![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সবুজ বালিশে মাথা গুঁজে শুয়ে আছে। সে ভাবে এরকম হয়েছে তারই দোষে । সে ঠিকমত তার ভাইদের সাহায্য করতে পারে নি। তাদেরকে সে ক্যামেরা মোবাইল কিনে দিতে পারেনি। সাধারন মোবাইল কিনে দিয়েছিল। প্রতিদিন এক এক জন সে ৫০ টাকার বেশী খরচ দিতে পারত না।পাশের ঘরে তার মা , বাবা ও ছোট পাঁচ ভাই। আজ তার ছোট দুই ভাইয়ের ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। দুই রুমের বাসাটায় এখন একটা গুমোট ভাব।
সবুজের দুচোখ লাল হয়ে আছে। কিন্তু সে মাথা তুলছে না। সে এই বালিশে মাথা গুঁজে কেঁদেছে। কাউকেই সে এটা বুঝতে দেয়নি ।
সবুজ ঢাকায় এসেছিল ছয় বছর আগে। সে তার গ্রামে দুর্দান্ত মেধাবী হিসেবে পরিচিত ছিল। এবং মেট্রিক পরিক্ষায় সে তার স্কুল থেকে সবচেয়ে বেশী নম্বর পেয়ে প্রথব বিভাগে পাশ করেছিল। তারপর, সে ঢাকায় আসে। এক দুঃসম্পর্কের আত্মীয়ের বাসায় থাকার জন্যে উঠে। এখানে আসার পর সবুজের শুরু হয় নতুন জীবন। ঢাকায় সরকারী বিজ্ঞান কলেজে ভর্তি হয়।
সবুজের আত্মীয় তাকে বলেছিল যে ঢাকায় তাদের বাসায় জায়গা আছে। সেখান থেকে সে গ্রামের চাইতে আরও ভালো ভাবে পরাশুনা করতে পারবে। কিন্তু, সবুজ ঢাকায় আসার পর, দেখল তার থাকার জায়গা নেই। সেই আত্মীয়ের বাসায় ডাইনিং রুমে ফ্লোরিং করে সে ঘুমাত। পরার জন্যে একটা টেবিল ও সে পায় নি। সবুজকে সে বাসার বাজার-সদাই থেকে শুরু করে, ছেলে মেয়েদের স্কুলে নিয়ে যাওয়া- নিয়ে আসা , বিভিন্ন জনের হুট-ফরমায়েস পালন করতে হত। কিন্তু সে গ্রামে তার মা-বাবাকে এসব বলত না। কারন, তার বাবার তখন কোন কাজ ছিল না। সে তার বাবার কাছ থেকে কোন টাকা চাইত না। কারন, তার বাবা এটা দিতে পারত না। সবসময় গ্রামে গেলে সে বলত সে অনেক ভালো আছে।
সবুজ ভেবেছিল একদিন সবকিছু পরিবর্তন হবে। সে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করতে পারলেই টিউশনি করতে পারবে। তখন আলাদা মেসে থাকবে। ভালো করে পরাশুনা করবে।
কিন্তু বিধি বাম। পরীক্ষা শুরু হওয়ার কিছুদিন আগে সে হেপাটাইটিস বি তে আক্রান্ত হয়। পরীক্ষা দিতে পারে না। তার পরের বছর সে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে।কিন্তু এবার সে দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হয়। স্যার দের কাছে, বা কোচিং এ বিজ্ঞান ও গনিত পরার মত টাকা তার ছিল না। এবং সে নিজে পরার মত সময় ও পেত না।
এরপর সবুজ ভর্তি হয় ঢাকা কলেজে । এইবার সে আর বিজ্ঞানের সাবজেক্ট নেয়নি। সে সমাজ বিজ্ঞানে অনার্স পরা শুরু করে। এবং প্রথম দুই বর্ষে সে সারা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় প্রথম বিভাগ অর্জন করে। ইতিমধ্যে তার দুই ভাই, সাজু ও সোহেল গ্রামে ম্যাট্রিক পাশ করে।
তার বাবা তাকে বলে সাজু ও সোহেল কে ঢাকায় ভর্তি করতে। সবুজ তাই করে। কিন্তু সে ভাবে সে তার ভাইদেরকে নিয়ে থাকবে কোথায়। তার কাছে তেমন কোন টাকা নেই। সে তখন ভাবে, টিউশনি করবে। কিন্তু তার জন্য টিউশনি পাওয়া কঠিন। সব টিউশনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েটের ছেলেমেয়েরা পায়। সে অনেক কস্টে কয়েকটা ১০০০ টাকার মাইনের টিউশনি পায়। সে ভাবে তার ভাইদেরকে সে পড়াশুনার জন্য সব সুবিধা দিবে।, যেটা সে পায় নি।
সে একটা ছোট বাসা ভাড়া নেয়। তার ভাইয়েরা তার সাথে উঠে। সে সকাল বিকাল টিউশনি শুরু করে। নিজের পড়ালেখা প্রায় সে বাদ দিয়ে দেয়। সে তৃতীয় বর্ষ পরীক্ষায় ফেল করে। কিন্তু তখন তার মনে একটাই আশা- সে তার ভাইদেরকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াবে । সে দিনের বেলাইয় এক অফিসে অফিস সহকারী কেরানীর চাকরি নেয় আর রাতের বেলায় টিউশনি করে। সকালে বের হয় আর বাসায় ফেরত আসে রাত ১০টায় , কখনো ১১ টায়। এভাবে সে তার ফাইনাল ইয়ার পরীক্ষায় অংশগ্রহনি করে নি।
কিন্তু তার ভাইদের ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা ঘনিয়ে আসে। সে আশায় বুক বাধে। পরীক্ষা হয়। রেজাল্ট এর সময় চলে আসে। রেজাল্ট এর দিন সে গ্রাম থেকে তার বাবা, মা ও আরও ছোট তিন ভাইকে তার বাসায় নিয়ে আসে। সে মিষ্টি কেনার জন্যে টাকা রেডি করে। তার ভাইয়েরা তো এ প্লাস পাবেই। দুপুরে বাসায় গরুর মাংস রান্না করে তার মা। আজকে তাদের জীবনে এক বড় দিন হবে।
বিকেল বেলা তারা রেজাল্ট পায়। সাজু ফেল করেছে, সোহেল বি গ্রেডে পাশ করেছে। সবুজ ঢলে পরে।
©somewhere in net ltd.
১|
১৩ ই নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:৪২
হাসান মাহবুব বলেছেন: মন খারাপ হয় এসব দেখলে।