নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভারসাম্য মাত্রই কৃতিত্ব নয় ।

আল - বিরুনী প্রমিথ

আল - বিরুনী প্রমিথ › বিস্তারিত পোস্টঃ

কতিপয় দেয়াললিখনী এবং অন্যান্য

১৯ শে মার্চ, ২০১৬ ভোর ৪:২৪

১। ধানমন্ডি ১১/এ তে গভমেন্ট গার্লস হাইস্কুলের সামনে একটি দেয়াল লিখনীঃ সেখানে আঁকা হয়েছে কলহরত এক দম্পতিকে। তাদের মাঝে বিপর্যস্ত সন্তান বসে আছে। দেয়ালে লেখা “আপনার সন্তান কি ভাবছে?”

এক ঘনবর্ষার রাতে জামান সাহেব এবং তার স্ত্রী শায়লার মাঝে তুমুল ঝগড়া বেঁধে গেলো।

“তুমি কেমন মা হয়েছো? তোমার ছেলে অংকে পেয়েছে চৌদ্দ। বুঝতে পারছো? চৌদ্দ পেয়েছে তোমার ছেলে। ওর কোন বন্ধুবান্ধব এতো খারাপ করেছে? আজকে রিপোর্ট কার্ড আনতে গিয়ে কি লজ্জাই না লাগছিলো। মনে হচ্ছিলো মাটিতে মিশে যাই। ছিঃ ছিঃ ছিঃ !!!”

“এতো বড় বড় কথা বলোনা। তুমি সারাটা বছর কি খোঁজ করেছো ছেলের? ছেলে কি আমার একার? কোনদিন ওকে নিয়ে পড়তে বসেছো? অফিস থেকে ফিরেই গোসল করে বিছানায় আরাম করতে বসে যাও। চা খাবে, পত্রিকা পড়বে, ক্রিকেট খেলা থাকলে টিভি অন করে খেলা দেখতে বসে যাবে। পাশের ঘরে ছেলেটা পড়তে বসবে কিভাবে? একটা দিনও ছেলেকে অংক করানোর মুরোদ নেই কিন্তু কথা শোনাতে ষোলোআনা ওস্তাদ। বউকে তো দাসী বানিয়ে ছেড়েছো। তাও শান্তি হচ্ছেনা। হাহ, যেমন আমার গুণধর ছেলে তেমনি গুণধর ছেলের বাবা!!!”

২। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাশে জীবনানন্দ দাশ বেঁচে আছেন। সেখানে লেখাঃ

“আবার আসিবো ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে- এই বাংলায়
হয়তো মানুষ নয়- হয়তো বা শঙ্খচিল শালিকের বেশে;
হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে
কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিবো এই কাঁঠাল ছায়ায়।”

২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৪
গতোকাল সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মোবাইল ফোন ছিনতাইয়ের ঘটনায় ৩ জন গণপিটুনীতে নিহত। উত্তেজিত জনতা ছিনতাইকারীদের পাকড়াও করার পরে চিমটা দিয়ে তাদের চোখ তুলে নেয়। তথ্যসূত্রঃ দৈনিক সময়ের বার্তা

৩। ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা ২ নাম্বার সড়কে কিছু শব্দের উপরে ক্রস চিহ্ন দেওয়া।
পরিবার সমাজ নিজস্বতা শিক্ষা চাকরী

শব্দগুলোর নিচে প্রশ্ন,
“যাবো কোথায়?”

সাড়ে তিন বছরের প্রেমের সম্পর্কে প্রথম চুমুটা খাওয়ার ঠিক পরপর কুয়াশা নেমে আসা শীতের সন্ধ্যায় শারমিন রাজুর উদ্দেশ্যে বলে উঠে “তুমি এতো লাজুক কেনো বলোতো? এই প্রথম কিস করলা তাও এমনভাবে যেন চুরি করতেছো। মিতুলের প্রেমিক শিহাব ভাইকে দেখছো? কি ম্যানলী। চলাফেরা, কথাবার্তা সবকিছুতে কি সাহসী। তুমি তার মতো হইতে পারোনা?”

