবের বাসার সামনে লোকে লেকারণ্য।বাড়ির গেটে পুলিশের গাড়ি দাঁড় করানো।ড্রাইভার সিটে বসে ম্যাচের কাঠি কান খোঁচাচ্ছে।যে কোন মূহূর্তে কাঠি ভেঙে কানের ভিতর ঢুকে যাবে।অনেক চেষ্টা করা হবে তবুও বের হবে না।হাসপাতালে দৌড়াতে হবে।হাসপাতালে গিয়ে দেখা যাবে ডাক্তার নেই।ডাক্তার নিজস্ব চেম্বারে রুগি দেখছে।ভাগ্য যেদিন খারাপ থাকে সেদিন সব জায়গাতেই ধরা খাইতে হয়।চেম্বারে গিয়ে দেখা যাবে ডাক্তার দুপুরের খাবার খেতে বাসা চলে গেছে।বাহিরের খাবার তার সহ্য হয় না,গ্যাস ফরম করে।সামান্য একটি ম্যাচের কাঠি অনেক বড় সমস্যার সৃষ্টি কচেবে।
এলাকার পিচ্চি ছেলেপেলে জানালা দিয়ে তার কান খোঁচানো দেখছে।একজন পুলিশ কিভাবে কান খোঁচায় এটাই তাদের আগ্রহের বিষয়।পুলিশ সাধারন মানুষের পর্যায়ে পরে না।তারা আইনের লোক।তাদের হিসাব আলাদা।
সময়ের সাথে সাথে বাড়ির বাইরে লোকসমাগম বেড়ে চলেছে।চারিদিকে উৎসুক জনতা।সবার ই এক ই প্রশ্ন-"ঘটনা কি?পুলিশ কেনো?খুন টুন হইছে নাকি?আলতাফ সাহেবকে ভালো মানুষ জানতাম।আফসোস"
স্থানীয় পত্রিকার সাংবাদিক নুরুজ্জামান এসেছেন ছবি তোলার জন্য।এতবড় একটা ঘটনা ঘটেছে ছবি তোলা জরুরী।পেপারে ছাপাতে হবে।দেশবাসির জানার অধিকার আছে।দেশবাসি ভালো খবর যেমন পছন্দ করে,খারাপ খবর ও পছন্দ করে।
আলতাফ সাহেব নুরুজ্জামানকে দেখে ভ্রু কুঁচকালেন।তিনি এই মানুষটাকে মোটেও পছন্দ করেন না।ধূর্ত প্রকৃতির লোক।লোকমুখে শোনা যায় তার নামে মার্ডার কেসের মামলা আছে।সাংবাদিক সেজে এখন ভদ্র হয়ে থাকে।তার কোন ছবি,লেখা পত্রিকায় ছাপা হয়েছে বলে শোনা যায় নি।ব্যাটা ফাউল কোথাকার।
আলতাফ সাহেব একজন শক্ত মানুষ।অনেক কঠিন সময়ে তিনি শক্ত থাকেন।তার একমাত্র কন্যা মারা গেছে।আত্মহত্যার কেস।তারপরেও তিনি শক্ত আছেন।তার স্ত্রী পাশের ঘরে বসে কাঁদছে।পাড়া প্রতিবেশী মহিলারা তাকে শান্তনা দিচ্ছে।আলতাফ সাহেব মহাবিরক্ত।এইসব মহিলাদের কি কাজ কর্ম নাই?মানুষ মরনশীল।মানুষ মারা যাবে।এটাই স্বাভাবিক।এখানে এত কাহিনী করার কি আছে?
-"খালুজান জানাজার কি হবে?"
