![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জেলখানার ভিতরে আছি।আমার পাশে একজন রোগা চেহারার মানুষ।গাল ভেঙ্গে গেছে,মাথায় অযত্নে বেড়ে ওঠা বড় বড় চুল,গালে চাপ দাঁড়ি।খুক খুক করে কাঁশছে।মনে হচ্ছে যে কোন মূহূর্তে দম আটকে মারা যাবে।কয়েদি মারা গেলে লাশ জেলখানার পানির ট্যাঙ্কে রাখা হবে।লাশ পঁচে গলে যাবে।লাশ পঁচা পানি খেতে হবে।জেলখানার লোকদের না হয় লাশপঁচা পানি খাওয়ার অভ্যাস আছে।আমার তো নাই।চিন্তায় আছি।মহাচিন্তায়।
-ভাইজান!কেস কিসের?
বলার ভঙ্গি খুব ই নোংরা।প্রশ্ন করার ধরন দেখেই বোঝা যাচ্ছে তিনি একদম শিওর যে আমি খুব ই খারাপ কিছু করে জেলে বন্দি আছি।চতুর্থ শ্রেনির স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষন করা টাইপ খারাপ কাজ।আপনি ভার্সিটি পড়ুয়া মেয়েকে ধর্ষণ করবেন পাবলিক সম্পূর্ণ দোষ আপনাকে দিবে না,কিছু দোষ মেয়েকেও দিবে।কিন্তু স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণ করলে সবদোষ আপনার।পাবলিক সেন্টিমেন্ট বোঝা দায়।কিন্তু এরা জানে না ধর্ষন ধর্ষন ই।ধর্ষকের কোন মা নেই,বাবা নেই,পরিবার নেই,বন্ধু নেই।ধর্ষক ছোট বড় কিছু বোঝে না।ধর্ষকের কাছে সব নারী ই এক।শুধু সমাজের চোখে সব নারী এক না।সমাজ স্কুলছাত্রীকে যে সিমপ্যাথি দেখায়,ভার্সাটি পড়ুয়া ছাত্রীকে সেই সিমপ্যাথি দেখাতে পারে না।
আমি তার কথার কোন উত্তর দিলাম না।উত্তর দেয়ার প্রশ্নই উঠে না।
-'খুক!খুক!খুক!!বুঝছি ভাইজান।খারাপ কেস।বলতে লজ্জা পাইতেছেন।প্রথম প্রথম এই রকম হয়।আমার ও হইছে।আস্তে আস্তে লজ্জা ভাইঙ্গা যাইবো।তখন গর্ব করে বলবেন'
-'আপনি শিওর পরেরবার ও আমি অপরাধ করবো?'
-জ্বে।শিওর
-কিভাবে শিওর হলেন?
-হে হে হে।অপরাধ নেশার মত।চাইলেও ছাড়তে পারবেন না।
আমি কিছু বললাম না।হতে পারে তার কথা সত্য।যেমন এই মূহূর্তে নিশুর বাবাকে গুলি করে মারতে ইচ্ছা করছে।কাউকে গুলি করে মারা অবশ্যই অপরাধ।আমি নিশ্চয়ই অপরাধের নেশায় পরে গেছি।
-"ভাইজান।চা খাইবেন?"
লোকটা এমনভাবে বললো যেন এটা হোটেল।তিনি হোটেলের মালিক।
-"না।খাব না"
-"আরে খান।শোনেন ভাইজান।আমার কেস হচ্ছে খুনের কেস।জোড়া খুন।খুনের কেসের আসামীকে পুলিশ সম্মান করে।চা সেগরেট খাওয়ায়"
আমি কিছু বললাম না।তিনি নিজেকে খুব সম্মানি লোক মনে করছে।করুক।ক্ষতি কি।একজন খুনি নিজেকে সম্মানি ভাবার সুযোগ জিবনে খুব কম পায়।
চা এসে গেছে।চায়ের সাথে সস্তা বিস্কুট ও আসছে।লোকটা সিগারেট খাচ্ছে।বিকট গন্ধ।সিগারেট না অন্য কিছু আল্লাহ্ জানে।
-'জেলের মধ্যে বসে সিগারেট খাচ্ছেন সমস্যা হয় না?'
