নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যা দেখেও না দেখার ভান করি, আজ থেকে চলুন তাই দেখি।

রিয়াদ আল সাহাফ

রিয়াদ আল সাহাফ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আর্থিক টানাপোড়ন ও ভালবাসার গল্প

১১ ই অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১৬

প্রায় মধ্যরাতে রিকসায় হলে ফিরছিলাম। হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলো। রিমঝিম বৃষ্টি না, একেবারে মুষলধারে বৃষ্টি।
রিকসাওয়ালাকে জিজ্ঞেস করলাম পলিথিন আছে কিনা। মানা করলো। সাথে মোবাইল, মানিব্যাগ আছে তাই বৃষ্টিতে না ভিজে দৌড়ে রাস্তার পাশে এক যাত্রী ছাউনিতে আশ্রয় নিলাম। রিকসাওয়ালাও আমার পাশেই বসলো।
বাড়ি কোথায়, ঢাকায় কোথায় থাকে এইসব টুকটাক কথা বলছিলাম। বললো যে রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই থাকে। রিকসাটা তালা দিয়ে পাশেই বিছানা করে শুয়ে ঘুমায়। এরকম অবশ্য অনেককেই ক্যাম্পাসে থাকতে দেখি।
এমন সময় উনার ফোন এলো। বৃষ্টির কারণে কথা শোনা যাচ্ছিলো না তাই লাউড্স্পীকার অন্ করলেন তিনি। অপাশ থেকে কথা বলছেন উনার স্ত্রী।
কথোপকথনের সারমর্ম এই যে, উনাদের গ্রামে প্রচন্ড ঝড়বৃষ্টি হচ্ছে। ঢাকায়ও বৃষ্টি হচ্ছে কিনা তা জানার জন্য ফোন করেছেন। বৃষ্টির সময় খবরদার যেন রিকসা নিয়ে বাইরে না থাকেন। এখন যেন বাসাতেই থাকা হয়। বেশী কষ্ট করে টাকা পাঠানোর দরকার নেই। উনারা ভালোই আছেন।
রিকসাওয়ালা মামাও উনার স্ত্রীকে আশ্বস্ত করলেন যাতে টেনশন না করে। তিনি এখন বাসাতেই আছেন। সকালবেলা রিকসা নিয়ে বের হবেন। এখন ঘুমাবেন।
ততক্ষণে বৃষ্টি শেষ। রিকসাওয়ালা মামা আমাকে রিকসায় উঠতে বললেন। তারপর তিনি নিজেই কথা শুরু করলেন।
আমাকে বললেন যে, উনার স্ত্রী আর এক মেয়ে গ্রামে থাকে। মেয়েটা ছোট। ক্লাস ফাইভে। এবার পিএসসি পরীক্ষা দেবে। খুব ভালো ছাত্রী। রোল নং এক।
ঢাকায় কামরাঙ্গীরচড়ে কয়েকজনের সাথে এক বাসায় ভাড়া থাকতেন। মাসে এক হাজার টাকা ভাড়া। মেয়েটাকেও প্রাইভেট পড়াতে হবে। তাই বাসা ছেড়ে এখন রাস্তায় থাকছেন কয়েক মাস থেকে।
বাসা ছেড়ে দিয়েছেন এটা পরিবারের কেউ জানে না। উনিও জানাতে চান না। জানালে বউ খুব কষ্ট পাবে। রাতে রিকসা চালান, এটাও বাড়িতে জানাননি।
বললেন, নিজে কষ্ট করে স্ত্রীকে মাস শেষে একটু বেশী টাকা পাঠান, মেয়েকে লেখাপড়া করান, এতেই নাকি উনার সুখ।
উনার চোখেমুখে তৃপ্তির ছাপ দেখতে পাই। সুখের হাসি দেখতে পাই।
অদ্ভুত ভালোবাসা। একজন, স্ত্রী-সন্তানের সুখের জন্য, মাস শেষে একটু বেশী টাকা পাঠানোর জন্য রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে কষ্ট করছেন। আর ওদিক আরেকজন স্বামী যাতে বেশী কষ্ট না করেন, সেদিকেই স্ত্রীর নজর।
দিনশেষে যত টাকাই আয় হোক, দুজন কিন্তু যার যার জায়গা থেকে খুশী, সুখী।
ভালোবাসার গল্পগুলো সবসময় সুখেরই হয়। আর্থিক টানাপোড়ন ব্যাপার না।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.