-"কোনো জানাজা হবে না।আমাদের ধর্মে আত্মহত্যা মহাপাপ।যে আত্মহত্যা করবে তার কোন কবর,জানাজা হবে না।গর্ত করে পুঁতে ফেলো।মামলা ডিশমিশ"
কবর,জানাজা হবে না দেখে বাড়ির কাজের লোক রহমত মন খারাপ করলো।একজন মানুষ মারা গেছে অথচ তার কবর,জানাজা হবে না?এ কেমন কথা?মানুষ তো পশু না।রহমতের খুব খারাপ লাগা শুরু হয়।খুব।
মুখে এসব বললেও আলতাফ সাহেব সব ঠিকটাক করেই রাখছেন।দামি কাপড়ের কাফন থেকে শুরু করে মৌলভী সব ই ঠিক করা।যেন মনে হচ্ছে তিনি আগে থেকেই জানতেন এমন কিছু হবে।সব একদম রেডি করা।
পুলিশের ইন্সপেক্টর তেলতেলে ভাবনিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন-"স্যার কি পোস্ট মর্টেম করাবেন?"
-"নাহ্।"
-"আচ্ছা ঠিক আছে"
আলতাফ সাহেবের উপর কথা বলার সাহস ইন্সপেক্টরের নেই।তিনি না বলছেন মানে না।টাকার জোর মহাজোর।টাকার জোরে ইন্সপেক্টর জবুথবু হয়ে বসে আছেন।দেখতে ভালো লাগছে না।
-"ইন্সপেক্টর সাহেব"
-"জ্বী"
-"যাওয়ার সময় ম্যানেজারের সাথে দেখা করে যাবা।আমি চাই না এটা নিয়ে আর কোন কথা হোক"
-"জ্বী স্যার"
মামুন ধীর পায়ে নিতুদের বাসায় ঢুকছে।তার পায়ের সমস্ত শক্তি কে যেন কেড়ে নিয়েছে।কেউ যদি তাকে দরজায় আটকায় বা কেউ যদি তাকে জিজ্ঞাসা করে তুমি কে?তবে সে কি উত্তর দিবে?সে কি বলবে যে সে নিতুর প্রেমিক?এই পরিচয় কি সহজভাবে নেয়া হবে?ঘৃনার সম্পর্ক যেমন কেউ সহজভাবে মেনে নেয় না,ভালোবাসার সম্পর্ক ও কেউ সহজভাবে মেনে নেয় না।
ভাগ্য সুপ্রসন্ন।কেউ আটকায় নি।সবাই ব্যস্ত।যদিও ব্যস্ত হওয়ার কোন কারন নেই।মামুন তাকিয়ে দেখে তার প্রিয়তমা প্রেমিকা মাটিতে শুয়ে আছে।গলার মধ্যে কাটা দাগ।দড়ি গলা ভেদ করে ঢুকে গেছে।মামুনের খুব খারাপ লাগা শুরু হয়।তার ভালোবাসার মানুষটি তার ই সামনে নিথর হয়ে শুয়ে আছে।আর কোনদিন এক মূহূর্তের জন্যও মানুষটা চোখ খুলে তাকাবে না,একটি বার তার সাথে কথা বলবে না,কারনে অকারনে ঝগড়া করবে না।মোবাইলে ফোন দিতে দিতে চার্জ শেষ করে দিবে না।এও কি সম্ভব?এও কি সম্ভব?মৃত্যু এত নিষ্ঠুর কেনো?মামুনের প্রচন্ড কান্না পাচ্ছে।কিন্তু সে কাঁদতে পারছে না।সে কাঁদলে সবাই সেটা ভালোভাবে মেনে নিবে না।কান্না চেপে মামুন পাশের ঘরে ঢুকলো।এটা নিতুর ঘর।নিতুর বিছানা,নিতুর বালিশ।এই বিছানায় শুয়ে শুয়েই নিতু একসময় মামুনের সাথে কথা বলতো,হাসতো,কাঁদতো।কিন্তু অবাক করা ব্যাপার।আজকে সেই মামুন সেই রুমে দাঁড়িয়ে কিন্তু নিতু নেই।নিতু পাশের রুমে লাশ হয়ে শুয়ে আছে।
মামুন বিছানায় বসে।আলতো করে সবকিছু ছুয়ে ছুয়ে দেখে।বালিশের নিচে এটা কি?মামুন কাঁপাকাঁপা হাতে সেটা তুলে নেয়।একটা কাগজ।কাগজে লেখা-"আমি মারা যাচ্ছি।আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয় এটা আমি বলবো না।আমার মৃত্যুর জন্য মামুন দায়ী।আমার প্রেমিক"
©somewhere in net ltd.