কলেজে পড়তো তখন। তার এক কাকা এসেছিলো বাড়িতে। সাথে অনেক গল্পের বই নিয়ে। যাবার সময়ে মনের ভুলে একটি বই ফেলে রেখে গিয়েছিলো। বনফুলের গল্পসমগ্র। বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়ের লেখনীর সাথে রাজুর সেই প্রথম পরিচয়। তার ‘আলো আঁধারিতে’ গল্পটি আজও রাজুকে প্রবলভাবে টেনে ধরে। অনেকদিন ভেবেছে গল্পটি নিয়ে তার মুগ্ধতার কথা শারমিনকে জানাবে। কিন্তু কখনো জানানো হয়নি। শারমিনের কাছ থেকে কথাগুলো শুনে সে ভেতরে ভেতরে পুরোপুরি নিভে গেলো। সে বুঝতে পারলো বনফুলের প্রতি তার মুগ্ধতার কথা শারমিনকে আর কখনোই সে জানাতে পারবেনা।

রাজু নবারুণ ভট্টাচার্য পড়েনি। পড়লে জানতে পারতো প্রেমিকাকে প্রথম চুমুটা খাওয়ার পরেই কেউ জীবনের প্রকৃত চেহারার সাথে প্রথম পরিচিত হয়। নবারুণের সাথে পরিচয় থাকলে হয়তো শারমিনসহ নিজেকে ঠিক ঠিক আবিষ্কার করতে তার এতো দেরী হতোনা।

৪। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায়গারো স্টুডেন্ট ইউনিয়ন লিখেছে,
“আদিবাসীদের নিজস্ব মাতৃভাষায় প্রাথমিক
শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।”

আমরা সংবাদের মারফতে জানতে পারি রাঙ্গামাটিতে বাংলাদেশ-ইংল্যান্ডের ক্রিকেট বিশ্বকাপের ম্যাচে বাংলাদেশের জয়লাভের পর সেই আনন্দ উদযাপনে স্থানীয় এক আদিবাসী মেয়েকে ধর্ষণ করেছে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ছাত্রসংগঠনের কিছু কর্মী।

৫। মানিক মিয়া এভিনিউতে নরম্যান হলের বয়ানে কে যেন লিখে রেখেছে,
“জন্মদিনের উৎসব করাটা বোকামী।
জীবন থেকে একটা বছর ঝরে গেলো,
যে জন্য অনুতাপ করাই উচিত।

দেশের প্রথিতযশা এক লেখক নিজের আশিতম জন্মদিনে টক শোতে এসে উপস্থিত হয়েছেন। নিজের আশিতম জন্মদিবস উপলক্ষ্যে তাকে অত্যন্ত আনন্দিত বলে মনে হচ্ছে। উপস্থাপিকা হিসাবে রয়েছেন নামকরা এক সুন্দরী অভিনেত্রী। লেখক সাহেবকে বেশ হৃষ্টচিত্তেই সেই সুন্দরীর করা বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে দেখা যাচ্ছে।

৬। মিরপুর ২ এ একটি দেয়ালচিত্র অঙ্কিত। আমরা সেই চিত্রে দেখতে পাই,

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের পিছনে বন্দুক তাক করে আছে র‌্যাব। রবীন্দ্রনাথকে পাশ থেকে দেখে বিষন্ন বলে মনে হয়। সেই বিষন্নতা অতি অবশ্যই বিষাদউৎসরিত।

পঁচিশে বৈশাখ উপলক্ষ্যে বরাবরের মতোই চ্যানেল নয়নে সারাদিনব্যাপী নানাবিধ প্রোগ্রামের আয়োজন করা হয়েছে। যার সবটুকুই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ঘিরে। জন্মবার্ষিকীতে তার বর্ণাঢ্য শিল্পী জীবনের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে।

তবে সেদিনই টেলিভিশন দেখতে দেখতে একটি স্ক্রল নিউজ কারো কারো নজর এড়ায়না। সেখানে লেখাঃ খুলনায় র্যা বের সাথে বন্দুকযুদ্ধে ৪ জন নিহত। র‌্যাব দাবী করেছে নিহতরা চরমপন্থী দলের সদস্য।

৭। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুলার রোডে নিহত লেখক অভিজিৎ রায়ের একটি ছবি অঙ্কিত আছে। আমরা সেই ছবির ডিজাইনে দেখি,
I am Avijit
অভিজিৎ রায়ের মুখ
Kill me

এক গ্রীষ্মের সকালে সেই দেয়ালচিত্রের সামনেই এক বৃদ্ধকে নিথর পড়ে থাকতে দেখা যায়। তাকে কেউ শনাক্ত করতে পারেনা। আমরা ধরে নিতে পারি সোয়া দুই কোটি মানুষের শহরে মৃত সেই বৃদ্ধ অগণিত নামহীন পরিচয়হীন কন্ঠহীন গোত্রহীনদের একজন।

৮। বুয়েটের বিপরীত দিকে পলাশীতে নজরুলকে জীবন্ত পাওয়া যায়। আমরা নতুন করে নজরুলের অতি পরিচিত কিছু লাইনে দীপ্ত হই,
“বল বীর
চির উন্নত মম শির।”