-'ওই যে বললাম খুনের আসামি।সিগারেট খাইলে কিছু কয় না।তবে এটা সিগারেট না।গাঞ্জা।চেকিং এ গাঞ্ছা ধরা পরলে ক্যাচাল করে।ডলা দেয়।শালা বান্দির পুত।আমি গাঞ্জা খাইলে তর কি?'
-'তাইলে গাঁজা কিভাবে আনেন?'
-'সব সমস্যার ই সমাধান আছে।হাজিরার সময় যখন কোর্টে যাই তখন লোক সেট করা থাকে।কনডমের মধ্যে গাঁজা ঢুকায় আনে।সেটা গিলে ফেলি।চেকিং এ কোন বান্দির পুত ধরতে পারে না।পরে পায়খানার সাথে কনডম বেরিয়ে আসে।ওখান থেকে গাঁজা বের করে খাই।হে হে হে।'
আমি নির্বাক।আমি স্তব্ধ।মানুষজন এত ক্রিয়েটিভ বুদ্ধি ভুল জায়গায় ঢেলে দিচ্ছে।দুঃখজনক।খুব ই দুঃখজনক।
-'ভাইজান একটা কথা বলি?'
-হুম'
-'এই সেলে যাদের রাখা হয় তাদের কি করা হয় জানেন?'
-'কি করা হয়?'
-'এনকাউন্টারে গুলি করে মারা হয়।ঠুস।ঠুস।হে হে হে'
-'হাসছেন কেনো?এটা কি কোন হাসির ব্যাপার?'
-'মরন খুব ই সুন্দর ব্যাপার ভাইজান।Death is beautiful'
লোকটা গাঁজা খেয়েছে।ভুল ভাল বকছে।ভুল ভাল যে বকছে সেটা তার কথা শুনেই বোঝা যাচ্ছে।ইংলিশ বলছে।বাঙ্গালি মাতাল হলে ইংলিশ বলে।
আমার অপরাধ খুব মারাত্মক কিছু না।আমি একটা মেয়েকে খুব ভালোবাসতাম।নিশু।তার বাসার সামনে প্রতিটা দিন আমি দাঁড়িয়ে থাকতাম।সে একবার এসে বারান্দায় দাঁড়াবে।আমি তাকে দেখবো।শুধু এতটুকুর আসায়।সে প্রতিদিন আসতো না।মাঝে মধ্যে আসতো।তারপরেও আমি প্রতিদিন দাঁড়িয়ে থাকতাম।একদিন এলাকার ছেলেরা আমাকে ধরে পেটালো।আমি তারপরেও আসা বন্ধ করি নি।কি যেন একটা আমাকে ভিষন আকর্ষন করতো।এই আকর্ষন অগ্রাহ্য করার ক্ষমতা আমার ছিল না।এলাকার ছেলেরা আমাকে আবার ও পেটায়।তারপরেও আমি সেখানে যেতে থাকি।সে বারান্দায় দাঁড়ায়।আমি দেখি।শুধু এতটুকুই।এটা কোন হিসেবে অপরাধ হয়?
একদিন মেয়েটা নিচে নেমে আসে।আমার সামনে দাঁড়ায়।আমার সময় আটকে যায়।বুকে ধুকধুকানি উঠে যায়।
-'কে আপনি?প্রতিদিন এখানে দাঁড়িয়ে থাকেন কেনো?'
আমার কন্ঠ রোধ হয় যায়।আমি কোন উত্তর দিতে পারি না।
'এখানে আর দাঁড়াবেন না।নাহলে আপনাকে পুলিশে দিব।মনে থাকবে?'
আমি হেলিয়ে হ্যাঁবোধক সম্মতি দিলাম।
তারপরের কয়েকদিন আমি সেখানে যাই নি।অনেক কষ্টে মেয়েটার মোবাইল নম্বর জোগার করেছিলাম।ফোন করার সাহসে কুলাই নি।তারপর একদিন আমি আবার সেখানে গেলাম।মেয়েটা আবার নিচে নেমে আসলো।একদম আমার সামনে এসে দাঁড়ালো।আমি দু চোখ ভরে তাকে দেখলাম।ভালোবাসার মানুষগুলো এত সুন্দর হয় কেনো?