হেমন্তের এক সন্ধ্যা। শেষ বিকালের ছেড়ে যাওয়া অদ্ভুত নৈসর্গিক বিষন্নতা সেই সময়ে রাস্তায় চলাফেরা করা অনেক মানুষের মাঝেই সঞ্চারিত হয়ে পড়ে। তৃণার মধ্যেও সঞ্চারিত হয়েছিলো বৈকি। তা সে আজিমপুরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রিকশা নেওয়ার পরিবর্তে হাঁটবে বলে ঠিক করেছিলো। কিন্তু পলাশীতে কবি নজরুলের দেয়ালচিত্রের কাছাকাছি চলে আসলে বয়সে নবীন চাহনীতে বন্য মননে জীর্ণ কিছু শুয়োরের মুখোমুখি হয়। তারা সমগ্র এলাকাতেই পরিচিত। ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের ক্ষমতাধর কিছু মুখ। তাদের বিরুদ্ধে কে দাঁড়াতে পারে? লাঞ্ছিত হবার মুহূর্তে তৃণার মনে হতে থাকে নজরুলের মুখের দিকটা বুঝি একটু অবনত দেখাচ্ছে।

৯। ধানমন্ডি ১১/এ তে একটি দেয়ালচিত্র অঙ্কিত আছে। একজন বৃদ্ধ, সেই বৃদ্ধ প্রথম পিতা হবার সময়ে তার সন্তানকে বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে সেই ছবি। আমাদের চোখ সেই দেয়ালচিত্রে লেখা প্রশ্নটিকে এড়িয়ে যেতে পারেনা,
“আমাদের জন্য তারা ছিলো,
তাদের জন্য আমরা কই?”

আবসার সাহেব অসুস্থ অবস্থাতেই বিছানা থেকে উঠলেন। সন্ধ্যা হয়েছে। ঘরে বাতি নেভানো আছে। জেগে থাকা অবস্থায় পুরোপুরি অন্ধকারের মাঝে তার থাকতে ভয় লাগে। এক ধরণের মৃত্যুর ভয় তাকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। আজ দুপুরেই মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিলেন। শরীর এখনো বেশ দুর্বলই আছে তার। প্রথমে ভেবেছিলেন বাতিটা জ্বালিয়ে দিতে ছেলেবউ নুশাইবাকে ডাকবেন। কিন্তু পরক্ষণেই তার মনে হলো সে বিনাবাক্যে সেই আদেশ পালিত হলেও মেয়েটা চাহনীতে তার দিকে উদ্দেশ্যে করে যেই বক্রতা ছুঁড়ে দেবে তার মুখোমুখি হবার মতো মানসিক জোর এই মুহূর্তে তার নেই। আবসার সাহেব বহুকষ্টে দেয়ালের সামনে গিয়ে সুইচ টিপলেন। বাতি জ্বলে উঠলো।

আমরা এভাবেই বহুবিধ দেয়াললিখনীর মাঝে বেঁচে থাকি।

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে মার্চ, ২০১৬ ভোর ৬:২০

জাহিদ হাসান মিঠু বলেছেন: “আমাদের জন্য তারা ছিলো, 
তাদের জন্য আমরা কই?” 

প্রশ্নটা খুবই ছোট, কিন্তুু উওরটা সারাদিন লিখলেও শেষ হবেনা।
ভাল থাকবেন, শুভ কামনা।

২| ১৯ শে মার্চ, ২০১৬ ভোর ৬:৪০

দায়ী বলেছেন: অসাধারন কিছু কথা ছিল। ৫০০০ টাকার ছিনতাই কারীকে মেরে ফেললেও চুপ হাজার কোটি টাকা চুরির ঘটনায়

৩| ১৯ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ৯:১৫

সুরমাপুত্র বলেছেন: দারুন লিখেছেন। চিন্তার খোরাক আছে।

৪| ১৯ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ৯:৫৬

বিজন রয় বলেছেন: হা হা হা
দারুন লাগল।
+++

৫| ১৯ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১০:৩২

অগ্নি সারথি বলেছেন: ছবি যুক্ত করতে পারলে বেশ হত।

৬| ১৯ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১০:৪৫

আরজু নাসরিন পনি বলেছেন:

একেবারে ভিন্ন ধাচের একটা পোস্ট পড়লাম...এবং অসম্ভব ভালো লাগা রইল।

৭| ১৯ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১১:৪৮

আবদুল্লাহ সাফি বলেছেন: অনেক দিন পর। চিন্তা করার মত পড়লাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.