-'আপনি আবার এসেছেন?প্লিজ আপনি আর আসবেন না।আমার বাবা খুব ই খারাপ মানুষ'
তারপরের দিন আমি আবারো যাই।আমাকে পুলিশ ধরে নিয়ে আসে।আর এখন আমি জেলে।
আমাকে আর লেকটাকে একটা জিপে করে কোথায় যেন নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
-'ভাইজান!কইছিলাম না?হে হে হে'
আমার কেনো জানি ভয় লাগছে না।কেনো জানি মনে হচ্ছে লোকটা যা বলছে তা হবে না।একজন মানুষ একজন মেয়েকে ভালোবাসে।তার ভালোবাসার মানুষকে দেখার জন্য সে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকে।এ জন্য তাকে মেরে ফেলা হবে?না এটা সম্ভব না।মানুষ এতটা খারাপ হতে পারে না।
আমাদের দুজনকে একটা খোলা মাঠে ছেড়ে আনা হল।
-'তোমার শেষ ইচ্ছা কি?'
মানে কি?শেষ ইচ্ছা জানতে চায় কেনো?সত্যি সত্যি কি মেরে ফেলবে নাকি?আমার কণ্ঠ রোধ হয়ে গেলো।
-'বলে ফেলো তাড়াতাড়ি'
-'আমি একটা ফোন করবো'
আমি নিশুর নাম্বারে ফোন দিলাম।আমার বিশ্বাস সে এবার আমাকে ফিরিয়ে দিবে না।ফিরিয়ে দিতে পারবে না।
আমি দৌড়াচ্ছি।আমার চোখে পানি।আমার কানে বাজছে কিছু কথা।"এই মূহূর্তে মোবাইল সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।অনুগ্রহ করে আবার চেষ্টা করুন"।আমার মনে হচ্ছে পিছন দিক থেকে করা গুলি মিস হবে।আমি আবার চেষ্টা করার সুযোগ পাবো।
আমার পিঠ বরাবর গুলি লেগেছে।আমার ভিষন কষ্ট হচ্ছে।আমি হয়তো আর দু এক মিনিট বাঁচবো।আমার চোখে ভেসে উঠলো তার শেষ কথা।'প্লিজ আপনি আর আসবেন না।আমার বাবা খুব খারাপ মানুষ'
আমি যে আকুতি তার কণ্ঠে শুনেছি,যে ছলছল চোখ আমি দেখেছি সেটা দেখে কি আমি ভাবতে পারি না সেও আমাকে ভালোবাসতো?নইলে অমনভাবে বলবে কেনো?নইলে অমন ভাবে কাঁদবে কেনো?
আমি এমন একজন মানুষের ভালোবাসা স্মরণ করে মারা যাচ্ছি যাকে আমি নিজেও ভালোবাসতাম।লোকটা ঠিক বলেছে।Death is beautiful.মৃত্যু হয় সুন্দর।
২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১:২৯
রশীদ আবরার িরয়াদ বলেছেন: ধন্যবাদ।হুমায়ুন আহমেদ আমার ঘাড়ে চেপে বসে আছেন।নামাতে পারি না।
২| ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:২২
মহামতি আইভান বলেছেন: অসাধারন লেগেছে। সত্যিই ভালোবাসার মানুষগুলো এতো সুন্দর হয় কেন?
২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১:৩০
রশীদ আবরার িরয়াদ বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই
৩| ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:২৭
মুকতোআকাশ বলেছেন: ভাল লেগেছে। চমৎকার।
২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১:৩১
রশীদ আবরার িরয়াদ বলেছেন: ধন্যবাদ
৪| ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:২৯
অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: ভালো লিখেছেন ভ্রাতা ।
শুভ সকাল
২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:৫২
রশীদ আবরার িরয়াদ বলেছেন: ধন্যবাদ ভ্রাতা।
শুভ সকাল।
©somewhere in net ltd.
১|
১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:০০
হাসান মাহবুব বলেছেন: খুব ভালো লাগলো। তবে হুমায়ূন আহমেদের ছাপ স্পষ্ট।